রবিবার, ২৮ মার্চ, ২০১০

অতৃপ্ত প্রতিশোধ-৫ (শেষ পর্ব)

অতৃপ্ত প্রতিশোধ-১
অতৃপ্ত প্রতিশোধ-২
অতৃপ্ত প্রতিশোধ-৩
অতৃপ্ত প্রতিশোধ-৪
অতৃপ্ত প্রতিশোধ-৫
৫.
রতনীকান্ত একটি থলে থেকে গ্লাসভর্তি খেজুরের রস নিয়ে তাপস বাবুর দিকে এগিয়ে দিল। তাপস বাবু সেটা হাতে নিয়ে বললেন, “বাড়িটা অভিশপ্ত হওয়ার ঘটনাটা একটু খুলে বলবে?”
রতীকান্ত গলা খাকাড়ি দিয়ে বলা শুরু করল। “আজ থেকে প্রায় দেড়শ বছর আগে এই বাড়িটা ছিল এলাকার প্রভাবশালী রায় পরিবারের। নাম রায়বাড়ি। তথাকথিত রাজা না হলেও এই এলাকার শাসনভার তাদের দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত হত। প্রচুর প্রভাব-প্রতিপত্তি ছিল তাদের। কথা বলার ফাকেঁ স্যাঁতস্যাঁতে মেঝের দিকে তাকাতেই দেখি হলুদ ধোরা সাপটা পাশের ঘর থেকে বের হয়ে কিলবিল করে আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে ধীরে ধীরে। তখন রতীকান্ত হাত দিয়ে বিশেষ কায়দায় ইশারা করতেই সাপটা উল্টাদিকে গলে বেরিয়ে গেল। বুঝা গেল সাপটাকে পোষ মানিয়ে ফেলা হয়েছে।


রতীকান্ত আবার বলতে লাগল, তারা ছিল দুই ভাই, প্রতাপ রায় আর প্রদীপ রায়। দুই ভাইয়ের মধ্যে সবসময় বিরোধ লেগেই থাকত। বয়োজৌষ্টতার হিসেবে প্রতাপ রায়ের উপর এলাকার শাসনভার বর্তায়। যা স্বার্থলোভী ছোটভাই প্রদীপ রায় কখনই মেনে নিতে পারেনি। সে অযোচিতভাবে ক্ষমতার মসনদে আরোহন করতে চেয়েছিল সবসময়। একসময় রায়বাড়ির ঘর আলো করে আসল প্রতাপ রায়ের প্রথম পুত্রসন্তান সৌরভ রায়। রায় পরিবারে আনন্দের বন্যা বয়ে যেতে লাগল তখন। তার দু’বছর পর এলাকায় কোন এক কারনে ভয়াবহ মহামারী দেখা দিল। ঘরে ঘরে অজানা এক রোগে মানুষ মারা যেতে লাগল। বাতাসের বেগে ছড়িয়ে যেতে লাগল এই মহামারী রোগটি। এক সাধুবাবা ওই বিশেষ সময়কে অভিশপ্ত হিসেবে ছড়াতে লাগলেন তখন। কিছুদিনের মধ্যে প্রতাপের প্রথম স্ত্রী আবারও সন্তানসম্ভবা। একদিন রাতে প্রতাপ রায় স্বপ্নে দেখলেন যে একটি কুয়ো কেটে কিছুক্ষনের জন্য তার আগত নবজাতককে কুয়োর নিচে শুয়ে রাখলে গ্রামের বর্তমান অভিশাপটি কেটে যাবে। গ্রামের স্বার্থের কথা বিবেচনা করে স্ত্রীর অনেক আহাজারী উপেক্ষা করলেন প্রতাপ রায়। ফুটফুটে নবজাতক হওয়ার পরের দিনই কুয়ো কাটা হল কালীমন্দিরের ঝোপের পাশে। কুয়ো কাটার পর কোন এক রহস্যজনক কারনে পানি উঠছিল না কুয়োতে। তারপর নিষ্পাপ নবজাতককে নামানোর কিছুক্ষন পরই প্রবল বেগে পানি এসে উপছে পড়ল কুয়োটি। কুয়োর পানি এতই প্রচন্ড বেগে ধেয়ে আসতেছিল যে কোনভাবেই শিশুটিকে আর বাঁচানো গেল না। পরে শিশুটির নিথর দেহটি পানিতে ভেসে উঠল কুয়োর উপর। পরে স্বপ্নের আশিষটাই সত্যি হতে লাগল গ্রামে। গ্রামের মহামারীটি কালিমার কৃপায় দুর হতে লাগল ধীরে ধীরে। আর নতুন কোন মরার খবর আসল না। আবার ঘরে ঘরে মানুষ সুখে দিন কাটাতে লাগল। শুধু রায় পরিবারে রয়ে গেল তাদের সন্তান হারানোর অসহ্য যাতনা আর শুন্যতার দীর্ঘশ্বাস।

গ্রামের স্বার্থের কথা বিবেচনা করে প্রতাপ রায়ের সন্তানবিসর্জন গ্রামের মানুষদের কাছে প্রতাপ রায়ের গ্রহনযোগ্যতা আরো বাড়িয়ে দিল। কিন্তু সেই বাড়তি গ্রহনযোগ্যতা ছোট ভাই প্রদীপ রায়ের কাছে প্রবল ঈর্ষার কারন হয়ে দাড়াল। প্রদীপ রায় তখন ছলে বলে তার অবৈধ জিঘাংসা হাসিলের জন্য উঠে পড়ে লাগল। সে সুযোগ খুজতে লাগল যে কোন উপায়ে বড় ভাইকে ক্ষমতার সমনদ থেকে নামিয়ে দেওয়ার। দু:খজনকভাবে সুযোগও আসতে লাগল ধীরে ধীরে। একদিন প্রতাপের স্ত্রী কুয়োর ধারে বসে সৌরভকে স্নান করাচ্ছিলেন। ওত পেতে থাকা প্রদীপ বড় একটা শক্ত ঢিল ছুড়ে মারল প্রতাপের স্ত্রীর মাথার উপর। প্রচন্ড রক্তক্ষরন হতে লাগল সাথে সাথে। প্রদীপ কালক্ষেপন না করে প্রতাপের স্ত্রীর নিস্তেজ দেহটি কুয়োতে ফেলে দিয়ে রটালো কুয়োতে পরে মারা গিয়েছে প্রতাপের বৌ। সাত বছরের সৌরভ ফ্যালফ্যাল তাকিয়ে দেখল সব। তারপর থেকে সৌরভের দেখাশোনার ভার বৃদ্ধ কেয়াটেকার মতিবাবুই নিল। সফল হয়ে প্রদীপ একই উপায়ে প্রতাপকে হত্যা করার পরিকল্পনা করতে লাগল তারপর। আর এদিকে বৌ-সন্তানকে হারিয়ে পাগলের মত হয়ে গিয়েছিল প্রতাপ রায়। অপ্রকৃতস্তের মত প্রলাপ বকত সবসময়। সেই অসহায় সানুষকেও বাচঁতে দিল না ছোটভাই নরলোভী প্রদীপ। একদিন সুযোগ বুঝে কুয়োয় ধারে কর্মরত প্রতাপকে পেছনদিক থেকে ঢিল মেরে কুযোতে ফেলে দিল প্রদীপ। আর মুহুর্তেই সে পেয়ে গেল রায় বংশের সব ক্ষমতা। সেই ক্ষমতা পেয়েও সে থেমে ছিল না। রায় বংশের ভবিষ্যৎ মসনদ দাবীদার প্রতাপের বড় ছেলে সৌরভকেও মেরে ফেলার জন্য উঠেপড়ে লাগল প্রদীপ রায়। পরিস্থিতি আন্দাজ করতে পেরে সৌরভের কেয়ারটেকার মতিবাবু সৌরভকে নিয়ে পালিয়ে গেল গ্রামের পাশের একটি নির্জন অরন্যে। সেখানে তিল তিল করে সৌরভকে বড় করতে লাগল মতিবাবু। কিন্তু সেই গহীন অরণ্যেও সৌবল রেহাই পেল না হিংস্র প্রদীপের দুষ্ট নখর থেকে। বছর কয়েক পর প্রদীপ ঠিকই খুজে বের করে নিল সৌরভকে। তাকেও নৃশংসভাবে হত্যা করে কুয়োর পানিতে ফেলে দিল সে।
তারপর কয়েকবছর প্রদীপ রায় গ্রামের নিরীহ মানুষদের উপর শাসনের নামে নীপিড়ন, অমানুষিক অত্যাচার চালাতে লাগল। এভাবেই এক সময় রায়বাড়ি অভিশপ্ত বাড়ি হয়ে উঠল সবার কাছে। একসময় গ্রামের মানুষ ধৈর্য্যহারা হয়ে ক্ষেপে উঠল। এক হয়ে লড়াই করে গ্রামছাড়া করল রায় পরিবারের সবাইকে। তারপরে আমার দাদা বৃদ্ধ কেয়ারটেকার মতিবাবুকে বাড়ির দেখাশোনার দায়িত্ব দিল তারা। এভাবেই সমাপ্তি হল এই রায় বাড়ির ঘৃন্য ইতিহাস একসময়।
লোকটি থামলে হতভম্বের মত কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকলেন তাপস বাবু এই পুরো বাড়িটির দিকে। এই বাড়িতেই দেড়শ বছর আগে এতগুলো খুন হয়ে গেল। তিনি কোনভাবেই বিশ্বাস করতে পারছেন না। ভাবতেই গায়ের লোম খাড়া হয়ে যাচ্ছিল তাপস বাবুর।

খেজুরের রসে শেষ চুমুক দিয়ে তাপস বাবু রতীকান্তকে জিজ্ঞেস করলেন্, “শুভ্রদের বাড়িটা কোনদিকে? সে একটু যেতে চায় তার বাড়ি”।
“কোন শুভ্র? শুভ্র রায়?” পাল্টা প্রশ্ন করল রতীকান্ত।
তাপস বাবু বললেন, “হুমম”।
রতীকান্ত বলল, “সেইতো সৌরভ রায়, প্রতাপ রায়ের বড় ছেলে যাকে প্রদীপ রায় সবার শেষে নৃশংসভাবে হত্যা করল। গায়ের রং ধবধবে ফর্সা ছিল বলে দাদীমা “শুভ্র” নাম রেখেছিল।”
হয়তো প্রশ্ন ঠিকমতো বুঝতে পারে নাই ভেবে তাপস বাবু আবার কিছু বলতে যাচ্ছিলেন, এমন সময় রতীকান্ত বলতে লাগল, “ছেলেটার বাম গালে ছিল একটি আকাঁবাকাঁ কাটা দাগ। ছোটবেলা বড় একটা ধার কাঠের মূর্তিতে উপর পড়ে গিয়ে কেটে গিয়েছিল এর কচি গাল। এই কাটা দাগে অনিন্দ্যসুন্দর সৌরভকে আরও সুন্দর লাগত বলে সবাই বলাবলি করত। মারা যাওয়ার আগমুহুর্ত পর্যন্ত সে সবসময় একটি মাঝারি কালো পাথর নিয়ে ঘুরে বেড়াত। একমাত্র সেই তার পিতামাতার হত্যার নীরব সাক্ষী ছিল। তাদের দুজনকেই পাথরের ঢিল ছুড়ে মারা হয়েছিল। তাই হয়তো সে পাথর সাথে রাখত প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য।”

মুহুর্তে তাপস বাবুর গা কাপঁতে লাগল। এত বড় বিস্ময়সাগরে বোধ হয় আর পরেননি কখনও তাপস বাবু। তাহলে কি শুভ্র……? গলার স্বর আটকে যেতে লাগল তাপস বাবুর। কেয়ারটেকার আরও কি কি বলছিল, কিছুই আর কানে ঢুকছে না তাপস বাবুর। একটি অদ্ভুত ঘোরের মধ্যে ছিলেন তিনি। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছিল তখন। রতীকান্ত নিজেই বাড়ি ফেরার জন্য অস্থির হয়ে উঠছিল। ফেরার আগে অভিশপ্ত বাড়িটির দিকে আবার তাকিয়ে থাকলেন কিছুক্ষন। অন্যমনস্ক হয়ে গেলেন কিছুক্ষনের জন্য। বাড়ির পেছনদিকটার ঘরে কালো ধোরাটিকে কিলবিলিয়ে আবার বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করতে দেখলেন।
রতীকান্ত পরে এই সন্ধ্যায় নিজে তাপস বাবুকে বাড়ি পৌছে দিলেন আর যাবার সময় একবার তার বাড়িতে পদধুলি দেওয়ার জন্য নেমন্তনও দিয়ে গেলেন।

তাপস বাবু বাসায় এসেও একটা ঘোরের মধ্যে থাকলেন। মাথায় শুধূ শুভ্রর বলা কথাগুলো একে একে ঘোরপাক খাচ্ছে। আজ পূর্ণিমা। আজ শুভ্রর আসার কথা। তিনি টেবিলের ধারে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে লাগলেন শুভ্রর জন্য। জানালা দিয়ে প্রবল বাতাস আসছে। শ্রাবন মাস। বৃষ্টি-বাদলের মাস। তবু এবার ঝড়-ঝাপ্টা একটু বেশিই অনুভুত মনে হচ্ছে। বাতাসের প্রবল ঝাপটায় জানালার ডালা বার বার ধাক্কা খাচ্ছে পাশের দেয়ালটিতে। শুভ্র আসতে পারে ভেবে জানালাও বন্ধ করছেন না তাপস বাবু। তাপস বাবুর মনে পড়ল শুভ্র আজ তার জন্য একটি উপহার নিয়ে আসবে বলেছিল। আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখলেন বড় থালার মত বড় চাদঁ উঠেছে আজ। চাদেঁর ম্লান আলোয় চারিদিকে কেমন গা ছমছম করা ভুতুরে পরিবেশ। অনেক রাত হয়ে গেল। না, শুভ্র আসেনি। মনে পড়ল শুভ্রর একটি কথা: “আমি কারো অতি আগ্রহে দেখা দেই না”। তাহলে কি সে আর আসবে না আর। এইরকম চিন্তা করতে করতেই তাপস বাবু একসময় গভীর ঘুমের রাজ্যে তলিয়ে গেলেন।

ঘুম ভাঙ্গল পরিমলের প্রবল দরজা ধাক্কানিতে। বিছানা থেকে উঠে দরজা খুলে দিলেন তাপস বাবু। দরজা খুলামাত্রই পরিমল তাপস বাবুর পায়ে লুটিয়ে পড়ল। বাবু, আপনি আমার বড় উপকার করলেন, বাবু। চেয়ারম্যন সাব কাল সন্ধেবেলা আমাকে ডেকে নিয়ে আমার বন্ধকী বাড়িটি ফিরিয়ে দিয়েছেন গো, বাবু। আপনি আমার বড় উপকার করলেন গো, বাবু।

অনেক কষ্টে বিগলিত তাপস বাবু পরিমলের হাতখানা ছাড়িয়ে আনলেন নিজের পা-যুগল থেকে। সকালের প্রাত্যাহিক কাজ সেরে জানালার ধারে টেবিলের দিকে তাকাতেই তাপস বাবুর গা মোচর দিয়ে উঠল। গায়ের রক্ত হিম হয়ে গেল। টেবিলের উপর একটি মাঝারি কালো পাথর রাখা। তাহলে কি কাল গভীর রাতে এসেছিল শুভ্র। এটাই কি তার সেই উপহার? এটাই কি সে মারা যাওয়ার আগ মুহুর্ত পর্যন্ত সাথে নিয়ে ঘুরে বেড়াত তার পিতা-মাতার হত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য। তাপস বাবুর মাথা ঝিমঝিম করতে লাগল। তাহলে কি শুভ্র তার অতৃপ্ত প্রতিশোধের ভার তার উপর দিতে চাচ্ছে নিজে ব্যর্থ হয়ে? তার অতৃপ্ত আত্মা কি তার নিজস্ব প্রতিশোধের জ্বালা আরেকজনের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে? যাতে করে সেই প্রতিশোধের জ্বালা জিইয়ে রাখা যায় যুগ থেকে যুগান্তরে। কিন্তু, এ কি করে সম্ভব? কিছুই চিন্তা করতে পারছেন না তাপস বাবু। সবকিছু খুব এলোমেলো লাগছে তাপস বাবুর কাছে। কিছুই গুছিয়ে ভাবতে পারছেন না তাপস বাবু।

তারপর অনেক রাত অবধি জেগে থাকলেন শুভ্রর অপেক্ষায়। কিন্তু আর কোনদিন আসেনি শুভ্র। হয়তো আর কখনও আসবেও না।

ফিরে যাবার সময় চলে এসেছে তাপস বাবুর। আজই চলে যাবেন। পরিমল অনেক পিঠাপুলি ভরা একটি থলে ধরিয়ে দিলেন তাপস বাবুর হাতে। সেগুলো নিয়েই বের হলেন তাপস বাবু্। যাবার আগে কুয়োতে শুভ্রর দেওয়া পাথরটি ফেলে দিয়ে গেলেন। এবং কুয়োর গভীর টলটলে পানির দিকে আনমনে তাকিয়ে থাকলেন অনেকক্ষন। মনে মনে বললেন, শুভ্র, ক্ষমা কর, পারলাম না তোমার অতৃপ্ত আত্মাকে তৃপ্ত করতে, আমি অপারগ। সেটা যে আমার ক্ষমতার বাইরে।
আসার আগে শেষবারের মত আবারও তাকিয়ে দেখলেন বাড়িটা কিছুক্ষনের জন্য। এখনও কি সুন্দর ঠাঁয় দাড়িয়ে আছে পরিত্যক্ত অভিশপ্ত এই বাড়িটা। হয়তো বয়সের চাপাকলে আরও কয়েক বছর পর সবই নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। কোন অবশিষ্টই হয়তো থাকবে না। শুধূ পড়ে থাকবে কুয়োর টলটলে পানির মধ্যে মিশানো একটি অতৃপ্ত আত্মার অতৃপ্ত প্রতিশোধের প্রবল তৃষ্ঞা।

পরিশিষ্ট: এর একবছর পর তাপস বাবু শুভ্রকে নিয়ে একটি উপন্যাস লিখলেন। নাম দিলেন: “প্রতিশোধের পাথর”। তাপস বাবু জানতেন, শুভ্রর চাপিয়ে দেওয়া দয়িত্ববার বহন করার ক্ষমতা হয়তো তার নাই। তাই নিজেকে অপরাধীও ভাবতে লাগছিলেন তাপস বাবু। কিন্তু এটাও জানতেন শুভ্র তার অতৃপ্ত প্রতিশোধকে ছড়িয়ে দিতে চেয়েছিল সামর্থ্যবানদের উপর। তাপস বাবু সামর্থ্যহীন হয়ে নিজে ব্যর্থ হলেও গল্পের মাধ্যমে অন্যদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষীন চেষ্টাতো করলেন। এতেও যদি কিছুটা তৃপ্তি পাওয়া যায় একটি অতৃপ্ত আত্মার অর্পিত দায়িত্ব পালনের।

(শেষ)
আরেকটু পড়ি, কি বলেন.......

অতৃপ্ত প্রতিশোধ-৪

অতৃপ্ত প্রতিশোধ-১
অতৃপ্ত প্রতিশোধ-২
অতৃপ্ত প্রতিশোধ-৩
অতৃপ্ত প্রতিশোধ-৪
অতৃপ্ত প্রতিশোধ-৫
৪.
আজ সকাল থেকেই বৃষ্টি হচ্ছে। যেই-সেই বৃষ্টি না, উথাল-পাতাল বৃষ্টি। একবার দক্ষিন পাশ থেকে ঝাপটা আসছে তো একবার উত্তর দিক থেকে। সাথে পাগলা-টাইপ বাতাস। এমন বৃষ্টি দেখেই বোধহয় কবিগুরু গেয়ে উঠেছিলেন, “পাগলা হাওয়া, বাদল দিনে….”। বড় মাপের কবি-সাহিত্যিকদের সবকিছুতেই আনন্দ যা সাধারনের মধ্যে থাকে না। আর সকল আনন্দই তারা অমর করে রেখে যাওয়ার চেষ্টা করেন তাদের শিল্পের মধ্য দিয়ে। সাধারনরা যা তৈরি করতে না পারলেও উপভোগ করতে পারেন। আর উপভোগের সফল গ্রহনযোগ্যতার মধ্য দিয়েই শিল্পেরসৃষ্টির মুল সার্থকথা। ঘুম থেকে উঠে এখনও বিছানায় শুয়ে আছেন তাপস বাবু। জানালা দিয়ে বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে আছেন একমনে। আকাশ ঘন কালো মেঘে ঢাকা। জানালার ধারেই একটা বড় নারকেল গাছ। গাছের পাতাগুলো ঝড়ের ঝাপটায় লেপটে গেছে। গাছের ফাকঁ দিয়ে গ্রামের সরু মেঠো পথটি দেখা যাচ্ছে। শুভ্র বলেছিল এই রাস্তা দিয়েই তাদের বাড়ি যেতে হয়। তাপস বাবু ঠিক করেছিলেন আজ ওর বাড়ি যাবেন একবার। কিন্তু আকাশের এই রৌদ্রমূর্তিতে যাওয়া ঠিক হবে বলে মনে হয় না। পরে তাপস বাবু সিদ্ধান্ত বাতিল করলেন আজকের জন্য।


পরদিন তাপস বাবু অনেক বেলা করে ঘর খেকে বের হলেন। কাল অনেক ঝড়ের পর আজ আকাশ ঝকঝকে। প্রকৃতির শক্তি ক্ষয়ের পর আজ থেকে আবার নতুন করে শক্তি অর্জনের চেষ্টা। মেঠো পথ, কাদাময়। ঝড়ের কারনে পিচ্ছিলও। হাটতে বেজায় কষ্টই হচ্ছে। শুধু শুভ্রর বাড়ি না আজ পুরো গ্রামটাও ঘুরে ঘুরে দেখবেন বলে ভেবে রেখেছেন। শুভ্রর দেওয়া কথামতই এগুতে লাগলেন ধীরে ধীরে তাপস বাবু। একটি যুবককে এই পথ ধরে আসতে দেখে জিজ্ঞেস করলেন পথটি সম্পর্কে। লোকটি হা করে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকল। তারপর জবাব না দিয়েই চলে গেল। কি ভেবেছে কে জানে! পরে একজন বয়োবৃদ্ধকে আসতে দেখে আরেকবার জিজ্ঞেস করলেন তাপস বাবু। প্রশ্ন শুনে লোকটির চেহারা পাল্টে গেল অনেকটা। কথা না বলে হাত ইশারা করে দেখিয়ে দিয়ে চুপচাপ আবার তার পথে হাটা শুরু করল। তাপস বাবু সবার এই নীরবতার কোন কারন খুজে পেলেন না। উটকো আগন্তুক দেখে হয়তো অস্বস্তি লাগছে তাদের কাছে। যতই এগুচ্ছেন ততই জঙ্লামত জায়গার ভেতর দিয়ে ঢুকছেন। আরও খানিকটা ঢুকার পর চারপাশে আর কোন লোকালয় দেখতে পেলেন না তাপস বাবু। ফলে আর বুঝতে বাকি রইল না যে তিনি পথ হারিয়েছেন। এমন কাউকে আর পাচ্ছেনও না যাকে অনুরোধ করবেন দেখিয়ে দেওয়ার জন্য। তবুও সামনে এগুতে লাগলেন্ হাটতে হাটতে একসময় অজস্র ঝোপ-ঝাড়ে ঘেরা একটা গহীন অরন্যে চলে এলেন। সামনে প্রচুর লতা-পাতায় ঘেরা একটি বহু পুরনো, পরিত্যক্ত রাজবাড়ির ধ্বংসাবেশ দেখা যাচ্ছে। বাড়িটা কংক্রিটের পাকা। পেছনের কিছু অংশ চালা দিয়ে ঘেরা। ভেতরে কেই থাকে বলে বলে মনে হচ্ছে না। বাড়িটা প্রাসাদতুল্য। পুরাকীর্তির অঢেল ছাপ পাওয়া যাচ্ছে এর প্রতিটা দেওয়ালে। অনেক পরিশ্রমসাধ্য, শৈল্পিক কারুকার্যের নিদর্শন রয়েছে সকল ঘরের দেওয়ালে। বুঝা যাচ্ছে, এ বাড়ির পূর্বপুরুষেরা রাজকীয় জীবন-যাপন করতেন। বাড়ির চারদিকে কেমন গা ছমছম শুনশান নীরবতা। এলাকাটা আসলেই একেবারেই জনমানবশুন্য। বাড়ির মধ্যঘরটা জলসা ঘরের মত। চারপাশটা দুতলার বারান্দা ঘেরা। বারান্দার রেলিংগুলো বেশিরভাগই ভেংঙ্গে পড়েছে কালের ভারে। জলসা ঘরের বামপাশের দেয়ালজুড়ে বড় একটি পেইন্টিং আকাঁ। অনেক জায়গার রং শক্ত হয়ে আস্তরের মত ঝুলে আছে। পেইন্টিংয়ের চারপাশটা শ্যাঁওলা ধরে অস্পস্ট হয়ে গিয়েছে বলেই হয়তো এখনও কারো সংগ্রহদৃষ্টি আকর্ষন করতে সক্ষম হচ্ছে না। ছবিটির উপজিব্য হল দুটি দেবশিশু একটি সৃর্যদেবতার দিকে একমনে তাকিয়ে আছে। একটি দেবশিশুর বাম গালে একটি গাঢ় কালো তিল। তার এক হাতে একটি ছোট পাথর। যে পাথরটি সে সূর্যদেবতার হাতে দেওয়ার ভঙ্গি নিয়ে আছে। ছবিটির বেশিরভাগ অংশই খসে পড়েছে।
চারদিকে অজস্র ধুলির আস্তরন আর মাকড়শার জাল দেখে বুজাই যাচ্ছে এদিকটায় কোন জনমানবের আনাগোনা নেই।

জলসা ঘরটা পেরিয়ে পাশের ছোট ঘরটায় উকি দিতেই গা শিরশিরিয়ে উঠল তাপস বাবুর। একটা বড় হলুদ ধোরা সাপ তার থলথলে গা পেঁচিয়ে শুয়ে আছে ঘরের স্যাঁতস্যাঁতে একটা কোনায়। তাপস বাবু ভয়ে লাফিয়ে ঘরটি থেকে বের হলেন। ঘর থেকে বের হয়ে কিছুদুর এগুতেই একটি কালীমূর্তির ঘর দেখতে পেলেন। তার ধারটাতেই একটি পরিত্যক্ত বড় গহীন কুয়ো। কুয়োর কাছে গিয়ে নিচ দিয়ে তাকানোর চেষ্টা করলেন তাপস বাবু। পানি অনেক গভীরে। ভেতরে সুর্য়ের আলোও ঢুকছে না ঠিকমতো। কুয়োর কংক্রিটের অংশগুলো ঝোপ-ঝাড়ে ঠেসা। কুয়ো থেকে পেছ ফিরে তাকাতেই তাপস বাবু হঠাৎ দেখলেন একটি বৃদ্ধলোক তার দিকে শ্যোন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আচমকা দেখে তাপস বাবুর হৃদপিন্ড কেঁপে উঠল। লোকটির চোখ-মুখ কঠিন, গায়ে ময়লা কাপড়, হাতে একটি পুটলি।
কথা বলে বুঝা গেল লোকটি এই পরিত্যক্ত বাড়ির কেয়ারটেকার। কঠিন দৃষ্টি নিয়ে তাপস বাবুকে জিজ্ঞেস করল, “এখানে কি জন্য এসেছেন?”
প্রশ্নের উত্তরের অপেক্ষা না করে লোকটি ইশারা করে তার সাথে হাটতে বলল। পরে সে পথ দেখিয়ে আবার তাপস বাবুকে জলসা ঘরটায় নিয়ে গেল।
“আপনি কি পুরাতত্নবিদ টাইপের কেউ?”-লোকটি জিজ্ঞেস করল।
“না। টুকটাক লেখালেখি করি। এখানে গ্রাম দেখতে দেখতেই ঢুকে পড়েছি”।
লোকটি তাচ্ছিল্যের স্বরে বলল-“আর অমনি অভিশপ্ত বাড়ি চষে বেড়াতে লাগলেন?”
রহস্য আছে বুঝতে পেরে তাপস বাবু মনোযোগী শ্রোতা হয়ে কেযারটেকারকে খুলে বলার জন্য পরোক্ষভাবে উৎসাহ দিয়ে যেতে লাগলেন।
“খেজুরের রস খাবেন?:-লোকটি জানতে চাইল।
“এখানে খেজুরের রস পাওয়া যায়?”-তাপস বাবু জিজ্ঞেস করলেন।
“আমি থাকি এখান থেকে দশ ক্রোশ দুরে একটি কুঠিঘরে। মাঝে মাঝে এখানে এসে বাড়িটা একটু দেখে যাই। হাটার ক্লান্তি দুর করার জন্য খেজুরের রস সাথে করে নিয়ে আসি সবসময়। খেজুরের রস ক্লান্তি দুর করার জন্য ভাল মহৌষোধ। আজ আসার কথা ছিল না। কিন্তু পথে একজন আপনি এদিকটায় আসছেন বলায় আমি আসতে বাধ্য হলাম এখানে। আমার আসল নাম রতীকান্ত। আমার দাদা এ বাড়ির কেয়ারটেকার ছিলেন। বংশপরস্পরায় এখন আমিও”।

(চলবে)
আরেকটু পড়ি, কি বলেন.......

অতৃপ্ত প্রতিশোধ-৩

অতৃপ্ত প্রতিশোধ-১
অতৃপ্ত প্রতিশোধ-২
অতৃপ্ত প্রতিশোধ-৩
অতৃপ্ত প্রতিশোধ-৪
অতৃপ্ত প্রতিশোধ-৫
৩.
রাতের খাবার শেষ করে টেবিলে বসে কেন জানি মনে হল আজ রাতে ছেলেটা হয়তো আসবে। তাই জানালা দিয়ে তাকিয়ে তাকলেন কিছুক্ষন তাপস বাবু। কিন্তু না, সে আসেনি। বিরস মুখে টেবিল ছেড়ে বিছানায় দিকে যাওয়ার সময় জানালার কপাটের শব্দ শুনে ফিরে তাকাতেই দেখলেন, শুভ্র ছেলেটা দাড়িয়ে আছে জানালার রড শক্ত করে ধরে। ছেলেটা কিছুক্ষন একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকার পর কথা বলা শুরু করল।
“আপনি যে গল্পটা মনে মনে সাজাচ্ছেন প্যারানরমাল বিবেচনা করে, সেটা কোনভাবেই এই ক্যাটাগরিতে ফেলা যায় না।”


তাপস বাবু খানিক বিস্মিত হয়ে তার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে নিজেকে সামলে নেওয়ার চেষ্টা করলেন। মনে মনে এর পেছনে যুক্তিসঙ্গত কারন বের করতে দ্রুত চিন্তা করতে লাগলেন। তিনি গল্পের বিষয়টি নিয়ে কাল বিকেলে গ্রামের এক স্কুল শিক্ষক হানিফ মিয়ার সাথে অনেকক্ষন কথাচ্ছলে বলেছিলেন। তার এই শিক্ষকের ছাত্র হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু এত ডিটেল নিয়ে ত আলাপ করেননি ওই শিক্ষকের সাথে। তাহলে কি সে তীব্র দৃষ্টিতে তাকিয়ে কারো অন্যের মস্তিস্কে ঢুকার ক্ষমতা রাখে। এ ধরনের অনেক উদাহরন আছে শুনেছি। আমেরিকার পেনসিলভেনিয়ার ডেভিড শিফিল্ড নামের এক লোক এভাবে কয়েকজন ব্যক্তির মস্তিস্কে ঢুকে তাদের চিন্তার হুবুহু বর্ননা করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল একবার। তাকে নিয়ে অনেক গবেষনাও করা হয়েছিল। গবেষকরা টেলিপ্যাথির ব্যাখ্যা দেখানো ছাড়া আর কোন বিশ্বাসযোগ্য কারন দেখাতে পারেন নি অবশ্য।
তাপস বাবু স্বাভাবিক ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করলেন, “কিভাবে বুঝলে প্যারানরমাল বলা উচিত না?”
সে জানালার রড আরো শক্ত করে ধরে বলতে লাগল, “কারন, সেইসব ঘটনাগুলোকে ব্যাখ্যতীত বলা হয়, যেগুলো বর্তমান সময় তার রহস্যের নির্ভরযোগ্য কোন সমাধান দেখানোর ক্ষমতা রাখে না। যা অবশ্যম্ভাবীভাবে ভবিষ্যৎ কোন সময় ঠিকই বের করে নিবে।, তাই এখানে সময়ের আপেক্ষিকতাই এধরনের তুলনামূলক ধারনার পরিবর্তন ঘটানোর নিমিত্ত। আর কোন চলতি গবেষনা চলাকালীন সময় পর্যন্ত তাকে অলৌকিক আখ্যা দেওয়া স্বভাবতই অনুচিত বিবেচনা হওয়া উচিত”।

ছেলেটার গভীর চিন্তাশক্তি আর প্রখর কথাশৈলী তাপস বাবুকে প্রবল বিস্মিত আর কৌতহলী করে তুলল। ছেলেটার বাহ্যিক বয়সের সাথে তার চিন্তাশক্তি কোনভাবেই যায় না। তাপস বাবু অনেক চেষ্টা করেও এর পেছনে কোন যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যা দাড় করাতে পারলেন না।

তাপস বাবু প্রবল আগ্রহভরে জিজ্ঞেস করলেন, “কি নাম তোমার?”
“শুভ্র”।
“তাপস বাবু বললেন, কাল বৃষ্টি ছিল, তোমার শরীর ভেজা ছিল, আজ তো বৃষ্টি নেই, তারপরও তুমি কাকভেজা কেন?”
“কুয়োতে স্নান করে এসেছি, তাই। “
“প্রতিদিনই কি তুমি এমন সময় কুয়োতে স্নান করতে যাও?”
“না, প্রতিদিন না, পূর্ণিমার শেষ তিনরাত যাই। তখন কুয়োতে জোয়ারের জন্য পানি ফুলে ওঠে। পানি হাতের নাগালে পাওয়া যায়”।
“শুধু পূর্ণিমার তিন রাত কেন?”
“ওই তিনরাতই শুধু হাতের পানি নাগালের মধ্যে থাকে। এখন যাই আমি”। বলেই সে জবাবের অপেক্ষা না করে নিমিষে হাওয়া হয়ে গেল। তাপস বাবু কয়েকবার ডাকলেন তাকে। কিন্তু কোন লাভ হল না। তাপস বাবু ক্রমশ কৌতুহলী হয়ে উঠছেন ছেলেটি নিয়ে।

পরদিন দুপুরে চেয়ারম্যান খোজ-খবর নিতে আসলেন হাতে দুই জোড়া ডাব নিয়ে। সাগরেদের হাতে একটি খাসি ধরা।
“বাবু, সময়ের অভাবে খাতির-যত্ন করতে পারছি না ঠিকমতো। কই রে, পরিমল, ডাবগুলো ধর, আর খাসিটা জবাই দে। আজ আমার মনটা বেজায় খুশ, বাবু। আমার প্রথম বউটা পোয়াতি, আজই ডাক্তার জানাল। আপনার আর কিছু কি লাগবে বাবু। একটা কিছু চান। আপনি অনেক বড় মাপের মানুষ, বাবু। আমার কাছে আপনার চাওয়ার হয়তো কিছু থাকবে না। তারপরও অধমের খুব ইচ্ছে আপনাকে একটা কিছু দেওয়ার”।
তাপস বাবু সুযোগটি কাজে লাগালেন। এটা অত্যন্ত খুশির খবর। হ্যাঁ, আমার কিছু চাওয়ার আছে। দিবেন আশা করি।
“বলেন বাবু, সাধ্যের মধ্যে থাকলে অবশ্যিই দিব”-চেয়ারম্যান বললেন।
আপনি পরিমলের বন্ধকী জমিটি তাকে আবার ফিরিয়ে দিবেন, আপনার পাওনা তো সে ইতিমধ্যে মিটিয়ে দিয়েছে। তার পাওনা-টাও আপনার মিটিয়ে দিন।
চেয়ারম্যান কথাগুলো শুনে থতমত খেয়ে এদিক-ওদিক তাকালেন। কিছুক্ষন অন্যমনস্কভাবে কিছু ভেবে ডাবগুলো নামাতে নামাতে বললেন, “এসব কি বলছেন বাবু, এর বন্ধকী জমি তো আমি এমনিতেই ফিরিয়ে দিতাম। আমি বাবু, কালই আমার নিজের গাড়ি দিয়ে তাকে তার ভিঠেতে উঠিয়ে দিয়ে আসব। কই গেলি রে, পরিমল, “ডাবগুলো ধর”।

আজ রাতে শুভ্র আবার আসল। তার চোখ টকটকে লাল। তাপস বাবু ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “কি হয়েছে?” সে বলল, “আমার কাকাকে খুজছি, তার উপর অনেক ক্ষোভ”
“কেন? তোমাকে বকেছেন বুঝি?”-তাপস বাবু বললেন।
“হুমম। আপনাকে একটি জিনিস দিতে চাই আমি, নেবেন?”
“কি জিনিস?”
“আছে, আমি নিয়ে আসব একদিন”।
বলেই সে নিমিষে মিলিয়ে গেল।
তার পর আরও কয়েকদিন এসেছিল শুভ্র। অনেক কথা হত। বাড়িতে যাবার জন্য বলে দিল। তাপস বাবুর নিজেরও খুব আগ্রহ একদিন ওর বাড়িতে যাওয়ার। তাপস বাবু ঠিক করে নিলেন, গল্প লেখাটা গুছিয়ে নিলেই যাবেন একদিন। গ্রামটাও এখনও দেখা হয়নি ভাল করে।

(চলবে)
আরেকটু পড়ি, কি বলেন.......

শনিবার, ২৭ মার্চ, ২০১০

অতৃপ্ত প্রতিশোধ-২

অতৃপ্ত প্রতিশোধ-১
অতৃপ্ত প্রতিশোধ-২
অতৃপ্ত প্রতিশোধ-৩
অতৃপ্ত প্রতিশোধ-৪
অতৃপ্ত প্রতিশোধ-৫
২.
জানালার বাইরে থেকে সুতীব্র দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ছেলেটি তাপস বাবুর চোখের দিকে। গায়ের রং ধবধবে ফর্সা। এ ধরনের ফর্সা ছেলে সচরাচর দেখতে পাওয়া যায় না গ্রামে-গঞ্জে। একটি ১২/১৩ বছরের ছেলের চোখের যেরকম দীপ্তি থাকার কথা তার চোখে-মুখে এর থেকে বেশিই আছে। সেই দীপ্তিময় দৃষ্টি যে কারো পূর্ণ মনোযোগ কেড়ে নেওয়ার জন্য যথেষ্ট। ছেলেটির অস্বাভাবিক দৃষ্টি তাপস বাবুকে প্রবল কৌতুহলী করে তুলল। মুখের বাম দিকটায় একটি বড় কাটা দাগ আছে ছেলেটার। দাগটা অনেকটাই আকাঁবাকাঁ। হয়তো বয়সিক দুষ্টুমির কোন চাপ। বৃষ্টির কারনে শরীর পুরো ভেজা। দাগটির ক্ষত দিয়ে বৃষ্টির পানি থেকে থেকে পড়ছে।

কিছু বলবে তুমি?-তাপস বাবু কৌতুহল নিয়ে জিজ্ঞেস করলেন। প্রশ্ন শোনামাত্র ছেলেটি আর বিলম্ব করল না, চোখের নিমিষে পালিয়ে গেল। তাপস বাবু কৌতুহল দমন করার চেষ্টা করলেন্। সম্ভাব্য উত্তরগুলো মনের মত সাজিয়ে নিলেন। হয়তো গ্রামের কোন সম্ভান্ত পরিবারের কোন ছেলে বৃষ্টির কারনে কোথাও আটকা পড়েছিল। বৃষ্টি কমার লক্ষন নাই দেখে ভিজেই রওয়ানা দিয়ে দিল এবং পথিমধ্যে অপ্রত্যাশিত আগন্তুক দেখে জানালা দিয়ে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকল।


পরদিন সকাল। তাপস বাবু দেখলেন তিনি একটি বড় খেয়া নৌকার উপর বসে আছেন। নৌকার মাঝিকে খুব চেনা চেনা লাগছে। কাছে গিয়ে দেখেন মাঝিটি আর কেউ না, আর্নেস্ট হেমিং, বিশ্বখ্যাত রাইটার। কিন্তু এ কি করে হয়। তাপস বাবু নিজেকে ধাতস্ব করতে কিছুটা সময় লাগালেন। মনে মনে ভাবলেন, কদিন ধরে একটি প্যারানরমাল একটিভিটিজ নিয়ে একটি গল্প সাজিয়ে আনার চেষ্টা করছেন। হয়তো বিরতীহীন চিন্তায় মস্তিস্কে ঘোর-লাগা সৃষ্টি হয়েছে। ঘোরের কারনেই হয়তো মাঝিকে আর্নেস্ট হেমিঙের মত দেখাচ্ছে। তবু কিঞ্চিত আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “আপনাকে কি আমি চিনি?”
“চেনার তো কথা, আমি আর্নেস্ট হেমিং। আপনার প্রিয় লেখক“, মাঝি বলল।
তাপস বাবু শুকনা গলায় বললের, “কিন্তু এ কি করে হয়। এটা কি স্বপ্নে দেখছি”
স্বপ্ন কিনা এটা প্রমান করার জন্য আনের্স্ট হেমিং পানির ছিটা দিতে লাগলেন। পানির ঝাপটা গায়ে এসে লাগতে লাগল তাপস বাবুর। হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে ধরমরিয়ে উঠে গেলেন। সামনে নিচৃ হয়ে পরিমল দাড়িয়ে। পানির ছিটা দিয়েই যাচ্ছে সে। পানির ঝাপটা দিয়ে তাপস বাবুর ঘুম ভাঙ্গানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে।

বাবু, কি এত বেলা করে ঘুমান? অনেকক্ষন ধরে জাগানোর চেষ্টা করছি। ঘরে বাজার নাই, বাজার আনতে হবে। টাকার দরকার। আপনার ঘুম কি ভাল হয়েছে?

তাপস বাবু অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে নিলেন। পরিমলের হাত থেকে চায়ের পেয়ালাটি হাতে নিলেন। সাথে একটি সিগারেট ধরালেন। সকালে গরম চায়ের সাথে একটা সিগারেটের সহচর্য না পেলে সকালের আনন্দসূচনা হয় না।

“কাল আসনি কেন?”-তাপস বাবু সিগারেট ধরাতে ধরাতে জিজ্ঞেস করলেন পরিমলকে।

“ঝড়ের জন্যি বাবু, ঝড়ের জন্য পেছনের একটা বেড়া ভেঙ্গে পড়াতে আর আসা সম্বব হয়ে ওঠেনি”।

পরিমল দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “কি করব বাবু, একমাত্র সম্বল নিজের ভিটেমাটিটি চেয়ারম্যানের কাছে বন্ধক দিযেছিলাম তিন বছর আগে। পরে সময়মতো চক্রসুদের টাকা ফেরত দিতে পারি নাই বলে চেয়ারম্যান পুরো ভিটেটাই দখল করে নিল। পরে অনেক চেষ্টা করেও এটা উদ্ধার করতে পারিনি। আর দেখেন, এখন সেই চেয়ারম্যানের একটা বাড়িতেই ভাড়া থাকতে হচ্ছে। বিধির খেল বাবু, সবই বিধির খেল। আর সেই ভাড়া বাড়ির কিছু হলে তো এখানেও ঠাঁই দেবে না। রাস্তায় গিয়ে থাকতে হবে বৌ-বাচ্চা নিয়ে।

তাপস বাবু জিজ্ঞেস করলেন, “বন্ধকের টাকা কেন নিয়েছিলে?”

পরিমল মুখ কালো করে বলল, “ছোট মেয়েটার এক্লেমশিয়া হয়েছিল তখন, বাবু। চিকিৎসার জন্যি অনেক টাকা দরকার ছিল। শেষ পর্যন্ত মেয়েটাকে বাচাঁতেও পারলাম না”। আফসোস। বলেই ডুকঁরে কাদাঁ শুরু করল পরিমল।

তাপস বাবু তাকে শান্ত করার ব্যর্থ চেষ্টা করে শেষ পর্যন্ত পাঞ্জাবীর পকেট থেকে টাকা বের করে বাজারের ফর্দ ধরিয়ে দিলেন তার হাতে তাকে ব্যস্ত করে তুলার জন্য। ব্যস্ততা মানুষের সকল দু:খ-কষ্টকে নিমিষেই ভুলিয়ে দিতে পারে।

(চলবে)
আরেকটু পড়ি, কি বলেন.......

বৃহস্পতিবার, ১১ মার্চ, ২০১০

ভাল লাগার একটি গান

সবারই নানারকম শখ থাকে। আমারও আছে। তার মধ্যে একটা হল মরনকালীন শখ। আয়োজন করে মৃত্যকে উপভোগ করার শখ। আমি যখন মারা যাব, ঠিক তখন আমি চাই আবহ সঙ্গিত হিসেবে নিচের গানটা বাজুক। তখন থাকবে গভীর রাত। ঘরের সকল দরজা-জানালা খোলা থাকবে। বাতাসে পর্দা উড়তে থাকবে। ঘরে থাকবে শুধু একটি আধো-জ্বলা মোমবাতি। সেই মোমবাতির ম্লান আলোয় সবকিছু আবছা দেখা যাবে। সেদিন যদি হয় পূর্ণিমার রাত, তাহলে তো সোনায় সোহাগা। জোৎস্নার আলো উপছে পড়বে আমার বিছানায়। আমার দূর্বল শরীর স্নান করব সে আলোয়। সে স্নানে ধুঁয়ে-মুছে যাবে আমার সকল অপ্রাপ্তি, অতৃপ্তি। সেই বিছানার ধারে শুধু আমার একজন প্রিয় মানুষ বসে আমার মাথায় পরম মমতায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকবে। তার ভালবাসার চোখের পানি আমার গালে টপটপ করে পড়তে থাকবে। জানালার ধারে ঝুলতে থাকবে একটি পাখির খাঁচা। বাইরে অনুচ্চস্বরে চাঁপাকান্না শোনা যাবে। তখন হুহু করে বাতাস বইতে থাকবে। একটু শীত শীতও করবে। ঠিক তখন আমার প্রানটা উড়ে চলে যাবে পরপারে। আর আমার প্রানটা যাওয়ার সময় খাঁচা থেকে পাখিটি মুক্ত করে দেওয়া হবে।


----- কি, জোশশশশ না আইডিয়াটা?

[বি:দ্র: তবে মনে করে ভাল করে যেন ঘরে এরোসোল স্প্রে করে দেওয়া হয়, যে হারে মশা বাড়তাছে, যেকোন সময় পুরা আনানন্দটাই মাটি করে দিতে পারে!!]

গানটা ভাল লাগলে জানাবেন।

Get this widget | Track details | eSnips Social DNA


উপরের লিংটি কাজ না করলে নিচের লিংকে যান।
::::: Fazlur-Rahman-Babu---Shonai-Hay-Hayre-(Monpura-Soundtrack:::::::
আরেকটু পড়ি, কি বলেন.......

মঙ্গলবার, ২ মার্চ, ২০১০

শাশ্বতিকীর আশীর্বাদ

[আজ হঠাৎ করে ইচ্ছা হল 'কঠিন' একটা পোস্ট দিতে। কিন্তু কি দেই, কি দেই, করে শেষ পর্যন্ত জটিল(?) একটা কোবতে প্রসব করলাম। 'ভয়াবহ' জটিল!! এটা পড়ে যদি কারো 'মাথা ঘুরতে' থাকে অথবা শরীর 'হালুডুলু' করতে থাকে তাতে মামদো ভূত কোনভাবেই দায়ী থাকবে না, আগেই বলে দিচ্ছি!!! হার্টের রোগীদের বিশেষভাবে এর ধার দিয়েও না ঘেষার জন্য বিনীত অনুরোধ করছি।]


জোৎস্নার অস্ফুট আলোর মিছিল, কি নির্বিকার
কি নিরিবিলি তামস-গভীরে তার কি জমাট-বাধা ঐশ্বর্য বিসর্জন,
বুঝাই দায়, নিজ নিষ্চুপতায় কিভাবে অপরকে করে তোলে
জোয়ার-ভাঙ্গা আবেগতাড়িত, অথবা মায়াবী বর্ণিল আলো-প্রেমিক।

জৌষ্ঠের সঙ্গীত বাজে নাগালহীন কোন দুর সীমানায়,
ভেসে আসে ঘরহারা দুরের কোন এক শঙ্খচীলের শীল আর্তনাদ,
পাহাড়ের ঢালু উপত্যকা বেয়ে কাছাকাছি হতে থাকে
দুরের কোন স্বর্গীয় ঝর্নাধারার রিনিঝিনি সঙ্গীত-মূর্ছনা।
শিরশিরে মন তীব্র আড়ষ্টতায় খুজে ফিরে,
এই বেঁচে-না-থাকাসম জীবনের কোন অতৃপ্তির
নাকি জীবিত মৃত্যুকে আলিঙ্গন করার কোন অভিশপ্ত সত্ত্বার।
ডর লাগে আমার তার কাছাকাছি যাওয়ার,
সাহস পাই না কোন
হ্রেস্বা ঘোড়ার বুক-ফোলা বুক নিয়েও,
সাহস পাই না কোনো।
এই ঝলসানো নিসর্গ রূপের ডালি গোগ্রাসে গিলে ফেলার।


যেভাবে ভাবনার অগোচরে থেকে যায়
ধর্ষিতা নারীর আত্মযন্ত্রনা,
ক্লান্ত জীর্ণ কোন কৃষানীর অপ্রকাশ্য আনন্দধ্বনি,
অথবা গর্ভবতী ষোঁড়শীর উপচে পড়া আগমনী দায়িত্বর্পন,
সেভাবেই ধরতে পারি না,
এই রূপময় চেতনা-কর্ষী লীন হয়ে যাওয়া
আততায়ী-পূর্ণিমার অদেখা কোন বর্ণহীন আলোর মিছিল।
চিন্তার হার্ডডিস্কে চিরস্থায়ী ছাপ ফেলে দিতে পারিনা তাকে,
তার স্বকীয়তায়,
ঐশ্বরিক অনাবিলতা আর কৃ্ত্রিমতার অদেখা দড়ি দিয়ে বেঁধেও।

পত্রগর্ভে নিদ্রালু আলতো-ঘুমিয়ে পড়া ছাই-চাঁপা মৃদুমন্দ বাতাসগুলো
দুর্নিবার জানান দিতে থাকে তাদের সরব উপস্থিতি,
মৃদুল তরঙ্গে হিমহিম আবহে কাপিয়ে তুলে চন্দ্রালোর চাদরে ঢাকা,
লুকিয়ে পড়া নিরাভরন শঙ্খনীলসম সবুজ ঘাসগুলো।
শিশির-জন্মদাতা কচি ঘাসগুলো সটান হয়ে
লাজহীন আস্বাদনে ব্যস্ত থাকে চাঁদনি পশর রাতের অমৃতসুধা,
তাদের নয়ন প্রান সঁপে, মননশীল বিবেকের কন্ঠভাষা ছাড়িয়ে,
অনিমেশের অবিমৃশ্যতায়।
গোধুলিলগ্নে শেষ বিকেলের সূর্যাশীষ দিয়ে বলাৎকার হওয়া,
স্বচ্ছ ক্রিস্টাল শিশিরবিন্দুগুলো ভাবনার করিডোর মেলে দেয়,
জোৎস্না ছাড়িয়ে সপ্তর্ষিমন্ডলের আলেয়া খুজায়।
বলার অপেক্ষা রাখে না, কৃষ্ঞগহবরের মত উদার স্বার্থপর সে।

অনাধুন বিজলীবাতির মতন রাতের ঝিকমিক জোনাকিগুলো
ধানক্ষেতে পথ হারিয়ে ফেলে, লীন হয়ে যাওয়া অখন্ড মুহুর্তগুলোতে,
নাচে-গানে মুখর করে তোলে নিরিবিলি অবকাশের
প্রকৃতির অন্তরালে গজিয়ে উঠা সহস্র শস্যপর্ব শালীনতায়, মধুর।
শব-পৃথিবীর নিষ্ঠুরতাকে পাশ কাটিয়ে আনন্দের ডালি মেলে দেয়,
গানের মূর্ছনায় জোৎস্নাকে সঙ্গিনী করে,
যেভাবে প্রেমিক তার প্রেমিকাকে অন্ধ আবেগে আকঁড়ে রাখে,
তার সমুদ্রসম হৃদয় উজাড় করা তীব্র বাধ-ভাঙ্গা-ভালবাসায়।

যে প্লাবন ধুয়ে নেয় পুরনো জীর্ন সব কুসংস্কারের বান,
সেই জোয়ারের দলেই নাম লেখায় আলো-আধাঁর-ছায়া সঙ্গিন ব্যস্ত পূর্ণিমার লহর।
যদিও জেনেছি, মৃত্যুছায়া প্রকুতির দেয়ালের মত ঢলে পড়ে তীব্র ধ্রুপদি রূপচ্ছটায়।
অশীতিপর ম্লান রাতে উলুধ্বনি ব্যস্ত তার নিজস্ব আলোর আলিঙ্গনে,
ক্ষনে ক্ষনে,
রাতের নির্মম নিশ্চুপ নিস্তব্ধতায়।

জরায়ুর কোনায় লুকোচুরি খেলায় মত্ত সৃস্টিশীল শৈলী অবুঝ ভ্রুনানুগুলো
আনন্দধ্বনি প্রকাশে কার্পন্য করেনি কোনো,
বিলম্বে না পস্তানোর আশায়।
ত্রিশ লক্ষ জন্মাণূর জোৎস্নার জাগ্রত আলো-আশিষে
সবল পো্ক্ত পূর্ণিমার বীজগুলো।
ডরায় না কোনো, নি:শব্দ মৃত্যুর অশ্লীল আর্তনাদ,
ডরায় না তারা আধাঁর আলিঙ্গনে সন্ত্রস্ত চেতনার
রাক্ষুসে হায়েনাগুলোর হুমকিতেও।

কারন তাদের আছে সর্ব-সঙ্গিন শাশ্বত চাঁদনির অযুত
বাধ-ভাঙ্গা সাত অকুতোভয় সৈনিকের ভয়াবহ মারমুখি ক্ষীপ্রতা,
আর আছে ম্লান জোৎস্নালোর নিযুত শাশ্বতিকীর আশির্বাদ,
যা দিয়ে আকঁড়ে ধরে থাকা যায় শাশ্বতিকীয় অস্তিত্ব,
তার নিজস্ব শাশ্বত শ্বেত-শুভ্রতায়।
আরেকটু পড়ি, কি বলেন.......

সোমবার, ১ মার্চ, ২০১০

পলিটিকেল মুলো

একটা মজার গল্প বলি। শোনেন, ছেলেবেলার গল্প। শুনলে হাসতে হাসতে শুধু পেট না, পেট বেয়ে গলনালী ছাড়িয়ে আক্কল জিব্বা অবধি খিল ধরে যাবে। তো মুল ঘটনায় আসি। তখন আমি সবে স্কুলে ঢুকেছি.. স্কুলে নিয়মিত যেতাম না। ভাল লাগত না। গেলেও বেশিরভাগ সময়ই পালাতাম। তো একদিন নিয়মমত স্কুল পালিয়ে ফিরছি। শোনেন শোনেন, আসল ঘটনাটা শোনেন। আসল ঘটনা শোনলে কি যে মজা পাবেন চিন্তাও করতে পারবেন না। তো পথিমধ্যে রনের সাথে দেখা। রন কে চিনলেন না! আরে, ওই যে রন। আরে ওই যে,... ওই যে রন। চিনছেন তো? আচ্ছা। এখন, চুম্বক অংশে আসি। তো তখন হল কি............


[বি:দ্র: তারপরের অংশটুকু ভুলে গেছি। স্যরি!]

পরিশিষ্ট: আমাদের সরকার দলগুলো এইভাবে বেশিরভাগ কাজ বড়সড় মুলা দেখিয়ে বন্ধ করে দেয় কেন বুঝতেছি না! আমি তো তাও কারন দেখাই, স্যরি বলি, ওনারা তো কারনও দেখান না, স্যরিও বলেন না।


আরেকটু পড়ি, কি বলেন.......