সোমবার, ১৬ মে, ২০১১

ধর্ম, সংবিধান এবং জাতীয়তাবোধ

বেশ কদিন আগের কথা। আমি গভীর ঘুমে। খুব ভোরে আমেরিকার মিসিসিপি অঙ্গরাজ্য থেকে আমার এক পরিচিত-এর ফোন। গলায় একই সাথে তীব্র উচ্ছ্বাস এবং চাপা ক্ষোভ!

-ভাই, খবর শুনেছেন?

- কি খবর?

-আমাদের তো শুয়াইয়া ফেলছে!

-কোথায় শুয়াইছে?

- সংবিধানে!

-কিভাবে শুয়াইছে?

-সংবিধান পরিবর্তন করে দিয়েছে!

- সেটা তো ৮৮ সাল থেকেই শুয়ানো।

-এখন আরও পাকাপোক্ত করে শুয়াইয়া দিছে, ঘুমের ট্যাবলেট খাইয়ে শুইয়া দিছে!

-এখন আমার কি করনীয়?

-আপনি ব্লগে-ট্লগে কিছু লিখেন।

-আমার লিখায় কি যায় আসে? ঘুম কি ভাঙ্গবে?

-না ভাঙ্গুক, তাও লিখেন। আমি মেইলে ডিটেল দিচ্ছি!

আমার এই পরিচিতের ঘুম ভাঙ্গাভাঙ্গির ব্যাপারে আমি কিছু করতে না পারলেও যে সে অসময়ে ফোন দিয়ে আমার সকালের আরামের ঘুমটা ভাঙ্গিয়ে দিয়েছিল সে বিষয়ে আমি নিশ্চিত, এবং কিঞ্চিত ক্ষুব্ধ। এই ফোনের দরুণ, আমার পুরো সকালটাই নষ্ট!

১.
সেই নষ্ট সকালে আমার সদা সজাগ ল্যাপটপে উনার দুষ্ট মেইলটা পেলাম। মেইলে একটি খবরের কাগজে লিংক দেওয়া [১]। খবরটা পড়ে যা বুঝলাম, সংবিধান সংশোধনে বিশেষ কমিটি সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম “ইসলাম”, “বিসমিল্লাহ” এবং জাতির পিতা হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে একমত হয়েছেন। এ ছাড়াও নাগরিক হিসেবে “বাংলাদেশী” এবং জাতি হিসেবে “বাঙালি” জাতীয়তাবাদ অক্ষুন্ন রাখার বিষয়েও অভিন্ন মত দিয়েছেন কমিটির সদস্যরা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একান্ত ইচ্ছাতেই মোটামুটি এটা হয়েছে বলে এখানে উল্লেখ করা হয়েছে। পরিবর্তিত সংবিধান মোতাবেক ইসলাম রাষ্ট্রধর্ম হলেও বিশেষ কমিটির সুপারিশে সকল ধর্মেরই সমান অধিকার থাকবে। হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান ধর্মসহ অন্য সকল ধর্মই সমুন্নত রাখা হবে। এ বিষয়ে কমিটির সবাই প্রায় অভিন্ন মত দিয়েছেন।

২.
এখন প্রশ্ন হল, বাংলাদেশের "রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম" হলে কি বাংলাদেশ ইসলামী রাষ্ট্র হয়ে যাবে??? নাকি "ধর্ম নিরপেক্ষতা" হওয়া ততোধিক যুক্তিযুক্ত হবে? নাকি সংবিধান-এ এ বিষয়গুলো থাকাই থাকাই উচিত না? অনেকে এই তিনটা বিষয়কে বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করবেন। ফেইসবুকেও আমাদের সংবিধানের মূল নীতিতে রাষ্ট্রধর্ম ''ইসলাম'' থাকবে না ''ধর্ম নিরপেক্ষতা'' থাকবে এ বিষয়ে অনেকেই বিভিন্ন স্ট্যাটাস দিয়ে নিজের মতামত প্রকাশ করেছেন।

একথা সর্বজনবিদিত যে, ধর্ম নিয়ে আলোচনা অত্যন্ত স্পর্শকাতর একটা বিষয়। কিন্তু যখন এই বিষয়টি রাষ্ট্রের সার্থ্যের সাথে মিশে যায়, জাতীয়তাবোধের সাথে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িয়ে যায়, তখন দেশের একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে সবার মত আমারও এ বিষয়ে অভিযোগ, মতামত অথবা সুপারিশ করার অধিকার আছে।

একজন স্নেহময়ী মা কখনই তার নিজ সন্তানদের মধ্যে ভাগাভাগি করতে পারেন না, সকল সন্তানই মায়ের কাছে সমান, সকল ছেলে-মেয়েই সমপরিমাণ স্নেহের দাবীদার। কোন মা তার একটি সন্তানের নামে বিশেষ সুবিধা, একটি সন্তানের নামে বেশি সুবিধা প্রদান করতে পারেন না। আমার দেশ আমার কাছে দেশমাতা। আমার দেশমাতা আজ তার সন্তানদের আনুষ্ঠানিকভাবে পুনরায় বিভেদ করে দিচ্ছে অথবা তার ইঙ্গিত দিচ্ছে। সেখানে আবার হাস্যকরভাবে হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান ধর্মসহ অন্য সকল ধর্মই সমুন্নত রাখার কথা বলা থাকবে। যে সংবিধান সবার মত আমারও পড়ার অধিকার আছে, আমি যখন আমার দেশের সেই সংবিধানটি পড়া শুরু করব তা “বিসমিল্লাহ” দিয়েই পড়া শুরু করতে হবে! পড়ার শুরুতেই আমাকে বুঝে নিতে হবে, এর রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, আমি এ ধর্মের না, আমি এর অনুসারী না! আমি নিজেকে মাইনরিটি হিসেবে বুঝে নিতে হবে!! সেখানে আমাকে জাতীয়নীতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে আলাদা করে ফেলা হয়েছে!! একদল মেজরিটি আরেকদল মাইনরিটি বলে ভাগ করে ফেলা হয়েছে!! আর যেখানে সংবিধানের শুরুতেই একটি বিশেষ ধর্মকেই প্রাধান্য দিয়ে দেওয়া হয়েছে, সেখানে সকল ধর্মকেই সমুন্নত রাখার কথা কিভাবে বলা হচ্ছে? আজ আমি উচ্চ শিক্ষার্থে দেশের বাইরে অবস্থান করছি। দেশের ক্ষীন উপকারে হলেও নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে তিলে তিলে গড়ে তুলতেছি। যোগ্য নাগরিক হয়ে নিজেকে তৈরি করে দেশে গিয়ে তার প্রতিদান করার কথা ভাবছি, একটু হলেও দেশের অগ্রগতিতে প্রয়োজনীয় ভূমিকা রাখার জন্য স্বপ্ন দেখছি। সেখানে আমার দেশমাতা সংবিধানে আমাদেরকে উপেক্ষা করে কি আমাদেরকে আলাদা করে দিচ্ছে না? আমাদেরকে সমাজের অগ্রগতিতে অসাম্প্রদায়িক শক্তি নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ার পথ রুদ্ধ (বা অনুৎসাহিত) করে দিচ্ছে না? কই, দেশের মানুষ যখন মুক্তিযোদ্ধের অসম চেতনা নিয়ে জীবন বাজি রেখে ধর্ম-মত নির্বিশেষে মুক্তির সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে তখন তো কোন ধর্মচিন্তা মাথায় রাখে নি! বর্তমান ভিন্ন ধর্মালম্বী সন্তানদের আত্মীয়-স্বজন যখন অনভ্যস্ত, কম্পিত হাতে বেয়নেটে গুলি ভরে সম দেশপ্রেম নিয়ে শত্রুদের মোকাবেলা করতে গিয়ে নিজের জীবন বিকিয়ে দিল, তখন তো এ ভুমিতে ৮৫% মুসলমান না ১৫% হিন্দু, এরকম সংখ্যাগত বিবেচনা আমলে/বিবেচনায় নেয়নি [২]! আর যদি কোন ধর্মচিন্তা থেকেই থাকে তখন, সেই ধর্মের নাম ছিল “মুক্তি”, মুক্তি ধর্ম নিয়েই সবাই ঝাপিয়ে পড়েছিল, একযোগে, মুক্তিযুদ্ধের অপ্রতিরুদ্ধ সমান চেতনা নিয়ে। আমি যখন এদেশের হয়ে কাজ করব, দেশের প্রতিনিধিত্ব করব, তখন তো আমি ধর্ম চেতনাকে মাথায় নিয়ে করব না, করব একজন বাংলাদেশের নাগরিক হয়ে। তাহলে কেন, একটা দেশের সবচেযে বড় কেতাব- সংবিধানে একটা নির্দিস্ট ধর্মকে প্রাধান্য দেওয়া হবে আর অন্যান্য ধর্মকে সমুন্তত রাখার শিশুশুলভ বুঝ দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে উপেক্ষা করা হবে? একটু রাষ্ট্র কেন তাদের নিজের সবচেযে বড় অংশ জনগনকে নিজেই ভাগ করে দিবে? একটা রাষ্ট্রের একটা বিশেষ ধর্মের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করা মানে ওই ধর্মালম্বালীদের হাতে ৫১/৪৯ (আদতে পুরোটাই) ক্ষমতা তুলে দেওয়া। বংশপরিচয় দেখে যেমন চরিত্র আন্দাজ করা না, প্রতুলতা দেখে যেমনি শক্তিমত্ত্বা নির্ধারণ করা যায় না, তেমনি কোন ধর্ম সংখ্যাগরিষ্ট এটা দেখেও ধর্মের মাপকাঠি নিরূপণ করা যায় না।

অন্যদিকে, রাষ্ট্র আবার ধর্মভিত্তিক রাজনীতির বিপক্ষে। যেখানে সংবিধানই ধর্মপুষ্ট, সেখানে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি থাকতে দোষটা কোথায়? সংবিধান তো ধর্মের পক্ষে। তাছাড়া বাংলাদেশ তো গণপ্রজাতন্ত্রী রাষ্ট্র, ইসলামী প্রজাতন্ত্র নয়! তাহলে কেন গণতন্ত্র অর্থাৎ সমান অধিকার, সমান পৃষ্টপোষকতা নির্ধারণ করা হবেনা। অনেকে বলছেন, ৮৫% মুসলমান বলেই মুষলমান রাষ্ট্র স্বীকৃতি দেওয়া দরকার। কিন্তু, সংবিধান তো শুধু ৮৫% এর না, এটা পুরো ১০০% এর, সেই ১৫% বাদ যাবে কেন? তাহলে সমান মূল্যাযণ অর্থাৎ গণতন্ত্র কিভাবে নিশ্চিত হল?

কেউ কেউ বলছেন, এতদিন তো রাষ্ট্রধর্ম ইসলামই ছিল, কই এতদিন তো কেউ কোন কথা বলেনি? অথবা এতদিন তো কারো কোন সমস্যা হয়নি! তাদের উদ্দেশ্যে বলব, আমরা অতীত থেকে অবশ্যই শিক্ষা নেবো। কিন্তু তার মানে এই নয় যে অতীতকে আঁকড়ে ধরে বসে থাকতে হবে! "ঘরের খেয়ে বনের" আর "দুনিয়ার খেয়ে আখিরাতের" মোষ তাড়ানো -- দুটোই অর্থহীন। অতীত থেকে শিক্ষা নিই কোনো ভুলকে ওমিট করতে, তাকে আকড়ে ধরতে নয়।

৩.
সকল রাজনৈতিক দলই নিজেদের জনসমর্থন বৃদ্ধি করতে ধর্মকে ব্যবহার করে আসছে। জিয়াউর রহমান সফল ভাবে সংবিধানের মুল ৪ নীতির [৩] পরিবর্তন করে গেছেন। এরশাদ জিয়ার সেই পদাঙ্ক অনুসরন করে “রাস্ট্র ধর্ম” এনেছেন। তাদের উদ্দেশ্য একটাই ছিল, সহজে সংখ্যায় সর্ববৃহৎ ধর্মভীরু মধ্যবিত্ত সমাজের আস্থা অর্জন! সম্প্রতি হাইকোর্ট সামরিক আইনে ৮৮ এর সংবিধান পরিবর্তন এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রবর্তনকে অবৈধ ঘোষনা করেছে [৪]। সে সূত্রেই ৭২ এর সংবিধান পুর্নবহাল থাকবে। একথা সবাই জানেন, ৭২ এর সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম বলে কিছু ছিল না। সেখানে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের সমান অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছিল। তাহলে এরশাদের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম প্রবর্তন অবৈধ! আর তাই অবৈধ একটা রাষ্ট্রীয় নীতি কেন বহাল থাকবে? আমাদের অস্থির রাজনৈতিক পরিমন্ডলে বেশিরভাগ সময়ই জনমত সঠিকভাবে প্রতিষ্ঠা পায়না। এটাও তখন পায়নি। এখন সুযোগ এসেছে বলেই কথাগুলো তুলে ধরা হচ্ছে। এরশাদ অসাংবিধানিক ভাবে এ কাজটি করে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ভুলুন্ঠিত করেছে। এখন সুযোগ এসছে বলেই এখন আবার ফিরিয়ে আনা উচিত। আবার কেউ কেউ বলছেন, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম থাকা সত্ত্বেও তো কোন সমস্যা হচ্ছে না, তাদের উদ্দেশ্যে বলব, একজন বাবা যখন নিজের সন্তানের সাথে একজন পালক সন্তানও পালেন, তখন আর্থিকভাবে সমান সহযোগিতা করলেও প্রয়োজনের সময় অথবা বিশেষ মুহূর্তে দুটি সন্তানের মধ্যে একজনকে বেছে নিতে বলা হলে ঠিকই নিজের সন্তানকে বেছে নিবেন। এখানে প্রশ্ন হল আনুষ্ঠানিকতার, বৈধ স্বীকৃতির। বিশেষ কোন রাজনৈতিক দুর্যোগের সময় ঠিকই বাংলাদেশ সরকার কনস্টিটিউশনে উল্লেখিত ধর্মের প্রতি বায়াস বা দূবলতা প্রকাশ করতে দায়বদ্ধ থাকবে। যেসব প্রসঙ্গে “একটি” ধর্ম বেছে নেওয়ার প্রশ্ন আসবে রাষ্ট্র তখন ঠিকই সংবিধান সংবলিত ধর্মকেই বেছে নিতে বদ্ধপরিকর থাকবে। আজ ভারতে ৮৬% হিন্দু থাকা সত্ত্বেও ভারত সেকুলারিজম সংবিধিত (Sovereign socrialist secular democratic republic country) [৫]। তাদের কোন সমস্যা হচ্ছে না। [প্রসঙ্গত: ভারত সেকুলার দেশ হওয়া সত্ত্বেও মুসলমানদেকে ঠিকই মাইনরিটি হিসেবে পরিগণিত করা হয়, যা অবশ্যই গণতন্ত্রের পরিপন্থি! যা আমি ব্যক্তিগতভাবে কখনই সাপোর্ট করিনা] তাছাড়া রাষ্ট্র যেহেতু নামাজ, রোজা, হজ্জ, কিছুই পালন করেনা, আবার পুজাও করে না, আবার রাষ্ট্রকে যাকাত দিতেও দেখিনি, আবার অঞ্জলী নিতেও দেখি না। তাহলে রাষ্ট্রের আবার ধর্ম কি?? রাষ্ট্রের মানুষগুলোর হাজারটা ধর্ম থাকতে পারে কিন্তু রাষ্ট্রের কেন?? ধর্ম থাকবে রাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের! “সৃষ্টিকর্তার সিদ্ধিলাভ” -এর জন্য বিভিন্ন মাধ্যম আছে, বিভিন্ন ওয়ে আছে। বিভিন্ন ধর্মই এখানে বিভিন্ন মাধ্যম। যে কেউ তার ইচ্ছেমত মাধ্যমে সৃষ্টিকর্তার সিদ্ধিলাভের চেষ্টা করার অধিকার আছে। পদ্ধতীটা সঠিক এবং ওই ধর্মীয় নিয়ম মেনে হলেই হল। এখানে কারো হস্তক্ষেপ করা তার প্রাইভেসী লংঘন করার মধ্যে পড়ে, ব্যক্তি স্বাধীনতা খর্ব করার মধ্যে পড়ে। মানুষ জন্মসূত্রেই সাধারণত বাবা-মার ধর্মের অনুসারী হয়। কিন্তু তার মানে তাই না যে, তার ধর্ম পরিবর্তন করা অধিকার নাই? সবাই সবার সিদ্ধান্ত মোতাবেক মাধ্যম বেছে নিতে পারে, অন্তত সেই অধিকার তার আছে! সেটা যার যার নিজস্ব অধিকার। জন্মসূত্রে হিন্দু হওয়ায় হিন্দু ধর্ম নিয়ে তো লাফালাফি করার মানে নাই! মুসলমান ঘরে জন্ম নিলে মুসলমান হতাম। কিন্তু তখনও আমার পা-দুখানা বাংলার মাটিতে থাকত, তখনও তো আমি বাংলাদেশীই থাকতাম! একটি রাষ্ট্র্রের তার রাষ্ট্রপরিচালনা নীতিতে সেই ব্যক্তিগত বিষয় (“ধর্ম”) কে বেধে দিবে কেন? রাষ্ট্রের মূলনীতিকে বিবেচ্য হবে “জাতীয়তাবোধ”, “দেশপ্রেম”। সেখানে ধর্মবোধকে সংযুক্ত করা কি অপ্রাসঙ্গিক নয়? আমি আগেই বলেছি “ধর্ম” বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বাব-মা (জন্মসূত্রে) -সূত্রে প্রাপ্ত [যদিও বীর্যের মধ্যে ধর্ম লিখা থাকে না], আর “জাতীয়তা” দেশ-সূত্রে অর্জিত। সেখানে দেশের পরিচালনা-নীতিতে বাবা-মা থেকে প্রাপ্ত বিষয়টিকে নিয়ে না আসাটাই কি যুক্তিযুক্ত নয়? একথা অনস্বীকার্য যে, সবাই যে যে ধর্মের অনুসারী তার প্রতিই বায়াস থাকবে। আমিও একটি বিশেষ ধর্মের বলে সেই ধর্ম নিয়ে কথা বলছি এটা এখানে ভাবার কোন কারন নেই। আমি কোন বিশেষ ধর্ম নিয়ে কথা বলছি না, বলছি রাষ্ট্রের নিরপেক্ষতা নিয়ে, রাষ্ট্রের “ধর্ম বিষয়কে” উপেক্ষা করা নিয়ে। আমি নিজে সঠিকভাবে ধর্ম পালন করি বলে মনে করিনা। আমরা যারা এই ব্যাপারটা নিয়া বাড়াবাড়ি করছি তারাও সবাই ঠিকমত নিজেদের ধর্ম পালন করে বলে মনে করি না। আমরা যেখানে নিজেদের ধর্মপালনে মনোযোগী নই, সেখানে একটি বিশেষ ধর্মকে রাষ্ট্র পরিচালনা নীতিতে সংযোজিত করা কতটা সমীচিন? দেশের একজন ভিন্ন ধর্মালম্বীর রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম!!!! আজকের এই বাংলাদেশে যদি অন্য ধর্মালম্বীরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হত এবং সংবিধানের শুরুতে যদি সবাইকে তাদের ধর্মের মন্ত্র পড়ানো হত তখনও আমি এর তীব্র বিরোধীতা করতাম। একজন নির্দিষ্ট ধর্মের নাগরিক যখন চায় যে সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম থাকুক তার ধর্ম, তার এটা ও মনে রাখতে হবে, একজন অন্য ধর্মালম্বীরও তার মত অধিকার আছে রাষ্ট্রধর্ম তার ধর্ম চাওয়ার। এখন সবার মতামতকে রাখতে হলে প্রত্যেক দলের জন্য আলাদা সংবিধানের ভার্সন করতে হবে। সেটা কি সমীচিন হবে? সবোর্পরী বলব ধর্ম একটা ব্যক্তিগত ইস্যু, এটাকে কনস্টিটিউটে না আনাটাই উচিত। যখন দেশের কথা আসে তখন আর তা শুধু একটি বিষয়ের উপর বা কারো ব্যাক্তিগত ব্যাপার থাকে না। এখানে সবার সমান প্রাধান্য থাকে, একটা “সমমনা এজেন্ডা” থাকে, বলা হয় ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে একই লক্ষ্য এগিয়ে যাওয়া। ব্যক্তিগত ব্যাপার গুলো ব্যাক্তি পর্যায়েই থাকা উচিত। আর ব্যাক্তিগত ব্যাপারগুলোর স্বাধীনতা নিশ্চত করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। রাষ্ট্র সকল ধর্মালম্বীদের। রাস্ট্র কখনোই কোন ধর্মের লোকজনদের ধর্ম পালনে কোন নির্দেশনা দিতে পারেনা। রাষ্ট্রের জন্য তো ধর্ম নয়, মানুষের জন্য ধর্ম, সুন্দর আর শান্তির জন্য ধর্ম। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সবসময় মত, দল, ধর্ম নির্বিশেষে সবকিচুর উর্দ্ধ্বে উঠে নীতিমালা প্রণয়ণ করা উচিত। “ধর্ম ব্যক্তিগত আর রাষ্ট্র সামগ্রিক”।

৪.
আমার এক মুসলমান বন্ধুর কাছ থেকে শুনেছি, প্রিয় নবী হযরত মুহম্মদ (PUBH) মদিনার সনদে ধর্মঘনিষ্ট কোন শব্দ ব্যবহার করেননি, কারন সেখানে অন্যান্য ধর্মমতের অনুসারীরাও ছিলেন বলে। একটা দেশ কখনও ধর্ম দিয়ে চেনা উচিত না, চেনা উচিত তার জাতি দিয়া। আর জাতি গঠিত হতে পারে ভিন্ন ভিন্ন ধর্মের মানুষ নিয়া। তাই শুধু সংখ্যাগরিষ্ট হওয়ার কারনে কোন ধর্মকে রাষ্ট্রীয় করা উচিত না। একজন ব্যক্তি ধর্ম নিরপেক্ষ না হইলে বড় জোর পরিচিত দুই একজন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিন্তু একটা রাষ্ট্র যখন বলে বসে, আমার ধর্ম ইসলাম, সেই মুহুর্ত থেকে ঐ দেশের বাকি সকল ধর্মের মানুষ “দ্বিতীয় শেণ্রীর নাগরিক” এ গণ্য করা হয়। একটা জাতি বা রাষ্ট্র তখনই সৃষ্টি হয়, যখন কিছু মানুষ একটা “common” বা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ধারনা/বিশ্বাস নিয়ে গড়ে উঠে। “বাংলার হিন্দু, বাংলার বৌদ্ধ, বাংলার খ্রিস্টান, বাংলার মুসলমান- সবোর্পরী আমরা সবাই বাঙ্গালী”-এটাই আমাদের কমন এজেন্ডা, সমমনা চেতনা। গনতান্ত্রিক ব্যবস্থায় রাষ্ট্রের মুল দায়িত্ব তার সকল নাগরিককে সমান গুরুত্ব সহকারে পরিচালনা করা। কিন্তু রাস্ট্র যদি নিজেই জনগণকে পৃথক “আমি মুসলিম” বলে পৃথক করে দেয়, তাহলে সমতা রইল কোথায়? আমরা তো কোন বিশেষ পরিচয়ে মুক্তিযুদ্ধ করিনি। “হরে কৃষ্ঞ” বলে বা “আমরা ইসলামী” দিয়ে তো নয়। আমাদের এক কমন জাতিসত্ত্বা দিয়ে, সমমনা দেশপ্রেম দিয়ে, আমাদের জাতিগত চেতনাবোধ- মূলত “বাঙ্গালীত্ব” কে ধারণ করে। “আমদের আগে জাতীয়তাবোধ, তারপরে ধর্ম”। রাষ্ট্রের সংবিধান রাষ্ট্রীয় বিশ্বাসের লিখিত রুপ। সংবিধান রাস্ট্র পরিচলনার মুলমন্ত্র। সেই লেখাতে বাংগালী পরিচয়ই মুখ্য, ধর্ম নয়। “সেক্যুলারিজম” এখানে এই জন্যই গুরুত্বপূর্ন। এর মাধ্যমে আমি আমার কমন দৃস্টিভঙ্গি “বাংগালীত্ব”নিশ্চিত করি এবং সেই সাথে রাষ্ট্রের সকল নাগরিকদের সমঅধিকার প্রাপ্য বলে সবাইকে স্বীকৃতি দেই। সবোর্পরী যদি সত্যিই আমাদের দেশকে গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে হয়, সবার জন্য সমান অধিকার বাংলাদেশের মুল লক্ষ্য হয়, তাহলে রাষ্ট্রধর্ম নির্ধারণ করা কখনই নিরপেক্ষ নয়, সেটা অবশ্যই পক্ষপাতদুষ্ট। “ধর্ম হবে যার যার, রাষ্ট্র সবার”।

৫.
ধর্মনিরপেক্ষতা কিন্তু ধর্মহীনতা নয়! তাছাড়া অনেকে বলেন সেক্যুলারিজম ( Part of capitalism ideology) আর নিরপেক্ষতা একই জিনিস। সত্যিকারার্থে “সেক্যুলারিজম” “'Neutralization regards of any religion” নয়! সেক্যুলারিজম হল: “The belief that religion should not be involved in the organization of society , education etc” [6]; অথবা, “Encarta dictionary: exclusion of religion from public affairs” [7]. এই ধর্মনিরপেক্ষতাটাকে “ধর্মহীনতা” বলে দেশের বৃহৎ অশিক্ষিত/অর্ধশিক্ষিত জনগোষ্ঠিকে উস্কানি দেয়ার তাই কোন মানে হয়না। রাষ্ট্র মানুষের ধর্ম পরিচয় দেখবে না, রাজনৈতিক কারনে ধর্মের অপব্যবহার করা যাবে না, এবং ধর্মের কারনে কাউকে বঞ্চিত করা হবে না কোনো নাগরিক অধিকার থেকে। এই বিষয়গুলোকে এক ভাষায় ধর্মনিরপেক্ষতা বলে, যেখানে রাষ্ট্র ধর্মবিশ্বাসের পরিচয় না খুঁজে মানুষকে মানুষ হিসেবে স্বীকৃতি দিবে এবং তার নাগরিক অধিকারকে শ্রদ্ধা করবে। প্রকৃতপক্ষে, হিন্দু, ইসলাম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান হল “ব্যক্তিগত”, সেক্যুলারিজম হল “সমাজগত”!

"রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম" আর "ইসলামী রাষ্ট্র" এক কথা নয়। "ইসলামী রাষ্ট্র" মানে যে রাষ্ট্রে ইসলামী শরিয়া মোতাবেক শাসন ব্যবস্থা চালু আছে। সেখানেও অন্য ধর্মের মানুষ বসবাস করার অধিকার অর্জন করলেও তাদেরকে ইসলামী রাষ্ট্র পরিচালনা নীতি মোতাবেকই চলতে বাধ্য করা হবে! “ডেমোক্রাসী এডমিনিস্ট্রিসন সিস্টেমে” যা কখনই পড়ে না!! আর "রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম" মানে ওফিসিয়ালী জাতিকে বলে দেওয়া যে, রাষ্ট্র একটি নির্দিষ্ট ধর্মের অনুসারী অথবা কখনও কখনও পৃস্ঠপোষক। আর “সেক্যুলারিজম রাষ্ট্র” হালো রাস্ট্র তার নাগরিকের ধর্ম বিশ্বাসের উপর হাস্তক্ষেপ করবেনা, এই নীতির একটি আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি। কিন্তু মনে রাখতে হবে যে, রাষ্ট্র কোনো বিশেষ ধর্মের পৃষ্টপোষক হলে এই হস্তক্ষেপের সুযোগটা থেকেই যায়!! একটি গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্তায় এই সুযোগ দেয়াটা কতোটুকু যুক্তিযুক্ত? আমাদের দেশে "রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম" থাকলে হয়তো “ইসলামী রাষ্ট্র” হয়ে যাবে না ঠিকই, কিন্তু এই সুযোগের দ্বারটা খুলে দেয়াটা কি সমীচিন? দুজন ভিন্নধর্মালম্বী মানুষের প্রাত্যহিক জীবনের প্রার্থনার একান্ত সময়টুকু বাদ দিলে, জীবন সংগ্রামে আর কোন পার্থক্য পাওয়া যায় কি? বিশ্বের বেশিরভাগ দেশই এতোদিনে ধর্মচিন্তা বাদ দিয়েছে, এশিয়াতেও আশাকরি মানুষ বুঝবে জীবনে আসলে পার্থক্য আনার চেয়ে ভালবাসা আনা বেশি জরুরী। সংবিধানে ইসলাম, হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন যাই রাখা হোক না কেন তাতে বাংলাদেশের আর্থ সামাজিক অবস্থা পরিবর্তনে কি আসবে আর যাবে।

৬.
আওয়ামালীগ এতে সম্মতি দিচ্ছে নিশ্চিতভাবেই নিজেদের আখের গোচাতেই! আমার জানামতে আওয়ামিলীগের গঠনতন্ত্রেও রাষ্ট্রধর্মের কোন উল্লেখ নেই। নির্বাচন এলে আওয়ামীলীগ তো অবশ্যই, পারলে কমিউনিষ্ট পার্টিও ধর্ম বেচে ভোট পাওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করবে না। এত সহজে ভোটের ধানভরা জমিন দখলে নেওযার সুযোগ আর কিসে পাওয়া যেতে পারে? ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামী তো এর উপর ভর করেই জীবিত! বাংলাদেশের মেজরিটিই গ্রামবাসী, দারিদ্রসীমার নিচে। আমি নিজে যখন বন্ধুদের নিয়ে গ্রামে যাই, তখন দেখি আমার শিক্ষিত বন্ধুরা গ্রামের সহজ-সরল লোকদের খুব সহজেই প্রভাবিত করে ফেলতে পারে। যাই বলে, তারা তাই বিশ্বাস করে নেয়, সেখানে সরলতা তাদেরকে বিট্রে করে। আমাদের রাজনীতিবিদরা এই সুযোগকে কাজে লাগায়। ধর্মকে পুঁজি করে ব্যবসা করাটা খুব সহজ হয়ে যায় তখন! বাংলাদেশে কারন প্রতিটি রাজনৈতিক দলের জন্যই ধর্ম একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। এর সঠিক ব্যবহার তারা করবেই। ভোটের আগে দুই নেত্রী পাল্লা করে মাথায় কাপড় দেয়া শুরু করে - ধর্ম বলতে সম্ভবত আমাদের নেতারা এবং একটা বিশাল অংশ শুধু এটুকুই বুঝি। মৌলবাদীরাতো তো এ সুযোগের উপরই নির্ভরশীল।

যদি রাষ্ট্রই ধর্মনিরপেক্ষ না হয় তাহলে কিভাবে ভিন্ন ধর্মালম্বী দুটি বন্ধু ধর্মনিরপেক্ষভাবে কাজ করবে?? এভাবে দেশকে কতটুকু সহায়কভাবে সাম্প্রদায়িকহীন পদ্ধতিতে এগিয়ে নেয়া সম্ভব? সম্ভব তো হবে কেবল একই চক্রে বারবার পাক খাওয়া। সর্বশেষে এটাই বলব, রাষ্ট্রকে ধর্মমুক্ত রাখা হোক, অর্থাৎ ধর্মকে রাষ্ট্র থেকে যত দূরে পাঠানো হবে ততই তো মঙ্গল, সেটা হওয়া উচিত সময়ের দাবী। শুভত্ব আর শুদ্ধতা দিয়েই ঋদ্ধ হোক সকলের জাতীয়তাবোধ।

৭.
আরেকটি কথা, নতুন সংবিধানে, নাগরিকত্বের ক্ষেত্রে ‘বাংলাদেশী’ ঠিক থাকবে। তবে জাতীয়তাবাদ ‘বাঙালি’ হবে। আবার জাতির পিতা হিসেবে শেখ মুজিবের নাম বহাল থাকবে। জাতীয়তাবাদ বাঙালি মানে তো সকল বাঙালি, সেখানে পশ্চিমবঙ্গ, পূর্ববঙ্গ সবাই ইনক্লুডেড। বাঙ্গালি জাতির ইতিহাস তো ৪০ বছরের নয়, সেটা হাজার বছরের। এই হাজার বছরের ইতিহাসে অনেক সুযোগ্য ব্যক্তিত্ব আছেন, সকলকে কি বিবেচ্য করা হযেছে? নাকি শুধূ ১৯৭১ পরবরর্তী সময়কালীন বাঙ্গালীদেরই সম্পৃর্ক্ত করা হয়েছে?? ব্যক্তিগতভাবে তো, আমি জাতীয়তা “বাংলাদেশী” থাকার পক্ষে!

পরিশেষে কবিগুরুর গীতালী কাব্যগ্রন্থের [8] কয়েকটি চরণ দিয়েই শেষ করছি:

মোর মরণে তোমার হবে জয় ।
মোর জীবনে তোমার পরিচয় ।
মোর দুঃখ যে রাঙা শতদল
আজি ঘিরিল তোমার পদতল,
মোর আনন্দ সে যে মণিহার
মুকুটে তোমার বাঁধা রয় ।
মোর ত্যাগে যে তোমার হবে জয় ।
মোর প্রেমে যে তোমার পরিচয় ।
মোর ধৈর্য তোমার রাজপথ
সে যে লঙ্ঘিবে বনপর্বত,
মোর বীর্য তোমার জয়রথ
তোমারি পতাকা শিরে বয় ।।

[গীতালী, ১৯১৪]

--এই পতাকা শিরে থাকুক সকল বাংলাদেশীর, আর সেটা হোক সমান জাতীয়তাবোধে। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে, সকলের শুভকামনায়!

তথ্যসূত্র:

1. Manabjomin, 16 Feb, 2011 [http://www.mzamin.com/index.php?option=com_content&view=article&id=2964:2011-02-15-16-43-05&catid=48:2010-08-31-09-43-22&Itemid=82].
2. Bangladesh statistical info system, Bangladesh statistical board.
3.Bangladesh Constitution and its context, Khijir Khan.
4.Prothom Alo, June, 2010
5. Wikipedia, "India"
6. Oxford dictionary
7. Encarta dictionary
8. Gitali, Rabindranath Tagore, 1914.
Visit: http://artinapps.com আরেকটু পড়ি, কি বলেন.......

শনিবার, ৮ জানুয়ারী, ২০১১

মুভি রিভিউঃ থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার

আজ সময় সুযোগ পেয়ে স্টেজভুউ তে দেখে নিলাম মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর "থার্ড পারসন সিঙ্গলার নাম্বার"। আপাতদৃষ্টিতে আমার ভাল লেগেছে সন্দেহ নাই। ছোট দাগে মানুষিক টানাপোড়েন আর অসহায় নারীর বাধ্য হয়ে ভিন্ন পথ অবলম্বন করার কাহিনী নিয়ে ছবি "থার্ড পারসন সিঙ্গলার নাম্বার"। মোশাররফ আর তিশার স্বভাবসুলভ ভালো অভিনয়। যথারীতি আবুল হায়াতের অত্যন্ত শক্তিশালী অভিনয়। রুবার গায়ক বন্ধুর চরিত্রে বেমানান তপু। এ চরিত্রে আমার মনে হয় চন্ঞল মানাতো ভালো। হয়তো মেকার চরিত্রের চাহিদা থেকে বন্ধুবাৎসল্য এবং গানের কেমিস্ট্রিকে বেশি প্রায়রিটি দিয়েছেন। রুবার বোনের চরিত্রটি আমার কাছে সাবলীল মনে হয়েছে। কাহিনীবিন্যাসক দক্ষতা প্রমাণের চেষ্টা করেছেন নিসন্দেহে। বেশিরভাগ কারেক্টারের অভিনয় গতানুগতিক। কয়েকটি দৃশ্যে অযোচিত বাহুল্যের মেকি চেষ্টা। মুভির গানগুলো মানানসই হলেও আবহ সংগীতে তেমন বিশেষত্ব নেই। তবে বেশ কিছু সংলাপ চমৎকার। মুভির সবচেয়ে বড় দূর্বলতা নাটকসুলভ সিনেমাটোগ্রাফি। অন্যদিকে নতুনত্ব দেখাবার প্রচেষ্টা কল্পনার উপস্থাপনে। পরিচালক মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর "থার্ড পারসন সিঙ্গলার নাম্বার" ক্যনভাসে নিজের মুন্সিয়ানার পূর্ণ পরিচয় দিতে পারেননি যেরকমটা আমার প্রত্যাশা ছিল। হয়তো উনার মত খুব ভাল মেকারের কাছ থেকে আরও বেশি এক্সপেক্টশেন ছিল। অবশ্য সবমিলিয়ে বাংলা ছবির প্রেক্ষাপটে মুভিটি উপভোগ্য বলা চলে তবুও ধয্যং ধরানং আবশ্যকং!

প্রথমেই তথ্যসূত্র। গত ১১ ডিসেম্বর প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে ছবিটি। ছবির কাহিনীকার আনিসুল হক, প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ইমপ্রেস টেলিফিল্মের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর, অভিনয়শিল্পী তিশা, মোশাররফ করিম, তপু, আবুল হায়াৎ ও মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর অন্যান্য টীম। উল্লেখ্য যে ফারুকী এবং লেখক আনিসুল হক যৌথভাবে ছবির চিত্রনাট্য লিখেছেন।

প্রকৃতপক্ষে আমাদের দেশের তথাকথিত মূলধারার চলচ্চিত্রের গতানুগতিক কাহিনী ও সিনেমাটোগ্রাফী নিয়ে মধ্যবিত্ত দর্শকের অসন্তোষ দীর্ঘদিনের। তবে তাদের রুল-রুচির সাথে মানানসই ভিন্নধারার শৈল্পিক ও বাস্তবধর্মী চলচ্চিত্রও আমাদের দেশে তৈরি হচ্ছে না, তা না। ইদানীং কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত দর্শক কোন কোন ছবি দেখার জন্য দল বেঁধে সিনেমাহলে ঢুকছে। মোস্তফা সরয়ার ফারুকী নির্মিত থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার ছবিটি তার মধ্যে হয়তো একটি।


এটাকে চিন্তাশীল ও বিশ্লেষণী ছবি হিসেবে আখ্যায়িত না করলেও, ছবিটির বক্তব্য ও নির্মাণশৈলীর খুটিনাটি বিভিন্ন দিকের জন্য ভালো লেগেছে। ফারুকী মূলত ভোগবাদী সংস্কৃতিকে গুরুত্ব দিয়েছেন এখানে অর্থাৎ বর্তমান পরিবেশে একজন অবিবাহিতা নারীকে যে যে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় তার বর্ণনা তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন এই ছবিটির মধ্য দিয়ে। তবে আমার কাছে মনে হয়েছে প্রৌঢ়দের অসংযত আচরণের দৃশ্যগুলিতে রুরার কৌতুকপূর্ন অভিলাশ একজন বাস্বব অসহায় মেয়ের পরিস্থিতির গুরুত্বকে ম্লান করে দিয়েছে। আবুল হায়াতের সিড়ি বেয়ে চলে যাওয়া অনেকটা বাস্তবতাবিবর্জিত মনে হয়েছে। রুবাকে মাঝেমাঝে সাহসী মেয়ে আবার পরক্ষনেই অসহায় মেয়ের কারেক্টার দিয়ে মুন্ডিয়ে দেয়া হয়েছে যা মুল থিমের সাথে বেমানান বলেই মনে হয়েছে আমার কাছে। ঠিক যেমন রুবার বাস্তবতাবিবর্জিত স্বচ্ছল এবং স্বস্তিপূর্ণ জীবন কামনা করিনি (তপুর পারসপেক্টিভ ঘটনা)। তাছাড়া একটি টানাপোড়নের মধ্যে দিয়ে যাওয়া অসহায় মেয়ের পরিশীলিত পোশাকশৈলী অপরিপক্ক বলে মনে হয়েছে। চলচ্চিত্রকে চিত্তাকর্ষক করতেই বোধহয় পরিচালক এই কাজগুলো করেছেন।


ছবিটির ভালো লাগা দিকগুলোর মধ্যে কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করতে হয়। ছবিটিতে দু’জন সঙ্গীর (তপু এবং মোশাররফ) মধ্যে একজনকে বেছে নেয়ার ব্যাপারে রুবার মধ্যে মানসিক টানাপোড়েনটা প্রদর্শনের জন্য মাল্টিপল পাসোর্নালিটির এডিশনটা (সো আদতে থার্ড পারসন প্লুরেল নাম্বার) ছবিটিতে একটা ভিন্ন আঙ্গিক দেয় নিসন্দেহে। তিশার মৃত মায়ের সাথে তিশার পরলৌকিক যাপিত ছবি (যে সপ্ন টা দেখে পুকুরের পাশে দাড়িঁইয়ে) পরিচালকের ভিন্নধর্মী সৃষ্টিশীলতার পরিচয় দেয়। প্রথমবস্তায় নিজের মায়ের সাখে কর্কশ ভাষায় কথা বলা রুবা শেষে নিজের জীবনের অভিজ্ঞতায় মায়ের ভুমিকাকেই প্রতিষ্টা দিতে চায়। মায়ের সাথে ছাদে রুবার কথোপকথনের দৃশ্যটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু দুঃখজনকভাবে বলতে হচ্ছে যে, মায়ের চরিত্র রূপদানকারী কারেক্টারের অপরিপক্ক আড়ষ্ঠ অভিনয় বিরক্তির উদ্রেকই করেছে শুধু। এই গুরুত্তপূর্ণ চরিত্রে মহিলার সাবলিল অভিনয় প্রত্যাশা ছিল।


মূল কাহিনী: ফারুকী’র এই চলচ্চিত্রে রুবা একজন অবিবাহিতা নারী, যে মুন্না’র সাথে বসবাস করতো। কিন্তু হঠাৎই খুন করার অভিযোগে মুন্নাকে জেলখানায় বন্দী হতে হয়, আর তখনই একলা নারীর জন্য এই সমাজ কতটা সমস্যাসঙ্কুল তা বিভিন্ন অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে রুবা’র কাছে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। রুবার পুরনো বন্ধু তপু এক সময় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়, এবং ক্রমশ রুবা তপু’র প্রতি আকর্ষণ অনুভব করতে শুরু করে। রুবার মধ্যে মানসিক টানাপোড়েনটা প্রকাশ এবং পরিণিতি পায় মাল্টিপল পাসোর্নালিটির কথোপকথনের মাধ্যমে।

এক পর্যায়ে তপু-রুবা একই ফ্লাটে থাকছে, আলাদা আলাদা রুমে। রাতের বেলা প্রথমাংশের এই সব বৃদ্ধদের মতই মিলনের ইচ্ছায় তপু রুবার রুমের সামনে ঘোরা ঘুরি করে, মাঝে মাঝে দরজা নক করে। রুবা সবই বুঝে কিন্তু সরাসরি সম্মতি দেয় না। ঠিক পরের দৃশ্যে, একই উদ্দেশ্যে রুবাকেও ঘোরা ঘুরি করতে দেখা যায়। ঠিক এই মূহুর্তেই রুবার সামনে হাজির হয় তার ১৩ বছরের মন। রুবাকে তপুর প্রতি শারিরিক আকর্ষণ হতে দূরে রাখতে রুবার মনের এক অংশ সবসময় রুবার সাথে ঝগড়া করতে থাকে। এই সমস্যায় রুবা মানসিক চিকিৎসকেরও কাছে যায়। প্রথমে মাঝে মাঝেই রুবা মুন্নাকে দেখতে যেত। কিন্তু চাকরি এবং তপুর কারনে সেটা ধিরে ধিরে কমতে থাকে, একপর্যায়ে মুন্নাই আর রুবার সাথে দেখা করতে চায় নায়। তপু রুবাকে পাবার আকাঙ্খা বার বার প্রকাশ করে যায়। রুবা বোঝে এবং এটাকে সে কোন প্রকার অসৎ উদ্দেশ্য বলে মনে করে না, যেমনটা সে প্রথমের বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে মনে করত। উলটা রুবা নিজেই তপুর আহ্ববানে সাড়া না দেবার কারনে অস্বস্থি বোধ করে। এক পর্যায়ে রুবা তপুর আকাঙ্খাতে সম্মতি জানিয়ে তপুকে তার ঘরে আসতে বলে। তপু লাফাতে লাফাতে হাজির হয় রুবার ফ্লাটে। গিয়ে দেখে রুবা নাই। রুবা আবার তার ১৩ বছরের মনের প্রভাবে তপুর কাছে নিজেকে সমর্পনে অসম্মতি জানায়।



আমর ক্রমশঃই ধারণা হচ্ছে যে সিনেমাটোগ্রাফীতে ফারুকী তার নিজস্ব একটি গন্ডিবদ্ধ অবস্থানে আটকে যাচ্ছেন। তার এই সিনেমার কাহিনীতে আমাদের নাগরিক জীবনের প্রেক্ষাপটে কিছু পরীক্ষামূলক কাজ করার চেষ্টা করলেও সেগুলো তার স্টেরিওটিপিকাল কাঠামোর বাইরে যেতে পারেনি। ছবিটির শেষাংশের অন্য নাটক/মুভিগুলোর মত সম্পর্কগত দ্বন্দ্বের বিষয়টি এ বিষয়কে আরো বেগবান করে।

ছবিটা যেভাবে শুরু হয়েছে পরবর্তীতে তা সেভাবে পূর্ণতা নিয়ে এগোয়নি। কোনো যুক্তিগ্রাহ্য কারণ ছাড়া একটা মেয়ে কেন মাঝ রাত্রে পথে নেমে পড়বে তা বোধগম্য নয়। রুবা শিক্ষিত, সংস্কৃত। তার উচ্চ পর্যায়ের বন্ধু-বান্ধবও আছে। তাদের কাউকে ফোন করে নিয়ে যেতে বললেই চলত। আমার মনে হয় দর্শকের কল্পনাকে উসকে দিতেই এই দৃশ্যগুলো সাজানো হয়েছে। বলাবাহুল্য মোশাররফ করিম এখন টাইপড। যেভাবেই হোক তাকে সে রকমই দেখাতে হবে- এই প্রবণতা হালের পরিচালকদের মধ্যে দৃশ্যমান। মোশাররফের বাবা নিরাবেগ রোবটের মত যে রকম যাত্রার ঢঙে শাসন করলেন তা কাহিনীবিন্যাসকে খাপছাড়া করে। হঠাৎ করে তপুর মত প্রতিষ্টিত কারো আগমন অনাকাঙ্খিত ও দৃশ্যত আরোপিত। সর্বোপরি ছবির আখ্যানভাগ বাস্তবতা বর্জিত বলেই আমি মনে করি।


সাম্প্রতিক তথ্য: সম্প্রতি অনুষ্ঠিত একাদশ ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে এই ছবিটির জন্য ফারুকী সেরা পরিচালকের পুরষ্কার পেয়েছেন। ৮৩তম একাডেমি অ্যাওয়ার্ড (অস্কার) প্রতিযোগিতায় ‘বিদেশি ভাষার ছবি’ বিভাগের জন্য বাংলাদেশ থেকে পাঠানো হচ্ছে থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার ছবিটি [সূত্র: প্রথম আলো]। বাংলাদেশ ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ এবার ছবিটি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গতকাল বুধবার দুপুরে রাজধানীর একটি রেস্তোরাঁয় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। এবার তিনটি ছবি জমা পড়ে। ছবিগুলো হলো জাগো, গহিনে শব্দ ও থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার। এর মধ্য থেকে নয় সদস্যের অস্কার বাংলাদেশ কমিটি মোস্তফা সরয়ার ফারুকী পরিচালিত থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার ছবিটিকে চূড়ান্ত করেছে।

টক শো:
http://www.youtube.com/watch?v=Jd2QWnEveL4

ছবিটির একটি গান:
http://www.youtube.com/watch?v=LOIawofn_Aw

ফারুকীর ভাষ্য:
http://www.youtube.com/watch?v=9WYLn_KyDZg

শেষকথা: যারা এখনও দেখেননি, দেখার জন্য অনুরোধ করছি। লিংকটা নিচে দিয়ে দিলাম (তবে কপিরাইট আছে কিনা জানি না, ক্ষমা করবেন)। বলা যায়না আলসেমির জন্য আমার মত প্রথম প্রথম খোজাখোজির ঝামেলার মধ্যে নাও যেতে পারেন।

১. সম্পূর্ণ ছবি (হাই কোয়ালিটি)
২. সম্পূর্ণ ছবি
৩. ১২ মিনিটের সামারী


সর্বশেষে অযুত শুভাশিষ সকল শৈলারকে। ভালো থাকবেন।
আরেকটু পড়ি, কি বলেন.......

শৈলী ই-বুক (প্রেম-বিষয়ক)

প্রেম-প্রীতি আসে নাই বা করেন নাই এমন মানুষ খুব কমই আছে! পার্থক্য শুধু রকমভেদে অথবা কালভেদে। কারও প্রেম বইয়ের নির্লীপ্ত সাদা পাতায়, কারও প্রেম বিকেলের বিস্তীর্ণ খেলার মাঠে, কারও প্রেম চাদঁনী পসার জোৎস্না রাইতের মৃদু আলোয়, কারও প্রেম কবিতার অঞ্জলীমাখা পরিশীলিত আবেগিকতায়, কারও আবার রাজনীতির টেন্ডারবাজী তেজী হকিস্টিক-এ, কারও কারও অফিস-টেবিলের নিচে হাত গলিয়ে উপরি উপঢৌকন হাতড়ানোতে, কারও অন্যের পিচে লাগামহীনভাবে লেগে থাকাতে। এর মধ্যে কোন কোন দুর্ভাগাদের প্রেম আবার তথাকথিত অভিলাষে। যে যার মত প্রেম করুক! আমাদের এত কোনই আপত্তি নাই। তবে একটা আর্জি আছে। প্রেম-সমেত আর্জি।

শৈলী প্রথমবারের মত কিছুটা রম্য ঘেষা ই-বুক বের করতে যাচ্ছে! তাও আবার ভালবাসা দিবসে। বোঝেন অবস্থা! নামও আবার দেওয়া হয়ে গেছে!: "শৈলী প্রেম-সংখ্যা"। বিশাল ব্যাপার! কিন্তু দুভাগ্যজনকভাবে মহা বিরক্তিকর কাজ "ব্যবস্থাপনার" দায়িত্ব দেওয়া হয়ে গেছে আমার কাছে। রাজ্যোর কাজ! প্রেমিকাকেও সময় দেওনেরও এখন টাইম নাই। নাওয়া-ঘুমানো তো দুরের কথা। এই সূত্র ধরে উপরে উল্লেখিত নানান জাতের নানান ক্যাটাগরীর প্রেমিকদের মধ্যে যারা কবিতা-প্রেমিক, গল্প-প্রেমিক, উপন্যাস-প্রেমিক, সবোপরী লেখা-লেখি-প্রেমিক, তারা দয়া করে অন্য প্রেম-প্রীতি ভুইল্যা গিয়া, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রোমান্টিক ধারার লেখা দেন, আর আমাকেও তাড়াতাড়ি উদ্ধার করেন!

লেখা পাঠানোর ঠিকানা shoilyblog@gmail.com। অথবা এই পোস্টেও কমেন্ট আকারে দিতে পারেন। মনে রাখবেন ছোট লেখার কদর বেশি। আর ই-বুকটি হবে একটু রম্য-ঘেষা। বেশিরভাগ পোস্ট শৈলীর বর্তমান সাহিত্য ভান্ডার থেকেই নেওয়া হবে। পরিশেষে একটা ভালবাসায়-মোড়ানো চমৎকার একটি ই-বুকের আশায় বুক বাঁধলাম।
আরেকটু পড়ি, কি বলেন.......

জুলিয়ান সিদ্দিকী ভাই-কে জন্মদিনের প্রাণঢালা শুভেচ্ছা

ইংরেজী নববর্ষের শুভদিনে শৈলীর প্রথমদিকের শৈলার জুলিয়ান সিদ্দিকী ভাইয়ের জন্মদিন আজ। এতুপলক্ষে মামদো ভুত ও শৈলী-র পক্ষ থেকে প্রাণঢালা শুভেচ্ছা। তয় জুলিয়ান ভাইয়ের বয়স কত হইছে কে জানে !?!
জুলিয়ান সিদ্দিকী




পাশাপাশি সবাইকে ইংরেজি বছরের শুভেচ্ছা!!

আরেকটু পড়ি, কি বলেন.......

ছবিব্লগ: স্বপ্নবাহুল্য ভ্রমনবিলাস

যেসব চরম চরম জায়গায় ঘুরাঘুরি করব বলে ঠিক করে রেখেছি, আজ সেগুলো সবার সাথে শেয়ার করতাছি। দেখেন দেখিনি কেমুন লাগে!

ডিসক্লেইমার: পড়বেন, দেখবেন, শুনবেন, বাট টিটকারী মারতে পারবেন না।

স্বপ্নবিলাস ১. এভারেস্টে বইসা বইসা সূযোর্দয় দর্শন:

আমার প্রথম এবং অন্যতম কাঙ্খিত স্বপ্ন হইল নিচের ছবিটিতে দ্রষ্টব্য এভারেস্টে পিকে আমার পদধূলিখান দেওয়া, তখন সময়টা থাকবে গোধূলিবেলা, সূর্যটা প্রায় ডুবি ডুবি, ম্লান লাল আভা ছড়িয়ে থাকবে চারদিকে, আমার হাতে ধরা থাকবে একটা ঝালমুড়ির প্যাকেট (কোকলা ব্র্যান্ডের হইলে ভাল হয়), আমি তখন চূড়ায় একটু ঢিগ দিয়ে বসে থাকব আর উপর থেকে ডুবন্ত সূর্যের দিকে অনেকক্ষন মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকব। কিতনা সুন্দর ফিলিংস হবে হতে পারে ভাইবা দেখেন?

দি হাইয়েস্ট চূড়া (লাল কালার) অব দ্যা এভারেস্ট
দি চূড়া (লাল কালার) অব দ্যা এভারেস্ট

ছবির বামের পর্বতটার নাম শুনছি অন্নপূর্ণা। ওইখানে যাওনের আপাতত কোন ইচ্ছা নাই, যামুই যখন, ছোটিমুটি না, একেবারে হাত্তির ডেলায় উঠুম গো। কানাঘুষা শুনতেছি, মুসা সাহেব নাকি তার এভারেস্ট-জয়ের প্রমাণ সো করতে তালবাহানা করতাছেন। এই সুযোগ-টাও কাছে লাগানো যায়। ফাঁকতালে পিকে উঠে এই খ্যাতাবটাও ইজিলি নেওন যায়। রথও দেখা হইল, আবার কলাও ব্যাচা হইল। আপনারা শুনে আরও খুশি হইবেন যে, আমি এ ভ্রমনের ব্যাপারে অনেকদুর আগাইয়াও গেছি। কাল রাত্রিতে গুগল ম্যাপ থেকে এভারেস্ট বেসক্যাম্পের একটা পাতা প্রিন্ট পর্যন্ত করে রেখে দিয়েছি। বুঝেন অবস্থা! এখন শুধূ দিনক্ষন ঠিক করনের পালা।

স্বপ্নবিলাস ২. ওয়াচিং দি ধরনী ফ্রম চান্দের মাটি:

এটা আমার অনেকদিনের একটা খায়েস। চান্দে হাইটা হাইটা পৃথিবী দেখুম। সারা পৃথিবীটা এক সাথে দেখতে কেমুন লাগে একবার দেখুম। এর থেকে মনোহর দৃশ্য আর কি হতে পারে! চান্দের মাটিতে দু'তিনরাত বিছানা পেতে ঘুমানোরও ইচ্ছা আছে। মনে মনে অনেকদুর ধরে প্রিপারেশনও নিয়ে রাখতাছি। চান্দে বাতাস-টাতাস নাই শুনেছি। রিস্ক নিয়ে লাভ নাই। কলে কলে তাই সময় সুযোগ পাইলেই কম শ্বাসে কেমনে বেশিক্ষুন থাকন যায় সেটা অনুশীলন করে রাখতাছি। সময় থাকতে সব ট্রেনিং নিয়ে রাখা দরকার। বলা যায় না, কখন হুট করে সুযোগ চলে আসে! চান্দে রাস্তা-ঘাট চিনতে একটু প্রবলেম হইতে পারে। এখানে গুগলের জিপিএস সিস্টেম খাকবে তো বলে মনে হয় না, দেখি কি করন যায়। একটা কিছু বের করতে তো হবে। যাব যখন ঠিক করে রেখেছি, অল্টারনেটিভ দেখে টেকে রাখাই ভালু।

চন্দ্রালোকে থাইকা ধরনী দর্শন
ওয়াচিং দি ধরনী ফ্রম চান্দের মাটি



স্বপ্নবিলাস ৩. আমাজনে জোৎস্না-স্নান:

কবিগুরুর ভাষায়, “আজি জোস্না রাতে সবাই গেছে বনে”। সো ভরা জোস্না রাতে বনে যেতে হয়, এটাই নিয়ম। আর বন/জঙ্গল হিসেবে আমাজনটাই চুজ করে নিলাম। জঙ্গলটা খারাপ না, তাছাড়া বেশ বড়সড়ও আছে। যাওন যায় এখানে। বড়সড় জঙ্গলে ঢুকে জোৎস্না দেখার মজাই আলাদা হওনের কথা। ভরা চাঁদনি পসর রাইতে গভীর আমাজনে ঢুইকা গাছের উপর বসে বসে জোৎস্না স্নান করতে যে কেমন ভাল লাগবে, এটা চিন্তা করতেই তো আমার গা রিরি করতে আছে।

এইডারে কয় আমাজন জঙ্গল
এই দেখেন আমাজন জঙ্গল



স্বপ্নবিলাস ৪. টাইটানিকের সমাধিস্থল পরিদর্শন::

ছোটবেলায় ক্যামেরুন সাহেবের সিনেমাটা যখন দেখলাম তখনই মনে মনে ঠিক করে রেখে দিয়েছিলাম, এখানে একবার যাওন যায়। সিদ্ধান্তটা ফাইনাল করে রেখে দিয়েছিলাম তখনই। ছোটবেলার শখ অনেক বড় ব্যাপার। যেকোন মূল্যে এটা রক্ষা করার চেষ্টা করা উচিত। একটা সাবমেরিন দিয়ে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের চারদিকে শুধূ একটিবার ঘুরব, এইই, আর তো কিছু না। আমার বড় প্রিয় শখ এটি। ইতিমধ্যে নেট-ফেট ঘাটাঘাটি করে যা জানলাম, ধ্বংসাবশেষটি নাকি এখন প্লাসিড প্লেসে আসে, সমুদ্রপৃষ্ট থেকে প্রায় ৭,০০০ ফিট গভীরে। ইউএসের পেনসিলভ্যানিয়া নেভি সেকশান থেকে ‘অথলডি’ নামে একটা সাবমেরিন যায় সেখানে। এটা দিয়ে একবার ট্র্রাই মারন যায়। ইউএস যেহেতু, সাবমেরিনডা তো ভাল কোয়ালিটির হওনের কথা। পানির এত নিচে যামু যখন, দেখে শুনে বুঝে যাওন দরকার। আমি আবার সাঁতারও জানি না, কখন কি হয়, কওন তো যায় না!

টাইটানিক
এইডারে কয় টাইটানিক জাহাজ



পরিশিষ্ট:

আপাতত এগুলুই ঠিকঠাক করে রেখেছি। পরে সময় সুযোগ মত পরিমার্জন বা পরিবর্ধন হতে পারবেক। একটু তাড়াতাড়িই ভ্রমন শুরু করে দিমু ভাবতাছি। তবে এখনি বেরুনোটা মনে হয় ঠিক হবে না। সর্দি কাশির্র সিজন, কদিন যাক। তারপর ঝাপাইয়া লাগুম। আপনাদের দোহাত-মেলা দোয়া/আর্শীবাদ লাগবেক। সময় মত ভরাইয়া দিয়েন (আর ডিসক্লেইমারের কথা ভুলে যাইয়েন না কইয়া দিলাম)।

আরেকটা বাকি আছে, সেটা সিরিয়াস:

সবারই নানারকম শখ থাকে। আমারও আছে। তার মধ্যে একটা হল মরনকালীন শখ। আয়োজন করে মৃত্যকে উপভোগ করার শখ। আমি যখন মারা যাব, ঠিক তখন আমি চাই আবহ সঙ্গিত হিসেবে নিচের গানটা বাজুক। তখন থাকবে গভীর রাত। ঘরের সকল দরজা-জানালা খোলা থাকবে। বাতাসে পর্দা উড়তে থাকবে। ঘরে থাকবে শুধু একটি আধো-জ্বলা মোমবাতি। সেই মোমবাতির ম্লান আলোয় সবকিছু আবছা দেখা যাবে। সেদিন যদি হয় পূর্ণিমার রাত, তাহলে তো সোনায় সোহাগা। জোৎস্নার আলো উপছে পড়বে আমার বিছানায়। আমার দূর্বল শরীর স্নান করব সে আলোয়। সে স্নানে ধুঁয়ে-মুছে যাবে আমার সকল অপ্রাপ্তি, অতৃপ্তি। সেই বিছানার ধারে শুধু আমার একজন প্রিয় মানুষ বসে আমার মাথায় পরম মমতায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকবে। তার ভালবাসার চোখের পানি আমার গালে টপটপ করে পড়তে থাকবে। জানালার ধারে ঝুলতে থাকবে একটি পাখির খাঁচা। বাইরে অনুচ্চস্বরে চাঁপাকান্না শোনা যাবে। তখন হুহু করে বাতাস বইতে থাকবে। একটু শীত শীতও করবে। ঠিক তখন আমার প্রানটা উড়ে চলে যাবে পরপারে। আর আমার প্রানটা যাওয়ার সময় খাঁচা থেকে পাখিটি মুক্ত করে দেওয়া হবে।

[বি:দ্র: তবে মনে করে ভাল করে যেন ঘরে এরোসোল স্প্রে করে দেওয়া হয়, যে হারে মশা বাড়তাছে, যেকোন সময় পুরা আনানন্দটাই মাটি করে দিতে পারে!!]

::::: Fazlur-Rahman-Babu---Shonai-Hay-Hayre-(Monpura-Soundtrack:::::::

গানটা ভাল লাগলে জানাবেন।
আরেকটু পড়ি, কি বলেন.......

রম্য: বিবাহঘটিত প্রশ্ন-সমাচার

আমার মাথায় কুলায় না, বিয়ে করে খাল কেটে কুমির আনার দরকার টা কি? বিয়ে করে কে কবে কি হতে পেরেছে? পৃথিবীতে যতো বড়ো বড়ো প্রেমিক- প্রেমিকা আছে লাইলী-মজনু, শিরি-ফরহাদ, রোমিও-জুলিয়েট কিংবা আমাদের দেবদাস এরা কেউ তো কোনো দিন বিয়ে করে নি। একবার ভেবে দেখেন তো এরা যদি বিয়ে করতো তাহলে কি আমরা মনে রাখতাম ? এরা কি জগৎ বিখ্যাত হতে পারতো? কিন্তু দেখেন কে শুনে কার কথা !?!! ভালা কতার আজকাল কোনু দাম নাই।!!!! আফসোস!!!

মেজাজ গরম। চূড়ান্ত ত্যক্ততার মধ্যি দিন যাপিত করতাছি। একখান অবধারিত প্রশ্ন শুনতে শুনতে মাথা ধরা। কারো সাথে দেখা হইল অথবা ফোনে কথা হইল (ইরেসপেক্টিভ অব আন্ডা বাইচ্চা অথবা আবাল বৃদ্ধবনিতা), ভালা বুড়া জিগাইবার আগেই সবার প্রথম প্রশ্ন, "কি রে, বিয়ে করেছিস??", "কি রে, বিয়ে করেছিস??" প্রশ্ন শুনতে শুনতে ঠোটের আগায় আমিও কথা রেডি রাখি। যারে যেরুম বুজানো যায় বুজায়া আইতাছি। কদিন আগে আমার থেকে ৮ বছরের ছোট, দুধের বাইচ্চা, ফোন ধরে প্রথমেই টিটকারি মেরে কয়, ভাইজান, ভাবী কেমন আছেন??... শালার.....(মাথার চুল ছিড়ার ইমো)....!!

ভাই, যারা এখনও বিয়ে করেন নি তারা ঘাবরাইয়েন না। আসেন আমরা সবাই একজোট হই, সবাই মিলে এক সাথে আওয়াজ তুলি, আমিতো বিয়ে করবোই না আমার ছেলেকেও বিয়ে করাবো না । আর, মরার আগে আমাদের নাতীকেও বলে যাবো, ভাইরে! তুইও বিয়ে করিস না।

এইবার কয়েকখান কৌতুক কান খাড়া করে শুনেন:

১.
জামান সাহেব তার নার্সারিতে পড়ুয়া ছেলেকে নিয়ে গেছেন চিড়িয়াখানায় । বিভিন্ন রকমের পশু-পাখি দেখে ছেলের তো কৌতুহলের বাঁধ ভেংগে গেছে । যেইটা দেখে হেইটা নিয়েই প্রশ্ন করে । বাবা এটা কি?

= এটা ঘোড়া ।
= বাবা ওটা কি ?
= ওটা গাধা ।
= বাবা গাধার পাশে ওটা কি ?
= গাধার পাশেরটা হচ্ছে গাধী ।

ছেলে তো অবাক! কোনটা কি এটা চিনতে না পারলেও গাধা গাধীর ব্যপারটা ও বুঝতে পারে না। তাই অবাক হয়েই বাবাকে প্রশ্ন করে, আচ্ছা বাবা, গাধারা কি বিয়ে করে?

জামান সাহেব এবার নিজেই চিন্তায় পড়ে গেলেন। মাথা চুলকাতে লাগলেন। তারপর চাঁপা একটা দীর্ঘ-শ্বাস ফেলে গাধার দিকে তাকিয়ে বললেন, হ্যাঁ রে বাবা, গাধারাই বিয়ে করে !!!

২.
বিবাহবার্ষিকী নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কথা হচ্ছে—
স্ত্রী: তোমার কি মনে আছে, কাল আমাদের ১৩তম বিবাহবার্ষিকী?
স্বামী: হুমম, তো কী হয়েছে?
স্ত্রী: এই দিনটি কী করে পালন করব বলো তো?
স্বামী: তুমি কী করবে জানি না, তবে আমি সকালে ঘুম থেকে উঠে দুই মিনিট নীরবতা পালন করব।

৩.
স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়ার পর স্বামী বাসা থেকে চলে গেছেন। তাঁদের মধ্যে মুঠোফোনে কথা হচ্ছে—
স্বামী: আজ রাতের খাবার কী?
স্ত্রী: বিষ আছে বিষ!
স্বামী: ঠিক আছে, তুমি খেয়ে শুয়ে পড়ো। আমার ফিরতে আরও দেরি হবে।

৪.
স্বামী: ওগো শুনছ, সর্বনাশ হয়ে গেল।
স্ত্রী: কী হয়েছে?
স্বামী: আজ মাইনে নিয়ে অফিস থেকে বাড়ি আসার পথে দুই ছোকরা পিস্তল দেখিয়ে বলল, হয় টাকা দাও না হলে জান দাও।
স্ত্রী: আর তুমিও বোকার মতো টাকাটাই দিয়ে এলে!

৫.
: বাড়ি ফিরেই এক লোক দেখতে পেল তার স্ত্রীর হাতে, মাথায় ব্যান্ডেজ। সে ছুটে তার কাছে গিয়ে কী হয়েছে জানতে চাইল। ‘গাড়ি এক্সিডেন্ট করেছি …সকালে ঘরের কিছু কেনাকাটা করতে বেরুচ্ছিলাম …’
স্ত্রীকে থামিয়ে দিয়ে স্বামী উত্তেজিত হয়ে বলল- ‘এত বিস্তারিত বলার প্রয়েজন নেই, এখন কী অবস্থা বল।’
স্বামীকে তার ব্যাপারে এত চিন্তিত হতে দেখে খুশি হয়ে স্ত্রী বলল- ‘আরে এত দুশ্চিন্তার কিছু নেই, মাথায় দুটো সেলাই পড়েছে আর কবজি সামান্য একটু মচকে গেছে। অবশ্য ডাক্তার বলেছে …’।
এবার স্বামী আগের চেয়েও জোরে চিৎকার করে উঠল, ‘আরে তোমার কথা কে জিজ্ঞেস করল? গাড়ির কী অবস্থা সেটা বল ।’

৬.
মৃত্যুশয্যায় শায়িত স্বামী তার স্ত্রীকে বলছেন—
স্বামী: আমি তো আর এক মাস পর মারা যাব, তাই আমি চাই, আমার মৃত্যুর পর তুমি সাজ্জাদ সাহেবকে বিয়ে কর।
স্ত্রী: সাজ্জাদ সাহেব! বলো কি, সে তো তোমার শত্রু। আর তাকে কিনা বিয়ে করতে বলছ তুমি!
স্বামী: আমি জানি সে আমার শত্রু। সাজ্জাদকে শায়েস্তা করার এটাই তো মোক্ষম সুযোগ, বুঝলে?


৭.
উকিলঃ সেকি ম্যাডাম ? আপনার স্বামী তো পাচ বছর আগে মারা গেছেন । তাহলে চার বছরের আর একটি দুবছরের বাচ্চা এলো কোথা থেকে ?
ভদ্রমহিলা রাগের স্বরেঃ তা আমি তো বেচে আছি না কি?
-
-
-
-
-
পাদটিকা:

আঙ্গুর

ফল

আজকাল

বেশি

বেশি

টক!

8-)
বি
আরেকটু পড়ি, কি বলেন.......

যুদ্ধাপরাধী বিচার সহায়তা

আজ মশলা মাখিয়ে কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। কারন বিষয়টা মশলা মাখিয়ে বলার মত না। তাই সোজা-সাপটা বলতে চাচ্ছি। যুদ্ধাপরাধী বিচার শুরু হতে যাচ্ছে, আমরা সবাই জানি। যুদ্ধাপরাধীদের পা কাঁপাকাঁপি শুরু হয়েছে এও আমরা জানি। তাদের পা কাঁপাকাঁপি আরও আরেকটু বাড়িয়ে দিতে ওয়ার ক্রাইমস ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটি, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, সেক্টর কমান্ডার ফোরাম, সেগুনবাগিচার মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর/ জাতীয় যাদুঘর, নানা অনলাইন ফোরাম (বিভিন্ন বাংলা/ ইংরেজী ব্লগ, জেনোসাইড-বাংলাদেশ/ওয়ার ক্রাইমস স্ট্রাটেজী ফোরাম), এছাড়াও ব্যক্তিগত পর্যায়ে স্মৃতিকথা/ মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক নানা বই/যেকোন ধরনের ডকুমেন্ট সংগ্রহকারীরা উঠেপড়ে লেগেছে।

আমরাই বা পিছিয়ে পড়ব কেন? আমরা সবার শেষেরটার অংশীদার হতে চাচ্ছি। বিচারকার্যে ৩৯ বছর আগের ঘটনার ক্ষেত্রে যথাযথ মিডিয়া প্রমাণাদি অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করবে নি:সন্দেহে। মিডিয়া মানে এখানে আমি অডিও-ভিজুয়াল মাধ্যমেকে বুঝাচ্ছি। সেইসব ভিডিও সংগ্রহ করার কথা বলতেছি যেগুলো প্রকৃত অর্থেই বিচারকার্যে সহায়তা প্রদান করতে পারে তদন্ত কমিটিকে। সহজেই অনুমেয়, সেটা সহজ কাজ হবে না। আমি নিজেও ঘাটাঘাটি করতে গিয়ে তা বুঝেছি। সবগুলো ভিডিও, অডিও লিংক আমরা পাঠাতে পারব তদন্ত কমিটি সংলিস্ট কোন ফোরামের কাছে। এক্ষেত্রে সবার সাহায্য কাম্য। কারো কাছে যদি একটিও নির্ভরযোগ্য লিংক থাকে, জানানোর জন্য অনুরোধ থাকল। তবে নিরপেক্ষ ও বিচারকার্যে গ্রহনযোগ্য একটা লিংক ভাণ্ডার গড়ে তোলার জন্য, নিরপেক্ষভাবে, রাজনীতির উর্দ্ধে উঠে, আবেগের আধিক্যের চাইতে চাঁছাছোলা নগ্ন সত্যকে তুলে ধরে এমন লিংক-কে বেছে নিতে হবে। নিম্নে আপাত দৃষ্টিতে সহায়ক হতে পারে এমন কয়েকটি ভিডিও লিংক শেয়ার করলাম।

০. এক রাজাকারের নিজস্ব কুকীর্তির সাফাই:



১. দরিদ্র রাজাকার আব্দুল কুদ্দুসের ইন্টারভিউ যে পাকিস্থান আর্মি দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল রাজাকার হওয়ার জন্য:



২. যারা বর্তমানে যুদ্ধাপরাধী নিয়ে কাজ করছে তাদের সবার কাছে এ মুহুর্তে প্রচুর তথ্য প্রমানদি সংরক্ষিত আছে। এখন প্রস্তাবিত তদন্ত কমিটি এগুলো আইনের কাঠগড়ায় নিয়ে হাজির করবে। নিচের এই ভিডিও ফুটেজের প্রতাক্ষদর্শি'রা রাজাকার নিজামীর বিপক্ষে অনেক প্রমান দিতে পারছে:



3. An ex al-badr states their activities in sylhet during 1971, he takes the name of farid chowdry as the number one of al-badr in sylhet: ( as name of Farid chow) (Courtesy: Omi pial):



4. A Martyrs wife’s interview: Shyamoli Nasreen Chowdhury, wife of Dr. Alim Chowdhury gives her account how the Al Badar came and picked her husband. (Courtesy: Omi Pial):



5. Journalists and widows of martyrs tells their experience about al-badrs in 1971:



6. A school friend and close relative of Bangabandhu Sheikh Mujibur Raham recalls his experience of Golam Azam's role in Bangladesh Liberation War:



7. The interview of an collaborator in sylhet:


1. War Crime Evidence of MOTIUR RAHMAN NIZAMI -JAMAT LEADER -in Bangladesh1971

8. This is the first five minutes of the documentary. This video contains evidences of war crimes which took place in 1971 in the war between east pakistan (Bangladesh) and Pakistan:



9. Chowdry mueenuddin : profile of a killer, he was the most wanted killer right after the independce of Bangladesh. the operational in chief of al-badr (the killer wing of jamat-e islami) in Dhaka 1971 who operated the killings of the intellectuals:



10. Kusthia Hotta Kando documentary:



11. Eyewitness interview of liberation war in 1971:



12. A documentary: Few witness interviews:

http://www.youtube.com/watch?v=qgzLu6A9uiA&feature=related

13. Part 6 of 6 of Untold Stories of Liberation War of 1971 : Kamrul vi’s interview:



14. Bangladesh 1971 Victims: Roshon Ara:



15. Muktijoddhara -(1/3) Killings of Buddhijibees Dec 14,1971: witness Interview:

Part1:



Part2:



Part3:



মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আমাদের অনেক ঋন। জানি কখনই তা শোধ করা যাবে না। কিন্তু আমরা যেন অন্তত তাদের আত্মার উপহাসের পাত্র না হই।
আরেকটু পড়ি, কি বলেন.......

ছবিব্লগ: ইপ্পারওয়াস পার্ক

উচ্ছিষ্ট

বরুণার করুণ উচ্ছিষ্ট বুকের এলাকায়
করেছিলাম সুগন্ধী হৃদয়ের আঁচ,
তাতেই একপায়ে খাড়া ছিলাম
বলাকার মতো।
কিংবা- ওড়া ছাড়া
কীসের বলাকা,
কীসের কী?
বড়জোর বোকা
এক বক হয়ে ছিলাম ...
কদিন আগে ইপ্পারওয়াস পার্ক বেড়াতে গিয়েছিলাম আমরা কজন। সেখানে ছোট্ট একটা লেকের টলমলে পানি আমাদেরকে যারপর নাই মুগ্ধ করেছিল। সারাদিন পানিতে দাবাদাবি, ঘুরে বেড়ানো, কলা খাওয়া, সবকিছু নিয়ে ভালই কেটেছিল দিনটি। সেখানে কিছু ছবি তুলেছিলাম। তার কয়েকটি নিচে শেয়ার করলাম। ভালো লাগলে জানাবেন।

১.



২.



বন্ধন

বন্ধন ? বন্ধন বটে ,
সকলি বন্ধন,
স্নেহ প্রেম সুখতৃষ্ণা ;
সে যে মাতৃপাণি
স্তন হতে স্তনান্তরে
লইতেছে টানি,
নব নব রসস্রোতে
পূর্ণ করি মন
সদা করাইছে পান ।
স্তন্যের পিপাসা ...

৩.



অবহেলা

ফুল কেন ছুঁড়ে ফেলে দাও
কেন বেদনা আবার খুলে দাও-
বসন্তে মল্লিকা বনছায়
কেন হেসে খেলে গেয়ে নেচে যাও
কেন বেদনা আবার খুলে দাও ।
চৈতের জোছনা সন্ধ্যাবেলা
দখিনা সমিরণ বয়ে যায়
উদাস নয়নে কারে খুঁজে চাও,
কেন বেদনা আবার খুলে দাও ।।

৪.



চাবি

আমার ঘরের চাবি পরেরই হাতে।
কেমনে খুলিয়া সে ধন দেখবো চক্ষেতে।।
আপন ঘরে বোঝাই সোনা পরে করে
লেনা দেনা আমি হলাম জন্ম-কানা
না পাই দেখিতে।।

৫.



অবকাশ

হাল ছেড়ে আজ বসে আছি আমি,
ছুটি নে কাহারো পিছুতে।
মন নাহি মোর কিছুতেই, নাই কিছুতে।
নির্ভয়ে ধাই সুযোগ-কুযোগ বিছুরি,
খেয়াল-খবর রাখি নে তো
কোনো-কিছুরি-- উপরে চড়িতে যদি নাই পাই .

গলা আমার জড়িয়ে ধর ,
ঝাঁপিয়ে পড় কোলে ,
সেই তো আমার অসীম ছুটি প্রাণের তুফান তোলে ।
তোমার ছুটি কে যে জোগায় জানি নে তার রীত ,
আমার ছুটি তো জোগায় প্রকৃতি

৬.



পরজীবির আশ্রয়স্থল

পরজীবির মতো অসুখী ছায়া বুকে নিয়ে তোমার ছায়ায় হেঁটেছি অবিরাম
ক্ষয়িত ধূলি-ধুসর মেঠোপথ যতদূর গেছে.... তবু বিচ্ছেদ করেছে নিরাশ্রয়।
বল, ব্যথার এই সফেন বুকে নিয়ে আর কত ?
কতটা সময়, কতটা দিন ! আমার পাঁজরের পুস্পের কাছে
রেখেছি তোমায় সৌরভে ঘুমাবে অনাদীকাল জুড়ে।
দেখো, একদিন ঠিক তুমি অনুবাদ করতে পেরেছো এই ভীরু মৌনতা আমার
ক্ষয়িত যৌবনের দীর্ঘশ্বাস....
সেদিন আমি সব বন্দর ঘুরেফিরে না হয়
আবার নোঙ্গর ফেলবো তোমার বন্দরে !

৭.



সময়ের তৃষ্ঞা

সময়ের তৃষ্ঞা মেটে না,
মেটার নয়।
ভুলে ভুলে থাকা।
পালিয়ে।
জীবন হয়তো এমনই ...

৮.



উল্টো

খুব আপন বাতাস অচেনা গাঢ় নীল ফুল পুরনো ভালবাসা টুকটুকে সূর্য অবশেষে উল্টো আকাশ ... খুব সাধারণ এই মানুষটি কখনও কবি হতে চায়নি, সে অন্ততঃ একটি সত্যিকারের কবিতা লিখতে চেয়েছিল . ...

৯.



নীরবতা

যখন ঘুম নামে এই পাথুরে উপত্যকায় দিন রাতের বিভেদ ভুলে
প্রলম্বিত সুরে আরো দীর্ঘ করে সকল আলস্য
তখন চেতনারা শান্ত শিশুর মত চুপচাপ জেগে চোখ মেলে দেখে যায়
অসামঞ্জস্যে ভরপুর আমাদের বিদগ্ধ জগত।

সেপাই লাগাম ঝাকিয়ে ছুটছে ছুটিহীন সবুজের বুক চিরে অসময়ে,
আর সময় অপেক্ষায় দ্বিধাহীন কোনো মানুষের;
যে নিঃশংকোচে এগিয়ে যায় ভয়ার্ত আগামীর বুকে পদাঘাত এঁকে
এক আটলান্টিকের সাহসের বসবাস সেখানে।

১০.



লাল সবুজ

তুমি মিশেছ মোর দেহের সনে,
তুমি মিলেছ মোর প্রাণে মনে,
তোমার ওই শ্যামলবরন কোমল মূর্তি মর্মে গাঁথা ।।
ওগো মা, তোমার কোলে জনম আমার, মরণ তোমার বুকে ।
তোমার ’পরে খেলা আমার দুঃখে সুখে ।
তুমি অন্ন মুখে তুলে দিলে,
তুমি শীতল জলে জুড়াইলে,
তুমি যে সকল-সহা সকল-বহা মাতার মাতা ।।
ও মা, অনেক তোমার খেয়েছি গো, অনেক নিয়েছি মা–
তবু জানি নে-যে কী বা তোমায় দিয়েছি মা !
আমার জনম গেল বৃথা কাজে,
আমি কাটানু দিন ঘরের মাঝে–
তুমি বৃথা আমায় শক্তি দিলে শক্তিদাতা।।

--------------- অযুত শুভাশিষ সবাইকে।
আরেকটু পড়ি, কি বলেন.......