সোমবার, ১৭ মে, ২০১০

আমার দিনলিপি: "রুপসী ললনা" আর "বিজ্ঞান"

১৮ই মে, ২০১০: আজ একটা ওয়ার্কশপ ছিল। বিষয়: ন্যানোট্যাকনলজী ও তার এপ্লিকেশন। আয়োজনে ছিল কানাডার ওন্টারিও ন্যানোট্যাকনলজী রিচার্স ফোরাম। সেখানে আমার দায়িত্ব ছিল একটা পোস্টার প্রদর্শন করা। যারা জানেন না তাদের উদ্দেশ্যে বলছি, পোস্টার প্রেজেন্টশনের মধ্যে আহামরি কিচ্ছু নাই। পোস্টার প্রেজেন্টশন হল শুধু যার যার পোস্টারের সামনে "ভ্যাবলার" মত দাড়িয়ে থাকা। আর কেউ এসে “দুনিযার সব জানে” এমন ভয়াবহ-জ্ঞানীর ভাব নিয়ে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকার পর তাদের মনে কোনো খটকা লাগলে তাদের খটকাগুলো দুর করা। তো, মুল ব্যাপার এটা না, মুল কথা হল, বরাবরের মতই আমার আনন্দ কখনই পোস্টার দেখানোতে থাকে না, আমার আনন্দ থাকে পোস্টার ছাপিয়ে রুপবতী ললনাদের সাথে কথা বলার সুবর্ন সুযোগ পাওয়ার মধ্যে। কিন্তু আজ পরিস্তিতি ভিন্ন। তিন ঘন্টার প্রেজেন্টশন এ দুই ঘন্টা চলে গেল, এখনও কোনো ললনা আমার পোস্টারের ধারে দিয়ে আসল না। ললনারা বামদিকের পোস্টারে আসে, ডানদিকে আসে। পেছনেরটাতে আসে, সামনের টাতেও আসে। আমারটাতে আসে না। বিরক্ত হয়ে আমার ঘনিষ্ট তুর্কি বন্ধু টমাসকে কিছু একটা করতে বললাম। সে বুদ্ধি দিল মেয়েরা আসতে দেখলে আশেপাশের বুড়া বুড়া প্রফেসরদের ঠেলেঠুলে সরিয়ে দিবি, মেয়েরা বুড়া প্রফেসরদের পছন্দ করে না। তাদের ভয়ে হয়তো আসছে না। কথার সত্যতা পেলাম। আমার পোস্টারের সামনে বুড়াদের আনাগোনা। তার কথামত কাজ করতে লাগলাম। তাদেরকে ঠেলেঠুলে সরাতে লাগলাম। কিন্তু মামলা তা-ও তো খতরনাক।, পরিস্থিতির কোন উন্নতি নেই। আবারও দীর্ঘশ্বাস ফেলতে লাগলাম। হঠাৎ পরিস্থিতির আসন্ন উত্তরন দেখতে পেলাম। আমাদের প্রেজেন্টশেন শেষ হওয়ার মাত্র ৫ মিনিট আগে একজন চোখ-ঝলসানো সুন্দরী মেয়ে আমার পোস্টারের দিকে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসতে লাগল। মনে মনে বললাম এতক্ষনে বোধহয় উপরওয়ালা আমার পানে চোখ তুলে চেয়েছেন। যাক্, লাইফ মে কোচ্ সাদা হে। আমি তখন পোস্টারে প্রদর্শিত রিসার্চের সকল সম্ভাব্য প্রশ্নের উত্তর মনে মনে সাজিয়ে নিতে লাগলাম। মেয়েটির প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর খুব ভালভাবে সাজিয়ে সুন্দর করে বলতে হবে। কোনো উত্তরই ল্যাজে-গোবরে করা যাবে না। কবি বলেছেন, “যদিবা অর্জিত করিতে হয় নারীমন, কথামালা সাজানো চাই অনন্য মধুক্ষন”। মেয়েটি যতই আমার কাছাকাছি আসতে লাগল আমার বুক ধড়ফড়ানি ততই বাড়তে লাগল। না জানি কি প্রশ্ন করে বসে! সাধারন গাধাটাইপ মানুষদের প্রশ্নের উত্তর দিতেই যেখানে আমার ঘাম দিয়ে জ্বর আসে, আর এ তো মাত্রাতিরিক্ত সুন্দরী ললনা। তো মেয়েটি একসময় আমার সান্নিধ্যে আসল, কাছে আসার পর ক্ষনিকের জন্য আমার পোস্টারের দিকে একবার চোখ বুলিয়ে নিল। আমি প্রস্তুত হয়ে রইলাম আমার সাজানো কথামালাগুলো উদ্গরনের জন্য। এমন সময় মেয়েটি তার সুচিন্তিত প্রশ্নবাক্যটি ঝড়ো বেগে প্রকাশ করল। যা শুনে আমার ভ্রম্মতালু ছুয়ে বুঝতে পারলাম, চান্তি কিছুটা হলেও পুড়ে গেছে। মেয়েটি অসহায়ত্বের মত ভঙ্গি করে আমাকে যে প্রশ্নটি করেছেল সেটা হল: “Excuse me, could u tell me please where can I find the toilet?????, its emergency.”

পরিশিষ্ট: "কোথায় জানি পড়েছিলাম, সুন্দরী আর বিজ্ঞান সাথ সাথ যায় না।"
কথাটা মনে হয় একেবারে মিছা না! আরেকটু পড়ি, কি বলেন.......

শনিবার, ৮ মে, ২০১০

মা

[আজ মায়ের সাথে অকারনে রাগ করলাম। অনেকটা ইচ্ছে করেই। আমার মা আমার থেকে হাজার মাইল দুরে। প্রতিদিন আমার ফোনের জন্য অপেক্ষা করে বসে থাকেন মা। না দিলে ধৈর্য্যহারা হয়ে নিজেই করে বসেন। মা, এত ভালবাসা কেন তোমার? এত কষ্ট দেই, তারপরও ভালবাসা ফুরায় না কেন তোমার? রাগারাগির পর খুব খারাপ লাগছিল আমার। সেটা কমাতেই এই আবেগী কবিতা। কবিতা হয়তো হয়নি, কিন্তু মায়েদের ভালবাসা এমন যে, তাদেরকে উপজিব্য করা কোন আবেগের বহিপ্রকাশ কোন ব্যর্থতাকে স্পর্শ করতে পারে না। সকল অপরিপক্কতা ছাপিয়ে ঠিকই উজ্জ্বল দ্বীপ্তিময় হয়ে উঠে সেই সত্তা তার নিজস্ব ভঙ্গিমায়। এটা লিখার সময় মাকে খুব অনুভব করেছিলাম, সেই ভাল লাগার অনুভুতিই প্রকাশ করলাম। প্লিজ খারাপ লাগলে গালি দিয়েন না, অন্তত]


মা,
সেই ছোট্টবেলায় প্রথম যেদিন
মিতালীপাড়ার স্কুলের আঙ্গিনার
পদধুলি দেবার কথা আমার,
তুমি মাথায় সিঁথি তুলে আশীষ দিয়েছিলে,
“বড় হও, বাবা, অনেক বড়,
মানুষ হিসেবে পূর্ন হয়”।
তোমার চোখে ছিল আমার জন্য আকাশছোঁয়া স্বপ্ন, মা।
আমি ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে ছিলাম
তোমার দিকে নিরিবিলি,
আমার দেখা সবচেয়ে পরিপূর্ণ মানুষটির দিকে।

মা,
মেঘেদের যুদ্ধে ছিল বৃষ্টিদের বিজয়ের দিন সেদিন।
তুমি ছাতা দিয়ে বলেছিলে, “সাথে রাখিস বাবা”
আমি নেইনি সেদিন, তোমার দেয়া।
হয়তো ভেবেছিলাম, তোমার মত এত বড়
ছাতা থাকতে কোন ঝড়ের ভয় মা?
কোন ঝড়ের ভয়?

ঠিকই অঝোড় ধারায় বৃষ্টি হয়েছিল সেদিন
নুড়িপাড়ার সাধনবাবুর দোকানে আটকা পড়েছিলাম,
অনেকক্ষন।
তুমি নিজে ভিজে চলে এসেছিলে আমাকে
অভেজা নিয়ে যেতে, মেঘেদের আড়াল করে।
খালি পায়ে।
আমার কয়েক ভেজা চুল তোমার আঁচল দিয়ে
মুছে দিতে দিতে মায়াভরা গলায় শাসন করেছিলে,
“আর কোনদিন ভিজবি না বৃষ্টিতে, ঠিক আছে?”
তোমার উষ্ঞ আচঁল দিয়ে আগলে ধরে রাখছিলে তুমি
আমায় কিছুক্ষন, গভীর মমতায়,
তোমার সিক্ত আশ্রয়ে।

মা,
পৌষের সংক্রান্তি ছিল ওইদিন।
ভোরের স্নান সেরে সোজা চুলার পাশে আমি।
তুমি পিঠা বানাচ্ছিলে,
কপালে তোমার বিন্দু বিন্দু ঘাম।
বসে রইলাম তোমার দিকে চেয়ে মুগ্ধ নয়নে।
তুমি পাঠিসাপটা বানিয়ে দিতে লাগলে, অনবরত।
খাওয়া শেষে কম পড়েছিল বলে, তুমি
নিজে খাওনি সেদিন, বলেছিলে,
“তোরা খা, এতেই আমার তৃপ্তি”

মা,
জৌষ্ঠের নবান্নৎসবের ছুটি তখন,
দক্ষিনপাড়ার নবনীবাবুর কুয়োর ধার দিয়ে,
আসার সময়,
পড়ে জখম হয়েছিল খুব।
নিমপাতার রস লাগিয়ে দিয়েছিলে সেদিন,
উপরে কলাপাতার পট্টি, পরম যতনে।
তবু ক্ষতের নিস্তার নেই,
পায়ের জখম বিদ্রোহ করেছিল সেদিন রাত।
প্রবল জ্বরে কেঁপে কেঁপে উঠেছিলাম,
নকশীকাঁথায় ঢেকেও স্বস্তি নেই তোমার,
আমার মাথায় হাত বুলিয়ে ঢেলে দিতে লাগলে
তোমার শরীরের ওম।
সারা রাত জেগে নির্ঘুম তুমি
মাখতে লাগলে জ্বল পট্টি, আমার তপ্ত কপালে,
পরম আদরে।
টলমল করছিল সেদিন
তোমার স্নেহঝড়ানো উদ্বিগ্নতার জ্বল।

মা,
আমার টিউশনির টাকা
একটু একটু করে জমিয়ে,
তোমাকে একটি নীল শাড়ি কিনে দিয়েছিলাম,
তোমার সেই শাড়ি গায়ে দিতে না তুমি
আলমারিতে যত্নে রাখ, সবসময়।
নষ্ট হয়ে যাবে বলে।

দেশের পড়া শেষে,
স্কলারশীপ নিয়ে হাজার মাইল দুরে আসার সময়,
আবেগি তুমি, কান্না থামিয়ে রাখতে পারছিলে না।
আচঁল দিয়ে চোখ লুকিয়ে রাখলে।
আসার বেলায়,
কপালে চুমু খেয়ে বলেছিলে,
“ভাল থাকিস, বাবা”।
ডুকরে কেঁদে উঠেছিলাম আমি।

সেই তুমি আজ অনেকটাই জীর্ন।
রান্নাঘর থেকে সিংহদার,
এটুকুনই তোমার সকল ভাবনায়।
খুঁজে বেড়াও আমাদের, প্রতিটি মুহুর্ত।
প্রতিদিন সন্ধ্যায় আমার একটি ফোনের জন্য
অপেক্ষা করে বসে থাকো রিক্ত তুমি,
চাতকপাকির মত।
একদিন কথা না বললে
অস্থির হয়ে রাগ করে বসে থাকো,
অবোধ শিশুটির মত।

মা,
আচ্ছা আমি কি পারব, তোমার স্বপ্নটি পুরন করতে?
অনেক বড় হতে কথনও?
অথবা,
মানুষের পুর্নতা নিতে?
ভয় হয়, মা।
আমার।
একটু মাথায় তোমার আশীষের হাতটি বুলিয়ে দিবে, মা, ঠিক আগেটির মত।

আঁকা: নিজ, সাল: ২০০৩, পেন্সিল স্কেচ।
আরেকটু পড়ি, কি বলেন.......

শনিবার, ১০ এপ্রিল, ২০১০

গল্প: ভালবাসায় লোডশেডিং...........

গভীর রাত। ছাদের দক্ষিন কোনায় ছোট্ট ব্যালকনীর দেয়ালের উপর হেলান দিয়ে বসে আছে আবীর। অজস্র তারা উঠেছে আজ। আবীর মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে আছে আকাশের তারার দিকে। এ এক অদ্ভুত ভাল লাগা। তবে এক বিশেষ কারনে আবীরের মনে আজ অদ্ভুত শিহরন বয়ে যাচ্ছে। শরীরের প্রতিটি লোহিতকনিকা যেন তীব্র উত্তেজিত হয়ে রক্তনালিকা ছিটকে বেরিয়ে আসতে চাইছে। যে মেয়েটার সাথে গত ছয়মাস ধরে ফেসবুকে/ফোনে চুটিয়ে প্রেম করে যাচ্ছে, সেই মেয়ের সাথে কালই প্রথম দেখা করতে যাচ্ছে আবীর। তারা গুলোর ফাঁক দিয়ে এক ফালি চাঁদ দেখা যাচ্ছে। হিমেল বাতাসের আলতো ধাক্কা লাগছে আবীরের গায়ে। কিছু একটা ভাবতে যাচ্ছিল আবীর এমনসময় ফোনটা তার স্বভাবজাত স্বরে বেজে উঠল।
“কি করছ?”
“মাধবী”?
“হমম”।
“মাধবী জান, প্রবল আনন্দে আমার শরীর আজ কাঁপছে”।
“হুমম, এটাই স্বাভাবিক। আমার যে খুব ভয় ভয়ও করছে”!
“কেন”?
“তুমি যদি আমাকে দেখে পছন্দ না কর। আমি যদি তোমার মনের মত না হই”!
“এভাবে বল না, মাধবী। তোমাকে নিয়েই আমার সকল স্বপ্ন, আমার সকল ভাললাগা। এতদিন তিল তিল করে যে স্বপ্নের বাসর গড়েছি তোমাকে নিয়ে সে বাসর অবিনশ্বর, সেটা কি ভেঙ্গে ফেলা যায়? আমার সকল অস্বিত্ব, আমার সত্ত্বা তোমাকে ঘিরে, তোমাকে নিয়েই আমার পূর্ণতা।”
“এত ভালবাস আমাকে”?
“হুমম, এত। বিশ্বাস হয় না?”
“হুমম, হয়”।
“তুমি কাল কি পড়ে আসবে”?
“নীল টি-শার্ট, সাথে কালো প্যান্ট”।
“আর আমি?”
“তুমি সবুজ শাড়ী পড়বে, মাথায় থাকবে রজনীগন্ধা, আর হাতে বেনারসি চুড়ি। ওকে?”
“ওকে, Done”।
“সোনা, একটু ছাদে উঠনা, প্লিজ। দেখনা কি সুন্দর চাঁদ উঠেছে আজ। উঠনা একটু”।
“এই এখন না, এত রাতে ছাদে উঠলে বাবা সন্দেহ করবে”।
“প্লিজজজজজজজ”।
“ওহ, উঠছি বাবা। তুমি না, একটা পাগল”।
“হুমম, পাগল, সে তো তোমার জন্যই”।


অনেক রাত পর্যন্ত কথা বলছিল আবীর মাধবীর সাথে। তাই ঘুম থেকে এত দেরি করে উঠা। এখন বাজে দুইটা। তাড়াহুড়ো করে রেডি হয়ে চুলে হালকা জেল দিয়ে গায়ে পারফিউম মাখিয়ে বেরিয়ে পড়ল আবীর। সানগ্লাসটা হাতে নিল। মাধবীর পাঁচটার সময় শাহবাগের মোড়ে থাকার কথা। এখন বাজে তিনটা। প্রবল উত্তেজনা তাড়িত করছে আজ আবীরের মনে। অনিচ্ছাকৃতভাবে এত আগে বেরিয়ে পড়ার এটাই হয়তো কারন। “ফ্লোরা এন্ড ফাউনা” দোকান থেকে এক তোড়া লাল গোলাপ কিনল আবীর। হাটার ফাঁকে ফুলের সুবাস নিল। আহ। শাহবাগের মোড়ের কাছাকাছি এসে দাড়িয়ে রইল আবীর। প্রতিক্ষার প্রতিটি মুহুর্ত যেন এক একটি বছর মনে হচ্ছে আবীরের কাছে আজ। কিছুক্ষন এদিক ওদিক হাটাহাটি কলল আবীর। মোড়ের দোকানে গিয়ে একটা সিগারেট ধরাল। আকাশের অবস্থা ভাল না। কিছুক্ষের মধ্যে ঝড় নামবে।

অবশেষে এল সেই প্রতিক্ষিত মুহুর্ত। যে মুহুর্তটির জন্য মনের গহীনে ভালবাসা দিয়ে বুনেছিল এক অনিন্দ্যসুন্দর প্রতিক্ষার প্রহর। যার জন্য মনের অজান্তে অনেক দিন ধরে অপেক্ষা করছিল আবীর। রাস্তার অপাশে রিকশাটি থামল। রিকশার হুড খুলে অল্প তাকাল মেয়েটি। সবুজ শাড়িতে ওকে একটি সবুজ পরীর মত লাগছে দেখতে। কপালে লাল টিপ। মাথায় রজনীগন্ধার ডালি। বিধাতা কি মনের মাধুরী মিশিয়ে গড়েছিল এই নারীমূর্তি। আবীরের প্রবল উত্তেজনায় হৃদস্পন্দন বাড়তে লাগল।
মাধবী হাত দিয়ে ইশারা করল, “এই, রিকশায় উঠো, ঝড় আসছে”।
কথা শুনে আবীর সম্বিত ফিরে পেল। আবীর আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখল। আকাশে ঘন কালো মেঘ জমেছে। ধেয়ে বৃষ্টি আসছে কিছুক্ষনের মধ্যেই।
আবীর তাড়াতাড়ি রিকশায় কাছাকাছি গেল।
“কেমন আছ, তুমি?”-মাধবী জানতে চাইল।
“হুমম, ভাল, তুমি?”
“খুব”।
“এখন রিকশায় উঠো, প্লিজ। বৃষ্টি আসছে এক্ষুনি”।
আবীর রিকশায় উঠল। আবীরের গা এই ঝড়ো বাতাসেও ঘামছে। এক অদ্ভুত উত্তেজনায় সে কোন কথা খুজে পাচ্ছে না। তার গলা তোকায় জানি আটকে যাচ্ছে বারবার। মাধবীও কোন এক রহস্যজনক কারনে তার সহজাত কথার ফুলঝুরি হারিয়ে ফেলেছে আজ। যে মেয়েটি রাতের পর রাত, ঘন্টার পর ঘন্টা এই ছেলেটার সাথে কথা বলে যেত ক্লান্তিহীনভাবে, সেও আজ কোন বাক্য সাজাতে পারছে না বলার জন্য। আসার আগেও অনেক কথা সাজিয়ে নিয়ে এসেছিল দেখা হওয়ার পর বলবে বলে। এখন সব ভুলে গেছে। কিছুই আর মনে করতে পারছে না। অঝোড় ধারায় বৃষ্টি নামল। রিকশা থামাল ওরা। আবীর আঁচলচাঁপা দিয়ে মাধবীকে নিয়ে রিকশা থেকে নেমে একটি আম গাছের নিচে গিয়ে দাড়াল। দুজনেই এখনও চুপচাপ। মাধবীই নীরবতা ভাঙ্গল প্রথম।
“এ্যাই, বৃষ্টিতে ভিজবে”?
“হুমম”
দুজনেই ইচ্ছে করে বৃষ্টিতে ভিজতে লাগল তখন।
“কিছু বলছ না যে?”
“কি বলব”?
প্রশ্নটা করতে গিয়ে আবীর মাধবীর দিকে তাকাল। সবুজ শাড়িতে মাধবীর সারা শরীর লেপ্টে আছে বৃষ্টির পানিতে। কপালের লাল টিপটি অনেকটা সরে পড়েছে কপালের মধ্যস্থান থেকে। দেখতে কি অর্পুবই না লাগছে মেয়েটিকে। মানুষ এত অপরূপ সুন্দর হয় কি করে? একেই কি অসহ্য সুন্দর বলা হয়? যা দেখে বেশিক্ষন তাকিয়ে থাকা যায় না। চোখ সরিয়ে ফেলতে হয়।
আবার কিছুক্ষন চুপচাপ।
একটু পর আবীর ধরা গলায় বলল, “এ্যাই, তোমার হাতটা একটু ধরতে দিবে?”
মাধবী নীরবে এগিয়ে দিল তার হাতটি। মাধবীর হাতে হাত রাখল আবীর। এই কোমল ছোঁয়া আবীরের পুরো শরীরকে অদ্ভতভাবে কাঁপিয়ে দিচ্ছিল। মাধবীর আঙ্গুলের খাঁজে খাঁজে আঙ্গল মিলিয়ে আবীর ওর সিক্ত হাতকে শক্ত করে ধরে থাকল। মাধবী আলতো করে আবীরের কাঁধে মাথা রাখল। দুজনেই দুর আকাশ পানে তাকিয়ে থাকল কিছুক্ষন। আকাশের কালো মেঘ আস্তে আস্তে সরে যাচ্ছে দিগন্ত সীমানায়।
মাধবী হঠাৎ তীব্র আবেগে বলে উঠল, “প্লিজ, কথা দাও, কখনও ছেড়ে যাবে না আমাকে? তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচব না আবীর।”

“না, যাব না”। আবীর মাধবীর চোখের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল। মাধবীও তাই। দুজনের চোখে চোখ। মাধবীর গভীর ঘনকালো চোখ দুটো যেন আরও দূর্বল করে দিচ্ছিল আবীরকে।

আবীরের চোখে অশ্রু। স্বর্গীয় আনন্দের অশ্রু। বৃষ্টির পানির সাথে আবীরের অশ্রু মিশে যাচ্ছে। দেখা যাচ্ছে না। আবীর মাধবীর ভেজা কপালে চুমু খেল। আবীর মনে মনে ভাবল, “এত সুখ কি তার কপালে সইবে”? আবীর এক হাত দিয়ে মাধবীর ভেজা শরীর তার শরীরের সাথে চেপে ধরল। দুজন মুখোমুখি। আবীর ধীরে ধীরে তার তপ্ত ঠোঁটটি মাধবীর রক্তিম ঠোঁটের দিকে এগিয়ে নিতে থাকল। মাধবীর গরম নিশ্বাস স্পস্ট টের পাচ্ছে আবীর। দুটি শরীর, দুটি মন যেন এক হয়ে মিশে যাচ্ছে ভালবাসার অন্তহীন গভীরতায়।

এক বছর পর।
“আবীর, তোমার মনে আছে? ঠিক এক বছর আগে, ঠিক এই এখানটায় আমাদের প্রথম দেখা হয়েছিল। “
“মনে আছে”।
“আর আজ আমরা বিয়ে করতে যাচ্ছি ঠিক এখানটায় এসেই। আমাদের ভালবাসার চূড়ান্ত রূপ দিতে যাচ্ছি আজ”।
“হুমম, আবীর অন্যমনস্কভাবে তাকিয়ে আছে বাইরের দিকে। কিছুক্ষন পর বলল,
“ওইদিনের মত আজও তাই তোমাকে সবুজ শাড়ি পরে আসতে বলেছি, আর চুলে রজনীগন্ধা”।
মাধবী ফ্যাকাশে হাসি হেসে বলল, “তুমিও তাই”।
“হুমম”।
“এ্যাঁই, আজও আমার ওইদিনের মত খুব ভয় ভয় করছে”, মাধবী কাঁপা কাঁপা গলায় বলল।
“কেন সোনা”?
“আমার কেন জানি মনে হচ্ছে, বাবা ঠিকই আমাদের খুজে বের করে নিবে। কাল পালিয়ে আসার আগমুহুর্তে কেমন করে তাকাচ্ছিলেন বাবা। বাবা, আমার জন্য পারেন না, এমন কোন কাজ নেই আবীর। খুব ভয় করছে আমার, আবীর। এখানে যদি বাবা তার সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে আসেন। তোমাকে যদি ওরা কিছু করে ফেলে। তোমার যদি কিছু হয়, আমি বাঁচব না। আমাকে একটু জড়িয়ে ধরবে, আবীর”।
আবীর জড়িয়ে ধরল মাধবীকে, “ভেব না জান, কিছু হবে না। সব ঠিক হয়ে যাবে, ভরসা রাখ, লক্ষিটি”।

হঠাৎ ভোঁ ভোঁ করে কেঁদে উঠল মাধবী। আবীর আরও জড়িয়ে ধরল মাধবীকে। এমন সময় ভরাট স্বর শুনে চমকে উঠল মাধবী।
“তুই ই আমার মেয়েকে…..। এই ধর”।
পেছনে ফিরে তাকিয়ে মাধবীর পিলে চমকে উঠল। মাথা ঝিমঝিম করতে লাগল। গলার স্বর আটকে যেতে থাকল। সামনে বাবা দাড়িয়ে। সাথে তার সসস্ত্র গুন্ডাদল।
আবীর করুন চোখে মাধবীর দিকে তাকিয়ে থাকল কিছুক্ষন। আসন্ন পরিণতি মোকাবিলায় শক্তি অর্জনের চেষ্টা করতে লাগল আবীর মুহুর্তেই। মাধবী আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে থাকল আবীরকে। মাধবীর বাবা এগিয়ে আসতে লাগল তীব্র বেগে তার সসস্ত্র বাহিনী নিয়ে।



[------ ধ্যাৎ, এমন সময় কারেন্ট চলে গেল। শালার লোডশেডিং। বিদ্যুৎমন্ত্রির গোষ্টি গিলাই।

পুনশ্চ: মাননীয় প্রধানমন্ত্রি, “ডিজিটাল বাংলাদেশ উইথ নো ইলেকট্রিসিটি” আমাদের দরকার নাই। প্লিজ, বিদ্যুৎ উৎপাদনের কিছু একটা ওয়ে বের করেন। আর কত! নাটক-ফাটক তো কিছুই দেখতে পারতেছি না। অন্তত ভালবাসায় লোডশেডিং কোনভাবেই মানা যায় না]
আরেকটু পড়ি, কি বলেন.......

বৃহস্পতিবার, ১ এপ্রিল, ২০১০

কলেজ শেষের দিন (আজাইরা প্যাঁচাল)…….

আইজ আজাইরা প্যাঁচাল ছাড়া কিছু পাড়ুম না ঠিক কইচ্ছি। সো, গম্ভীর আর ভাববাদীরা এ পোস্ট মাড়াইয়েন না কইয়া দিলাম।

তখন ছিল কলেজ কাল। কলেজের নাম মুরারিচাদঁ কলেজ। কেমতে কেমতে কেটে গেল কলেজের দুই দুইটা বছর। টের পাইনি। সত্যই, মাঝি মাঝি ভাবি আর টাসকি খাই। আমার জীবনের সবচেয়ে মজাক সময় কেটেছে এই পাহাড় ঘেরা নয়নকাড়া কলেজটিতে। এই কলেজেরে চার বাইন্ডারির ভেতরেই আমার প্রখম নচিকেতা আর জেমসের ঝাকা-নাকা গানের সাথে মেশা। “লরেল জেল”এ মাখা চুল নিয়া আর ছয় প্যাকেট ওয়ালা জিন্সের ট্রাউজারে পাংকু কায়দায় পেছনের দুই প্যাকেটে হাত ঢুকিইয়া মাঞ্জা মেরে মেয়েদের সামনে দিয়া হেলেদুলে হাটাঁর ত তখন থেকেই শুরু। জীবনের প্রথম কোন রুপসী ললনার “এই উজবুক, রাস্তা মাপ” গালি শুনে টাসকি খাওয়া, প্রথম প্রেম, শেষ প্রেম, জেমস বন্ড সাবের মত সিগারেটে টান দিয়ে দিলদরিয়া হই যাওয়া, পাড়ার ভদ্র (!) পুলাপানগো লগে বইয়া নীল-লাল ছবি দেখা, এই রকম মেলা ঘটনার চাক্ষুস দাবীদার আমার এই কলেজ লাইফ।


মুই ছিলাম বেজায় ভালা (!) ছাত্র। দুই টার্ম ফাইনালের আগে নয়-নয় আঠার দিন আর দুই ইয়ার জেঞ্জের আগে চৌদ্দ-চৌদ্দ আঠাশ দিন, সর্বসাকুল্যে ছেছল্লিশ দিন ছাড়া বইয়ের ছায়ার ধার দিয়েও যেতাম না। কেউ এ নিয়ে টিটকারী মারলে সাথে সাথে রক্তিম চোখে রবীদা আর নিউটনের শিক্ষাজীবনীর দৃষ্টান্ত ঝাড়তাম। রবীদা আর নিউটন না, আমার চোখরাঙ্গানী দেইখা ওরা বলত, “ঠিকই তো, ছেছল্লিশ দিন তো মেলা দি, খাওয়া-দাওয়া কইরবেন নিয়মিত, স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রাইখেন। পড়তে পড়তে তো কন্ঠনালী বের হয়ে পড়তাছে”।

সত্যই, ব্যাফক মজাকে মজাক দিন ছিল তখন। শুধু পরীক্ষা, থিসিস, প্রজেক্ট আর টার্ম ফাইনাল এইসব আজেবাজে, ফাউল জিনিসগুরো যদি না থাকত তাইলে লাইফটা আরো জোশ হইত। এইসব বিরক্তিকর জিনিসগুলো জ্বালাইয়া মারত সবসময়। এসবের জন্যি গন্ধরাজ নারিকেল তেল আর স্যান্ডেলিনা ডেইলি সোপের সৌজন্যে প্রচারিত “থ্রি স্ট্রুডিজ” টাও দেখতে পারতাম না নিয়মিত। আফসোস!

আমার কলেজ জীবনের সবচেয়ে প্রিয় শিক্ষক ছিল মাছুম স্যার। ভাল পড়ানোর জন্যি নয়, ক্লাসে অন্যদের থেকে আমাকে বেশি বেশি সমীহ করেন, সেটাও নয়, ক্লাসে এসে মজার মজার গল্প বলতেন, তাও নয়; উনি ক্লাসে পারসেন্টজ নেন না সেজন্য। আই লাভু স্যার, ইউ আর চো চুইট। অবশ্য পরীক্ষার দিন উনার বৈধ ছাত্র প্রমান দিতে শেষ পর্যন্ত আমাকে অবৈধ পথ নিতে হয়েছিল সেদিন। সে এক বিরাট ইতিহাস। আজ বলা যাবে না।

উড়া-ধোরা মতিলাল প্রফেসর। ডিজিটাল স্যার। ডিজিটাল ভাব (!) ছাড়া তো কথাই বলেন না। মেয়েদের যা বিশেষ পছন্দ ছিল। ক্লাসে পড়ানোর আগে মজার মজার গল্পও বলতেন, তাই ক্লাসে উপচে থাকত পড়া ভিড়। সামলানোই দায়। একদিন ভরা ক্লাসে স্যারের উড়া-ধোরা প্রশ্ন: “বলত, চন্দ্রশেখর জাহাজে বসে কিভাবে বিজ্ঞানী এডিংটনের সাথে যোগাযোগ রাখতেন?” সাথে সাথে ক্লাসের অন্যতম তুখোর ছাত্র তানভীরের ডিজিটাল উত্তর: “ইমেইলে স্যার”। পরে, স্যারের ডিজিটাল ঝাড়ি। “এত বেরেন লইয়া ঘুমাস কেমনে?”। মেয়েদের সামনে কঠিন ঝাড়ি খাইয়া তানভীর তো এক্কেবারে তব্দা। পরে এনালগি কায়দায় বেশি বেশি মার্ক দিয়া ডিজিটাল স্যার তার দিল-খুশ করাইছিলেন।

ফ্যাপড়া উত্তর দেয়া শুরু করেছিলাম সেকেন্ড ইয়ারের বায়োলজি প্র্যাকটিকেল ক্লাস থেকে। এক্সামিনার মাহবুব আখন্দ। প্রশ্ন দেইখা তো আমার মাথা ছানা-বাড়া। চোখে আন্ধার দেখতিয়াছি। কিছুই তো পারিনা। তাও নাছোড়বান্দা, উত্তর ছাড়া যাবে না। প্রশ্ন ছিল, উদ্ভিদের বিবর্তনবাদ ত্রিভুজাকার ছকের মাধ্যমে প্রদর্শন করে দেখাও। আর যাই কোথায়! সাথে সাথে কাঠপেন্সিল ভালভাবে সার্প করিয়া সুন্দর করে তিনটা ডান্ডি দিয়ে একটা ত্রিভুজ আকঁলাম আর মাঝখানে একটা হেইলা-দুইলা লতাগাছ একেঁ নিচে চিত্রের নাম দিলাম। “বিবর্তনবাদ: দুর্বাঘাস টু লাউগাছ”।

তখন চৈত্র মাস। কেমিস্ট্রি পরীক্ষার চারদিন আগের রাত। সবে নতুন বই খুললাম। ঘষামাজা নাই। চকচকে ঝকঝকে সব পাতা। পরীক্ষা আসলে আমার এমনিতেই অসুখ-বিসুখ শুরু হইয়া যায়। তারমধ্যে পুরা একদিন কেমিস্ট্রি নিয়ে ডুবে থাকা ওইদিন। বুঝেন অবস্থা। ফলাফল: প্রচন্ড মাথা-ধরা। ধরা মানে যেই-সেই না, যদু-মধু না, একেবারে রাম ধরা। অতিপঠনে শইল তো অভ্যস্ত না! মানবে কেমতে বলেন? মা মধুমাখা মুখে সাজেশান দিলেন, “যা বাইরে থেকে একটু হেটে আয়, ভাল লাগবে”। মাতৃ আজ্ঞা শিরোধার্য। পালন করতেই হবে। হাটার আগে তুমুল পড়োয়া ছাত্রের মত দশটা রাসায়নিক যৌগের নাম একটি ছোট্ট কাগজে লিখে জপতে জপতে যাচ্ছিলাম। সোডিয়াম ক্লোরাইড, পটাসিয়াম নাইট্রেড, এইগুলান। বের হওয়ার আগে দাদু কয়েকটি বিদেশী সিনেমার লিস্টি দিয়েছিলেন। আসার সময় নিয়ে আসতে হবে, তিনি দেখবেন। ভিডিও মামাকে সিনেমার লিস্টি হাতে ধরিয়ে দেওয়ার পর বেটা কিছুক্ষন কঠিন মুখ করে তাকিয়ে এদিক-ওদিক দেখার পর বিরস মুখে বলল, “ভাই একটাও তো নাই, ছবিগুলা মনে হয় খুব লেটেস্ট”। দিলাম ঝাড়ি। “কি দোকান বসাইছেন মিয়া, এতগুলার মধ্যে একটাও থাকে না!” গৃহ প্রত্যাবর্তনের পর দাদুর টিটকারী, কিরে সিনেমার লিস্টিটা ফেলে গেলি যে? বুঝলাম, চৈত্রের গরম, বেরসের রসায়ন আর রসের মাথা-ধরা মিইল্লা আমার মাথা গেছে আউলাইয়া। আর আউলা মাথায় সিনেমার লিস্টি না দিয়ে দিলাম রাসায়নিক নামের লিস্টিটা। আর সোডিয়াম ক্লোরাইড, পটাসিয়াম নাইট্রেড এর লিস্টিটা দেইখাই ভিডিও মামা বিরস মুখে বলেছিল “ছবিগুলা নির্ঘাৎ লেটেস্ট, তাই একটাও তাদের কালেকশনে নাই”।

আমার আরেকজন টপ ফেবারিট স্যার ছিল, হৃষি কেশ স্যার। বিশাল গিয়ানি নুক। পাগলা কিসিমের, মাথা পুরাই আউলা। জটিল জটিল সূত্র পড়ান শুধূ। “হাইজেনবার্গ ল ইন মেট্রিক্স ফর্ম”- উনার প্রিয় সূত্র। ফেবারিট হওয়ার হেতু হল, উনি পরীক্ষার খাতায় চোখ বুলান না। খাতায় সব প্রশ্নের বিপরীতে কিছু লিখা আছে কিনা সেটাই উনার কাছে বিবেচ্য বিষয়। কি লিখা আছে সেটা বিবেচ্য বিষয় নয়। আমাদের সবার কাছে উনি তাই সিম্পলি জোশ স্যার। ফাইনাল পরীক্ষা। চারটি প্রশ্ন। তিনটি পারি, আরেকটা পারিনা। চিন্তা কি? তিন নম্বরটার উত্তরটাই চার নন্বরে আবার লিখলাম। রেজাল্ট? সেকেন্ড হাইঢেস্ট। মারহাবা।

এই ঘটনাটা আমাদের পপুলার পেসাব মকবুলকে (নিক নেম, ভয়ে আসল নাম মাড়াচ্ছি না) নিয়া (একবার এক স্যারের কঠিন ধমক খাওয়ার পর কে একজন তার প্যান্ট ভিজা দেখছিল, সেই থেকেই তার নাম পেসাব মকবুল)। প্রশ্নে বিশাল বড় একটা ঘটনার বিবরন দিয়ে শেষে ইংরাজিতে লিখা: “ড্র দি সিচুয়েশান হয়াট ইউ ওয়াচ..”। এই “ওয়াচ”-কে ঘড়ি আর “ড্র” মানে আঁকা ভেবে সে বড় করে একটা গোল্লা একেঁ চারদিক ঘুরিয়ে ১ থেকে ১২ পর্যন্ত লিখে তিনটা বড় বড় কাটাঁ আঁকল। নিচে ক্যাপশন দিল “দেয়াল ঘড়ি”, ইংরাজিতে "Wall Watch"। সেই ঘড়িতে সে বর্তমান সময়টাও পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে একেঁ দিয়ে আসছিল। তারপরও সে কেন এখানে কোন মার্ক পেল না, এটা তার কাছে এখনও রহস্য। ----এরকমই বিচিত্র চরিত্রের Peculiar ঘটনার সমাবেশে বিচিত্রময় সমারোহে সমৃদ্ধ এই কলেজ জীবন। আর না। অনেক হইছে।

অনেক আউল-ফাউল কথা ঝাড়লমি। সময় খাকলে মন্তবাইন, আর পারলে দু'তিনটা কথা শুনিয়ে যাইয়েন। ভালু থাকইন। অনেক অনেক শুকরিয়া।
আরেকটু পড়ি, কি বলেন.......

রবিবার, ২৮ মার্চ, ২০১০

অতৃপ্ত প্রতিশোধ-৫ (শেষ পর্ব)

অতৃপ্ত প্রতিশোধ-১
অতৃপ্ত প্রতিশোধ-২
অতৃপ্ত প্রতিশোধ-৩
অতৃপ্ত প্রতিশোধ-৪
অতৃপ্ত প্রতিশোধ-৫
৫.
রতনীকান্ত একটি থলে থেকে গ্লাসভর্তি খেজুরের রস নিয়ে তাপস বাবুর দিকে এগিয়ে দিল। তাপস বাবু সেটা হাতে নিয়ে বললেন, “বাড়িটা অভিশপ্ত হওয়ার ঘটনাটা একটু খুলে বলবে?”
রতীকান্ত গলা খাকাড়ি দিয়ে বলা শুরু করল। “আজ থেকে প্রায় দেড়শ বছর আগে এই বাড়িটা ছিল এলাকার প্রভাবশালী রায় পরিবারের। নাম রায়বাড়ি। তথাকথিত রাজা না হলেও এই এলাকার শাসনভার তাদের দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত হত। প্রচুর প্রভাব-প্রতিপত্তি ছিল তাদের। কথা বলার ফাকেঁ স্যাঁতস্যাঁতে মেঝের দিকে তাকাতেই দেখি হলুদ ধোরা সাপটা পাশের ঘর থেকে বের হয়ে কিলবিল করে আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে ধীরে ধীরে। তখন রতীকান্ত হাত দিয়ে বিশেষ কায়দায় ইশারা করতেই সাপটা উল্টাদিকে গলে বেরিয়ে গেল। বুঝা গেল সাপটাকে পোষ মানিয়ে ফেলা হয়েছে।


রতীকান্ত আবার বলতে লাগল, তারা ছিল দুই ভাই, প্রতাপ রায় আর প্রদীপ রায়। দুই ভাইয়ের মধ্যে সবসময় বিরোধ লেগেই থাকত। বয়োজৌষ্টতার হিসেবে প্রতাপ রায়ের উপর এলাকার শাসনভার বর্তায়। যা স্বার্থলোভী ছোটভাই প্রদীপ রায় কখনই মেনে নিতে পারেনি। সে অযোচিতভাবে ক্ষমতার মসনদে আরোহন করতে চেয়েছিল সবসময়। একসময় রায়বাড়ির ঘর আলো করে আসল প্রতাপ রায়ের প্রথম পুত্রসন্তান সৌরভ রায়। রায় পরিবারে আনন্দের বন্যা বয়ে যেতে লাগল তখন। তার দু’বছর পর এলাকায় কোন এক কারনে ভয়াবহ মহামারী দেখা দিল। ঘরে ঘরে অজানা এক রোগে মানুষ মারা যেতে লাগল। বাতাসের বেগে ছড়িয়ে যেতে লাগল এই মহামারী রোগটি। এক সাধুবাবা ওই বিশেষ সময়কে অভিশপ্ত হিসেবে ছড়াতে লাগলেন তখন। কিছুদিনের মধ্যে প্রতাপের প্রথম স্ত্রী আবারও সন্তানসম্ভবা। একদিন রাতে প্রতাপ রায় স্বপ্নে দেখলেন যে একটি কুয়ো কেটে কিছুক্ষনের জন্য তার আগত নবজাতককে কুয়োর নিচে শুয়ে রাখলে গ্রামের বর্তমান অভিশাপটি কেটে যাবে। গ্রামের স্বার্থের কথা বিবেচনা করে স্ত্রীর অনেক আহাজারী উপেক্ষা করলেন প্রতাপ রায়। ফুটফুটে নবজাতক হওয়ার পরের দিনই কুয়ো কাটা হল কালীমন্দিরের ঝোপের পাশে। কুয়ো কাটার পর কোন এক রহস্যজনক কারনে পানি উঠছিল না কুয়োতে। তারপর নিষ্পাপ নবজাতককে নামানোর কিছুক্ষন পরই প্রবল বেগে পানি এসে উপছে পড়ল কুয়োটি। কুয়োর পানি এতই প্রচন্ড বেগে ধেয়ে আসতেছিল যে কোনভাবেই শিশুটিকে আর বাঁচানো গেল না। পরে শিশুটির নিথর দেহটি পানিতে ভেসে উঠল কুয়োর উপর। পরে স্বপ্নের আশিষটাই সত্যি হতে লাগল গ্রামে। গ্রামের মহামারীটি কালিমার কৃপায় দুর হতে লাগল ধীরে ধীরে। আর নতুন কোন মরার খবর আসল না। আবার ঘরে ঘরে মানুষ সুখে দিন কাটাতে লাগল। শুধু রায় পরিবারে রয়ে গেল তাদের সন্তান হারানোর অসহ্য যাতনা আর শুন্যতার দীর্ঘশ্বাস।

গ্রামের স্বার্থের কথা বিবেচনা করে প্রতাপ রায়ের সন্তানবিসর্জন গ্রামের মানুষদের কাছে প্রতাপ রায়ের গ্রহনযোগ্যতা আরো বাড়িয়ে দিল। কিন্তু সেই বাড়তি গ্রহনযোগ্যতা ছোট ভাই প্রদীপ রায়ের কাছে প্রবল ঈর্ষার কারন হয়ে দাড়াল। প্রদীপ রায় তখন ছলে বলে তার অবৈধ জিঘাংসা হাসিলের জন্য উঠে পড়ে লাগল। সে সুযোগ খুজতে লাগল যে কোন উপায়ে বড় ভাইকে ক্ষমতার সমনদ থেকে নামিয়ে দেওয়ার। দু:খজনকভাবে সুযোগও আসতে লাগল ধীরে ধীরে। একদিন প্রতাপের স্ত্রী কুয়োর ধারে বসে সৌরভকে স্নান করাচ্ছিলেন। ওত পেতে থাকা প্রদীপ বড় একটা শক্ত ঢিল ছুড়ে মারল প্রতাপের স্ত্রীর মাথার উপর। প্রচন্ড রক্তক্ষরন হতে লাগল সাথে সাথে। প্রদীপ কালক্ষেপন না করে প্রতাপের স্ত্রীর নিস্তেজ দেহটি কুয়োতে ফেলে দিয়ে রটালো কুয়োতে পরে মারা গিয়েছে প্রতাপের বৌ। সাত বছরের সৌরভ ফ্যালফ্যাল তাকিয়ে দেখল সব। তারপর থেকে সৌরভের দেখাশোনার ভার বৃদ্ধ কেয়াটেকার মতিবাবুই নিল। সফল হয়ে প্রদীপ একই উপায়ে প্রতাপকে হত্যা করার পরিকল্পনা করতে লাগল তারপর। আর এদিকে বৌ-সন্তানকে হারিয়ে পাগলের মত হয়ে গিয়েছিল প্রতাপ রায়। অপ্রকৃতস্তের মত প্রলাপ বকত সবসময়। সেই অসহায় সানুষকেও বাচঁতে দিল না ছোটভাই নরলোভী প্রদীপ। একদিন সুযোগ বুঝে কুয়োয় ধারে কর্মরত প্রতাপকে পেছনদিক থেকে ঢিল মেরে কুযোতে ফেলে দিল প্রদীপ। আর মুহুর্তেই সে পেয়ে গেল রায় বংশের সব ক্ষমতা। সেই ক্ষমতা পেয়েও সে থেমে ছিল না। রায় বংশের ভবিষ্যৎ মসনদ দাবীদার প্রতাপের বড় ছেলে সৌরভকেও মেরে ফেলার জন্য উঠেপড়ে লাগল প্রদীপ রায়। পরিস্থিতি আন্দাজ করতে পেরে সৌরভের কেয়ারটেকার মতিবাবু সৌরভকে নিয়ে পালিয়ে গেল গ্রামের পাশের একটি নির্জন অরন্যে। সেখানে তিল তিল করে সৌরভকে বড় করতে লাগল মতিবাবু। কিন্তু সেই গহীন অরণ্যেও সৌবল রেহাই পেল না হিংস্র প্রদীপের দুষ্ট নখর থেকে। বছর কয়েক পর প্রদীপ ঠিকই খুজে বের করে নিল সৌরভকে। তাকেও নৃশংসভাবে হত্যা করে কুয়োর পানিতে ফেলে দিল সে।
তারপর কয়েকবছর প্রদীপ রায় গ্রামের নিরীহ মানুষদের উপর শাসনের নামে নীপিড়ন, অমানুষিক অত্যাচার চালাতে লাগল। এভাবেই এক সময় রায়বাড়ি অভিশপ্ত বাড়ি হয়ে উঠল সবার কাছে। একসময় গ্রামের মানুষ ধৈর্য্যহারা হয়ে ক্ষেপে উঠল। এক হয়ে লড়াই করে গ্রামছাড়া করল রায় পরিবারের সবাইকে। তারপরে আমার দাদা বৃদ্ধ কেয়ারটেকার মতিবাবুকে বাড়ির দেখাশোনার দায়িত্ব দিল তারা। এভাবেই সমাপ্তি হল এই রায় বাড়ির ঘৃন্য ইতিহাস একসময়।
লোকটি থামলে হতভম্বের মত কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকলেন তাপস বাবু এই পুরো বাড়িটির দিকে। এই বাড়িতেই দেড়শ বছর আগে এতগুলো খুন হয়ে গেল। তিনি কোনভাবেই বিশ্বাস করতে পারছেন না। ভাবতেই গায়ের লোম খাড়া হয়ে যাচ্ছিল তাপস বাবুর।

খেজুরের রসে শেষ চুমুক দিয়ে তাপস বাবু রতীকান্তকে জিজ্ঞেস করলেন্, “শুভ্রদের বাড়িটা কোনদিকে? সে একটু যেতে চায় তার বাড়ি”।
“কোন শুভ্র? শুভ্র রায়?” পাল্টা প্রশ্ন করল রতীকান্ত।
তাপস বাবু বললেন, “হুমম”।
রতীকান্ত বলল, “সেইতো সৌরভ রায়, প্রতাপ রায়ের বড় ছেলে যাকে প্রদীপ রায় সবার শেষে নৃশংসভাবে হত্যা করল। গায়ের রং ধবধবে ফর্সা ছিল বলে দাদীমা “শুভ্র” নাম রেখেছিল।”
হয়তো প্রশ্ন ঠিকমতো বুঝতে পারে নাই ভেবে তাপস বাবু আবার কিছু বলতে যাচ্ছিলেন, এমন সময় রতীকান্ত বলতে লাগল, “ছেলেটার বাম গালে ছিল একটি আকাঁবাকাঁ কাটা দাগ। ছোটবেলা বড় একটা ধার কাঠের মূর্তিতে উপর পড়ে গিয়ে কেটে গিয়েছিল এর কচি গাল। এই কাটা দাগে অনিন্দ্যসুন্দর সৌরভকে আরও সুন্দর লাগত বলে সবাই বলাবলি করত। মারা যাওয়ার আগমুহুর্ত পর্যন্ত সে সবসময় একটি মাঝারি কালো পাথর নিয়ে ঘুরে বেড়াত। একমাত্র সেই তার পিতামাতার হত্যার নীরব সাক্ষী ছিল। তাদের দুজনকেই পাথরের ঢিল ছুড়ে মারা হয়েছিল। তাই হয়তো সে পাথর সাথে রাখত প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য।”

মুহুর্তে তাপস বাবুর গা কাপঁতে লাগল। এত বড় বিস্ময়সাগরে বোধ হয় আর পরেননি কখনও তাপস বাবু। তাহলে কি শুভ্র……? গলার স্বর আটকে যেতে লাগল তাপস বাবুর। কেয়ারটেকার আরও কি কি বলছিল, কিছুই আর কানে ঢুকছে না তাপস বাবুর। একটি অদ্ভুত ঘোরের মধ্যে ছিলেন তিনি। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছিল তখন। রতীকান্ত নিজেই বাড়ি ফেরার জন্য অস্থির হয়ে উঠছিল। ফেরার আগে অভিশপ্ত বাড়িটির দিকে আবার তাকিয়ে থাকলেন কিছুক্ষন। অন্যমনস্ক হয়ে গেলেন কিছুক্ষনের জন্য। বাড়ির পেছনদিকটার ঘরে কালো ধোরাটিকে কিলবিলিয়ে আবার বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করতে দেখলেন।
রতীকান্ত পরে এই সন্ধ্যায় নিজে তাপস বাবুকে বাড়ি পৌছে দিলেন আর যাবার সময় একবার তার বাড়িতে পদধুলি দেওয়ার জন্য নেমন্তনও দিয়ে গেলেন।

তাপস বাবু বাসায় এসেও একটা ঘোরের মধ্যে থাকলেন। মাথায় শুধূ শুভ্রর বলা কথাগুলো একে একে ঘোরপাক খাচ্ছে। আজ পূর্ণিমা। আজ শুভ্রর আসার কথা। তিনি টেবিলের ধারে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে লাগলেন শুভ্রর জন্য। জানালা দিয়ে প্রবল বাতাস আসছে। শ্রাবন মাস। বৃষ্টি-বাদলের মাস। তবু এবার ঝড়-ঝাপ্টা একটু বেশিই অনুভুত মনে হচ্ছে। বাতাসের প্রবল ঝাপটায় জানালার ডালা বার বার ধাক্কা খাচ্ছে পাশের দেয়ালটিতে। শুভ্র আসতে পারে ভেবে জানালাও বন্ধ করছেন না তাপস বাবু। তাপস বাবুর মনে পড়ল শুভ্র আজ তার জন্য একটি উপহার নিয়ে আসবে বলেছিল। আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখলেন বড় থালার মত বড় চাদঁ উঠেছে আজ। চাদেঁর ম্লান আলোয় চারিদিকে কেমন গা ছমছম করা ভুতুরে পরিবেশ। অনেক রাত হয়ে গেল। না, শুভ্র আসেনি। মনে পড়ল শুভ্রর একটি কথা: “আমি কারো অতি আগ্রহে দেখা দেই না”। তাহলে কি সে আর আসবে না আর। এইরকম চিন্তা করতে করতেই তাপস বাবু একসময় গভীর ঘুমের রাজ্যে তলিয়ে গেলেন।

ঘুম ভাঙ্গল পরিমলের প্রবল দরজা ধাক্কানিতে। বিছানা থেকে উঠে দরজা খুলে দিলেন তাপস বাবু। দরজা খুলামাত্রই পরিমল তাপস বাবুর পায়ে লুটিয়ে পড়ল। বাবু, আপনি আমার বড় উপকার করলেন, বাবু। চেয়ারম্যন সাব কাল সন্ধেবেলা আমাকে ডেকে নিয়ে আমার বন্ধকী বাড়িটি ফিরিয়ে দিয়েছেন গো, বাবু। আপনি আমার বড় উপকার করলেন গো, বাবু।

অনেক কষ্টে বিগলিত তাপস বাবু পরিমলের হাতখানা ছাড়িয়ে আনলেন নিজের পা-যুগল থেকে। সকালের প্রাত্যাহিক কাজ সেরে জানালার ধারে টেবিলের দিকে তাকাতেই তাপস বাবুর গা মোচর দিয়ে উঠল। গায়ের রক্ত হিম হয়ে গেল। টেবিলের উপর একটি মাঝারি কালো পাথর রাখা। তাহলে কি কাল গভীর রাতে এসেছিল শুভ্র। এটাই কি তার সেই উপহার? এটাই কি সে মারা যাওয়ার আগ মুহুর্ত পর্যন্ত সাথে নিয়ে ঘুরে বেড়াত তার পিতা-মাতার হত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য। তাপস বাবুর মাথা ঝিমঝিম করতে লাগল। তাহলে কি শুভ্র তার অতৃপ্ত প্রতিশোধের ভার তার উপর দিতে চাচ্ছে নিজে ব্যর্থ হয়ে? তার অতৃপ্ত আত্মা কি তার নিজস্ব প্রতিশোধের জ্বালা আরেকজনের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে? যাতে করে সেই প্রতিশোধের জ্বালা জিইয়ে রাখা যায় যুগ থেকে যুগান্তরে। কিন্তু, এ কি করে সম্ভব? কিছুই চিন্তা করতে পারছেন না তাপস বাবু। সবকিছু খুব এলোমেলো লাগছে তাপস বাবুর কাছে। কিছুই গুছিয়ে ভাবতে পারছেন না তাপস বাবু।

তারপর অনেক রাত অবধি জেগে থাকলেন শুভ্রর অপেক্ষায়। কিন্তু আর কোনদিন আসেনি শুভ্র। হয়তো আর কখনও আসবেও না।

ফিরে যাবার সময় চলে এসেছে তাপস বাবুর। আজই চলে যাবেন। পরিমল অনেক পিঠাপুলি ভরা একটি থলে ধরিয়ে দিলেন তাপস বাবুর হাতে। সেগুলো নিয়েই বের হলেন তাপস বাবু্। যাবার আগে কুয়োতে শুভ্রর দেওয়া পাথরটি ফেলে দিয়ে গেলেন। এবং কুয়োর গভীর টলটলে পানির দিকে আনমনে তাকিয়ে থাকলেন অনেকক্ষন। মনে মনে বললেন, শুভ্র, ক্ষমা কর, পারলাম না তোমার অতৃপ্ত আত্মাকে তৃপ্ত করতে, আমি অপারগ। সেটা যে আমার ক্ষমতার বাইরে।
আসার আগে শেষবারের মত আবারও তাকিয়ে দেখলেন বাড়িটা কিছুক্ষনের জন্য। এখনও কি সুন্দর ঠাঁয় দাড়িয়ে আছে পরিত্যক্ত অভিশপ্ত এই বাড়িটা। হয়তো বয়সের চাপাকলে আরও কয়েক বছর পর সবই নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। কোন অবশিষ্টই হয়তো থাকবে না। শুধূ পড়ে থাকবে কুয়োর টলটলে পানির মধ্যে মিশানো একটি অতৃপ্ত আত্মার অতৃপ্ত প্রতিশোধের প্রবল তৃষ্ঞা।

পরিশিষ্ট: এর একবছর পর তাপস বাবু শুভ্রকে নিয়ে একটি উপন্যাস লিখলেন। নাম দিলেন: “প্রতিশোধের পাথর”। তাপস বাবু জানতেন, শুভ্রর চাপিয়ে দেওয়া দয়িত্ববার বহন করার ক্ষমতা হয়তো তার নাই। তাই নিজেকে অপরাধীও ভাবতে লাগছিলেন তাপস বাবু। কিন্তু এটাও জানতেন শুভ্র তার অতৃপ্ত প্রতিশোধকে ছড়িয়ে দিতে চেয়েছিল সামর্থ্যবানদের উপর। তাপস বাবু সামর্থ্যহীন হয়ে নিজে ব্যর্থ হলেও গল্পের মাধ্যমে অন্যদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষীন চেষ্টাতো করলেন। এতেও যদি কিছুটা তৃপ্তি পাওয়া যায় একটি অতৃপ্ত আত্মার অর্পিত দায়িত্ব পালনের।

(শেষ)
আরেকটু পড়ি, কি বলেন.......

অতৃপ্ত প্রতিশোধ-৪

অতৃপ্ত প্রতিশোধ-১
অতৃপ্ত প্রতিশোধ-২
অতৃপ্ত প্রতিশোধ-৩
অতৃপ্ত প্রতিশোধ-৪
অতৃপ্ত প্রতিশোধ-৫
৪.
আজ সকাল থেকেই বৃষ্টি হচ্ছে। যেই-সেই বৃষ্টি না, উথাল-পাতাল বৃষ্টি। একবার দক্ষিন পাশ থেকে ঝাপটা আসছে তো একবার উত্তর দিক থেকে। সাথে পাগলা-টাইপ বাতাস। এমন বৃষ্টি দেখেই বোধহয় কবিগুরু গেয়ে উঠেছিলেন, “পাগলা হাওয়া, বাদল দিনে….”। বড় মাপের কবি-সাহিত্যিকদের সবকিছুতেই আনন্দ যা সাধারনের মধ্যে থাকে না। আর সকল আনন্দই তারা অমর করে রেখে যাওয়ার চেষ্টা করেন তাদের শিল্পের মধ্য দিয়ে। সাধারনরা যা তৈরি করতে না পারলেও উপভোগ করতে পারেন। আর উপভোগের সফল গ্রহনযোগ্যতার মধ্য দিয়েই শিল্পেরসৃষ্টির মুল সার্থকথা। ঘুম থেকে উঠে এখনও বিছানায় শুয়ে আছেন তাপস বাবু। জানালা দিয়ে বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে আছেন একমনে। আকাশ ঘন কালো মেঘে ঢাকা। জানালার ধারেই একটা বড় নারকেল গাছ। গাছের পাতাগুলো ঝড়ের ঝাপটায় লেপটে গেছে। গাছের ফাকঁ দিয়ে গ্রামের সরু মেঠো পথটি দেখা যাচ্ছে। শুভ্র বলেছিল এই রাস্তা দিয়েই তাদের বাড়ি যেতে হয়। তাপস বাবু ঠিক করেছিলেন আজ ওর বাড়ি যাবেন একবার। কিন্তু আকাশের এই রৌদ্রমূর্তিতে যাওয়া ঠিক হবে বলে মনে হয় না। পরে তাপস বাবু সিদ্ধান্ত বাতিল করলেন আজকের জন্য।


পরদিন তাপস বাবু অনেক বেলা করে ঘর খেকে বের হলেন। কাল অনেক ঝড়ের পর আজ আকাশ ঝকঝকে। প্রকৃতির শক্তি ক্ষয়ের পর আজ থেকে আবার নতুন করে শক্তি অর্জনের চেষ্টা। মেঠো পথ, কাদাময়। ঝড়ের কারনে পিচ্ছিলও। হাটতে বেজায় কষ্টই হচ্ছে। শুধু শুভ্রর বাড়ি না আজ পুরো গ্রামটাও ঘুরে ঘুরে দেখবেন বলে ভেবে রেখেছেন। শুভ্রর দেওয়া কথামতই এগুতে লাগলেন ধীরে ধীরে তাপস বাবু। একটি যুবককে এই পথ ধরে আসতে দেখে জিজ্ঞেস করলেন পথটি সম্পর্কে। লোকটি হা করে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকল। তারপর জবাব না দিয়েই চলে গেল। কি ভেবেছে কে জানে! পরে একজন বয়োবৃদ্ধকে আসতে দেখে আরেকবার জিজ্ঞেস করলেন তাপস বাবু। প্রশ্ন শুনে লোকটির চেহারা পাল্টে গেল অনেকটা। কথা না বলে হাত ইশারা করে দেখিয়ে দিয়ে চুপচাপ আবার তার পথে হাটা শুরু করল। তাপস বাবু সবার এই নীরবতার কোন কারন খুজে পেলেন না। উটকো আগন্তুক দেখে হয়তো অস্বস্তি লাগছে তাদের কাছে। যতই এগুচ্ছেন ততই জঙ্লামত জায়গার ভেতর দিয়ে ঢুকছেন। আরও খানিকটা ঢুকার পর চারপাশে আর কোন লোকালয় দেখতে পেলেন না তাপস বাবু। ফলে আর বুঝতে বাকি রইল না যে তিনি পথ হারিয়েছেন। এমন কাউকে আর পাচ্ছেনও না যাকে অনুরোধ করবেন দেখিয়ে দেওয়ার জন্য। তবুও সামনে এগুতে লাগলেন্ হাটতে হাটতে একসময় অজস্র ঝোপ-ঝাড়ে ঘেরা একটা গহীন অরন্যে চলে এলেন। সামনে প্রচুর লতা-পাতায় ঘেরা একটি বহু পুরনো, পরিত্যক্ত রাজবাড়ির ধ্বংসাবেশ দেখা যাচ্ছে। বাড়িটা কংক্রিটের পাকা। পেছনের কিছু অংশ চালা দিয়ে ঘেরা। ভেতরে কেই থাকে বলে বলে মনে হচ্ছে না। বাড়িটা প্রাসাদতুল্য। পুরাকীর্তির অঢেল ছাপ পাওয়া যাচ্ছে এর প্রতিটা দেওয়ালে। অনেক পরিশ্রমসাধ্য, শৈল্পিক কারুকার্যের নিদর্শন রয়েছে সকল ঘরের দেওয়ালে। বুঝা যাচ্ছে, এ বাড়ির পূর্বপুরুষেরা রাজকীয় জীবন-যাপন করতেন। বাড়ির চারদিকে কেমন গা ছমছম শুনশান নীরবতা। এলাকাটা আসলেই একেবারেই জনমানবশুন্য। বাড়ির মধ্যঘরটা জলসা ঘরের মত। চারপাশটা দুতলার বারান্দা ঘেরা। বারান্দার রেলিংগুলো বেশিরভাগই ভেংঙ্গে পড়েছে কালের ভারে। জলসা ঘরের বামপাশের দেয়ালজুড়ে বড় একটি পেইন্টিং আকাঁ। অনেক জায়গার রং শক্ত হয়ে আস্তরের মত ঝুলে আছে। পেইন্টিংয়ের চারপাশটা শ্যাঁওলা ধরে অস্পস্ট হয়ে গিয়েছে বলেই হয়তো এখনও কারো সংগ্রহদৃষ্টি আকর্ষন করতে সক্ষম হচ্ছে না। ছবিটির উপজিব্য হল দুটি দেবশিশু একটি সৃর্যদেবতার দিকে একমনে তাকিয়ে আছে। একটি দেবশিশুর বাম গালে একটি গাঢ় কালো তিল। তার এক হাতে একটি ছোট পাথর। যে পাথরটি সে সূর্যদেবতার হাতে দেওয়ার ভঙ্গি নিয়ে আছে। ছবিটির বেশিরভাগ অংশই খসে পড়েছে।
চারদিকে অজস্র ধুলির আস্তরন আর মাকড়শার জাল দেখে বুজাই যাচ্ছে এদিকটায় কোন জনমানবের আনাগোনা নেই।

জলসা ঘরটা পেরিয়ে পাশের ছোট ঘরটায় উকি দিতেই গা শিরশিরিয়ে উঠল তাপস বাবুর। একটা বড় হলুদ ধোরা সাপ তার থলথলে গা পেঁচিয়ে শুয়ে আছে ঘরের স্যাঁতস্যাঁতে একটা কোনায়। তাপস বাবু ভয়ে লাফিয়ে ঘরটি থেকে বের হলেন। ঘর থেকে বের হয়ে কিছুদুর এগুতেই একটি কালীমূর্তির ঘর দেখতে পেলেন। তার ধারটাতেই একটি পরিত্যক্ত বড় গহীন কুয়ো। কুয়োর কাছে গিয়ে নিচ দিয়ে তাকানোর চেষ্টা করলেন তাপস বাবু। পানি অনেক গভীরে। ভেতরে সুর্য়ের আলোও ঢুকছে না ঠিকমতো। কুয়োর কংক্রিটের অংশগুলো ঝোপ-ঝাড়ে ঠেসা। কুয়ো থেকে পেছ ফিরে তাকাতেই তাপস বাবু হঠাৎ দেখলেন একটি বৃদ্ধলোক তার দিকে শ্যোন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আচমকা দেখে তাপস বাবুর হৃদপিন্ড কেঁপে উঠল। লোকটির চোখ-মুখ কঠিন, গায়ে ময়লা কাপড়, হাতে একটি পুটলি।
কথা বলে বুঝা গেল লোকটি এই পরিত্যক্ত বাড়ির কেয়ারটেকার। কঠিন দৃষ্টি নিয়ে তাপস বাবুকে জিজ্ঞেস করল, “এখানে কি জন্য এসেছেন?”
প্রশ্নের উত্তরের অপেক্ষা না করে লোকটি ইশারা করে তার সাথে হাটতে বলল। পরে সে পথ দেখিয়ে আবার তাপস বাবুকে জলসা ঘরটায় নিয়ে গেল।
“আপনি কি পুরাতত্নবিদ টাইপের কেউ?”-লোকটি জিজ্ঞেস করল।
“না। টুকটাক লেখালেখি করি। এখানে গ্রাম দেখতে দেখতেই ঢুকে পড়েছি”।
লোকটি তাচ্ছিল্যের স্বরে বলল-“আর অমনি অভিশপ্ত বাড়ি চষে বেড়াতে লাগলেন?”
রহস্য আছে বুঝতে পেরে তাপস বাবু মনোযোগী শ্রোতা হয়ে কেযারটেকারকে খুলে বলার জন্য পরোক্ষভাবে উৎসাহ দিয়ে যেতে লাগলেন।
“খেজুরের রস খাবেন?:-লোকটি জানতে চাইল।
“এখানে খেজুরের রস পাওয়া যায়?”-তাপস বাবু জিজ্ঞেস করলেন।
“আমি থাকি এখান থেকে দশ ক্রোশ দুরে একটি কুঠিঘরে। মাঝে মাঝে এখানে এসে বাড়িটা একটু দেখে যাই। হাটার ক্লান্তি দুর করার জন্য খেজুরের রস সাথে করে নিয়ে আসি সবসময়। খেজুরের রস ক্লান্তি দুর করার জন্য ভাল মহৌষোধ। আজ আসার কথা ছিল না। কিন্তু পথে একজন আপনি এদিকটায় আসছেন বলায় আমি আসতে বাধ্য হলাম এখানে। আমার আসল নাম রতীকান্ত। আমার দাদা এ বাড়ির কেয়ারটেকার ছিলেন। বংশপরস্পরায় এখন আমিও”।

(চলবে)
আরেকটু পড়ি, কি বলেন.......

অতৃপ্ত প্রতিশোধ-৩

অতৃপ্ত প্রতিশোধ-১
অতৃপ্ত প্রতিশোধ-২
অতৃপ্ত প্রতিশোধ-৩
অতৃপ্ত প্রতিশোধ-৪
অতৃপ্ত প্রতিশোধ-৫
৩.
রাতের খাবার শেষ করে টেবিলে বসে কেন জানি মনে হল আজ রাতে ছেলেটা হয়তো আসবে। তাই জানালা দিয়ে তাকিয়ে তাকলেন কিছুক্ষন তাপস বাবু। কিন্তু না, সে আসেনি। বিরস মুখে টেবিল ছেড়ে বিছানায় দিকে যাওয়ার সময় জানালার কপাটের শব্দ শুনে ফিরে তাকাতেই দেখলেন, শুভ্র ছেলেটা দাড়িয়ে আছে জানালার রড শক্ত করে ধরে। ছেলেটা কিছুক্ষন একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকার পর কথা বলা শুরু করল।
“আপনি যে গল্পটা মনে মনে সাজাচ্ছেন প্যারানরমাল বিবেচনা করে, সেটা কোনভাবেই এই ক্যাটাগরিতে ফেলা যায় না।”


তাপস বাবু খানিক বিস্মিত হয়ে তার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে নিজেকে সামলে নেওয়ার চেষ্টা করলেন। মনে মনে এর পেছনে যুক্তিসঙ্গত কারন বের করতে দ্রুত চিন্তা করতে লাগলেন। তিনি গল্পের বিষয়টি নিয়ে কাল বিকেলে গ্রামের এক স্কুল শিক্ষক হানিফ মিয়ার সাথে অনেকক্ষন কথাচ্ছলে বলেছিলেন। তার এই শিক্ষকের ছাত্র হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু এত ডিটেল নিয়ে ত আলাপ করেননি ওই শিক্ষকের সাথে। তাহলে কি সে তীব্র দৃষ্টিতে তাকিয়ে কারো অন্যের মস্তিস্কে ঢুকার ক্ষমতা রাখে। এ ধরনের অনেক উদাহরন আছে শুনেছি। আমেরিকার পেনসিলভেনিয়ার ডেভিড শিফিল্ড নামের এক লোক এভাবে কয়েকজন ব্যক্তির মস্তিস্কে ঢুকে তাদের চিন্তার হুবুহু বর্ননা করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল একবার। তাকে নিয়ে অনেক গবেষনাও করা হয়েছিল। গবেষকরা টেলিপ্যাথির ব্যাখ্যা দেখানো ছাড়া আর কোন বিশ্বাসযোগ্য কারন দেখাতে পারেন নি অবশ্য।
তাপস বাবু স্বাভাবিক ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করলেন, “কিভাবে বুঝলে প্যারানরমাল বলা উচিত না?”
সে জানালার রড আরো শক্ত করে ধরে বলতে লাগল, “কারন, সেইসব ঘটনাগুলোকে ব্যাখ্যতীত বলা হয়, যেগুলো বর্তমান সময় তার রহস্যের নির্ভরযোগ্য কোন সমাধান দেখানোর ক্ষমতা রাখে না। যা অবশ্যম্ভাবীভাবে ভবিষ্যৎ কোন সময় ঠিকই বের করে নিবে।, তাই এখানে সময়ের আপেক্ষিকতাই এধরনের তুলনামূলক ধারনার পরিবর্তন ঘটানোর নিমিত্ত। আর কোন চলতি গবেষনা চলাকালীন সময় পর্যন্ত তাকে অলৌকিক আখ্যা দেওয়া স্বভাবতই অনুচিত বিবেচনা হওয়া উচিত”।

ছেলেটার গভীর চিন্তাশক্তি আর প্রখর কথাশৈলী তাপস বাবুকে প্রবল বিস্মিত আর কৌতহলী করে তুলল। ছেলেটার বাহ্যিক বয়সের সাথে তার চিন্তাশক্তি কোনভাবেই যায় না। তাপস বাবু অনেক চেষ্টা করেও এর পেছনে কোন যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যা দাড় করাতে পারলেন না।

তাপস বাবু প্রবল আগ্রহভরে জিজ্ঞেস করলেন, “কি নাম তোমার?”
“শুভ্র”।
“তাপস বাবু বললেন, কাল বৃষ্টি ছিল, তোমার শরীর ভেজা ছিল, আজ তো বৃষ্টি নেই, তারপরও তুমি কাকভেজা কেন?”
“কুয়োতে স্নান করে এসেছি, তাই। “
“প্রতিদিনই কি তুমি এমন সময় কুয়োতে স্নান করতে যাও?”
“না, প্রতিদিন না, পূর্ণিমার শেষ তিনরাত যাই। তখন কুয়োতে জোয়ারের জন্য পানি ফুলে ওঠে। পানি হাতের নাগালে পাওয়া যায়”।
“শুধু পূর্ণিমার তিন রাত কেন?”
“ওই তিনরাতই শুধু হাতের পানি নাগালের মধ্যে থাকে। এখন যাই আমি”। বলেই সে জবাবের অপেক্ষা না করে নিমিষে হাওয়া হয়ে গেল। তাপস বাবু কয়েকবার ডাকলেন তাকে। কিন্তু কোন লাভ হল না। তাপস বাবু ক্রমশ কৌতুহলী হয়ে উঠছেন ছেলেটি নিয়ে।

পরদিন দুপুরে চেয়ারম্যান খোজ-খবর নিতে আসলেন হাতে দুই জোড়া ডাব নিয়ে। সাগরেদের হাতে একটি খাসি ধরা।
“বাবু, সময়ের অভাবে খাতির-যত্ন করতে পারছি না ঠিকমতো। কই রে, পরিমল, ডাবগুলো ধর, আর খাসিটা জবাই দে। আজ আমার মনটা বেজায় খুশ, বাবু। আমার প্রথম বউটা পোয়াতি, আজই ডাক্তার জানাল। আপনার আর কিছু কি লাগবে বাবু। একটা কিছু চান। আপনি অনেক বড় মাপের মানুষ, বাবু। আমার কাছে আপনার চাওয়ার হয়তো কিছু থাকবে না। তারপরও অধমের খুব ইচ্ছে আপনাকে একটা কিছু দেওয়ার”।
তাপস বাবু সুযোগটি কাজে লাগালেন। এটা অত্যন্ত খুশির খবর। হ্যাঁ, আমার কিছু চাওয়ার আছে। দিবেন আশা করি।
“বলেন বাবু, সাধ্যের মধ্যে থাকলে অবশ্যিই দিব”-চেয়ারম্যান বললেন।
আপনি পরিমলের বন্ধকী জমিটি তাকে আবার ফিরিয়ে দিবেন, আপনার পাওনা তো সে ইতিমধ্যে মিটিয়ে দিয়েছে। তার পাওনা-টাও আপনার মিটিয়ে দিন।
চেয়ারম্যান কথাগুলো শুনে থতমত খেয়ে এদিক-ওদিক তাকালেন। কিছুক্ষন অন্যমনস্কভাবে কিছু ভেবে ডাবগুলো নামাতে নামাতে বললেন, “এসব কি বলছেন বাবু, এর বন্ধকী জমি তো আমি এমনিতেই ফিরিয়ে দিতাম। আমি বাবু, কালই আমার নিজের গাড়ি দিয়ে তাকে তার ভিঠেতে উঠিয়ে দিয়ে আসব। কই গেলি রে, পরিমল, “ডাবগুলো ধর”।

আজ রাতে শুভ্র আবার আসল। তার চোখ টকটকে লাল। তাপস বাবু ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “কি হয়েছে?” সে বলল, “আমার কাকাকে খুজছি, তার উপর অনেক ক্ষোভ”
“কেন? তোমাকে বকেছেন বুঝি?”-তাপস বাবু বললেন।
“হুমম। আপনাকে একটি জিনিস দিতে চাই আমি, নেবেন?”
“কি জিনিস?”
“আছে, আমি নিয়ে আসব একদিন”।
বলেই সে নিমিষে মিলিয়ে গেল।
তার পর আরও কয়েকদিন এসেছিল শুভ্র। অনেক কথা হত। বাড়িতে যাবার জন্য বলে দিল। তাপস বাবুর নিজেরও খুব আগ্রহ একদিন ওর বাড়িতে যাওয়ার। তাপস বাবু ঠিক করে নিলেন, গল্প লেখাটা গুছিয়ে নিলেই যাবেন একদিন। গ্রামটাও এখনও দেখা হয়নি ভাল করে।

(চলবে)
আরেকটু পড়ি, কি বলেন.......

শনিবার, ২৭ মার্চ, ২০১০

অতৃপ্ত প্রতিশোধ-২

অতৃপ্ত প্রতিশোধ-১
অতৃপ্ত প্রতিশোধ-২
অতৃপ্ত প্রতিশোধ-৩
অতৃপ্ত প্রতিশোধ-৪
অতৃপ্ত প্রতিশোধ-৫
২.
জানালার বাইরে থেকে সুতীব্র দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ছেলেটি তাপস বাবুর চোখের দিকে। গায়ের রং ধবধবে ফর্সা। এ ধরনের ফর্সা ছেলে সচরাচর দেখতে পাওয়া যায় না গ্রামে-গঞ্জে। একটি ১২/১৩ বছরের ছেলের চোখের যেরকম দীপ্তি থাকার কথা তার চোখে-মুখে এর থেকে বেশিই আছে। সেই দীপ্তিময় দৃষ্টি যে কারো পূর্ণ মনোযোগ কেড়ে নেওয়ার জন্য যথেষ্ট। ছেলেটির অস্বাভাবিক দৃষ্টি তাপস বাবুকে প্রবল কৌতুহলী করে তুলল। মুখের বাম দিকটায় একটি বড় কাটা দাগ আছে ছেলেটার। দাগটা অনেকটাই আকাঁবাকাঁ। হয়তো বয়সিক দুষ্টুমির কোন চাপ। বৃষ্টির কারনে শরীর পুরো ভেজা। দাগটির ক্ষত দিয়ে বৃষ্টির পানি থেকে থেকে পড়ছে।

কিছু বলবে তুমি?-তাপস বাবু কৌতুহল নিয়ে জিজ্ঞেস করলেন। প্রশ্ন শোনামাত্র ছেলেটি আর বিলম্ব করল না, চোখের নিমিষে পালিয়ে গেল। তাপস বাবু কৌতুহল দমন করার চেষ্টা করলেন্। সম্ভাব্য উত্তরগুলো মনের মত সাজিয়ে নিলেন। হয়তো গ্রামের কোন সম্ভান্ত পরিবারের কোন ছেলে বৃষ্টির কারনে কোথাও আটকা পড়েছিল। বৃষ্টি কমার লক্ষন নাই দেখে ভিজেই রওয়ানা দিয়ে দিল এবং পথিমধ্যে অপ্রত্যাশিত আগন্তুক দেখে জানালা দিয়ে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকল।


পরদিন সকাল। তাপস বাবু দেখলেন তিনি একটি বড় খেয়া নৌকার উপর বসে আছেন। নৌকার মাঝিকে খুব চেনা চেনা লাগছে। কাছে গিয়ে দেখেন মাঝিটি আর কেউ না, আর্নেস্ট হেমিং, বিশ্বখ্যাত রাইটার। কিন্তু এ কি করে হয়। তাপস বাবু নিজেকে ধাতস্ব করতে কিছুটা সময় লাগালেন। মনে মনে ভাবলেন, কদিন ধরে একটি প্যারানরমাল একটিভিটিজ নিয়ে একটি গল্প সাজিয়ে আনার চেষ্টা করছেন। হয়তো বিরতীহীন চিন্তায় মস্তিস্কে ঘোর-লাগা সৃষ্টি হয়েছে। ঘোরের কারনেই হয়তো মাঝিকে আর্নেস্ট হেমিঙের মত দেখাচ্ছে। তবু কিঞ্চিত আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “আপনাকে কি আমি চিনি?”
“চেনার তো কথা, আমি আর্নেস্ট হেমিং। আপনার প্রিয় লেখক“, মাঝি বলল।
তাপস বাবু শুকনা গলায় বললের, “কিন্তু এ কি করে হয়। এটা কি স্বপ্নে দেখছি”
স্বপ্ন কিনা এটা প্রমান করার জন্য আনের্স্ট হেমিং পানির ছিটা দিতে লাগলেন। পানির ঝাপটা গায়ে এসে লাগতে লাগল তাপস বাবুর। হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে ধরমরিয়ে উঠে গেলেন। সামনে নিচৃ হয়ে পরিমল দাড়িয়ে। পানির ছিটা দিয়েই যাচ্ছে সে। পানির ঝাপটা দিয়ে তাপস বাবুর ঘুম ভাঙ্গানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে।

বাবু, কি এত বেলা করে ঘুমান? অনেকক্ষন ধরে জাগানোর চেষ্টা করছি। ঘরে বাজার নাই, বাজার আনতে হবে। টাকার দরকার। আপনার ঘুম কি ভাল হয়েছে?

তাপস বাবু অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে নিলেন। পরিমলের হাত থেকে চায়ের পেয়ালাটি হাতে নিলেন। সাথে একটি সিগারেট ধরালেন। সকালে গরম চায়ের সাথে একটা সিগারেটের সহচর্য না পেলে সকালের আনন্দসূচনা হয় না।

“কাল আসনি কেন?”-তাপস বাবু সিগারেট ধরাতে ধরাতে জিজ্ঞেস করলেন পরিমলকে।

“ঝড়ের জন্যি বাবু, ঝড়ের জন্য পেছনের একটা বেড়া ভেঙ্গে পড়াতে আর আসা সম্বব হয়ে ওঠেনি”।

পরিমল দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “কি করব বাবু, একমাত্র সম্বল নিজের ভিটেমাটিটি চেয়ারম্যানের কাছে বন্ধক দিযেছিলাম তিন বছর আগে। পরে সময়মতো চক্রসুদের টাকা ফেরত দিতে পারি নাই বলে চেয়ারম্যান পুরো ভিটেটাই দখল করে নিল। পরে অনেক চেষ্টা করেও এটা উদ্ধার করতে পারিনি। আর দেখেন, এখন সেই চেয়ারম্যানের একটা বাড়িতেই ভাড়া থাকতে হচ্ছে। বিধির খেল বাবু, সবই বিধির খেল। আর সেই ভাড়া বাড়ির কিছু হলে তো এখানেও ঠাঁই দেবে না। রাস্তায় গিয়ে থাকতে হবে বৌ-বাচ্চা নিয়ে।

তাপস বাবু জিজ্ঞেস করলেন, “বন্ধকের টাকা কেন নিয়েছিলে?”

পরিমল মুখ কালো করে বলল, “ছোট মেয়েটার এক্লেমশিয়া হয়েছিল তখন, বাবু। চিকিৎসার জন্যি অনেক টাকা দরকার ছিল। শেষ পর্যন্ত মেয়েটাকে বাচাঁতেও পারলাম না”। আফসোস। বলেই ডুকঁরে কাদাঁ শুরু করল পরিমল।

তাপস বাবু তাকে শান্ত করার ব্যর্থ চেষ্টা করে শেষ পর্যন্ত পাঞ্জাবীর পকেট থেকে টাকা বের করে বাজারের ফর্দ ধরিয়ে দিলেন তার হাতে তাকে ব্যস্ত করে তুলার জন্য। ব্যস্ততা মানুষের সকল দু:খ-কষ্টকে নিমিষেই ভুলিয়ে দিতে পারে।

(চলবে)
আরেকটু পড়ি, কি বলেন.......

বৃহস্পতিবার, ১১ মার্চ, ২০১০

ভাল লাগার একটি গান

সবারই নানারকম শখ থাকে। আমারও আছে। তার মধ্যে একটা হল মরনকালীন শখ। আয়োজন করে মৃত্যকে উপভোগ করার শখ। আমি যখন মারা যাব, ঠিক তখন আমি চাই আবহ সঙ্গিত হিসেবে নিচের গানটা বাজুক। তখন থাকবে গভীর রাত। ঘরের সকল দরজা-জানালা খোলা থাকবে। বাতাসে পর্দা উড়তে থাকবে। ঘরে থাকবে শুধু একটি আধো-জ্বলা মোমবাতি। সেই মোমবাতির ম্লান আলোয় সবকিছু আবছা দেখা যাবে। সেদিন যদি হয় পূর্ণিমার রাত, তাহলে তো সোনায় সোহাগা। জোৎস্নার আলো উপছে পড়বে আমার বিছানায়। আমার দূর্বল শরীর স্নান করব সে আলোয়। সে স্নানে ধুঁয়ে-মুছে যাবে আমার সকল অপ্রাপ্তি, অতৃপ্তি। সেই বিছানার ধারে শুধু আমার একজন প্রিয় মানুষ বসে আমার মাথায় পরম মমতায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকবে। তার ভালবাসার চোখের পানি আমার গালে টপটপ করে পড়তে থাকবে। জানালার ধারে ঝুলতে থাকবে একটি পাখির খাঁচা। বাইরে অনুচ্চস্বরে চাঁপাকান্না শোনা যাবে। তখন হুহু করে বাতাস বইতে থাকবে। একটু শীত শীতও করবে। ঠিক তখন আমার প্রানটা উড়ে চলে যাবে পরপারে। আর আমার প্রানটা যাওয়ার সময় খাঁচা থেকে পাখিটি মুক্ত করে দেওয়া হবে।


----- কি, জোশশশশ না আইডিয়াটা?

[বি:দ্র: তবে মনে করে ভাল করে যেন ঘরে এরোসোল স্প্রে করে দেওয়া হয়, যে হারে মশা বাড়তাছে, যেকোন সময় পুরা আনানন্দটাই মাটি করে দিতে পারে!!]

গানটা ভাল লাগলে জানাবেন।

Get this widget | Track details | eSnips Social DNA


উপরের লিংটি কাজ না করলে নিচের লিংকে যান।
::::: Fazlur-Rahman-Babu---Shonai-Hay-Hayre-(Monpura-Soundtrack:::::::
আরেকটু পড়ি, কি বলেন.......

মঙ্গলবার, ২ মার্চ, ২০১০

শাশ্বতিকীর আশীর্বাদ

[আজ হঠাৎ করে ইচ্ছা হল 'কঠিন' একটা পোস্ট দিতে। কিন্তু কি দেই, কি দেই, করে শেষ পর্যন্ত জটিল(?) একটা কোবতে প্রসব করলাম। 'ভয়াবহ' জটিল!! এটা পড়ে যদি কারো 'মাথা ঘুরতে' থাকে অথবা শরীর 'হালুডুলু' করতে থাকে তাতে মামদো ভূত কোনভাবেই দায়ী থাকবে না, আগেই বলে দিচ্ছি!!! হার্টের রোগীদের বিশেষভাবে এর ধার দিয়েও না ঘেষার জন্য বিনীত অনুরোধ করছি।]


জোৎস্নার অস্ফুট আলোর মিছিল, কি নির্বিকার
কি নিরিবিলি তামস-গভীরে তার কি জমাট-বাধা ঐশ্বর্য বিসর্জন,
বুঝাই দায়, নিজ নিষ্চুপতায় কিভাবে অপরকে করে তোলে
জোয়ার-ভাঙ্গা আবেগতাড়িত, অথবা মায়াবী বর্ণিল আলো-প্রেমিক।

জৌষ্ঠের সঙ্গীত বাজে নাগালহীন কোন দুর সীমানায়,
ভেসে আসে ঘরহারা দুরের কোন এক শঙ্খচীলের শীল আর্তনাদ,
পাহাড়ের ঢালু উপত্যকা বেয়ে কাছাকাছি হতে থাকে
দুরের কোন স্বর্গীয় ঝর্নাধারার রিনিঝিনি সঙ্গীত-মূর্ছনা।
শিরশিরে মন তীব্র আড়ষ্টতায় খুজে ফিরে,
এই বেঁচে-না-থাকাসম জীবনের কোন অতৃপ্তির
নাকি জীবিত মৃত্যুকে আলিঙ্গন করার কোন অভিশপ্ত সত্ত্বার।
ডর লাগে আমার তার কাছাকাছি যাওয়ার,
সাহস পাই না কোন
হ্রেস্বা ঘোড়ার বুক-ফোলা বুক নিয়েও,
সাহস পাই না কোনো।
এই ঝলসানো নিসর্গ রূপের ডালি গোগ্রাসে গিলে ফেলার।


যেভাবে ভাবনার অগোচরে থেকে যায়
ধর্ষিতা নারীর আত্মযন্ত্রনা,
ক্লান্ত জীর্ণ কোন কৃষানীর অপ্রকাশ্য আনন্দধ্বনি,
অথবা গর্ভবতী ষোঁড়শীর উপচে পড়া আগমনী দায়িত্বর্পন,
সেভাবেই ধরতে পারি না,
এই রূপময় চেতনা-কর্ষী লীন হয়ে যাওয়া
আততায়ী-পূর্ণিমার অদেখা কোন বর্ণহীন আলোর মিছিল।
চিন্তার হার্ডডিস্কে চিরস্থায়ী ছাপ ফেলে দিতে পারিনা তাকে,
তার স্বকীয়তায়,
ঐশ্বরিক অনাবিলতা আর কৃ্ত্রিমতার অদেখা দড়ি দিয়ে বেঁধেও।

পত্রগর্ভে নিদ্রালু আলতো-ঘুমিয়ে পড়া ছাই-চাঁপা মৃদুমন্দ বাতাসগুলো
দুর্নিবার জানান দিতে থাকে তাদের সরব উপস্থিতি,
মৃদুল তরঙ্গে হিমহিম আবহে কাপিয়ে তুলে চন্দ্রালোর চাদরে ঢাকা,
লুকিয়ে পড়া নিরাভরন শঙ্খনীলসম সবুজ ঘাসগুলো।
শিশির-জন্মদাতা কচি ঘাসগুলো সটান হয়ে
লাজহীন আস্বাদনে ব্যস্ত থাকে চাঁদনি পশর রাতের অমৃতসুধা,
তাদের নয়ন প্রান সঁপে, মননশীল বিবেকের কন্ঠভাষা ছাড়িয়ে,
অনিমেশের অবিমৃশ্যতায়।
গোধুলিলগ্নে শেষ বিকেলের সূর্যাশীষ দিয়ে বলাৎকার হওয়া,
স্বচ্ছ ক্রিস্টাল শিশিরবিন্দুগুলো ভাবনার করিডোর মেলে দেয়,
জোৎস্না ছাড়িয়ে সপ্তর্ষিমন্ডলের আলেয়া খুজায়।
বলার অপেক্ষা রাখে না, কৃষ্ঞগহবরের মত উদার স্বার্থপর সে।

অনাধুন বিজলীবাতির মতন রাতের ঝিকমিক জোনাকিগুলো
ধানক্ষেতে পথ হারিয়ে ফেলে, লীন হয়ে যাওয়া অখন্ড মুহুর্তগুলোতে,
নাচে-গানে মুখর করে তোলে নিরিবিলি অবকাশের
প্রকৃতির অন্তরালে গজিয়ে উঠা সহস্র শস্যপর্ব শালীনতায়, মধুর।
শব-পৃথিবীর নিষ্ঠুরতাকে পাশ কাটিয়ে আনন্দের ডালি মেলে দেয়,
গানের মূর্ছনায় জোৎস্নাকে সঙ্গিনী করে,
যেভাবে প্রেমিক তার প্রেমিকাকে অন্ধ আবেগে আকঁড়ে রাখে,
তার সমুদ্রসম হৃদয় উজাড় করা তীব্র বাধ-ভাঙ্গা-ভালবাসায়।

যে প্লাবন ধুয়ে নেয় পুরনো জীর্ন সব কুসংস্কারের বান,
সেই জোয়ারের দলেই নাম লেখায় আলো-আধাঁর-ছায়া সঙ্গিন ব্যস্ত পূর্ণিমার লহর।
যদিও জেনেছি, মৃত্যুছায়া প্রকুতির দেয়ালের মত ঢলে পড়ে তীব্র ধ্রুপদি রূপচ্ছটায়।
অশীতিপর ম্লান রাতে উলুধ্বনি ব্যস্ত তার নিজস্ব আলোর আলিঙ্গনে,
ক্ষনে ক্ষনে,
রাতের নির্মম নিশ্চুপ নিস্তব্ধতায়।

জরায়ুর কোনায় লুকোচুরি খেলায় মত্ত সৃস্টিশীল শৈলী অবুঝ ভ্রুনানুগুলো
আনন্দধ্বনি প্রকাশে কার্পন্য করেনি কোনো,
বিলম্বে না পস্তানোর আশায়।
ত্রিশ লক্ষ জন্মাণূর জোৎস্নার জাগ্রত আলো-আশিষে
সবল পো্ক্ত পূর্ণিমার বীজগুলো।
ডরায় না কোনো, নি:শব্দ মৃত্যুর অশ্লীল আর্তনাদ,
ডরায় না তারা আধাঁর আলিঙ্গনে সন্ত্রস্ত চেতনার
রাক্ষুসে হায়েনাগুলোর হুমকিতেও।

কারন তাদের আছে সর্ব-সঙ্গিন শাশ্বত চাঁদনির অযুত
বাধ-ভাঙ্গা সাত অকুতোভয় সৈনিকের ভয়াবহ মারমুখি ক্ষীপ্রতা,
আর আছে ম্লান জোৎস্নালোর নিযুত শাশ্বতিকীর আশির্বাদ,
যা দিয়ে আকঁড়ে ধরে থাকা যায় শাশ্বতিকীয় অস্তিত্ব,
তার নিজস্ব শাশ্বত শ্বেত-শুভ্রতায়।
আরেকটু পড়ি, কি বলেন.......

সোমবার, ১ মার্চ, ২০১০

পলিটিকেল মুলো

একটা মজার গল্প বলি। শোনেন, ছেলেবেলার গল্প। শুনলে হাসতে হাসতে শুধু পেট না, পেট বেয়ে গলনালী ছাড়িয়ে আক্কল জিব্বা অবধি খিল ধরে যাবে। তো মুল ঘটনায় আসি। তখন আমি সবে স্কুলে ঢুকেছি.. স্কুলে নিয়মিত যেতাম না। ভাল লাগত না। গেলেও বেশিরভাগ সময়ই পালাতাম। তো একদিন নিয়মমত স্কুল পালিয়ে ফিরছি। শোনেন শোনেন, আসল ঘটনাটা শোনেন। আসল ঘটনা শোনলে কি যে মজা পাবেন চিন্তাও করতে পারবেন না। তো পথিমধ্যে রনের সাথে দেখা। রন কে চিনলেন না! আরে, ওই যে রন। আরে ওই যে,... ওই যে রন। চিনছেন তো? আচ্ছা। এখন, চুম্বক অংশে আসি। তো তখন হল কি............


[বি:দ্র: তারপরের অংশটুকু ভুলে গেছি। স্যরি!]

পরিশিষ্ট: আমাদের সরকার দলগুলো এইভাবে বেশিরভাগ কাজ বড়সড় মুলা দেখিয়ে বন্ধ করে দেয় কেন বুঝতেছি না! আমি তো তাও কারন দেখাই, স্যরি বলি, ওনারা তো কারনও দেখান না, স্যরিও বলেন না।


আরেকটু পড়ি, কি বলেন.......

শুক্রবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১০

ত্রৈ-ইন্দ্রিয়ের অকার্যকারীতা (প্রেক্ষাপট: খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে সংঘটিত ঘটনাপ্রবাহ)

দিনটা ভাল যায়নি। মেজাজটা বিগড়ে আছে বিভিন্ন কারনে। একটি সহজ এক্সপেরিমেন্ট অসংখ্যবার করা সত্ত্বেও প্রত্যাশিত আউটপুট পাচ্ছি না। আমি ছোটবেলা থেকেই মোটামোটি সকল কাজেই অকর্মার ঢেকি-টাইপ। “সহজ” কোন কাজ কখনই সহজে মেলাতে পারি না। অবধারিতভাবে জট পাকিয়ে ফেলি। যদিও বা কখনও কখনও সফলতার মুখবদনখান দেখি, খুজেঁ-খাজে দেখি ব্যাপারটা হয় কাকতালীয় অথবা সেখানে অন্যকারো স্বেচ্ছাসেবী হস্তক্ষেপ আছে। সেটাও মেজাজ খারাপের একমাত্র কারন নয়। প্রতিদিন গৃহপ্রবেশের সময় আমার মেইল বক্স চেক করতে হয়। আজও যথারীতি চেক করি। আমার নিজ দেশের লেটার বক্সগুলো চেক করলে লাভ লেটার, প্রেমপত্র, বিয়ের কার্ড, বিভিন্নরকম দাওয়াতপত্র, ভালবাসার রঙ্গিন খাম এইসব পাওয়া যেত। চেক করতেও ভাল লাগত। আর এখানে (কানাডা) মেইলবক্স খুললেই গ্যাস বিল, কারেন্ট বিল, মোবাইল বিল আর বিরক্তিকর ফ্লাইয়ার ছাড়া আর কিছুই পাই না। আজ আবার মরার উপর খাড়ার ঘাঁ হিসেবে উটকো একটা ক্রেডিট কার্ডের বিল এসে হাজির। বিরাট অংকের নেগেটিভ ব্যালেন্স সমেত চকচকে খাম। অনেক ঘাটাঘাটির পর কাস্টমার কেয়ারে ফোন দেওয়ার পর ওরা জানাল যে বিলটা ভুল করে আমার একাউন্টের নাম দিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ না হয় সহ্য করলাম। কিন্তু প্রতিদিন ক্লান্ত হয়ে যথন অনলাইনে “প্রথম আলোটা” দিনের শেষ বিকেলে পড়তে বসি তখন মেজাজটা আরও খতরনাক হয়া যায়। পাতায় পাতায় শুধু মন খারাপ করা খবর। হাজার হাজার খারাপ খবরের ভীরে তীর্থের কাকের মত ভাল কোন খবর হাতড়াঁতে থাকি একটু প্রশান্তির আশায়। বেশিরভাগ সময়ই ব্যর্থ হয়। তারই ধারাবাহিকতায় সাম্প্রতিক কালের কিছু ঘটনা মনকে আরও দ্রবীভুত করে তুলল। আর সেগুলো নিয়েই আজকের এই খেরোপত্র। লিখে যদি ওকটু হালকা হই।


অনেকক্ষন ধরেই একটি ছবির দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। ধ্বংসাবশেষের ছবি, চারিদিকে পোড়া ভিটেমাটির চালা, খড়-মাটি, শস্যপোড়া ছাইয়ের প্রলেপ, তছনছ করা আসবাব-পত্র, পোড়া স্যান্ডেল, জ্বলা গাছের বৃদ্ধ-গুঁড়ি, আরও অনেক টুকিটাকি। এর মধ্যে ঠাঁয় দাড়িয়ে আছে একটি সুন্দর বৌদ্ধমূতিঁ। ছবিটি পাহাড়িদের উপর হামলা সম্পর্কিত প্রায় সকল পত্রিকার ফিচার নিউজগুলোতে এসেছিল। এই সপ্রতিভ বৌদ্ধমূতিঁটি যেন আগ্রাসি বাঙ্গালীদের দিকে তাকিয়ে হাসছে অবজ্ঞাভরে। তার উজ্জ্বল চোখগুলো যেন লাগামহীন অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াঁনোর প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য পাহাড়ীদের দুর্নিবার আহবান জানাচ্ছে। মূর্তিগুলোর খোলা চোখ এই ধ্বংসাবশেষের মাঝেও তাদের প্রানবন্ত উপস্থিতিকে সাক্ষ্য দিচ্ছে প্রতিনিয়ত। এই নৃগৃহীত জনগোষ্টির পক্ষে তার সরব অবস্থান ঘোষনা করছে। তার অবিচল দাড়িয়ে থাকা যেন অবহেলিত এই আদীবাসীদের সুতীব্র অনুপ্রেরনা জাগাচ্ছে দুপ্ত বলয়ে জেগে উঠার, সপ্রতিভ প্রতিবাদ করার, সম্মিলিত প্রয়াসে। দেবালয়ের অক্ষত এই মূর্তিগুলো যেন অসহায়দের পক্ষে অসীম-শক্তির শক্ত অবস্থানকে আবারও স্মরন করিয়ে দিচ্ছে আমাদেরকে প্রতিটা মুহুর্তে।

কোনঠাসা এই পাহাড়ী আদীবাসীদের উপর এই রাষ্ট্রীয় আগ্রাসন নতুন কিছু নয়। এর আগেও বিভিন্ন সরকারের আমলে সুবিধাবঞ্চিত এই জাতি চরম অবমাননার শিকার হয়েছে। শরনার্থী হিসেবে ট্রিটেট অনেক পাহাড়ীরা প্রতিনিয়ত বলি হচ্ছে আগ্রাসী রাষ্ট্রজাতির স্বোচ্ছাকল্পে। দেশের মুলধারার সুবিধাগুলো গ্রহন করা থেকে তাদেরকে অপয়া করে রাখা হয়েছে প্রথম থেকেই। দিঘীনালার বাঘাইছড়িতে ১৯৮৮ সালের আগস্ট মাস থেকেই তাদের উপর নির্যাতন শুরু যা এখন পর্যন্ত পূর্ন শক্তিতে বহাল রাখা হয়েছে। এর বদৌলতে কয়েকশত উপজাতি প্রান হারিয়েছে, প্রচুর আদি তীর্থস্থান, অনেক পুরাকীর্তির বৌদ্ধ মন্দির পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে কালের অতলে। সাম্প্রতিক কালের বাঘাইছড়ি, রাঙামাটির ঘটনাপ্রবাহ তারই ধারাবাহিক ক্রম। ক্রমান্বয়ে তাদের নিজ ভাষা, ধর্ম, সংস্কৃতি ধীরে ধীরে নিশ্চিহ্ন করা হচ্ছে কতিপয় দখলদারদের যোগসাজশে যা কতটা অমানবিক তা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখানোর প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। খাগড়াছড়ি শহরে ১৪৪ ধারা জারি, সেনাবাহিনী মোতায়েন, জরিপের জের ধরে দখলদারীদের সাথে একাত্মতা এই নিরিবিলি জীবনে অভ্যস্থ কোনঠাসা আদীবাসীদের উপর ভারসাম্যহীন লড়াই রীতিমত তীব্র ঘৃনার উদ্রেক করায় আমাদের স্বজাতির উপর। বর্তমান বাঙ্গালীজাতির একজন অংশীদার হয়ে হিংস্রতার রূপ দেখে রক্ত ঘৃনায় গরম হয়ে উঠে ক্ষনে ক্ষনে।

অক্ষমতার লাগামহীন ঘোড়া আমাদের বাঙ্গালীদের টুটি চেপে ধরে নিয়ন্ত্রন করে ইচ্ছেমত। আমরা অক্ষম, আমরা সীমাবদ্ধতার অজুহাত দেখাই, বেশিরভাগ সময় আমরা স্বেচ্ছায় প্রতিবাদ করি না। আমরা কথা বলতে পারিনা, কারন আমরা কথা বলতে চাই না। আমরা নিরিবিলি, নিভের্জালভাবে জীবন অতিবাহিত করতে চাই। রাষ্ট্রযন্ত্রের সুবিধাবাদী দখলদাররা নির্বিচারে এই অসহায় মানুষগুলোর উপর আক্রমন চালাচ্ছে, আমরা কথা বলছি না। তাদের ভাষা-ধর্ম-সংস্কৃতি ধীরে ধীরে নিশ্চিন্হ করা হচ্ছে, আমরা কথা বলি না। দেশের মুল ধারার সংস্কৃতি এই স্বকীয়, স্বতন্ত্র বৈশিষ্টমন্ডলিত কলা-সংস্কৃতিকে প্রতিনিয়ত ধর্ষন করে যাচ্ছে, আমরা কথা বলি না। দেশের সুবিধাবাদী গুটিকয়েক মানুষেরা প্রতিনিয়ত এইসব আদিবাসীদের অস্তিত্বকে বলাৎকার করে যাচ্ছে, আমরা কথা বলি না। দেশের তথাকথিত সুশীলরাও তাদের কলম দিয়ে পাহাড়ীদের মিথ্যা দোষ ধরায় ব্যস্ত, আমরা তাতেও কথা বলি না। ছোট ছোট নিষ্পাপ পাহাড়ী বাচ্চারা আমাদের দিকে তীব্র ঘৃনাভরে তাকিয়ে আছে। আমরা কথা বলি না। চার জাতীয় নেতা হত্যার বিচার আইন করে বন্ধ করে দেওয়া হয়, আমরা কথা বলি না। বঙ্গবন্ধুর ৩৪ বছরের লাশের ভারটি একটি কালো অধ্যাদেশের মাধ্যমে কোমায় রাখা হয়, আমরা কথা বলি না।

আমরা কানেও শুনি না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রির আপনি ডান কানে কি এখনও কম শুনেন? আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রি খুনের ঘটনাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে চালিয়ে দেন, আপনি তা শুনেন না। রাজাকারেরা দেশে কোন রাজাকার নেই বলে সর্বত্র বুক চিতিয়ে বলে বেড়ায়, আপনি শোনেন না। কদিন পর পর ঢাকার অসহায় বস্তিবাসীদের ঘরদোর পুড়িয়ে দেওয়া হয়, আপনি তাদের আর্তচিৎকার শোনেন না। সমানে দেশের মেধাবী তরুনদের সুপরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়, আপনি তাদের আর্তনাদ শোনেন না। সেখানে দুরের পাহাড়গুলো ডিঙ্গিয়ে আদিবাসী পাহাড়ীদের হাহাকার আপনার কানে আসবে না এ আর আশ্চর্য কি!

আমরা যে শুধু কথা বলি না তা না, আমরা চোখেও দেখি না। রাষ্ট্রবিরোধী অপশক্তিগুলো আমাদের চোখের সামনে দিয়ে তাদের অপকর্মগুলো করে যাচ্ছে, আমারা দেখি না। নাইকো, অক্সিডেন্টাল নামের বাঘা বাঘা কোম্পানিগুলো দেশের বিপুল অর্থের অপচয় করে আমাদের বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে চলে গেল, আমরা দেখি না। গুটিকয়েক লোক একে অপরের সাথে দলাদলি, রেশারেশিতে সংসদের প্রচুর অর্থের অপচয় করে যাচ্ছে, আমরা দেখি না। স্বাধীনতাবিরোধীরা এখন বিশেষ জাতীয় দিনগুলোতে মুক্তিযোদ্ধাদের পদকবিতরন অনুষ্ঠান করে যাচ্ছে। পাহাড়ি জনগোষ্টীর ধীরে ধীরে কোনঠাসা করে ফেলা হচ্ছে, আমরা তা দেখেও দেখি না।

সম্প্রতি বাঘাইছড়ির ঘটনায় দুজন পাহাড়ির লাশ উদ্ধার হয়েছে, পাঁচ থেকে আটজন মারা গেছে বলে বলা হচ্ছে। খাগড়াছড়িতে আরও একজন বাঙালির মৃত্যুর খবর এসেছে। আগুনে কেবল শত শত পাহাড়ির বাড়িঘরই ছাই হয়ে যায়নি, পার্বত্য চুক্তির মাধ্যমে শান্তির যে জলপাই চারাটি লাগানো হয়েছিল, আঁচ লেগেছে তারও গায়ে। তাই চরম উদ্বেগ কেবল পাহাড়ি-বাঙালির জান-মাল নিয়েই নয়, পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থায়ীভাবে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রশ্নটিও এখন প্রশ্নের সম্মুখীন। এ দেশের শেকড়ের সঙ্গে আদিবাসীদের সম্পর্ক। রাষ্ট্রযন্ত্রের ভেতর সরকারবিরোধী যে অংশ রয়েছে, তাদের অপচেষ্টা ও ষড়যন্ত্রের ফলে এ ধরনের সংঘর্ষ বেধেছে বলে ধারনা করা হচ্ছে। এই সরকারবিরোধী দলটি এভাবে লায় পেয়ে পেয়ে পুরো দেশকেই একসময় অন্ধকারের অতল গহবরে নিয়ে যাবে, যখন আমাদের কিছুই করার থাকবে না।

এইসব সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো মোকাবিলায় আমাদেরকে সরব ভুমিকা পালন করতে হবে। অসহায়দের পাশে দাঁড়াতে হবে। আড়গোড় ভেঙ্গে সবাইকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে সুবিবেচক ভুমিকা পালন করতে হবে। নইলে আমাদের বাঙালী ইতিহাসে এই লজ্জাজনক অপকর্মের দায় আমাদেরই ঘাড়ে বয়ে নিতে হবে। এ দায় থেকে মুক্তির কোন উপায় নেই।


আরেকটু পড়ি, কি বলেন.......

সোমবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১০

শুভস্য শীঘ্রম

আমি রাজনীতি সচেতন না। পারতে ওই বধুর পথ মাড়াই না। কিন্তু ইদানিং কালের কিছু নৃশংস ঘটনায় মনটা এতটাই অসহিষ্ঞ হয়ে উঠেছে যে আত্মবিবেকবোধ এই বিষয়টি নিয়ে কলম ধরতে বাধ্য করেছে।

মাত্র কদিন কদিন হল বঙ্গবন্ধুর ৩৪ বছরের লাশের ভারটি আমাদের প্রচলিত আইনের বেড়াজালের মাধ্যমেই কাধমুক্ত করা হয়েছে (যে বিষয়টি ২১ বছর ধরে একটি কালো অধ্যাদেশের মাধ্যমে কোমায় রাখা হয়েছিল)। এর জন্য আমরা প্রস্তুত ছিলাম। কিন্তু বিপরীত ধারার হায়েনাগুলোর সৃষ্ট প্রতিক্রিয়া গ্রহনে হয়তো আমরা প্রস্তুত ছিলাম না।

বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় অবৈধ ক্ষমতাদখলকারীরা ১৯৭৫-১৯৯০ সাল পর্যন্ত শাসন করে গেছে। এই সুদীর্ঘ দূর্বল নাজুক সময়টুকু সেনাশাসনের মধ্য দিয়ে গিয়েছিল এই শিশুবয়সী (নিউ-বর্ন) দেশটি। গনতন্ত্রের কোন উপস্থিতি তখন ছিল না। থাকার কোন কথাও নয়। কোন শিশুর শৈশব-আঘাত বড় ধরনের প্রভাব বিস্তার করে। জাতির এই দুবল মুহুর্তগুলোতে বঙ্গবন্ধুর “সাধারন ক্ষমায়” সাময়িক মুক্ত সুযোগসন্ধানী রাজাকার/আলবদরেরা ছলে-বলে কৌশলে সেনাবাহিনী, শাসনব্যবস্থার উচ্চতর পর্য়ায় থেকে শুরু করে তৃনমূল পর্যায়েও জায়গা করে নিতে থাকে ধীরে ধীরে। গোলাম আযমের পুত্রও ঐ সময়েই ব্রিগেডিযার পদবীতে ভূষিত হয়। এই ১৫ বছরে তিলে তিলে গড়া তাদের কাঠামোগত শক্ত অবস্থানই পরবর্তীকালে চারদলীয় জোটবদ্ধ হতে এবং হাই-কমান্ড সেকশানে পদার্পনে সহায়ক ভুমিকা পালন করেছে। পরবর্তী পাচঁ বছরে তারা বাংলাদেশের সিভিল সার্ভিস, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ, বিভিন্ন জনগুরুত্বপূর্ন পদবীতে তাদের অবস্থান/নেটওয়ার্ক বিস্তুত করার সুযোগ করে নেয়, যে কারনে আওয়ামিলীগের অন্দরমহলেও তাদের উপস্থিতি এখন ভালই টের পাওয়া যাচ্ছে। পিলখানা ঘটনায়ও সেনাবাহিনীতে তাদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।


শিবিরের আজকের এই অবস্থান তারা একদিনে নিয়ে আসে নি, তিলে তিলে নিয়ে এসেছে। তারা তাদের মিথ্যাচারিতা, সুযোগসন্ধানী সক্রিয়তা, ভয়াবহ নৃশংসতা, ধর্ম ব্যবসা, আর্থিক সচ্ছলত, পরিকল্পিত স্থানে বিনিয়োগ, প্রতিষ্টিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দিয়ে ধীরে ধীরে রাজনীতির অন্দরমহলে জায়গা করে নিয়েছে। বিবেচনায়-অনীহা সাধারন সরল ধর্মপরায়ন মানুষ তাদের অবৈধ প্রবেশ দ্বারকে আরও সুগম করে দিয়েছে। কদিন আগে আমার এক প্রিয়ভাজন আমাকে প্রশ্ন করেছিল: “দেশের বিশ্ববিদ্যালয় এর সকল ছাত্রই কম বেশী মেধাবী; কিন্তু তরাই যখন মুজিব-জিয়া-গোলাম দের জন্য জীবন বাজি রাখে তখন আমার মাথায় ঢোকে না এই ছেলেরা এত বোকা কেন! ছাত্ররা হল আমাদের মহামান্য নেতা দের সৈন্য বাহিনী। তারা এই বাহিনীকে নিজের স্বার্থে জিইয়ে রাখতে চায়। ছাত্রদের কাজ শিখা, কন্তু ভাল মন্দ শেখার অগেই তারা কেন রাজনীতির মাঠে নামবে?” প্রত্যুত্তরে বললাম: “সকলক্ষেত্রেই দেখা যায়, ক্ষমতা আর অর্থ অনেক কিছুই নিয়ন্ত্রন করার ক্ষমতা রাখে। এখানেও ব্যাপারটা তাই। তথাকথিত ট্যান্ডারবাজি, ক্ষমতা, নিশ্চিত চাকুরিপ্রাপ্তি, শাসনভার নিয়ন্ত্রন এইসবের জন্যই উঠতি ছাত্ররা আমাদের স্বাথাস্বেষী নেতাদের গিনিপেগ হতেও পরোয়া করে না।বস্তুত, সমাধানের পথটা আসা উচিত উপ-স্থর খেকে, নিম্ন-স্থর থেকে নয়।”

জীবিত বঙ্গবন্ধুর মত মৃত বঙ্গবন্ধুর প্রভাবও এতই প্রভাবশালী, গাঢ় এবং গভীর যে বঙ্গবন্ধুর সুষ্টু বিচার প্রক্রিয়া ও এর সফল কার্যকারীতা তাদেরকে চোরাবালিতে ডুবে যাওয়ার পূর্বমুহুর্তে তীর ধরে থাকার আপ্রান ব্যর্থ চেষ্টাকল্পে ভয়ার্তভাবে ছটপট করতেছে। বঙ্গবন্ধুর লাশের ভার তাদের কাছে এতই ওভারলোডেড যে যে তারা তাদের আসন্ন নিশ্চিত পরিণতি ঠেকাতে তাদের সাম্প্রতিক কর্মকান্ড কখনও কখনও তাদের স্বভাবসুলভ নৃশংসতাকেও ছাড়িয়ে যাচ্ছে। কোরবানীর কোন পশু আসন্ন মৃত্য উপলব্ধি করা মাত্রই তার সর্বশক্তি দিয়ে কাতড়াতে থাকে নিজেকে ছলেবলে যমমুক্ত করার চেষ্টায়। এই বিচারপ্রক্রিয়ার সফলতা যুদ্ধপরাধী/আলবদরদের আদতে-দূর্বল ভিতটি এতটাই নড়বড়ে করে দিল যে এখন কোরবানীর পশুর মত সর্বশক্তি প্রয়োগ করে কাতড়াঁতে থাকবে এটাই স্বাভাবিক। তাদের তাসের ঘরগুলো এতটাই কাপিয়ে দেওয়া হল যে, বাংলাদেশের প্রথম সারির ব্লগগুলোতেও মেধাবী পেইড ব্লগার লেলিয়ে দিয়ে উঠতি নতুন প্রজন্মের লব্ধ-ধারনাসমূহকে ভিন্নপথে প্রভাবিত করার জন্য উঠে পড়ে লাগল (আমি এই দৃশ্যত গুরুত্বহীন বিষয়টিকে যথেষ্ট গুরুত্বসহকারে নেওয়ার জন্য অন্যান্য রাজনৈতিক দলসমূহকে বিনীত অনুরোধ করব। কারন আমাদের মনে রাখতে হবে এইসব পেইড জামাতপন্থি ব্লগারদের টাগের্ট সেইসব উঠতি শিক্ষিত ব্যক্তিদের নিয়ন্ত্রনে নিয়ে আসা যারা নিজ মেধা/ক্ষমতাগুনে হাজারজন আমজনতাকে প্রভাবিত করার ক্ষমতা রাখে। যা তাদের অন্যান্য দীঘৃমেয়াদি পরিকল্পনাগুলোর একটি, সেটা কোন চিন্তাভাবনা না করেই বলে দেওয়া যায়।)। তারা তাদের নিজস্ব ধর্মরসে গড়া রাজনীতির আবরনে আশ্রয় নিয়ে নীতি ছাপিয়ে এখন শুধুই নৃশংসতার লীলাখেলায় মেতে উঠেছে।

সহজভাবেই বুঝা যায়, এটাই তাদের দুর্বল সময়। আর তাদের এই দুর্বল মুহুর্তই তাদেরকে কঠোরভাবে দমনের চূড়ান্ত সময়। দেশের বিপুল সংখ্যক সাধারন জনগোষ্টি এই বিচারের জন্য প্রতীক্ষার প্রহর গুনছে। চাতক পাখির মত চেয়ে বসে আছে জাতির পুর্ণ দায়মুক্তির আশায়। শুধু বর্তমান প্রধানমন্ত্রির প্রতি ন্যায্য অনুরোধ খাতবে এই করিডোরে-আগত সুযোগের সদ্ব্যবহার করুন যেরকম হায়েনাগুলো করে থাকে। কোন চিত্তাকর্ষক অজুহাত দেখিয়ে এই প্রয়োজনীয় এবং অবশ্যকর্তব্য নির্বাচনী ইস্তেহার এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবেন না। প্লিজজজজ। একটি বড় বিচারে আপাত সন্তুষ্ট সরল জাতিকে ভুলিয়ে ভালিয়ে দীর্ঘায়িত করার চেষ্টা করবেন না। পরবর্তী নিবাচর্নের আগ মুহুর্তে বিচার প্রক্রিয়া শুরু করে আবার জয়ী হলে বাকিটুকু সমাপ্ত করবার মুলা দেখিয়ে নতুন ইস্তেহার তৈরির চেষ্টা করবেন না। প্লিজজজজ। চার নেতা মামলার মত এই মামলাও উপেক্ষা করবেন না। যত দ্রুত সম্ভব এই “জাতিগত অপুষ্টি” টি দুর করুন। আওয়ামীলিগ আর বিএনপির স্ববাবগত কাবাডি খেলার ফাঁকে এই নরপশুগুলো যেন কোনভাবেই ফাকঁতালে গলে বেরিয়ে যায়।

আমার অগাধ বিশ্বাস আছে দেশের মানুষ বিচার নিজের হাতে তুলে নেওয়ার আগেই আপনিই করে দেখাবেন। বিচার হতেই হবে। তাদের সবোর্চ্চ শাস্তি প্রদানের খুব কাছাকাছি চলে এসেছি আমরা। দেরিতে হলেও প্রাথমিক বাধাটি (বঙ্গবন্ধুর বিচার) কেটে গেছে। এখন স্বাভাবিক এবং ক্রমাগতভাবে অন্যগুলোও কাটবে। নরপশুদের ছটপটানি, কাতড়ানি প্রকাশ করাতে গিয়ে যেন আর কোন নতুন আবু-বকর, ফারুকএবং মহিউদ্দিন দের পরিনতি বয়ে নিতে না হয়। এখনই সময় সুদে আসলে বুঝে নেওয়ার পালা। আর শুভ কাছে কখনই দেরি করতে নেই। আমার অগাধ বিশ্বাস আমরা সেটা করবও না। শুভষ্য শীঘ্রম।

আমি স্বপ্ন দেখি সেই বাংলাদেশের যে বাংলাদেশে একদিন রাজাকারদের বীর্যে গড়া কালসাপগুলোরও একদিন মতিভ্রম হবে। ওরা প্রকৃত রাজনীতিতে জড়িত হবে। রাজাকারমুক্ত দেশে দলাদলীহীন গনতন্ত্রের মাধ্যমে দেশকে সম্মানজনক অবস্থানে নিয়ে যাবে।
আরেকটু পড়ি, কি বলেন.......

মঙ্গলবার, ২ ফেব্রুয়ারী, ২০১০

অতৃপ্ত প্রতিশোধ-১

অতৃপ্ত প্রতিশোধ-১
অতৃপ্ত প্রতিশোধ-২
অতৃপ্ত প্রতিশোধ-৩
অতৃপ্ত প্রতিশোধ-৪
অতৃপ্ত প্রতিশোধ-৫
১.
তাপস বাবু তার রুটিনমাফিক ঝামেলা থেকে আর পরিত্রান পাচ্ছেন না কোনভাবেই। ঘরে এখনও রান্না বসানো হয়নি। কারন কেয়ারটেকার এখনও এসে পৌছায়নি। গতকালও বাজারের একটি হোটেল থেকে খেয়ে আসতে হয়েছে। ডাল-মাংস ভুনা নামের গ্রামের যে ঐতিহ্যবাহী খাদ্যটি তিনি গতকাল গলাধ:করন করেছেন তা এখনও জানান দিচ্ছে। পেটে ক্ষীন ব্যথা নিয়ে টেবিলে বসে আছেন। ফুড-পয়জনিং লক্ষন মনে হচ্ছে। গতানুগতিকতার বাইরে শারীরিক যন্ত্রনা ভুলে থাকবার সবচেয়ে ভাল উপায় হচ্ছে মস্তিষ্ককে সার্বক্ষনিক ব্যস্ত রাখা। অথবা উত্তেজক কিছু উপভোগ করা। তাপস বাবু প্রথম টনিককেই বেছে নিলেন। নিউরনগুলোকে সজীব করার জন্য এখন একটি নতুন গল্প সাজিয়ে নেওয়া যায়। প্রথম আউটলাইনটা গড়তেই ভাবতে হয় গভীরভাবে। কোন নতুন গল্পের প্রাথমিক প্লাটফরমটা দাড়িয়ে গেলেই বাকিটুকু অবাধ স্রোতপ্রবাহের মত এমনিতেই অগ্রসর হতে থাকে।

প্রথমেই তাপস বাবুর পরিচয়টা দেওয়া যাক। তাপস বাবু প্রখ্যাত লেখক। বিশ্বব্যাপি পরিচিতি। দুইটা বই ইউনেস্কো পুরষ্কার পেয়েছে। “Paranormal Humanism” আর “Supernatural Belief”। তারপর থেকেই খ্যতি ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বব্যাপি। লেখালেখিতেই এখন পুর্ন সময় ব্যয় করা হয়। বাকিটুকু সময় ভ্রমন করেই কাটান। এতেই ভাল লাগে।


তাপস বাবু এই গ্রামে মাত্র কদিন হল বেড়াতে এসেছেন, অনেকটাই গোপনে। ঠিক বেড়ানোও না। উদ্দেশ্য নিয়ে আসলে এটাকে সবসময় বেড়ানো বলে চালিয়ে দেওয়া যায় না। নিরিবিলি পরিবেশে কয়েকটি গল্প লেখার উদ্দেশ্যই আসার মুল কারন। গ্রামের এক ইউনিয়ন চেয়ারম্যান নিজেই জনমানবশুন্য এই সুন্দর বাংলোতে থাকার সব বন্দোবস্ত করে দিয়েছেন। দেখাশোনার জন্য একজন কেয়ারটেকারকে দায়িত্ব দিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু লোকটি কাজে আসছে অনিয়মিতভাবে। কাল রাতেও আসেনি। আজ তো এখনও খবর নেই। আজ না আসলে ঐ হোটেলের ডাল-মাংস ভুনা আবার খেতে হবে কিনা কে জানে! আর তো তেমন ভাল কোন হোটেলও নেই এখানে।

একটি আধো-ভৌতিক গল্পের প্লাটফরম দাড়ঁ করাতে চেষ্টা করছেন তাপস বাবু। জঙ্গলামত এই পুরনো বাংলোয় নিরিবিলি পরিবেশটা মনে হয় এই জেনরির জন্যই উপযুক্ত। তাপস বাবু মুস্তষ্ককে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করছেন। গল্পের পরিমন্ডলটি সাজিয়ে নিচ্ছেন একটু একটু করে। এখনও পেটের ক্ষীন ব্যথাটিকে তাড়ানো যাচ্ছে না। বরং তীব্র আকার ধারন করছে ক্রমাগত। পেটে চেপে ধরে থাকলেন কিছুক্ষন। কিছুটা প্রশান্তি লাগছে এখন।

তাপস বাবু পাশের রুমের বুক শেলফের কাছে গেলেন। সবগুলো বইই পুরনো। প্যারা-নরমাল একটিভিটিজ নিয়ে একটি বই পাওয়া গেল - আর্নেস্ট হেমিঙওয়ের লিখা। “A Movable feast” আগেও একবার পড়েছিলেন বইটি। আবারও পড়তে ইচ্ছে করছে। আর্নেস্ট হেমিঙওয়ে তাপস বাবুর সবচেয়ে প্রিয় লেখক। লেখালেখির আদর্শ বলে মানেন। অনেক গল্প পরিকল্পনায় উনাক চিন্তাশক্তিকে অনুসরন করার চেষ্টা করেন। বইটি হাতে নিয়ে টেবিলে আসলেন। জানালা খোলা, হু হু করে বাতাস আসছে জানালা দিয়ে। একটু শীত শীতও করছে। তবু জানালা বন্ধ করতে ইচ্ছে করছে না। জানালা দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকলেন কিছুক্ষন। আকাশে মেঘ জমেছে, বৃষ্টি হবে হয়তো আজ। এক ফালি চাদঁ বাশ-ঝাঁড়ের ফাক দিয়ে দেখা যাচ্ছে। চাদেঁর ম্লান আলোয় চারপামটা কেমন রহস্যময় লাগছে। ঝড়ো রাত্রিতে চারদিকটা কেমন গা ছমছম নিরবতা। বাতাসে গাছের পাতাগুলো হুলি খেলায় মেতে উঠেছে। এখন পেটের ব্যথাটা একটু কমেছে মনে হয়। যাক, বাচাঁ গেল। বাতাসের বেগ আরও বাড়া শুরু করল। বৃষ্টিও পড়তে লাগল অল্প অল্প। ইলেকট্রিসিটি চলে গেল হঠাৎ করে। রাত প্রায় ১২ টায় লোড-শেডিং হবার কথা না। ঝড়ের পুর্বাবাস বলেই বোধ হয় ইলেকট্রিসিটি চলে গেছে।

তাপস বাবু বিরক্তি ভাব নিয়ে মোমবাতি খুজতে লাগলেন। প্রায় এক সপ্তাহ হল এই বাংলোতে এসেছেন, এখনও কোথায় কি আছে মনে রাখতে পারছেন না। কেয়ারটেকার পরিমলই খুজে-টুজে দেয় সবকিছু। আর আজ সে না আসাতেই বোধ হয় এত অনাকাংখিত ঝামেলা তৈরি হচ্ছে। চুলার নিচে হাতড়ে হাতড়ে অবশেষে একটি মোমবাতি আর দেয়াশলাই পাওয়া গেল। তাপস বাবু মোমবাতি জালিয়ে টেবিলে এসে বসলেন। বইটা খুলতে গিয়ে দেখলেন বই প্রায় ভিজে গিয়েছে। শুধু বই না, পুরো টেবিলটাই বৃষ্টির পানিতে ভেজা। বিরক্তিবোধ চরমে গিয়ে উঠল। কাল পরিমল আসলে আচ্ছামত শাসাতে হবে ব্যাটাকে। তাপস বাবু জানালার ডালাটি বন্ধ করার জন্য টেবিল থেকে উঠতে গিয়ে কিছুক্ষন স্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে রইলেন। জানালার দিকে তাকাতে গিয়ে ভয়ের শীতল স্রোত বয়ে গেল শীড়দাড়া দিয়ে। একজোড়া বড় বড় চোখ তার দিকে একদৃষ্টিতে অপলক তাকিয়ে আছে। কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকলে এই দুটি চোখ একজন মানুষকে পুড়িয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।


(চলবে)
আরেকটু পড়ি, কি বলেন.......

শনিবার, ৩০ জানুয়ারী, ২০১০

শয়তানের ত্রিভূজ

সেই ছোটবেলায় প্রথম এ বিষয়ে ভীতিকর গল্প পড়েছিলাম। আর কয়েকদিন আগেই হিস্টরি চ্যানেলে এটার উপর একটা অনুষ্ঠান দেখছিলাম। আর একারনেই এ বিষয়টি নিয়ে একটি পোস্ট লিখতে খুব ইচ্ছে করছে কয়েকদিন ধরে।

বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল যা শয়তানের ত্রিভূজ নামেও পরিচিত, আটলান্টিক মহাসাগরের একটি বিশেষ অঞ্চল, যেখান বেশ কিছু জাহাজ ও উড়োজাহাজ রহস্যজনক ভাবে নিখোঁজ হওয়ায় কথা বলা হয়। অনেকে মনে করেন ঐ সকল অন্তর্ধানের কারণ নিছক দূর্ঘটনা, যার কারণ হতে পারে প্রাকৃতিক দূর্যোগ অথবা চালকের অসাবধানতা। আবার চলতি উপকথা অনুসারে এসবের পেছনে দায়ী হল কোন অতিপ্রকৃতিক কোন শক্তি বা ভিনগ্রহের কোন প্রাণীর উপস্থিতি। তবে এ বিষয়ে পর্যাপ্ত তথ্য রয়েছে যে , যেসব দূর্ঘটনার উপর ভিত্তি করে বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলকে চিহ্নিত করা হয়েছে তার বেশ কিছু ভুল, কিছু লেখক দ্বারা অতিরঞ্জিত হয়েছে এমনকি কিছু দূর্ঘটনার সাথে অন্যান্য অঞ্চলের দূর্ঘটনার কোনই পার্থক্য নেই।

এই ত্রিভূজের উপর দিয়ে মেক্সিকো উপসাগর থেকে উষ্ণ সমুদ্র স্রোত বয়ে গেছে। এই তীব্র গতির স্রোতই অধিকাংশ অন্তর্ধানের কারণ। এখানকার আবহাওয়া এমন যে হঠাৎ করে ঝড় ওঠে আবার থেমে যায়, গ্রীষ্মে ঘূর্ণিঝর আঘাত হানে। বিংশ শতাব্দীতে টেলিযোগাযোগ, রাডার ও স্যাটেলাইট প্রযুক্তি পৌঁছানোর আগে এমন অঞ্চলে জাহাজডুবি খুব স্বাভাবিক একটি ঘটনা। এই অঞ্চল বিশ্বের ভারী বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচলকারী পথ গুলোর অন্যতম। জাহাজগুলো আমেরিকা, ইউরোপ ও ক্যারিবিয়ান দ্বীপপূঞ্জে যাতায়াত করে। এছাড়া এটি হল প্রচুর প্রমোদতরীর বিচরণ ক্ষেত্র। এ অঞ্চলের আকাশপথে বিভিন্ন রুটে বাণিজ্যিক ও ব্যক্তিগত বিমান চলাচল করে। ত্রিভূজের বিস্তৃতির বর্ননায় বিভিন্ন লেখক বিভিন্ন মত দিয়েছেন। কেউ মনে করেন এর আকার ট্রাপিজয়েডের মত, যা ছড়িয়ে আছে স্ট্রেইটস অব ফ্লোরিডা, বাহামা এবং ক্যারিবিয়ান দ্বীপপূঞ্জ এবং ইশোর (Azores) পূর্বদিকের আটলান্টিক অঞ্চল জুড়ে, আবার কেউ কেউ এগুলোর সাথে মেক্সিকোর উপসাগরকেও যুক্ত করেন। তবে লিখিত বর্ণনায় যে সাধারণ অঞ্চলের ছবি ফুটে ওঠে তাতে রয়েছে ফ্লোরিডার আটলান্টিক উপকূল, সান হোয়ান (San Juan), পর্তু রিকো, মধ্য আটলান্টিকে বারমুডার দ্বীপপূঞ্জ এবং বাহামা ও ফ্লোরিডা স্ট্রেইটস এর দক্ষিণ সীমানা যেখান ঘটেছে অধিকাংশ দূর্ঘটনা।






ত্রিভূজ গল্পের ইতিহাস

বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল বিষয়ে যারা লিখেছেন তাঁদের মতে ক্রিস্টোফার কলম্বাস সর্বপ্রথম এই ত্রিভূজ বিষয়ে অদ্ভুত অভিজ্ঞতার কথা লিখেন। তিনি লিখেছিলেন যে তাঁর জাহাজের নবিকেরা এ অঞ্চলের দিগন্তে আলোর নাচানাচি, আকাশে ধোঁয়া দেখেছেন। এছাড়া তিনি এখানে কম্পাসের উল্টাপাল্টা দিক নির্দেশনার কথাও বর্ণনা করেছেন। তিনি ১১ই অক্টোবর, ১৪৯২ তে তাঁর লগ বুকে লিখেন –

"The land was first seen by a sailor (Rodrigo de Triana), although the Admiral at ten o'clock that evening standing on the quarter-deck saw a light, but so small a body that he could not affirm it to be land; calling to Pero Gutiérrez, groom of the King's wardrobe, he told him he saw a light, and bid him look that way, which he did and saw it; he did the same to Rodrigo Sánchez of Segovia, whom the King and Queen had sent with the squadron as comptroller, but he was unable to see it from his situation. The Admiral again perceived it once or twice, appearing like the light of a wax candle moving up and down, which some thought an indication of land. But the Admiral held it for certain that land was near..."

বর্তমানে বিশেষজ্ঞরা প্রকৃত লগবুক পরীক্ষা করে যে মত দিয়েছেন তার সারমর্ম হল – নাবিকেরা যে আলো দেখেছেন তা হল স্থানীয় জনগোষ্ঠীর ব্যবহৃত নৌকায় রান্নার কাজে ব্যবহৃত আগুন, আর কম্পাসে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছিল নক্ষত্রের অবস্থান পরিবর্তনের কারণে। ১৯৫০ সালের ১৬ই সেপ্টেম্বর ই. ভি. ডব্লিউ. জোন্স( E.V.W. Jones) সর্বপ্রথম এ ত্রিভূজ নিয়ে খবরের কাগজে লিখেন। এর দু বছর পর ফেইট (Fate)ম্যাগাজিনে জর্জ এক্স. স্যান্ড( George X. Sand) “সী মিস্ট্রি এট আওয়ার ব্যাক ডোর” ("Sea Mystery At Our Back Door") শিরোনামে একটি ছোট প্রবন্ধ লিখেন। এ প্রবন্ধে তিনি ফ্লাইট নাইনটিন ( ইউ এস নেভী-র পাঁচটি ‘টি বি এম অ্যাভেন্জার’ বিমানের একটি দল, যা প্রশিক্ষণ মিশনে গিয়ে নিখোঁজ হয়) এর নিরুদ্দেশের কাহিনী বর্ণনা করেন এবং তিনিই প্রথম এই অপরিচিত ত্রিভূজাকার অঞ্চলের কথা সবার সামনে তুলে ধরেন।

১৯৬২ সালের এপ্রিল মাসে ফ্লাইট নাইনটিন নিয়ে আমেরিকান লিজান (American Legion) ম্যগাজিনে লিখা হয়। বলা হয়ে থাকে এই ফ্লাইটের দলপতি কে নাকি বলতে শোনা গিয়েছে- We don't know where we are, the water is green, no white। এর অর্থ হল "আমরা কোথায় আছি জানি না, সবুজ বর্ণের জল, কোথাও সাদা কিছু নেই"। এতেই প্রথম ফ্লাইট নাইনটিনকে কোন অতিপ্রাকৃতিক ঘটনার সাথে যুক্ত করা হয়। এরপর ভিনসেন্ট গডিস (Vincent Gaddis) “প্রাণঘাতী বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল”( The Deadly Bermuda Triangle) নামে আর এক কাহিনী ফাঁদেন ১৯৬৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে। এর উপর ভিত্তি করেই তিনি আরও বিস্তর বর্ণনা সহকারে লিখেন "ইনভিজিবল হরাইজন" (Invisible Horizons) মানে “অদৃশ্য দিগন্ত” নামের বই। আরও অনেক লেখকই নিজ নিজ মনের মাধুরী মিশিয়ে এ বিষয়ে বই লিখেন, তাঁরা হলেন জন ওয়ালেস স্পেন্সার, তিনি লিখেন "লিম্বো অফ দ্যা লস্ট" (Limbo of the Lost, 1969, repr. 1973), মানে “বিস্মৃত অন্তর্ধান”; চার্লস বার্লিটজ (Charles Berlitz) লিখেন “দি বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল”(The Bermuda Triangle, 1974); রিচার্ড উইনার লিখেন "দ্যা ডেভিল'স ট্রায়াঙ্গেল" “শয়তানের ত্রিভূজ” (The Devil's Triangle, 1974) নামের বই, এছাড়া আরও অনেকেই লিখেছেন। এরা সবাই ঘুরেফিরে একার্ট ( Eckert) বর্ণিত অতিপ্রাকৃতিক ঘটানাই বিভিন্ন স্বাদে উপস্থাপন করেছেন।

কুসচ –এর গবেষণায় যা পাওয়া যায় তা হল-

* বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলে যে পরিমান জাহাজ ও উড়োজাহাজ নিখোঁজ হওয়ায় কথা বলা হয় তার পরিমান বিশ্বের অন্যান সমুদ্রের তুলনায় বেশি নয়।

* এ অঞ্চলে গ্রীষ্মমন্ডলীয় ঝড় (tropical storms) নিয়মিত আঘাত হানে, যা জাহাজ ও উড়োজাহাজ নিখোঁজ হওয়ার অন্যতম কারন। কিন্তু বার্লিটজ বা অন্য লেখকেরা এধরনের ঝড়ের কথা অনেকাংশেই এড়িয়ে গিয়েছেন।

* অনেক ঘটনার বর্ণনাতেই লেখকেরা কল্পনার রং চড়িয়েছেন। আবার কোন নৌকা নির্দিষ্ট সময়ের চেয়ে দেরিতে বন্দরে ভিড়লে তাকে নিখোঁজ বলে‌ প্রচার করা হয়েছে।

* আবার কখনোই ঘটেনি এমন অনেক ঘটনার কথা লেখকেরা বরেছেন। যেমন- ১৯৩৭ সালে ফ্লোরিডার ডেটোনা সমুদ্রতীরে( Daytona Beach) একটি বিমান দূর্ঘটনার কথা বলা হয়, কিন্তু সেসময়ের খবরের কাগজ থেকে এ বিষয়ে কোন তথ্যই পাওয়া যায়নি।

সুতরাং কুসচ –এর গবেষণার উপসংহারে বলা যায়- লেখকরা অজ্ঞতার কারনে অথবা ইচ্ছাকৃত ভাবে বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল নিয়ে বানোয়াট রহস্য তৈরি করেছেন।



প্রকৃতিক ঘটনার মাধ্যমে ব্যাখ্যা

কন্টিনেন্টাল সেলভে(continental shelve) জমে থাকা বিপুল পরিমান মিধেন হাইড্রেট অনেক জাহাজ ডোবার কারন বলে দেখা গেছে। অস্ট্রেলিয়ায় পরীক্ষাগারের গবেষণায় দেখা গিয়েছে, বাতাসের বুদবুদ পানির ঘনত্ব কমিয়ে দেয়। তাই সাগরে যখন পর্যায়ক্রমিক মিথেন উদগীরন হয়, তখন পানির প্লবতা(কোন কিছুকে ভাসিয়ে রাখার ক্ষমতা) কমে । যদি এমন ঘটনা ঐ এলাকায় ঘটে থাকে তবে সতর্ক হবার আগেই কোন জাহাজ দ্রুত ডুবে যেতে পারে।

১৯৮১ সালে [“ইউনাইটেড স্টেটস জিওলজিক্যাল সার্ভে”] একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে, যাতে বর্ণিত আছে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ উপকূলের বিপরীতে [ব্ল্যাক রিজ](Blake Ridge) এলাকায় মিধেন হাইড্রেট রয়েছে। আবার ইউএসজিএস(ইউনাইটেড স্টেটস জিওলজিক্যাল সার্ভে) এর ওয়েব পেজ থেকে জানা যায়, গত ১৫০০ বছরের মধ্যে ঐ এলাকায় তেমন হাইড্রেট গ্যাসের উদগীরন ঘটেনি।

কম্পাসের ভূল দিক নির্দেশনা

কম্পাসের পাঠ নিয়ে বিভ্রান্তি অনেকাংশে এই বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের কাহিনীর সাথে জড়িত। এটা মনে রাখা প্রয়োজন যে কম্পাস থেকে চুম্বক মেরুর দূরত্বের উপর ভিত্তি করে এর দিক নির্দেশনায় বিচ্যূতি আসে। উদাহরন হিসেবে বলা যায়- যুক্তরাষ্ট্রে শুধুমাত্র উইসকনসিন(Wisconsin) থেকে মেক্সিকোর উপসাগর(Gulf of Mexico) পর্যন্ত সরলরেখা বরাবর চৌম্বক উত্তর মেরু সঠিক ভাবে ভৌগোলিক উত্তর মেরু নির্দেশ করে। এই সাধারন তথ্য যে কোন দক্ষ পথপ্রদর্শকের জানা থাকার কথা। কিন্তু সমস্যা হল সাধারন মানুষকে নিয়ে, যারা এ বিষয়ে কিছুই জানে না। ঐ ত্রিভূজ এলাকা জুড়ে কম্পাসের এমন বিচ্যূতি তাদের কাছে রহস্যময় মনে হয়। কিন্তু এটা খুবই স্বাভাবিক ঘটনা।
[সম্পাদনা] হারিকেন

হারিকেন(Hurricane) হল শক্তিশালী ঝড়। ঐতিহাসিক ভাবেই জানা যায়- আটলান্টিক মহাসাগরে বিষুব রেখার কাছাকাছি অঞ্চলে শক্তিশালী হারিকেনের কারনে হাজার হাজার মানুষের প্রাণহানী ঘটেছে, আর ক্ষতি হয়েছে কোটি কোটি টাকার। রেকর্ড অনুসারে ১৫০২ সালে স্প্যানিশ নৌবহর “ফ্রান্সিসকো দ্য বোবাডিলা” (Francisco de Bobadilla) এমনি একটি বিধ্বংসী হারিকেনের কবলে পড়ে ডুবে যায়। বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের কাহিনীর সাথে জড়িত অনেক ঘটনার জন্য এধরনের হারিকেনই দায়ী।

ঐ এলাকায় সমুদ্রবক্ষে কিছু বিপদজনক পাথুরে জায়গা আছে। পাশাপাশি ঐ এলাকায় তুমুল স্রোত ... ঐ পরিস্থিতিতে ছবির মত ঘূর্ণী তৈরী হওয়া অস্বাভাবিক নয়। কাজেই পাথুরে জায়গা ও স্রোতের কারণে নৌযান দূর্ঘটনার সম্ভাবনা বেশি আর একবার দূর্ঘটনা ঘটলে সেটার ধ্বংসাবশেষ খুব দ্রুত অনেক দুরে ছড়িয়ে পড়ে। তাই খুঁজে পাওয়া যায় না। আকাশে বিমানের যান্ত্রিক ত্রুটি বা ভুল রিডিং-এর কোন ব্যাখ্যা অবশ্য দেয় নাই ঐ অনুষ্ঠানে।

ব্যক্তিগত ভাবে আমার মনে হয় ওগুলো গাল-গল্প। কারণ পাথুরে জায়গা + সমুদ্রস্রোত আর এর ফলে ছড়িয়ে পড়ার ফলে জাহাজের ধংসাবশেষগুলোকে খুঁজে পাওয়া কষ্টকর ...... এখান থেকে ঐ এলাকা সম্পর্কে ভীতিকর কথাবার্তা ছড়িয়ে পড়েছে। তারপর সেই গল্পর ডালপালা গজিয়েছে। আর কুসংস্কারাচ্ছন্ন মনে ওখানে কেউ গেলে তিলকে তাল মনে হতেই পারে।

ঐ স্থানে ম্যাগনেটিক ফিল্ড আছে বা অন্য কোন অতিপ্রাকৃত শক্তি আছে - এটা কিন্তু শুধু গল্পের বইগুলোতেই বিদ্যমান .... আর আছে কিছু পুরানা খবরে (আমেরিকার খবর!) যেগুলোর কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নাই।

[লিখাটি একই সাথে উইকিপিডিয়াতেও অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে।]


তথ্যসূত্র:
১. Introduction Bermuda Triangle .org
২. http://www.bermuda-triangle.org/html/aircraft_losses.html | title = Aircraft ৩. Triangle .org
৪. http://www.bermuda-triangle.org/html/missing_vessels.html

আরেকটু পড়ি, কি বলেন.......

মঙ্গলবার, ২৬ জানুয়ারী, ২০১০

ইউনিভার্সিটিতে একদিন (ছবিব্লগ)

কাল একটি পার্টি ছিল। নিজেরই আয়োজন ছিল। তাই ধকল গেল অনেক। এখনও ক্লান্তি বোধ হচ্ছে। ইউনিভার্সিটি থেকে ফিরে ফ্রেশ হয়ে বসে আছি। জানালার ধারে আসলাম। জানালার একটা ডালা খোলা। তাই শীত শীত করছিল বেশ। বন্ধ করতে গিয়ে দেখি বাইরে কি সুন্দর স্নো পড়ছে। ইস্, এই ব্যাপারটা এত ভাল লাগে দেখতে! এই দেশে যদি ভাল লাগার কোন কিছুর তালিকার করার জন্য ভোটাভুটি করা হয়, আমার প্রথম ভোট এখানেই পড়বে, সন্দেহ নেই। তাকিয়ে রইলাম অনেকক্ষন। স্নো দেখতে দেখতে হঠাৎ মনে হল অনেক দিন ব্লগে লেখা হয় না। ক্লান্তও লাগছে বেশ আবার কিছু একটা লিখতেও ইচ্ছে করছে। এমন মুহুর্তে শুধু ছবিব্লগের কথাই মাথায় আসে। কম সময়ে মনের আবেগ সহজভাবে প্রকাশ করা যায় গুটিকয়েক ছবির মাধ্যমে। কয়েকদিন আগে বেশ কয়েকটা ছবি তুলেছিলাম আমার ইউনিভার্সিটিতে। সেগুলোই না হয় আজ একটু শেয়ার করা যাক।

ছবিগুলোর ক্যাপচার হয়তো ভাল হয়নি, কিন্তু এই ইউনিভার্সিটি-টির ভিউ এতই সুন্দর যে, ছবিগুলো আমার ফটোগ্রাফির ব্যর্থ শৈল্পিকতাকে ছাপিয়ে ঠিকই উজ্জ্বল দ্বীপ্তিময় হয়ে উঠবে ক্যামেরার ম্যাগনেটিক ফিল্মে। প্রকৃতি তার নিজস্ব ঐশ্বর্য প্রকাশে কখনই কার্পন্য করে নি, কখনও করবেও না।


মিডিলসেক্স কলেজ-১


পাতার পাকা হওয়া


ইউনিভার্সিটি কলেজ-১


বাদুড়ের বাসা


ইউনিভার্সিটি কলেজ-২


পদার্থবিদ্যা ভবন


ফেলা পাতার মর্যাদা


জড়ানো ভালবাসা


মিডিলসেক্স কলেজ-২


বুনো ফল


শুভাশিষ রইল।
আরেকটু পড়ি, কি বলেন.......

বুধবার, ২০ জানুয়ারী, ২০১০

পাঠ্যকীর্তির লীলাকীর্তন

বাল্যবেলায় আর সবার মত আমারও কোনরকম পঠনপ্রীতি ছিল না। থাকার কোন যৌক্তিকতাও নেই। বরং অল্প আচেঁ (শর্টকার্ট ওয়ে) কিভাবে এই বৈতরনী পার করে ফেলা যায় এ নিয়ে থাকত দিনভর নানাবিধ “৩০ দিনে ইংরেজী শেখা” টাইপ পালাবদল পরিকল্পনা। এতে বন্ধুসমীপেষু মুমিতের স্বেচ্ছাচারী সহযোগীতা ছিল ঝেড়ে কৃতজ্ঞতা জানানোর মত সবর্দা প্রত্যাশিত। পড়াশোনার মত বোরিং একটা ব্যাপারকে কিভাবে পাশ কাটিয়ে সহজেই পরীক্ষায় ভাল ফলাফল তুলে ফেলা যায় এ নিয়ে উল্লেখ করার মত আমাদের অনেক সংবেদনশীল ঘটনাও আছে। আর এসব ছলচাতুরির পিছনে মুল ইন্ধন যুগিয়েছিল তখনকার দুরন্তপনা বয়স। বয়সের একটা ঘোর থাকে। কলেজের প্রথম দিনগুলিতে আমাদের যেমন অন্যতম ঘোর ছিল মেয়ে সংক্রান্ত, তেমনি বাল্যবেলায় ছিল “এড়িয়ে চলা” সংক্রান্ত। কিন্তু মাথায় “জিনিস” একটু কম থাকার কারনে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমাদের পরিকল্পনা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হত।


ছোটবেলা থেকেই পঠনবিষয়ক কোন উপদেশ শুনলে চরম বিরক্তি বোধ করতাম। বাবার বন্ধুগোছের একজন একবার “ড: মো শহীদুল্লাহ” সাহেবের মত ভাব ধরে গম্ভীরভাবে উপদেশ দিচ্ছিলেন, “শোন বাবারা, জ্ঞান অর্জনের কোন শর্টকার্ট পদ্ধতি নাই, কৃষ্ঠ সাধনার মধ্য দিয়েই তা অর্জন করতে হয়, বুঝলা?”। তখন থেকেই এই কথামৃত ভুল প্রমানের জন্য উঠে-পড়ে লেগেছিলাম। “বাবার বন্ধুবরের উপদেশ নিপাত যাক” চিরকুট লিখে কালিমন্দিরের চরনতলায় রেখে দিয়ে এসেছিলাম পরদিন রাতে।

কোন এক রূপকথার গল্পে পড়েছিলাম, চেনাগোবরের মধ্যে বিদ্যাপাতাকে (এক ধরনের বিশেষ পাতা) চুবিয়ে কোন বইয়ের মলাটের ভেতরে রাখলে নাকি সেই বইয়ের সব তথ্য পেইজ নম্বরসহ মুখস্থ হয়ে যায়। প্রমানস্বরূপ একটা ছেলের ছবিসহ বর্ননাও দেয়া ছিল বইটিতে। ছবিসহ বর্নণা দেখে আমাদের বিশ্বাস আরও পাকাপোক্ত হয়ে গেল। আর যায় কোথায়! ঔষুধ ইম্লিমেন্টেশনে নেমে পড়লাম। তার আগে আমরা দুই বন্ধু অনেক স্টাডির পর চিন্তা করে দেখলাম, যেহেতু পশুবর্জ্যের থেকে মনুষ্যবজ্যের মধ্যে সারের মাত্রার পরিমাণ বেশি থাকার কথা, তাই মনুষ্যবর্জ্যই ব্যবহার করাটা বেশি ফলদায়ক হবে। চিন্তার্জিত লজিকে নিজেই নিজেদেরকে বাহবা দিতে লাগলাম। তুমুল উচ্ছাস নিয়ে ঝাপিয়ে পড়লাম বিদ্যাপত্র সংগ্রহে। পরে মালিপাড়ার তলাবিহীন “প্রাকৃতিক কর্মের গোডাউন” এর নিচে গিয়ে নাক-মুখ চেঁপে ২৮টি বিদ্যাপত্র টাটকা মলে চুবিয়ে বীরদর্পে “যুদ্ধ জয়ের আনন্দ” নিয়ে বেরিয়ে আসলাম খোলা ওয়াশরুম থেকে। পরে সেগুলো সবার অগোচরে তিনদিন চালে শুকিয়ে গুনে দেখলাম কিভাবে জানি ২৮, ২৫-এ কনভার্ট হয়ে গিয়েছে। যা হোক, তারপর ভবদেবতার যাতে চাপ্টার খুজেঁ পেতে অসুবিধে না হয়, সেজন্য বিদ্যাপত্রগুলো মলাটের ভেতর না রেখে জটিল চাপ্টারের ভেতরে ভেতরে ব্ল্যাকটিপ দিয়ে আটকিয়ে রাখলাম। সর্বসাকুল্যে ২৮টি চাপ্টারের জন্য ২৮টি বিদ্যাপত্রের ব্যবস্থা করলেও শুকানোর সময় ৩টি হারিয়ে যাওয়াতে কিছুটা মনক্ষুন্নও হয়েছিলাম সেদিন। পরে সে দু:খ ঝেড়ে ফেলে, সহজ অটোমেটিক ওয়েতে বিদ্যার্জনের অভিপ্রায় নিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুরে বেড়াতে লাগলাম কিছুদিন। কিন্তু দু:খের বিষয়, আমাদের ভাবনায়-এই অব্যর্থ পরিকল্পনাটি আমাদের ক্ষেত্রে কেন সেদিন কোন কাজে আসেনি, সেইটা আমরা এখনও কোনভাবেই বুঝে উঠতে পারিনা।

ক’মাস পর খরব পেলাম বড়বাজারের হাটে প্রতি শুক্রবার খুব বড়মাপের এক জোতিষী বসে। তিনি পানি পড়া দিয়ে সকল “গতি নাই” সমস্যারও শতভাগ কার্যকরী সমাধান করে দিতে পারেন। আমরা আর কালক্ষেপন না করে “এতদিনে স্বর্নকাঠি বাড়ির উঠোনে…” মনে করে উনার দর্শন লাভের জন্য ঘোষ দিয়ে আগাম এপয়েন্টমেন্ট দিয়ে রাখলাম। তো উনার আশ্রমে যাওয়ার পর এক আলো-আধাঁরী পরিবেশে গুরুজী আমাদের দিকে একনজর তাকিয়ে গুরু-গম্ভীর মুখে বলে উঠলেন, “তোরা কি চাস, সমস্যার বৃত্তান্ত কি, যথাশীঘ্র বলে ফেল??” ভয়ে ভয়ে বললাম. সামান্য কেমিস্ট্রি, সামান্য ভুগোল, বেশি বেশি ফিজিক্স, আর কিঞ্চিত এলজেব্রা সমস্যা, তবে এলজেব্রার ১০ম প্রশ্নমালার ২২ আর ২৩ নম্বরটায় সবচেয়ে বেশি সমস্যা। কথাটা শুনেই গুরুজী দাতঁ-মুখ খিচিয়ে, রক্তবর্ন চোখে, থু-থু ছিটিয়ে সেইযে মর্ত্যকাপানোঁ একখান জটিল ধমক দিলেন, আমরা আর পিছন না ফিরে লম্বা এক দৌড় দিলাম, পরে আবিষ্কার করি এক দৌড়ে আমরা দুজনেই বইসমেত বাড়ির পড়ার ঘরে, আর দুই হাতে দুইটা করে বই।

পরে আর উপায়ন্তর না দেখে ভবদেবতার সরাসরি আশীর্বাদ লাভের উপায় খুজতে লাগলাম। মা কোন একদিন বলেছিলেন স্বরস্বতী পুজোর দিন সুর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পড়াশোনা করলে সারাবছর নাকি খুব ভাল ফলাফল পাওয়া যায়। কথাটা শুনে চোখ-মুখ আনন্দে ঝলসে উঠল। এত সহজ একটা ওয়ে, আর এতদিন আমরা ঝানতামি না!! ওইদিন থেকেই মাতৃশ্রদ্ধা মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে গেল। তুমুল আগ্রহ নিয়ে পুজোর দিনের অপেক্ষা করতে লাগলাম। পুজোর দিন আসামাত্রই দরজা বন্ধ করে কাচাঁ ভোর থেকেই শেলফে সিরিয়াল করে সাজিয়ে রাখা গল্পের বই একে একে পড়তে শুরু করে দিলাম। আর একটু পর পর স্বরস্বতীর ফটো ছুয়ে মন উজার করে প্রার্থনা করতে লাগলাম। সূর্য ডোবার কাছাকাছি সময়ে তিন গোয়েন্দা সিরিজের ১২তম খন্ডটি শেষ করে ফেলতেছি প্রায়, এমন সময় পুজো থেকে মা ঘরে এসে ঢুকে আমার আয়োজন দেখে জিজ্ঞেস করলেন, “কিরে এত গল্পের বই?” আমি আমতা আমতা করে বললাম, “তুমি না বলেছিলে….”। মা মুচকি হেসে বললেন, “সে তো আমি বলেছিলাম পাঠ্যবইয়ের কথা। তোর পরীক্ষায় কি তিন গোয়েন্দা থেকে প্রশ্ন আসবে, নাকি??” আমি তখন টের পেলাম আমার ভ্রম্মতালু দিয়ে অদৃশ্য ধোঁয়ার মত কিছু নির্গত হচ্ছে। চান্দির উত্তাপে মাথার চুল পর্যন্ত পুড়ে পাওয়ার গন্ধও স্পস্ট টের পেতে লাগলাম, আমি।
আরেকটু পড়ি, কি বলেন.......

বুধবার, ১৩ জানুয়ারী, ২০১০

লাভোমিটার: নারীর ভালোবাসা কি তাহলে পুরুষের থেকে কম??

কয়েকদিন থেকেই একটা প্রশ্ন ঘুরছে মাথার ভিতর। অনেক এনালাইসিসের পরও কোন উত্তর বের করতে না পেরে আপনাদের দ্বারস্থ হলাম।

বৃটেনের রাজা অষ্টম এডোয়ার্ড সিম্পসনের জন্য ব্রিটিশ সাম্রাজ্য ত্যাগ করেন, সম্রাট শাহজাহান মমতাজের জন্য বিশ বছরের সাধনায় তাজমহল বানিয়ে রেখেছেন, হেলেন এর জন্য প্যারিস ট্রয় ধ্বংস করেছিল, ক্লিওপেট্রার প্রেমে পাগল এন্টনীকে পরাজীত করতে অগাস্টাস ছুটে গিয়েছে মিশরে জীবন বাজী রেখে, পার্বতীর জন্য দেবদাস উদভ্রান্ত প্রায়, টাইটানিকের রোজের প্রেমে পাগল জ্যাক নিজের জীবন দিয়েও ভালোবাসাকে বাঁচিয়ে দিয়েছিল মহাসমুদ্রের অতল গভীরতা থেকে (যদিও ফিকশান),ভ্যালেন্টাইন তার জীবন দিয়ে দিয়েছে তার প্রেয়সীর জন্য, আমার ভালোবাসার (প্রিয় ল্যাপটপ) জন্য কালকে আমার দশ ডলারও (!) পর্যন্ত ঝরে গেছে আমার পকেট থেকে! এমনকি লাইলি-মজনু, শিরিন ফরহাদ--সবক্ষেত্রেই পুরুষদের ত্যাগই বেশি; ভালোবাসার জন্য কোন নারী ক্ষমতা ছেড়েছে, তেমনটা ইতিহাস দেখাতে পারে না; পুরুষ নারীকে ভালবেসে সর্বস্ব হারিয়েছে -এই রকম নজীর আরো ঢের আছে, নারীরা তার বিপরীতে ভালবাসার কি দৃষ্টান্ত রেখেছে ঝাতি আজ জানতে চায়?


সংবিধিবন্ধ সতর্কীকরনঃ প্রেমিক-প্রেমিকেরা মন্তব্য প্রদানে বিরত থাকিবেন, প্লিজ।

Gender Equity (Lovometer perspective)

এই প্রশ্নটা একবার ফেসবুকে তুলে ধরার পর কয়েকজন এতে গা-ঝেড়ে অংশগ্রহন করে। তাদের যুক্তিবহুল কথোপকথনের মধ্য দিয়ে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ও বের হয়ে আসে। পরস্পর কথোপকথনগুলো সবার সাথে শেয়ার করলাম। ভয়ংকর সব যুক্তি নিয়ে যারা অংশগ্রহন করল:







1. Harun (PhD Candidate,Alberta University, canada)
2. Tanvir hanif (PhD Candidate, University of western onatrio, Canada)
3. Tarana (PhD Candidate,Alberta University, Canada)
4. Adwitia (MC College, Bangladesh)
5. Shibly (Gradute, Brunel University, UK)
6. Rasel Mahbub (Greenwich university, UK)
7. Pinki Moni (ACCA, UK)
8. Ripon (PhD Candidate,University of western ontario, Canada)


কথোপকথনগুলো নিচে হুবুহু তুলে ধরা হল:

Harun Muhammed
athodine ata bujlen, cholonamoi nari ke manush amni koi!!

Ripon Kumar Dey
@Harun...tai to cholonamoi nari ache, cholonamoi purush to nai....

Harun Muhammed

no, you do ur job, otherwise 'lovometer' will not be needed, can we as science student let it be happen, we need love to keep 'lovometer' alive, as a MAN keep loving, as other gender have no love...wish a long live to ur lovemeter...

Ripon Kumar Dey
Alright, very good point.... then what's ur plan to make other gender as lovable as male.....

Harun Muhammed
dont need, our job is to keep lovometer live.

Harun Muhammed
have heard freedom was a crucial right to make them as good as man, but in western country, seems no theory will work, just survive... and keep lovometer survived

Ripon Kumar Dey
Where there are no theory which make the other gender as lovable as male, then why they are shouting for equal rights in the society?

Harun Muhammed
its just a try, hopefully will work, but 50% 50plus single mom theory is probing actually MAN has less love then girls... i am in confusion? or we can divide love with age in few parts! and then program lovometer in that way and no more worry about its survival..khomota/power have to achieve by own work, cant be gifted. present one is gifted
bytheby, is it ur writing or from other source as ".."

Tanvir Hanif

Ripon Da,
Every single example you quoted are men who are
very powerful and accomplished. They didn't shed
blood because they were great lovers(of human beings let alone women)--but because having feudal mentalities
of going to fight for their flock or women. Paris kidnapped... See More
someone else's wife, Shahjahan made a mausoleum for
his wife when universities and observatories were made in Europe, Edward VIII preferred to have extra-marital affair
with Simpson and marry her over his duty as the sovereign
of his country. These singled out events doesn't prove
anything.
Equal rights is bullshit. It is non-existant like a circular
triangle. The declining West imposes these kind of ideas
and inferiority complex on women and promotes to humiliate and womanize men. When women cries for equal rights--they actually
cries for rights to be more like men. They wear men's
costumes and dresses, cut their hair like men---as if
men are the standard. What an irony!!!!
It happens the other way round too. But that's almost insignificant.
There is a saying, "If you let him enter-you have to let
him sit and if you have to let him sit--eventually you
have to let him lie with you." Some, borders must absolutely
not be crossed--even there needs to be literally a ghastly
revolution to alter these trend and rivers of bloods needs to be shed. The love of men and women are distincly strong.
Men can only be fathers and rulers. Women can be mothers,
nuns or whores.

Harun Muhammed
Freedom is the only soln, if someone does not want to be something, we should not force them. but we let them the chance.
I think western culture use the term free sex because of their busy/corporate lifestyle. they dont know is their other ways of finding happiness other than mixing boy and girl. thats why freedom, actually here nothing is free... See More, everything/everyone is bounded by law. and laws are pretty hard if u get into that loop.
Whatever we see in cinema are mostly western ideal case, love with the sack of one life, its nothing but jock here. also nothing is equal, capitalism does not believe in equality, it believes in competition, but give everyone the chance to change individual lifestyle and values. And law protects the "equality in chance". the "equality in chance" is what we call freedom or equality.

Ripon Kumar Dey
@Harun....But it is saying that the law of capitalism countries let "equality in chance" bounded into limitation to women still now. So they r claiming that they are enclosed(confined in) in cosmetic power cell, where they can nothing to do as a decision-maker. And, that cause, they have nothing to give up for LOVE.

Harun Muhammed
not clear ripon bai, r u saying they r still in cosmatic cell? If yes, then ans is power has to be achieved, and i dont think it will be an easy job. but we can/and r giving chance. but they r not using it properly i think or may be using, its upto them. we make sure chance is always open to everyone--that can be another code in ur lovometer!

Tanvir Hanif
Ripon Da,
Women were the heads of the states before. It's not a recent phenomenon. Think about Elizabeth I of England---400 years back.
Her advisors, ministers, counsel etc. etc. consisted of powerful "men".But the society was patriarchal and still is.
To be a prime-minister, politician, head of state doesn't
prove women becoming influencial and powerful in... See More
general. Even those women who becomes prime-ministers
or presidents today utilizes the name and fame of their accomplished husbands and fathers. Equality is not
a fact--never was and never will be. Actually, it is
unacceptable.
Freedom is a vague term. Whatever interacts is not free
and everything that exists do interact. If someone doesnot
want to eat shit---we shouldn't force him or her to do that-
I agree ,but not necessarily vice-versa.
What we see in cinema definitely represents something. Truth
is stranger than fiction. We know the rate of premarital
sex, one night stands, alternative sex styles, teenage-pregnancies and rate of broken marriages ansd extra marital sex in the West. These--- no one can refuse. These are more than busy-corporate life-styles. These happens when
there are laws--but they allow certain things. Free sex
doesn't mean raping a girl--it's random sex in mutual consents.That is more ugly. One can have sex with another person's wife in that guy's shared residence "legally"--if
his wife wants to do so.A guy can have sex with another guy's father. It's freedom. Isn't it?




Harun Muhammed
conclusion is made, but blog headline says ladies still have nothing to give to lovometer!!they must achieve it soon in order to give some in lovometer!

Tanvir Hanif
Equality of chance presumes the equality of substance
and nature of men and women. But men and women
are substantially different. They can complement each other
to build an ideal society---but their roles must be according
to what they are(different)----not--what they aren't(equal).... See More
For example--women should never be given chance to
engage in direct combats in wars or becoming clergy,
butchers or executioners.

Ripon Kumar Dey

@Tanvir Vi....U referred Elizabeth regime.. But, that might be exception and as u know, exception might not be an example...
Yes, i agree with your explanation on Freedom and equity concepts.

Ripon Kumar Dey
@Harun..... No, conclusion still not made. It is BD blog and majority of Blogger is using it from BD and definitely they are in deep sleep now. And we should wait until they awake.
According to your "Equity of chance" we should give them chance to speak on time....lolz.

Ripon Kumar Dey
@Tanvir Vi... ur explanation results there should not be "equity" in between two different beings (men & women). Should it?

Harun Muhammed

Hanif vai, yes u r right, there is no ultimate equality, and never will be. and no ultimate freedom as well. We r different, I think we misuse the term 'equality of chance" and equality. its not misuse, but some general public always like chaos. As u said, there are chaos, but ideally we have to make some rules and try to brainwash everyone this ... See Moreway. I think lawmakers/politicians think all general ppl as "general" and brainwash with some wrong words, like freedom, 'equality of chance" and equality. Or may be they are worried of those chaos making ppl and try to give them the freedom of doing their jobs with manipulating those words.

Ripon Kumar Dey
@Tanvir Vi.... One very important phenomena u said:
"Equality of chance presumes the equality of substance
and nature of men and women".that can explain many answers regarding gender equity.

Harun Muhammed
Its complicated, first who is giving chance;someone already in power!
And cant agree that equal chance make substances equal, it just give the open field to compete. Stronger will always/mostly be winner regardless which team. i think rules/laws are always more important for chaos making ppl-both men and women. we as power, cant neglect them, but give them the 'right' of doing whatever they wish. it will not make them in position where powers are. but " let them play with us".

Tanvir Hanif
@Ripon Da,
Elizabeth's reign is not an exception. There were as many
(if not more) women like her in the past as it is in the present.
Infact, they were more powerful. Elizabeth I or Mary I
were "absolute" monarchs.... See More
By equity--if you meant to be fair and just--then I agree
that there should be equity between men and women.
What is fair for men might be unfair for women
and vice-versa. If this is equity--I'll kill 1 billion
people to achive that :)
And that fairness and justice can only be possible if we
emphasize on their difference and do not say that
they are "equal" and must be given "equal" chance to be
anything. @Harun Bhai,
There are two sides, two factions only. The one is right--
the other is wrong. The one is good and just--the other
is evil. There is no need for us to brainwash anyone
with falsehood--if we realize the dung-hole into which
everything is going to fall eventually if drastic measures
is not taken. The chaos making people and those who uses those words with preferred meaning are the same.

Ripon Kumar Dey
I would like to introduce both of you here:
@Tanvir Vi: Harun is doing his Masters program (material science) in Alberta University, Alberta, Canada. he is in final year now.
@Harun.... Tanvir Vi is PhD candidate in UWO under Physics Dept (4th year)....
Anyway, i tagged few women on this note, because they deserve it. lets see what they argue....

Tanvir Hanif
I didn't say that equal chance makes substances equal.
But they might pervert and distort the substance--making
masculine women and feminine men :) [and we can see
a lot of them--not a joke]
Competetion is sometimes unhealthy and even ugly. This is exactly what today's post-modern socities are implying.... See More
Imagine a man and woman half-naked in a boxing or wrestling
bar tossing over each oher--making themselves bloody
or a man and a woman applying for the job of a public hangman or morgue man(woman??).

Harun Muhammed
the chaos making ppl are those general ppl who misuse rights, opportunities. Those u mentioned in early comments. like extra unwanted relation etc, or gay marriage etc. I will not bring politician and lawmakers in this regard as chaos making. and will not blame them. They are either being forced to bring them in play ground or they cant ignore those chaos making ppl-thats most usual.
If u define good and bad, then good ppl never need much rules, they can survive without rules , rights, and laws; they r only for bad ppl. but i will not define good and bad here.
That sense, rules are only for bringing chaos making, neglected, minorities, powerless to the 'guaranteed' play ground. this guarantee is the chance or equality. its not ultimate equality. we are physically, biologicaly, psychologically, by every way different. But still play in same playground, same game and follow same rules and virtually anyteam can be winner. But in reality, one team has been the winner....

Harun Muhammed
I think power is trying to protect those distorted substances--chaos making general ppl regardless men and women. as well as game of regular team 'man' vs woman'. but we know man team is the organizer, game-rule maker and player.

Tanvir Hanif

Politicians, Law-Makers, Chaos-Making people all of
them are parts of a system---a society which is sick
and based on flawed principles of so-called equality
and freedom. All of them are to be blamed.
Bad people exists in all kinds of socities including... See More... See More
the ideal one---only they can't flourish there.
I reject the idea of gender competetion.
This is another idea loaded by the West
in our brains. Noone is a winner or loser.
Men on the average are physically and intellectually stronger than women.
That doesn't make them winners. They can't become pregnant--that doesn't make them losers. Women on the average are emotionally
stronger than men, they are less harsher and kinder
than men, they inspired great men and they have
great bodies. That too doesn't make them winners.
These are just their inherent properties--the way
God created them.
Men and women are partners--not competetors.
Their faculties and roles have always been different
and must remain as such.

Tarana Mahzabin

Vai....
Maf Chai..Ato Shongram kore OOdhekar Adaier dorkar nai....(I cant read all discussion abt the argument)..
I just express my believe that
Nature gives much Physical Strength to the man thats why they r the Ruler from the beginning.. (Wants to show that in everyday life even if in the battle for their Fancy..)...
where the woman get much mental strength..they never express any emotion,they sacrifice much but never show their intolerable stress....so there is no story ...
And this is the only coz that inclines the MAN to bow .. ...HE HE ..they wants to do every thing for the woman..
,...............
We r nothing but the Toy of Nature..And Nature done that for the Equilibrium State....
so Equality (for right ...or in life) is impossible....
Ar Ai jonnoi Tara Ake Chader Neche Boshobas kore....


Ripon Kumar Dey
@Tarana....thanks for your nice arguments and showing your own beliefs.. What i understand from your compliments is "Women sacrifice much but never show their intolerable stress....so there is no story". Which make us realize that women are bound in some mental limitations though they want to sacrifice for the LOVE. Is it? However, u agree with ... See Moreinequity of men and women. that also in agreement with us. Yes, both gender are under one umbrella, because here umbrella is love. But our question is not to find out Love or hate, our query is to find out the measurement of love in between two gender of human being...

Tarana Mahzabin
The limitation is less power !!! and unlimited patience....
They want to make other happy, more their own choice..this is the main difference with Man.
And For EACH case...the love for each-other is unequal....otherwise the bonding/ relation..will break..

Harun Muhammed
Tanvir vai, political and law makers are mostly with 'men'. I think there r total 3 groups, men, women, and chaos making both men and women. we cant bring all 3 groups together, therefore, gave them the freedom.
@Tarana apa, you r alright, equality is impossible, but equal rights are possible. actually equality means equal rights-nothing else.
and therefor two unequal, but same rights can live under one umbrella.
And amount of love, this is also may be a game from nature, cant be equal, but tend to be equal- ideally! Or because they dont have power,thats why they could not show much love in reality?but they do have love!

Harun Muhammed
they do have some amount of love!

Ripon Kumar Dey
@Tarana.... What Harun said is that Power is not gifted, it should be achievable. And, as for physical strength women could not be able to achieve power as much as the cases of men (argued by Me). Also, here u agreed that the women have lesser power than men. Therefore, their should not be any equity, to sum up. Consequently, their is equability of love.
So, we can say core point is on the inequality of men and women.

Tanvir Hanif
I don't understand what you meant by politicians and law-makers are mostly with men. Are these politicians and law-makers of some third gender? They are mostly men too :)
Here is my main point of argument. There is no equality--
so there must not be any equal rights. Doesn't make any sense to me giving people with different needs, functions
and abilities--equal provisions. I believe in different
rights--not equal rights. Because, otherwise there will... See More
be logical inconsistency in the whole matter. If two pots
have different volumes--they can contain different amounts
of the same substance--not otherwise. A man can marry
two women at the same time---a woman can't. A man can
inherit twice the amount of a woman. This is ordained by
God--no question to that. Giving equal rights to men and women will destroy the core of our society and culture
and the best example to that is the West. See what they
are doing having "equal" rights.
However, I "think" women can love more than men. That's why they are "mothers". The argument that certain crazy and powerful men sacrificed part of their power--doesn't
establish as a general case that men are greater lovers-is
a flawed argument and logically empty and baseless and
even with common sense and Statistical methods.
You cannot establish a general principle without random sampling from a large data.

Harun Muhammed
by mostly with men, i am saying they in the men/powrful team. not in women team.
Religious rules are ideal/reference points, we should try to follow them. Unfortunately no one is following 100% religious rules, and we r in a mix society, cant even punish those who create chaos. But how can we treat those chaos makers? good ppl know what is their boundary and they never cross the limit, therefore they dont need too much defined rules.
These "equaliy" -apparently brainwashed word, is nothing but giving some 'chances'. and to make those chaos makers happy. The western result is the result of chaos makers life style;they are apparently liking it-so let them be busy with it.
And another point, there r many chaos makers within religion too. they misinterpret religion and use rules to undermine weaker like women-they r chaos makers too. Like beating wife without any appropriate reason. That case, in order to save those sufferers, gov made those words/rules so that those misuser can be taken to justice by even weaker ppl and regardless of religious identity.
I do agree nothing is equal in this world even the creation of God, he made differences so that we can be tested and taken to justice and then see the final result to the hereafter life.

Adwitia Mou
ami nije onekkei dekhechi jara valobashar jonno poribar amonki shomoaje shavavik cholafera porjonto bishorjon diyechen!!amra narira beparta nia matamti korina jotota akta purush koren othoba korte valobashen,karon amra mone kori ai bepargula shompurno nijederr bepar,manush dekhanor jonno r manusher bahba kuranor jonnona.
''Parbotir jonno Debdash ... See Moreudvranto''...Parboti ki udvranto chilona..Parboti ki chayni devK shathe nia baki jibon cholte..??
R Titanicer Jack Roser jonno jibon diyeche shudhu aitai dekha holo dekha holona Rose kivave or poribarer r fiyancee shob chere ashechilo shudhu matro jack ke paoar jonno!!

Mosaddid Sibly
Debdas- parboti, Shirin-forhad, laily-mojnu era sobai jack ar rose er motoi fiction er character,,, ar fiction gula likhsen kono premik purush e... bhalobasar jonne tara ki korte paren aita dekhate giye hoyto karponno koren nai. ektu beshi e dekhiye diyechen... paru ki ar parto bibagi hoye rastay pore thakte.... othoba bazar e rongmohol sajiye nijer bishad dakte? paru ki devar kaj gula korle take bola hoto preme pagol hoye meyeta ki korse???
ekhono meyera bhalobasar jonne onek kurbani dey... Diana rajporibarer moho sarse.... Sonia gandhi ke keu hoyto bolte pare khomotar lobh e tar asol.. prem ta na... but setao aj bhul proof hoise. 100 koti manusher deshe ekjon christian hoye husband mara jawar poreo tar bhalobasar jonne pura India ke apon kore nise.... somoy kotha bolbe ekdin.. manush rajib gandi bhule jabe.. mone rakhbe sonia ke...
juge juge meyerai ghor sere astese.. sudhu seletar jonnei (irrespective to paribarik niyom)... kono karone sei bhalobasa take obohela korle meyetar ki hobe? meyera pare. karon tara bhalobaste jane..... See More
keu keu hoito khali chokhe ekta meyer ekta seleke firiye dewatai dekhe.. but ektu ghobhire dekhle cheler jonne meyetar bhalobasatai dekha jabe. sletake ektu kosto dewar binimoye meyeta sarajiboner kosto ke apon kore ney...
arekta kotha boli ekbar bhalobasay bartho hole seleder moddei 2bar preme poror probonota dekha jay... karon seleta preme porar sadh peye jay. eto ghobir bhalobasa sudhu narir moddei tahke. sei bhalobasa pawar neshay se abar bhalobasa khuje... meyera hoyto seta payna.... hoyto bujhe jay somudrer basinda ami, amay dekhao cholonbil....
Bhalobasay nibedito protiti purush ar narike onek srodda jani.... bhalobasate thak, bhalobaste thak...

Ripon Kumar Dey
What i underrstand from this discussion the struggle for gender equality is one of the hallmarks of the 20th century. Much progress has been yet achieved, but the agenda remains unfinished in all societies. Gender continues to be a powerful barrier shaping the rights, capabilities, and opportunities of an individual - from birth throughout a ... See Morelifetime. Fairness and social justice cannot be attained if women are stigmatized at birth, if their rights and entitlements are violated, and if they do not have equitable control over resources and decision-making. We believe that the empowerment of women - equitable access to resources, power, and decision-making - is essential to gender equality. We recognize that such a process requires a realignment of power in decision-making at the household, institutional, and all levels of society.
I think, The ultimate goal should be an equitable partnership between women and men built on the strengths of shared knowledge, energy, creativity, and skills. Such a partnership is of intrinsic value. It can also bring positive benefits to society as a whole, and contribute to solving many of the world's most pressing problems.

Ripon Kumar Dey
Given a preference for boys over girls that many male-dominated societies have, gender inequality can manifest itself in the form of the parents wanting the newborn to be a boy rather than a girl. There was a time when this could be no more than a wish (a daydream or a nightmare, depending on one's perspective), but with the availability of ... See Moremodern techniques to determine the gender of the foetus, sex-selective abortion has become very common in current world where in my experience i have seen mothers also want boy kid, though they claim for equal right...... its ridiculous...

Mosaddid Sibly
lovemeter ended up with geneder equity??? nice!!!
Mon at 10:55am

Ripon Kumar Dey
@Adwitia.... All of the examples u stated can replace the sacrificing contribution of men???? U said, women can not live in society with their own lifestyles for society regulation/strictness, can it be qualified to replace the sacrifice of men as a excuse like Prince Adward VIII who left the palace regime or Sears who destroy the troy for love?
When ...Parboti showed her love.... At the time when she realized Devdas was out of control of nature, just crazy. When rose left her belongings....only when she was already saved by her love. Seems women only shows their emotions only when they understand her finances is going to hell for her showing their love. Should women raise here any excuse like for society they should keep silent in this regard. Its just ridiculous. Akhetre ki narider somajer duhai diye nirobota palon kora uchit??? Ei ki tader bhalobashar janya tayeger nomuna????


Ripon Kumar Dey
@Shibly.... Emotions are greater than logical phenomena in your explanation.....Here we r not neglecting the contribution of women for LOVE... What we want here to compare the sacrificing examples between both gender with respecting the gender equity.In your explanation it seems u showed some general personal experiences as like a PRIMIK purush ... See Morewith your own sympathy/emotion (So, there is a precaution not to be given any comment by a lover...hahah...because emotion sometimes act as a barrier to touch a goal). What we want to compare the examples taken from history/fiction as regards of sacrifice for LOVE. Not any current society phenomena (I stated my example only for fun). Your examples regarding Suniya and diana emphasized your support in very good way.....

Mosaddid Sibly

oppps sorry..bhul hoye gese.. premik der to montobbo prodane biroto thakar kotha... but u know ami to sabek premik.. lol..
arekta kotha ontopurer narider jante hole narir sathe sudhu premik na bondhu hisahabe mishte hoy. Robidranath oita sharthok bhave korte peresilen... bhalobasha ta ki abeg noy?
love is the most beutiful example of emotions. ar ... See Moreemotion nia jukti torko hocche sekhane tui emotionke baire rekhe kibhave korbi? amar example gula hoyto khub e normal. manush gula hoyto shadaron, 10th, 12 th edward er moto na.. but manushra boro na hole ki hobe.. manusher bhalobasaha to boro... okhane ki chokh dewa uchit na....
ar history??? seita always e ekta specific gender ke favour kore aise.. tai okhane narir obodan ke kom e shikar kora hoise... bortoman to ar itihas na..... aayna kisu narir bhitorta dekhi..... tader sundor deher bhitor ercheye aro sundor ekta mon ase..... setar proman pawar jonne toreo beshidin wait korte hobena? hope u meet that women soon. lucky i am, i have already met few...


Pinky Moni
naarir valobasa nia gobeshona kora thik hobe ki


Ripon Kumar Dey
@Pinki di... আপনাকে কাছে পাই নি তো তাই আর না করে পারলাম না..... কথায় আছে না: তোমার চোখে দেখেছিলুম আমার সর্বনাশ!!!!! এগুলা আর কিছু না.... ওই সর্বনাশের ই প্রতিফলন!!!!


Tanvir Hanif
Ripon Da,
It seems to me that you didn't address any of my points.
First of all the examples that you quoted to
establish the fact that men are greater lovers
than women because few powerful and crazy ... See More
men made war killing innocent people, destroying
an entire state(Troy) do not establish anything.
Again,the argument that certain crazy and powerful men sacrificed part of their power--doesn't
establish as a general case that men are greater lovers-is
a flawed argument and logically empty and baseless and
even with common sense and Statistical methods.
You cannot establish a general principle without random sampling from a large data.
Fictional men sacrificing for love is bogus and
biased. Those fictions were written by "men" too.
Edward VIII was an asshole. He cheated with another
guy, cuckooled him to get his wife and showed the
worst kind of irresponsibility by resigning the British
throne. It was not sacrifice for love--it was resignation
from one's duty towards his country and people for mad
"lust". Paris didn't destroy his own country Troy.
It was the kinsmen of the husband of the women(Helen) he lusted for and kidnapped. He was an asshole too.
You said--"The struggle for gender equality is one of the hallmarks of the 20th century." I disagree. It's not
one of the hallmarks of the worst century of human
civilization---rather it's a shame. There was never
gender equality and never will be unless we all
become hermaphrodites. All the ills and sicknesses
of post-modern sick societies were born from the presumption
that men and women are equal. They aren't. It's against nature. Nature is uncompromising when it comes to it's
rules.

Rasel Mahbub
@Ripon...."emotion sometimes act as a barrier to touch a goal"......ami tomer ai kathatike support kori,,but ata sobkhete sotto noy, kichu kichu khete emotion tomake debe courage, knowledge and wisdom, r tachara valobashar abeg e kintu manus history toiri koreche...ex........
paris jokhon helen ke opohoron kore , tokhon paris er vi take bolechilo helen ke fireye debar jonno ..kintu tokhon paris tar valobashar abege atokhani udbudhho chilo je ta mene nite pareni...jar folafol ai historical war..r ai sob valobashar abeg sudhuu airokoim war e toiri kore na...toiri kore Shahjaner tajmohol, Babiloner king Nebuchadnejer er "Hanging garden" etc...so jiboner goal arjoner khetre abeg ke osikar korar kono upay nei...
abar tomer ajker mul bisoy nie aktu boli...tumi je example gulo diyecho ..tar protekta sotti..tumi jevabe purusher valobashake dekhiyecho tao sotti...kintu meyeder valobashar poriman niye ami akmot noi. sei prachinkal thekei cheleder and meyeder valobashar prokash ta vinno. tai cheleder valobashata sobsomoy prokash pay...r meyeder khetre boja jay na..........
ai valobashar jonnoi Helen tar premik Paris er hat dhore sobkichu tag kore nirobe ghor theke berieche, titanik chobite Rose sarajibon Jack ke nivrite buker ghovire lalon koreche, Ramayon e Sita mati vag kore matir vetor dhuke jete cheyechilo Ram er deya opomane(May be they r fiction but they r reflection of our life)....airokom aro hajaro example deya jabe.... See More...
sobsese ..sudu atai bolte chai..cheleder valobasha beshi ba meyeder valobasha beshi ai rokom kono kichu ami bishas kori na...but ai dui gender er valobashar prokash ta alada. r se karoneri cheleder ta chokhe pore r meyeder ta kom chokhe pore...taito bola hoy " Meyeder buk fate to mukh fate na".


Rasel Mahbub

@Sibly....love is the most beutiful example of emotions" nice ..ai jonnoi tore premik purus koi...

Ripon Kumar Dey
@Tanvir Vi... I agreed with your point... so i stated it earlier:
One very important phenomena u said:
"Equality of chance presumes the equality of substance
and nature of men and women". .......and that can explain many answers regarding gender equity. ... See More...
I strongly agreed with that phenomena... However, what i wanted to say... apparently in society we are trying to make rules/regulations to balance both part in equal manner with respect to HUMAN rights.... That was said by me. And i already agreed with your statement. And Modern life (20th century) are trying to impose equity as regards human rights towards both gender as much as possible though those two gender can not be equal.....

Tanvir Hanif

Ripon Da,
"Equality of chance presumes the equality of substance
and nature of men and women". That's a statement
about presupposition not a statement of a rule or principle. That statement is flawed.
It's like saying---"The law presumes that men and women... See More
are equal in substance". Is it clear now?
You said--"Modern life (20th century) are trying to impose equity as regards human rights towards both gender as much as possible". Modern life is fucking life--it's a life devoid of high culture and morality.Whoever is trying to impose those so-called equity (that's not the word they actually use--you are
using it) are the real enemies of human civilization.
So-called human rights are nothing but Western propaganda
to creat sick societies all throughout the world.

Mosaddid Sibly

ekhane jara montobbo korese sobai jibone ekbar na ekbar holeo bhalobesheseche? so Ripon tomar premik/premikar montobbo kora theke biroto thakar law khate nai eikhane? ar oi beta tui biya korbina? dekhmene bhalobaisa ki ki tag shikar koros?? lol... ar dosto eikhanei onek montobbo rpodankri e jenuiene premik. premika,, amar moto sabek premik na. guptochor lukya ase... so......

Ripon Kumar Dey

@Rasel.... I know that.So i used "sometimes" in the statement "emotion sometimes act as a barrier to touch a goal". And in our topic, emotion theke logic er preference thaka uchit.I know Bhalabhasha protistar khetre emotion e sob. But here we r comparing those two factor, we r not creating LOVE platform here. Consequently, here we need logic ... See Morerather than emotion. So i used "Sometimes" in my sentence.
I dont think those examples can be qualified to replace the sacrifice of men as a excuse like Prince Adward VIII who left the palace regime or Sears who destroyed the troy for love??
When..Parboti showed her love.... At the time when she realized Devdas was out of control of nature, just crazy. When rose left her belongings....only when she was already saved by her love. Seems women shows their emotions only when they understand her finances is going to hell for her showing their love. Should women raise here any excuse like for society they should keep silent in this regard. Akhetre ki narider somajer duhai diye nirobota palon kora uchit??? পুরুষরা যদি ভালবাসার জন্য জীবন দিয়ে দিতে পারে, রাজ্য ধ্বংস্ করে দিতে পারে, সাম্রাজ্য ছেড়ে আসতে পারে…. তাহলে নারীরা কেন সমাজকে উতরে সামান্য নীরবতা ভাংতে পারে না??

Rasel Mahbub
@Ripon....bondhu tumi ki naturally kokhono sontan dharon korte parba? parba na...karon it's nature ...purus ra jibon diye , rajjo dhonsho kore kinba samrajjo chere dite pare ..karon khomota cheleder hate chilo...akhono ache..it's nature....amra eitihase meyeder ai dhoroner ghotona pina, kintu keno ? karon tokhon meyeder hate khomota chilo na. .age meyeder samarjjo chalanor katha khub komi sona geche, je rajjo meyeder hate chilona ..se rajjo tara kivabe dhonsho korbe, kivabe tara samrajjo chere dibe...it's just a expression of love in different way rather than man...kintu meyeder hate rajjjo thakle meyera je pare tar akta udhahoron dichii....
17sotoke varote moldho prodesher raja Kiron chowdhury jokhon british soilder hate porajito hoye ahoto hon , tokhon tar wife Debi Choudhurany (I believe u heard her name) kintu ai osusho samike sathe nie songram chaliye gechen , samir sopno ke bastobayon korar jonno, tini pore shes porjonto judhe sohir hon...ai rokom hajaro narir mahatto choriye chitiye ache etihase...kintu mojar bapr ki jano etihase tumi joto soprotivay dipto nari dekhte pabe tader besirvag e baddho hoye nijeke prokash korechilen.....
ami try korchilam logic diye katha bolar jonno ..akhono bolchi, ai jonnoi etihas theke udhahoron deyar chesta korechi..jate logically prove kora jay..
"Akhetre ki narider somajer duhai diye nirobota palon kora uchit???" somajer dohai meyera tokhoni dey tokhon tara baddo hoy , r baddho hoy ai purussasito somajei. jekhane nari sasiso somaj sekhane kintu airokom sona jayna...like pahari jonogosthi...
The main thing of this discussion was who's love is great , male or female? right? so , both love man and women's love is equal but it's seems like man's love is great for the history , for society, for tradition , for culture etc.. U can only feel the women's greatness when u will get a true love of a women. women's love is for feel , which can't be measure by the defination of gender equity .
We can discuss this matter for our whole life but my friend...we couln't get the conclusion if we don't feel it, cos the topic is love , the greatest emotion. so , it's not been possible to reach the answer without feel the women's love.

Mosaddid Sibly

wow rasel woW, simply preme pore jawar moto
' "We can discuss this matter for our whole life but my friend...we couln't get the conclusion if we don't feel it, cos the topic is love , the greatest emotion. so , it's not been possible to reach the answer without feel the women's love"- Rasel
If i would the moderator i would conclude here......

Ripon Kumar Dey

@Rasel..... Tumar prothom explanation ta onek agaei clear kora hoye giyechilo... plz prothom diker comment s gula abaro attentively poro. Harun er answer ta diye diyeche. "Power have to achieved. it is not gifted". নারী-পুরুষের সমতার দাবীর ক্ষেত্রে, নারীরা তখন কেন ক্ষমতার উচ্চস্থর অধিষ্টিত হতে পারে নি? আজ আধুনিক সমাজে তো নারীরা ঠিকই জায়গা করে নিয়েছে ক্ষমতার শীর্ষ স্থানগুলো। কেন এই প্রশ্নটা আসছে যে "নারীর হাতে ক্ষমতা দেখানোর মত কোন ক্ষমতা ছিলনা"? কেন তারা সেটা অর্জন করে নিতে পারেনি? তাহলে ধরে নিচ্ছি সেখানে শক্তিমত্তার প্রশ্নটি আসছে। সেক্ষেত্রে নারীরা কি পিছিয়ে গেল না? তাহলে সমতা আসছে কি করে? Ero answer tanvir Vi diyechen.. Equality of chance presumes the equality of substance and nature of men and women". That's a statement about presupposition not a statement of a rule or principle. That statement is flawed. It's like saying---"The law presumes that men and women...are equal in substance".
Ami raja kiron chowdhury somporke jani na... Kunu reference thakle dayer janya binito onurudh roilo....
Tumar 4th parar answer amar prothom paragraph ti.... See More... See More
Tumar porer parate bolle: "U can only feel the women's greatness when u will get a true love of a women" . Ami abaro bolce amra ekhane emotion ta baire rakhte chaci. Tachara amar baktigoto bhalobhasa niye to kotha hoche na... tachara amra LOVE er definition niya o kotha bolchi na.... Amra narider bhalabasha janya tyager kichu nomuna jante chachi, historic/fiction er prekhapote......
Ur last one.... Again emotion.... bole ariya jachi... ami abaro bolchi.. emotion niya ashle er utoor sobari jana, Emotion dhorle "LOVE is divine" sentencer modya e to sob answer powa jay.... tai amra ei bapartar urdhe ute solve korar chesta korchi....

Ripon Kumar Dey
Amar mone hoy, amra ekta proposed conclusion dite pari ekhon:

১. নারী পুরুষের ক্ষেত্রে লিঙ্গ সমতা বলে কিছু নেই। আমরা একে অপরের পরিপুরক।
২. ভালোবাসা পরিমাপ করা যায় না। অর্থাৎ লাভোমিটারও বলে কিছু নেই।
... See More... See More
Jara actively alochonay ongsho nilen:

1. Harun (Alberta University, canada)
2. Tanvir hanif (University of western onatrio, Canada)
3. Tarana (Alberta University, Canada)
4. Adwitia (MC College, Bangladesh)
5. Shibly (Brunel University, UK)
6. Rasel Mahbub (Greenwich university, UK)
7. Pinki Moni (UK)
8. Ripon (University of western ontario, Canada)

"sobaike shubhashish".
abong "SHUKRIA".

Tanvir Hanif

Ripon Da,
Jhati ar ki ki jhantey chhaye??
apni jey eto kichhu niye chhinta koren ta to agey
JHANTAM na!!!

Ripon Kumar Dey
@Tanvir Vi,
Apnar biya amra kobe khete parbo etao Jhati aaj Jhantey chai... hahaha.... We r waiting for celebrating ur wedding soon....

Harun Muhammed
Ripon bai, me too, i(as part of Jhati) wanna know when Tanvir bai is accepting his (inequal-sorry if i heat) life? this is my question, also what about u Ripon bai, when is urs?


Harun Muhammed
last few comments were more emotional than logic. though they are right and comments were relevant to our topic. Human existance is depending on exactly 50-50% on both man and woman, therefore total contribution is exactly same in amount.And no need for debate. though few comments seems saying love is coming only from women! is it true, man does ... See Morenot have love? or may be i have read wrong?
But our disagreement was in inequality in rights and work, power, -apparently visible things we r running after. like money, knowledge, political power, etc etc. and it seems what we observe are kind of true. those things are kind of meant to men by God. And women are meant for other things, ladies know best what they are meant for by God.

Mosaddid Sibly
@Ripon: agreed with the conclusion you drawn


Tanvir Hanif
@Ripon Da,
amar balobasha to upchhaiya porteche. eita ekjon narikey dewa hoibe chorom sharthoporota. ar amader desher jei haal hokikot--tatey ekjon khuija pawao dushkor. asholey balobasha tasha azkal kotin hoiya geche. jhatikey aj bujtey hobey jey jhati az pochey geche ar jhatir jhatyo obonoti hoiche. tai jhatir jhantey chawata ekrokom prohoshon.
Eiboliya onushthaner shomapti ghoshona kortechi.
Onushthanti porichalona korlen mohamanno Mr.R.K Dey.

Sobaike SHUKRIYA.

N.B: http://www.somewhereinblog.net/blog/ripon4t/29076213
http://ripon4t.amarblog.com//posts/96080/

আরেকটু পড়ি, কি বলেন.......