রবিবার, ২৮ মার্চ, ২০১০

অতৃপ্ত প্রতিশোধ-৩

অতৃপ্ত প্রতিশোধ-১
অতৃপ্ত প্রতিশোধ-২
অতৃপ্ত প্রতিশোধ-৩
অতৃপ্ত প্রতিশোধ-৪
অতৃপ্ত প্রতিশোধ-৫
৩.
রাতের খাবার শেষ করে টেবিলে বসে কেন জানি মনে হল আজ রাতে ছেলেটা হয়তো আসবে। তাই জানালা দিয়ে তাকিয়ে তাকলেন কিছুক্ষন তাপস বাবু। কিন্তু না, সে আসেনি। বিরস মুখে টেবিল ছেড়ে বিছানায় দিকে যাওয়ার সময় জানালার কপাটের শব্দ শুনে ফিরে তাকাতেই দেখলেন, শুভ্র ছেলেটা দাড়িয়ে আছে জানালার রড শক্ত করে ধরে। ছেলেটা কিছুক্ষন একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকার পর কথা বলা শুরু করল।
“আপনি যে গল্পটা মনে মনে সাজাচ্ছেন প্যারানরমাল বিবেচনা করে, সেটা কোনভাবেই এই ক্যাটাগরিতে ফেলা যায় না।”


তাপস বাবু খানিক বিস্মিত হয়ে তার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে নিজেকে সামলে নেওয়ার চেষ্টা করলেন। মনে মনে এর পেছনে যুক্তিসঙ্গত কারন বের করতে দ্রুত চিন্তা করতে লাগলেন। তিনি গল্পের বিষয়টি নিয়ে কাল বিকেলে গ্রামের এক স্কুল শিক্ষক হানিফ মিয়ার সাথে অনেকক্ষন কথাচ্ছলে বলেছিলেন। তার এই শিক্ষকের ছাত্র হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু এত ডিটেল নিয়ে ত আলাপ করেননি ওই শিক্ষকের সাথে। তাহলে কি সে তীব্র দৃষ্টিতে তাকিয়ে কারো অন্যের মস্তিস্কে ঢুকার ক্ষমতা রাখে। এ ধরনের অনেক উদাহরন আছে শুনেছি। আমেরিকার পেনসিলভেনিয়ার ডেভিড শিফিল্ড নামের এক লোক এভাবে কয়েকজন ব্যক্তির মস্তিস্কে ঢুকে তাদের চিন্তার হুবুহু বর্ননা করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল একবার। তাকে নিয়ে অনেক গবেষনাও করা হয়েছিল। গবেষকরা টেলিপ্যাথির ব্যাখ্যা দেখানো ছাড়া আর কোন বিশ্বাসযোগ্য কারন দেখাতে পারেন নি অবশ্য।
তাপস বাবু স্বাভাবিক ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করলেন, “কিভাবে বুঝলে প্যারানরমাল বলা উচিত না?”
সে জানালার রড আরো শক্ত করে ধরে বলতে লাগল, “কারন, সেইসব ঘটনাগুলোকে ব্যাখ্যতীত বলা হয়, যেগুলো বর্তমান সময় তার রহস্যের নির্ভরযোগ্য কোন সমাধান দেখানোর ক্ষমতা রাখে না। যা অবশ্যম্ভাবীভাবে ভবিষ্যৎ কোন সময় ঠিকই বের করে নিবে।, তাই এখানে সময়ের আপেক্ষিকতাই এধরনের তুলনামূলক ধারনার পরিবর্তন ঘটানোর নিমিত্ত। আর কোন চলতি গবেষনা চলাকালীন সময় পর্যন্ত তাকে অলৌকিক আখ্যা দেওয়া স্বভাবতই অনুচিত বিবেচনা হওয়া উচিত”।

ছেলেটার গভীর চিন্তাশক্তি আর প্রখর কথাশৈলী তাপস বাবুকে প্রবল বিস্মিত আর কৌতহলী করে তুলল। ছেলেটার বাহ্যিক বয়সের সাথে তার চিন্তাশক্তি কোনভাবেই যায় না। তাপস বাবু অনেক চেষ্টা করেও এর পেছনে কোন যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যা দাড় করাতে পারলেন না।

তাপস বাবু প্রবল আগ্রহভরে জিজ্ঞেস করলেন, “কি নাম তোমার?”
“শুভ্র”।
“তাপস বাবু বললেন, কাল বৃষ্টি ছিল, তোমার শরীর ভেজা ছিল, আজ তো বৃষ্টি নেই, তারপরও তুমি কাকভেজা কেন?”
“কুয়োতে স্নান করে এসেছি, তাই। “
“প্রতিদিনই কি তুমি এমন সময় কুয়োতে স্নান করতে যাও?”
“না, প্রতিদিন না, পূর্ণিমার শেষ তিনরাত যাই। তখন কুয়োতে জোয়ারের জন্য পানি ফুলে ওঠে। পানি হাতের নাগালে পাওয়া যায়”।
“শুধু পূর্ণিমার তিন রাত কেন?”
“ওই তিনরাতই শুধু হাতের পানি নাগালের মধ্যে থাকে। এখন যাই আমি”। বলেই সে জবাবের অপেক্ষা না করে নিমিষে হাওয়া হয়ে গেল। তাপস বাবু কয়েকবার ডাকলেন তাকে। কিন্তু কোন লাভ হল না। তাপস বাবু ক্রমশ কৌতুহলী হয়ে উঠছেন ছেলেটি নিয়ে।

পরদিন দুপুরে চেয়ারম্যান খোজ-খবর নিতে আসলেন হাতে দুই জোড়া ডাব নিয়ে। সাগরেদের হাতে একটি খাসি ধরা।
“বাবু, সময়ের অভাবে খাতির-যত্ন করতে পারছি না ঠিকমতো। কই রে, পরিমল, ডাবগুলো ধর, আর খাসিটা জবাই দে। আজ আমার মনটা বেজায় খুশ, বাবু। আমার প্রথম বউটা পোয়াতি, আজই ডাক্তার জানাল। আপনার আর কিছু কি লাগবে বাবু। একটা কিছু চান। আপনি অনেক বড় মাপের মানুষ, বাবু। আমার কাছে আপনার চাওয়ার হয়তো কিছু থাকবে না। তারপরও অধমের খুব ইচ্ছে আপনাকে একটা কিছু দেওয়ার”।
তাপস বাবু সুযোগটি কাজে লাগালেন। এটা অত্যন্ত খুশির খবর। হ্যাঁ, আমার কিছু চাওয়ার আছে। দিবেন আশা করি।
“বলেন বাবু, সাধ্যের মধ্যে থাকলে অবশ্যিই দিব”-চেয়ারম্যান বললেন।
আপনি পরিমলের বন্ধকী জমিটি তাকে আবার ফিরিয়ে দিবেন, আপনার পাওনা তো সে ইতিমধ্যে মিটিয়ে দিয়েছে। তার পাওনা-টাও আপনার মিটিয়ে দিন।
চেয়ারম্যান কথাগুলো শুনে থতমত খেয়ে এদিক-ওদিক তাকালেন। কিছুক্ষন অন্যমনস্কভাবে কিছু ভেবে ডাবগুলো নামাতে নামাতে বললেন, “এসব কি বলছেন বাবু, এর বন্ধকী জমি তো আমি এমনিতেই ফিরিয়ে দিতাম। আমি বাবু, কালই আমার নিজের গাড়ি দিয়ে তাকে তার ভিঠেতে উঠিয়ে দিয়ে আসব। কই গেলি রে, পরিমল, “ডাবগুলো ধর”।

আজ রাতে শুভ্র আবার আসল। তার চোখ টকটকে লাল। তাপস বাবু ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “কি হয়েছে?” সে বলল, “আমার কাকাকে খুজছি, তার উপর অনেক ক্ষোভ”
“কেন? তোমাকে বকেছেন বুঝি?”-তাপস বাবু বললেন।
“হুমম। আপনাকে একটি জিনিস দিতে চাই আমি, নেবেন?”
“কি জিনিস?”
“আছে, আমি নিয়ে আসব একদিন”।
বলেই সে নিমিষে মিলিয়ে গেল।
তার পর আরও কয়েকদিন এসেছিল শুভ্র। অনেক কথা হত। বাড়িতে যাবার জন্য বলে দিল। তাপস বাবুর নিজেরও খুব আগ্রহ একদিন ওর বাড়িতে যাওয়ার। তাপস বাবু ঠিক করে নিলেন, গল্প লেখাটা গুছিয়ে নিলেই যাবেন একদিন। গ্রামটাও এখনও দেখা হয়নি ভাল করে।

(চলবে)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন