শনিবার, ২৭ মার্চ, ২০১০

অতৃপ্ত প্রতিশোধ-২

অতৃপ্ত প্রতিশোধ-১
অতৃপ্ত প্রতিশোধ-২
অতৃপ্ত প্রতিশোধ-৩
অতৃপ্ত প্রতিশোধ-৪
অতৃপ্ত প্রতিশোধ-৫
২.
জানালার বাইরে থেকে সুতীব্র দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ছেলেটি তাপস বাবুর চোখের দিকে। গায়ের রং ধবধবে ফর্সা। এ ধরনের ফর্সা ছেলে সচরাচর দেখতে পাওয়া যায় না গ্রামে-গঞ্জে। একটি ১২/১৩ বছরের ছেলের চোখের যেরকম দীপ্তি থাকার কথা তার চোখে-মুখে এর থেকে বেশিই আছে। সেই দীপ্তিময় দৃষ্টি যে কারো পূর্ণ মনোযোগ কেড়ে নেওয়ার জন্য যথেষ্ট। ছেলেটির অস্বাভাবিক দৃষ্টি তাপস বাবুকে প্রবল কৌতুহলী করে তুলল। মুখের বাম দিকটায় একটি বড় কাটা দাগ আছে ছেলেটার। দাগটা অনেকটাই আকাঁবাকাঁ। হয়তো বয়সিক দুষ্টুমির কোন চাপ। বৃষ্টির কারনে শরীর পুরো ভেজা। দাগটির ক্ষত দিয়ে বৃষ্টির পানি থেকে থেকে পড়ছে।

কিছু বলবে তুমি?-তাপস বাবু কৌতুহল নিয়ে জিজ্ঞেস করলেন। প্রশ্ন শোনামাত্র ছেলেটি আর বিলম্ব করল না, চোখের নিমিষে পালিয়ে গেল। তাপস বাবু কৌতুহল দমন করার চেষ্টা করলেন্। সম্ভাব্য উত্তরগুলো মনের মত সাজিয়ে নিলেন। হয়তো গ্রামের কোন সম্ভান্ত পরিবারের কোন ছেলে বৃষ্টির কারনে কোথাও আটকা পড়েছিল। বৃষ্টি কমার লক্ষন নাই দেখে ভিজেই রওয়ানা দিয়ে দিল এবং পথিমধ্যে অপ্রত্যাশিত আগন্তুক দেখে জানালা দিয়ে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকল।


পরদিন সকাল। তাপস বাবু দেখলেন তিনি একটি বড় খেয়া নৌকার উপর বসে আছেন। নৌকার মাঝিকে খুব চেনা চেনা লাগছে। কাছে গিয়ে দেখেন মাঝিটি আর কেউ না, আর্নেস্ট হেমিং, বিশ্বখ্যাত রাইটার। কিন্তু এ কি করে হয়। তাপস বাবু নিজেকে ধাতস্ব করতে কিছুটা সময় লাগালেন। মনে মনে ভাবলেন, কদিন ধরে একটি প্যারানরমাল একটিভিটিজ নিয়ে একটি গল্প সাজিয়ে আনার চেষ্টা করছেন। হয়তো বিরতীহীন চিন্তায় মস্তিস্কে ঘোর-লাগা সৃষ্টি হয়েছে। ঘোরের কারনেই হয়তো মাঝিকে আর্নেস্ট হেমিঙের মত দেখাচ্ছে। তবু কিঞ্চিত আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “আপনাকে কি আমি চিনি?”
“চেনার তো কথা, আমি আর্নেস্ট হেমিং। আপনার প্রিয় লেখক“, মাঝি বলল।
তাপস বাবু শুকনা গলায় বললের, “কিন্তু এ কি করে হয়। এটা কি স্বপ্নে দেখছি”
স্বপ্ন কিনা এটা প্রমান করার জন্য আনের্স্ট হেমিং পানির ছিটা দিতে লাগলেন। পানির ঝাপটা গায়ে এসে লাগতে লাগল তাপস বাবুর। হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে ধরমরিয়ে উঠে গেলেন। সামনে নিচৃ হয়ে পরিমল দাড়িয়ে। পানির ছিটা দিয়েই যাচ্ছে সে। পানির ঝাপটা দিয়ে তাপস বাবুর ঘুম ভাঙ্গানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে।

বাবু, কি এত বেলা করে ঘুমান? অনেকক্ষন ধরে জাগানোর চেষ্টা করছি। ঘরে বাজার নাই, বাজার আনতে হবে। টাকার দরকার। আপনার ঘুম কি ভাল হয়েছে?

তাপস বাবু অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে নিলেন। পরিমলের হাত থেকে চায়ের পেয়ালাটি হাতে নিলেন। সাথে একটি সিগারেট ধরালেন। সকালে গরম চায়ের সাথে একটা সিগারেটের সহচর্য না পেলে সকালের আনন্দসূচনা হয় না।

“কাল আসনি কেন?”-তাপস বাবু সিগারেট ধরাতে ধরাতে জিজ্ঞেস করলেন পরিমলকে।

“ঝড়ের জন্যি বাবু, ঝড়ের জন্য পেছনের একটা বেড়া ভেঙ্গে পড়াতে আর আসা সম্বব হয়ে ওঠেনি”।

পরিমল দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “কি করব বাবু, একমাত্র সম্বল নিজের ভিটেমাটিটি চেয়ারম্যানের কাছে বন্ধক দিযেছিলাম তিন বছর আগে। পরে সময়মতো চক্রসুদের টাকা ফেরত দিতে পারি নাই বলে চেয়ারম্যান পুরো ভিটেটাই দখল করে নিল। পরে অনেক চেষ্টা করেও এটা উদ্ধার করতে পারিনি। আর দেখেন, এখন সেই চেয়ারম্যানের একটা বাড়িতেই ভাড়া থাকতে হচ্ছে। বিধির খেল বাবু, সবই বিধির খেল। আর সেই ভাড়া বাড়ির কিছু হলে তো এখানেও ঠাঁই দেবে না। রাস্তায় গিয়ে থাকতে হবে বৌ-বাচ্চা নিয়ে।

তাপস বাবু জিজ্ঞেস করলেন, “বন্ধকের টাকা কেন নিয়েছিলে?”

পরিমল মুখ কালো করে বলল, “ছোট মেয়েটার এক্লেমশিয়া হয়েছিল তখন, বাবু। চিকিৎসার জন্যি অনেক টাকা দরকার ছিল। শেষ পর্যন্ত মেয়েটাকে বাচাঁতেও পারলাম না”। আফসোস। বলেই ডুকঁরে কাদাঁ শুরু করল পরিমল।

তাপস বাবু তাকে শান্ত করার ব্যর্থ চেষ্টা করে শেষ পর্যন্ত পাঞ্জাবীর পকেট থেকে টাকা বের করে বাজারের ফর্দ ধরিয়ে দিলেন তার হাতে তাকে ব্যস্ত করে তুলার জন্য। ব্যস্ততা মানুষের সকল দু:খ-কষ্টকে নিমিষেই ভুলিয়ে দিতে পারে।

(চলবে)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন