মঙ্গলবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০০৯

রক্তস্নাত চিতই পিঠা

দুপুর বেলার ফিকে রোদ। আকাশ জুড়ে ঘন কালো মেঘ। মেঘের ফাকেঁ এক চিলতে অচেনা সূর্য যেন আবছায়া কালো পর্দা সরিয়ে রহস্যময় চোখে পৃথিবীর উপহাস দেখছে। ক্ষনে ক্ষনে মেঘের গুড়ঁ গুড়ঁ শব্দ। দুরের কোন এক বুনো গাছ থেকে একটি ঘুঘু পাখির ডাক শুনা যাচ্ছে। ঘুঘুর ডাকটি অচেনা ভয়ধরানো আর্তচিৎকারের মত মনে হচ্ছে নরেনের মায়ের কাছে। সব ভালোলাগার উপাদানগুলোই এখন বিষাদের পিচ্ছিল ছায়ায় ঢেকে যায় তার কাছে। যুদ্ধের দামামায় পুরুষশূন্য এই গ্রামে নরকের ক্লিষ্টতা ভোগ করছে এখন সে প্রতিটা মুহূর্ত।

নরেনের বাপ চার মাস আগেই উত্তরপাড়ার কমান্ডো মুক্তিবাহিনীর সাথে যুদ্ধে গেছে। ক’সপ্তাহ আগে একমাত্র ছেলেটাও মাকে লুকিয়ে বন্ধুদের সাথে চলে গিযেছে মুক্তিযুদ্ধে। পরে গবীনবাবুর ছেলে নাগেশকে দিয়ে তার যাওয়ার খবর পাঠিয়েছে নরেন। যে ছেলে রাতের বেলা শেয়ালের করুন সুর শুনলে ভয়ে কুকড়েঁ উঠত সেও তার বুকটি ফাকাঁ করে মুক্তিযুদ্ধে চলে গিয়েছে। প্রবল ইচ্ছা শক্তির কাছে সকল ভয় পরাজিত হয়। নরেনের মায়ের চোখ ভিজে আসে। চারপাশ ঝাপসা দেখে সে। মাথা ঝিমঝিম করে। ছেলেটি যাবার কিছুদিন আগে টিউশানির জমানো টাকা থেকে একটি টকটকে লাল শাড়ি কিনে দিয়েছিল তাকে। নরেনের মা এখন এই শাড়িই পড়ে থাকেন সারাক্ষন। ছেলে যখন বাড়ি ফিরবে তখন তার দাগ লাগানো শাড়ি দেখে মন খারাপ করতে পারে ভেবে সে খুব যত্ন করে ব্যবহার করে এই শাড়ি।


একটা খুব ভাল কাজ করেছে নরেনের মা। লালপাড়ার মাষ্টারমশাইয়ের কথামতো তার সদ্য বেড়ে উঠা মেয়েটিকে মধুবাবুর পরিবারের সাথে বর্ডারের দিকে পাঠিয়ে দিয়েছে। যার জন্য এখন চিন্তামুক্ত থাকতে পারছে। মেয়েটি এখন কেমন আছে কে জানে? ঘরে শুধু সে আর বুড়িমা। বুড়ি কানে প্রায় শুনেই না, চোখেও আবছা দেখে এখন। সবসময় লাঠি ভর দিতে হাটতে হয় তাকে।

বুড়ি স্বরভগ্ন গলায় চেচাঁতে লাগল, “কই গো নরেনের মা, আইজ পিঠা খামু, চিতই পিঠা বানা, বড্ড খেতে ইচ্ছে করতাছে চিতই পিঠা, অনেকদিন খাইনা।”

নরেনের মা জানে, বুড়ির খুব প্রিয় খাবার এই চিতই পিঠা। নরেনের বাপ বাড়িতে থাকতে প্রায়ই চিতই পিঠা বানাতে বলত তাকে। নিজে খেত না, মাকে খাওয়ানোর জন্য বানাতে বলত।

বুড়ি সকাল থেকেই যেভাবে চেচাঁনো আরম্ভ করেছে তাতে আজ আর নিস্তার নেই। নরেনের মা চুলা বসাতে লাগল। ঘরের চালে অনেকক্ষন থেকে একটি কালো শকুন ঘাপটি মেরে বসে আছে। কয়েকবার তাড়ানোর চেষ্টা করেও পারেনি নরেনের মা। যুদ্ধে মৃত লাশের গন্ধে সব শকুনেরা মানুষপাড়ায় ভীড় জমিয়েছে বোধ হয়, ফেলনা উচ্ছিষ্ট খাবারের লোভে। মিলিটারীর ভয়ে বাজারেও যেতে পারছে না কয়েকদিন ধরে নরেনের মা। ঘরের খাবারও প্রায় শেষ হওয়ার পথে সব।

বুড়ি চেঁচাতে চেঁচাতে ক্লান্ত হয়ে বারান্দায় বিছানো পাটিতে খালি পেটেই শুয়ে পড়েছে কখন কে জানে! নরেনের মা পিঠা বানানো শেষ করে নিয়ে এসেছে প্রায়। হঠাৎ শক্ত বুটের শব্দে তার বুকটা কেঁপে উঠতে লাগল।

“চাচী কি বাড়ি আছ? চাচী”

নরেনের মা তাকিয়ে দেখল মাওলানা বাড়ির ছেলে ছালিক মোল্লা, সাথে কয়েকজন মিলিটারি। ছালিক মোল্লা নরেনের ছোটবেলার খেলার সাথী। একবার বর্ষাকালে খেলতে গিয়ে পা ভেঙ্গে ফেলায় নরেন তাকে কোলে করে নিয়ে আনার পর সে কলমী গাছের পাতা দিয়ে রস বানিয়ে পায়ের কাটাক্ষতে লাগিয়ে দিয়েছিল। সেই কাটা দাগটি এখনও দেখতে পাচ্ছে নরেনের মা।

“নরেন কোথায়, চাচী?”
“জানিনা বাবা, কি দরকার তাকে?”
“না, কিছু কাজ ছিল, সে শুনলাম নবীনদের কমিটিতে নাম লিখিয়েছে? শিউলি কোথায়, ঘরে?”

“জানিনা, বাবা। - শিউলি তো কয়েকদিন হল ওর দাদারবাড়ি গেল।”

তখন মিলিটারির কমান্ডার ভাঙ্গা বাংলায় কর্কশ গলায় বলল, “আপকা ছাওয়ালকে জিন্দা পেতে চাইলে বলে দে, ও কোথায়?” ছালিকও গলা মিলিয়ে বলল, “চাচী বলে দাও, সে কোথায় এখন? বলে দিলে ওরা কিছু করবে না”

নরেনের মা গম্ভীর হয়ে থাকল কিছুক্ষন। তার শিরদাঁড়া দিয়ে বেয়ে নামা ভয়ের শীতল স্রোতটি এখন তীব্র ক্রোধের অগ্নিশিখায় রুপান্তরিত হয়েছে। সে ছালিকের চোখের দিকে অগ্নিঝরা দুষ্টিতে তাকিয়ে থাকল কিছুক্ষন। তীব্র ঘৃনায় জমা একদলা থুথু সজোরে ছুড়ে ফেলল সে ছালিকের মুখের দিকে লক্ষ্য করে। নরেনের মায়ের গা থরথর করে কাপঁতে লাগল তখন ক্রোধের আগুনে। ছালিক মোল্লা হাত দিয়ে থুথু মুছে রক্তিম চোখে কমান্ডারকে কিছু ইশারা করল। কমান্ডার তখন মধ্যবয়স্কা নরেনের মাকে টেনে হিচঁড়ে ঘরে নিয়ে দরজার ছিটকিনি লাগিয়ে দিল। ভেতর থেকে নরেনের মায়ের আর্তচিৎকার আর কমান্ডারের শিৎকার একাকার হয়ে গেল। ছেলের দেয়া শাড়িটা টেনে হিচড়ে ছিড়ে ফেলা হল। দুরের কোন এক গাছ থেকে ভেসে আসা আবারও একটি ঘুঘু পাখির আর্তচিৎকার শুনা গেল। কোন এক অগ্যাত কারনে অচেনা সুরে একনাগাড়ে ডেকে যাচ্ছে পাখিটি।

ভেতর থেকে নরেনের মায়ের চিৎকার শুনে বুড়ির ঘুম ভাঙ্গল। বুড়িমা হাতড়িয়ে হাতড়িয়ে চশমাটি পড়ে হাতের লাটিটি খুঁজতে লাগল।
“ও, নরেনের মা, নরেনের মা, পিঠা হয়েছে নাকি গো? দাও দেখিনি, খিদা লেগেছে জব্বর।”

নরেনের মায়ের কোন সাড়া শব্দ না পেয়ে বুড়িমা খুড়িয়ে খুড়িয়ে নিজেই চুলার দিকে যেতে লাগল। পরে নিজেই চুলার উনুনে রাখা পিঠাগুলো ছোট থালায় তুলে নিল। হঠাৎ ঘরের ভেতর থেকে গুলির শব্দে এক ঝাঁক কাক আকাশের পানে উড়ে গেল।

শব্দ শুনে চারিদিকে তাকাতে গিয়ে ছালিককে চোখে পড়ল বুড়িমার।

“কে? ছালিক বাছা, বল দেখিনি কিসের শব্দ হল ক্ষন?”
“না, বুড়িমা, ও কিছু না, শান্তিবাবুর ঘরের চালে ডাব পড়েছে মনে হয়”
“ও, নে বাবা, কয়েকটা পিঠা মুখে দে। অনেকদিন পর আইলি তুই।”

বুড়ি খুড়িয়ে খুড়িয়ে হেটে গিয়ে একটি ভাঙ্গা চেয়ার নিয়ে আসল ছালিককে বসানোর জন্য। এমন সময় ঘর্মাক্ত কমান্ডার ঘরের দরজা খুলে শার্টের বোতাম লাগাতে লাগাতে বের হতে লাগল। বুড়ি তখন মিলিটারিকে দেখার পর ঘটনা কিছুটা আঁচ করতে পেরে তীব্র স্বরে চেঁচিয়ে উঠল। পরক্ষনে দূর্বল হাতের নরম লাটিটি দিয়ে মিলিটারিকে মারতে উদ্যত হল বুড়ি। তখন কমান্ডার একজন মিলিটারির কাছ থেকে একটি বন্দুক নিয়ে ছালিকের হাতে দিয়ে কিছু ইশারা করে ছালিককে বলল, “আপকা প্রশিক্ষন জরুরত হেয়।”

ছালিক মোল্লা তখন ইশারাটা আন্দাজ করতে পেরে বন্দুকটি হতের মুঠিতে শক্ত করে ধরে রাখল কিছুক্ষন। বুড়ি যখন কমান্ডারের গায়ে লাটিটি দিয়ে অনবরত আঘাত করতে শুরু করল, ছালিক মোল্লা তখন হাতের বন্দুকটির বেয়নেট দিয়ে বুড়িমার পিঠে সজোরে প্রবেশ করিয়ে দিল। ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরিয়ে পড়তে লাগল বুড়ির কোচকানো অশীতিপর পিঠ থেকে। বুড়ির দেহ কমান্ডারের পায়ের কাছে লুটিয়ে পড়ল। ধাক্কা লেগে ভাঙ্গা চেয়ারের উপরে থাকা পিঠার থালাটি উপচে পড়ল বুড়িমার মুখের উপর। বুড়িমার রক্তস্নাত দেহের উপর পড়ে থাকল কয়েকটি সাদা চিতই পিঠার টুকরো। ধীরে ধীরে বুড়ির দেহ নিস্তেজ হয়ে পড়ল। আকাশ তখন কালো মেঘে ছেয়ে গেছে। অন্ধকার হয়ে এসেছে চারিদিক প্রায়। আচমকা ঝুম বৃষ্টি আসল। গোধুলির ম্লান আলোয় চকচক করছে বুষ্টির ফোটা। আকাশ যেন তার তার তীব্র ক্রোধের বহ্নিচ্ছটা বৃষ্টির পানির মধ্য দিয়ে উগড়ে ফেলছে। বৃষ্টির করুনধারার জলে রক্তস্নাত মাটি যেন আকাশের দিকে টকটকে লালচে চোখ দিয়ে প্রবল আক্রোশ নিয়ে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

ঘরের চালে অনেকক্ষন ঘাপটি মেরে লুকিয়ে থাকা কালো শকুনটি সুযোগ পেয়ে ছোঁ মেরে রক্তলাল একটি চিতই নিয়ে উড়ে চলে গেল আকাশের দুর সীমানায়। পিছনে পড়ে থাকল শুধূ কিছু নীরেট হাহাকার ও রক্তস্নাত বেদনা।


আরেকটু পড়ি, কি বলেন.......

কৈশোর

ভরা কিশোরবেলা। জৈষ্ঠ্যৈর রোদেলা দুপুর। সবুজ ধানের তপ্ত মেঠো আল দিয়ে চপল পায়ে খামোখাই হেটে বেড়াঁই। ভাবনায় কৈশোরের বাধভাঙ্গা কৌতুহল, অবাধ উচ্ছলতা, সবকিছুতেই অন্যরকম ভাল লাগার অনুভুতি।

দিগন্তজোড়া ধুঁ ধুঁ কচি মাঠের আলের মধ্য দিয়ে ছুটে চলা, ছোট্ট অন্নপূর্না পাহাড়ের শুভ্র ঝর্নার পাদদেশ থেকে তৈরি হওয়া আকাঁবাকাঁ ছোট্ট খালের পাড়ে বসে পড়ন্ত বিকেলে বড়শী দিয়ে মাছ ধরা, রতনীকান্তবাবুর কাঠাঁল বাগান থেকে সন্ধ্যায় সবার অগোচরে লুকিয়ে লুকিয়ে কাঠাঁল খাওয়া, মধুদার বাড়ির উঠোনে রোদে দেওয়া তেঁতুলের হাড়িতে কাঠি ঢুকিয়ে আচার তুলে নিয়ে পালিয়ে যাওয়া, পাতার আগুনে পুড়ে গ্রীষ্মের কাচাঁ আম পাকানো, স্কুলের পাঠ শেষে শিমুলবাগান দিয়ে আসার সময় উত্তরপাড়ার অমিতের বাসার চালে ঢিল ছুড়ে মারা, গ্রীষ্মের তপ্ততায় একটুকানি প্রশান্তির জন্য একটি নেংটি পড়ে নদীতে ঝাপিয়ে পড়া, চয়ন-দার নৌকায় করে অনেক দুরের মানশ্রী বিলে গিয়ে শাপলা আর সজনে ডাটার ফুল তোলা, গভীর জঙ্গলের মাধবীলতা গাছের চূড়াঁয় বসে থাকা কাকতাড়ুঁয়া পাখিকে ফাদঁ পেতে ধরে ফেলার আকুল প্রচেষ্টা, শ্যাঁওলা-ধরা শান বাধানো পুকুরের ঘাটে বসে মাছরাঙ্গা পাখির ছোঁ মেরে মাছ খাওয়ার দৃশ্যের দিকে অপলক তাকিয়ে থাকা, অলস দুপুরে প্রায় প্রানহীন আমি সূর্যের আলোয় কিছুক্ষন অবগাহন করা, ম্লান উচ্ছলতায় শীরশীরে উদাস চোখ দুটির তপ্ত ধূসর উঠোনপানে কিছুক্ষন নিরিবিলি একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা, অস্ফুট, শুনশান পড়ন্ত গোঁধুলীবেলায় ছোট্ট টিলার পাশে সন্ধ্যামালতী গাছের গায়ে দেলান দিয়ে বসে বর্নীল সূর্যাস্ত দেখা, ভালবাসার পঙ্খিরাজে উড়ে বেড়ানো, মায়াবী কিশোরীর মায়াভরা মুখ কল্পনায় সুতায় বুনা -- এরকমই ভরা আনন্দে কেটেছিল আমার কিশোরবেলা। সবকিছুতেই ছিল বাধঁভাঙ্গা তীব্র আনন্দ, অনাবিল উচ্ছ্বাস।


অনিন্দ্যসুন্দর ছোট্ট গ্রামটির দু’পাশের বাশঁবাগানের সারি, শান্ত পাকানো ছোট্ট নদীর পানির কলকলানি গান, সবই অদম্য কৌতুহলের উদ্দাম ভালোলাগার উপজীব্য ছিল, তখন।

ছোটবেলার সব স্বপ্ন জুড়ে থাকত শুধুই এই গ্রামটির ছবি। কল্পনার সবকিছুতেই গ্রাম্য ঘটনা আষ্টেপৃষ্টে জড়ানো। সারাজীবন এখানেই কাটিয়ে দেওয়ার আকুল তৃষ্ণা। কিন্তু বাস্তবতার নিষ্ঠুর হাতছানিতে সেই তৃষ্ণা অতৃপ্ততায় অকালেই প্রাণ হারায়। জীবিকার তাগিদে বাবার শহরে চলে আসা, অনেক আগেই, সেই সাথে আমাদেরও। এখনও অনেক সুখস্মৃতি আবছা আবছা ভাসে, জানালার করিডোরে দাড়িয়ে থাকা নিরিবিলি ভাবনায়। কি সুখের ছিল সেই কৈশোরের দিনগুলি। অবাধ আনন্দে কি স্বপ্নময়ই না ছিল চারপাশের সবকিছু। মনে পড়ে, খুব।

দেশ ছেড়ে আসার আগে, অনেকদিন পর গিয়েছিলাম আবার সেই আমার ছোট্টবেলার ছোট্ট গ্রামটিতে। এখনও সেই সুরমা নদীর রিনিঝিনি শব্দে স্রোতময় বয়ে চলা, এখনও সেই শিমুলচাঁপা গাছের ঠায়ঁ দাড়িয়ে থাকা, সেই উঠোন, সেই গোলা ভরা ধানের আড়ত -- আগের মতই, সব। কিন্তু নেই শুধু আমার সেই কিশোরবেলার আবেগ, আমার একাকী ছুটে চলার দুরন্তপনা, তীব্র কৌতুহলভরা চোখে শালিক পাখিটির দিখে তাকিয়ে থাকার অবিচল অভিলাশ। শত শত শৃঙ্খলে হাত-পা বাধা এখন বাস্তবতায় খাচাঁয়। যৌবনের উন্মুত্ত্বতায় নিভৃতে কাদেঁ কৈশোরের তীব্র অস্ফুট আবেগ। এখনও ভালো লাগে খুব সেই গ্রাম, এই মাটি।

যৌবনের প্রান্তে এখন। বাস্তবতার ব্যস্ততায় তাড়া করে ফিরে সবসময়। গ্রাম থেকে ফিরে আসার সময় প্রান্তসীমানায়। কিছুক্ষন পরেই গাড়ি ছাড়বে।

আমার হাতে দেওয়া ঠাকুরমার আনারস আর শীতলী পিঠার থলেটি। পরম মমতায় আকঁড়ে ধরে ক্ষেতের আল ধরে আবার হেঠে চলেছি আমি। ফিরে আসার সময় আবার পিছনফিরে তাকাই, আবছা আসছে স্মৃতিগুলো, সেই ছুটে চলা, সেই কৈশোর, সেই ভাললাগা।

--আরেকটু কি দীর্ঘায়ীত হতে পারত না আমার কৈশোরবেলা?



--অযুত শুভাশীষ


৭ নভেম্বর, ২০০৯
ওন্টারিও, কানাডা।
আরেকটু পড়ি, কি বলেন.......

সোমবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০০৯

পদার্থবিজ্ঞানের অপদার্থরা (Character ব্যবচ্ছেদ)

আমরা যারা নিম পাতার রস মিশ্রিত জটিল পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে সবসময় বিরূপ ধারনা পোষন করতাম, এই বিভাগে ভর্তির পর আমাদের লব্ধ ধারনাসমূহ এমনভাবে Purified করা হল যে, ক্ষনিকেই অন্যান্য বিষয়গ্রহনকারী ছাত্রছাত্রীদের যথাবিহিত অমার্জনীয় ভুল সিদ্ধান্তের জন্য আমাদের শ্লেষাত্মক আফসোস হতে লাগল। যদিও দীর্ঘ সময় পরিক্রমায় আমাদের অত্যু উচ্ছাসের অধো: বিবর্তন উত্তমরূপে পরিলক্ষনীয়।

এবার আমাদের কাঠখোট্টা পদার্থবিজ্ঞানের কতিপয় অপদার্থের সরল মানবীয় গুনাবলীর দিকটা একটু Highlight করার মত দু:সাহসিক বিনীত প্রয়াস না দেখালেই নয়।

পৃথিবীতে যদি খ্যাতনামা কয়েকজন High Tech person-এর মুখাবয়ব কল্পনা করা হয়, তবে ক্রমতালিকায় চোখের সামনে প্রথমেই ভেসে আসবে, “মাইক্রোসফটের” বিল গেটস, পরে “অ্যাপলের” স্টিভ জবস এবং তৃতীয় স্হানেই সন্দেহাতীতভাবে “অকির্ডের” গদা (ওরফে সুব্রত ঘোষ)। যে তথ্যপ্রযুক্তির এ হেন বিষয় নেই যার রহস্য সে জানে না। আপটুডেট Information Technology-এর গভীর থেকে গভীরতর, নব থেকে নবতর, ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর Technical Information সম্পর্কে সম্যক পরিচিত বলে আত্মগরিমায় মুখরিত নিজেকে স্বয়ং ঈশ্বরের নিজ হাতে, নিজ কারখানায় ভালো পলিযুক্ত দোঁ-আশ মাটি দিয়ে গড়া অসামান্য, অদ্বিতীয় “কঠিন চিজ” বলে নিজেকে সর্বশরীরময় গৌরবান্বিত ভাবে। তার প্রযুক্তিবিষয়ক জ্ঞানগর্ভ মহামূল্যবান Virus Scanned বাণীসমূহ বিশ্ববিদ্যালয়ের চার দেয়ালে Total Internal Reflection হয়ে আমাদের শ্রুতিগোচর হওয়ায় আমরাও যে নিজেদেরকে সৌভাগ্যবান ভাবি এতে কোন মতবিরোধ নেই। অবশ্য, এই গদাইয়ের গদাইগিরির দূর্ধষ আক্রমনাত্মক যাঁতাকলে যে পরেছে সে হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করতে পেরেছে ও কি চিজ। শোনা যায়, ওর (রমনীকুল প্রিয়ভাজন) ধার দিয়ে গেলে তেজী ষাঁড়ও নাকি খানিকটা হীনমন্যতায় ভোগে। উল্লেখ্য, সেইজন্যই বোধ করি তাকে দেখলেই ট্রাকের পেছনের সেই সাবধানবাণীর কথা মনে পরে যায়, “১০০ হাত…………..”।


গদাই-এর জ্ঞাতিভাই, আমাদের নির্ভরযোগ্য World Class Hardware Specialist, ইদানিং বিশ্ব ডিজিটাল ফটোগ্রাফি শিল্পে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ, দৃষ্টান্তমূলক ও মূল্যবান অবদান রাখার অভিপ্রায় নিয়ে আমাদের - সুপ্রিয় কল্লোল ঘোষ (পিতা: হাবিব ঘোষ!!), সনি ও মারকারীর Joint Venture-এ নির্মিত Ultramodern ডিজিটাল ক্যামেরা কিনে সমসাময়িক, আলট্রা গ্লেবালাইজড্ ও বিশ্বনাগরিক ক্যাটাগরিতে উতরে গেছে। আর, হ্যাঁ, ভ্রমনীয় লিডারশিপে সত্যাসত্যই তার জুড়ি মেলা বার। ইন্ডিয়া টুরে আমরা যা কিনা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছিলাম।

পথিমধ্যে কখনও যদি অতিব্যস্ত কোন চাচার (Unmarried) সান্নিধ্য পেয়েছি বলে মনে হয়ে থাকে, তবে নি:সন্দেহে ধরে নেবেন আপনার ধারনা পুরোপুরি সঠিক। তিনি আর কেউ না, আমাদের ক্লাস সিডিউল্ বিষয়ক নিউজ বুলেটিন, “বিসিএস ক্যাডার”, আমাদের মাহমুদ Uncle। ছাত্রছাত্রী, ভাইবোন, বন্ধু ও বান্ধবীগন - আপনার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোন দিন কোন কোর্স Shift হয়ে কোন দিন, কি বার কোন রুমে, কখন পরিবর্তন হয়েছে: কোন Syllabus-এ কখন, কোন কোর্সের জ্বালাময়ী, দু:স্বপ্ন উদ্রেককারী Term Test কোন স্যার, কোথায়, কেন ও কি প্রক্রিয়ায় গ্রহন করবেন- এইসব আপডেটেড বুলেটিন যদি আপনার অজ্ঞাত থাকে-দুশ্চিন্তার কোন কারনই নেই। মাহমুদ চাচার দর্শন নিন। সকল মুশকিল আহসান। অবশ্য, যদি তিনি দর্শন দেন। ক্লাশ মিস করা যার কাছে সামান্যের জন্যে Oxford University-তে শিক্ষক হিসেবে মনোনয়ন না পাওয়ার মত আফসোসের শামিল-সেই চাচা আমাদের কারো খুচানিতে মন:ক্ষুন্ন হলেও সে যে আমাদের ক্লাশের Popular ব্যক্তিত্বের একজন, সে আমি ঢের নির্দ্ধিধায় বয়ান করার সুসাহস করতে পারি।

Favorite টুম্পামনি, সারাক্ষন পদার্থের জটিল সূত্রসমূহ ঠোটস্ত করা যার কাছে স্বর্গের টিকেট হাতস্ত করার চেয়েও আনন্দময় মনে হয়। সাক্ষাত্ আযরাইল এসেও যদি তাকে বলে, তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিন, এক্ষুনি বেহশতের প্লাটফরমে যেতে হবে, আমি নিশ্চিত, সে তখন বলে উঠবে, “ভাই, একটু দাড়াঁন, Mechanics-এর এই Chapter-টা একটু শেষ করে আসি।” আমি বাজি ধরে বলতে পারি, কোন ভরা পূর্ণিমার রাতে জোৎস্না দেখতে দেখতে আকাশের অনিন্দ্যসুন্দরী চাদেঁর দিকে চেয়ে সে নি:সংকোচে, নির্বিকার ভঙ্গিতে বলে উঠবে, “Quantum Mechanics-এর Schrodinger Equation-এর Energy Distribution Formula টি Moon এর Compound Particle-এ Apply করার পর Boundary Condition Impose করলে Einstein এর General Relativity-এর কিঞ্চিত Modification হবে বলে আমার ধারনা।” But, ব্যক্তি-টুম্পা তুলনাহীন।

পড়াশোনাকে যে একপ্রকার সাধনার পর্যায়ে নিয়ে গেছে সেরকম আরেকজন আমারি পাড়াতোঁ বোন মিস (মিসেসে-এ Convert করার জন্য যদিও কতিপয় নাছোড়বান্দা, রসিক সহপাঠিদের আপ্রান প্রচেষ্ঠা ছিল সময়- বলাবাহূল্য যা ছিল বেরসিকভাবে ব্যার্থ) জুবায়দা সুলতানা। বাংলা একাডেমির ভষাবিশারদগণ সন্দেহাতীতভাবে তাকে দেখেই যে একনিষ্টতা (Sincerity) শব্দটির নবসংযোজন করেছিল, ইহাতে সন্দেহপোষনকারী যে কেউ তার পড়াশোনার তোড়জোড় দেখামাত্রই সন্দেমুক্ত হবে, এ ব্যাপারে আমি অন্তত নি:সন্দিহান।

আমাদের অনেকের কাছে আবার পড়াশোনা বিষয়টি মাঘ মাসের শীতের দিনে গোসল করার মতই গুরুত্বহীন, অনিয়মিত বলে মনে হয়। আমদের সঞ্জয়ের কথাই শুনুন-

--“এই তোরা সবাই কোথায় যাচ্ছিস?”
--“কেন ক্লাসে”।
--“কি ক্লাস রে?”
--“Solid State”
--“আচ্ছা, এই শোনতো, এই কোর্সের Registration কি আমি করেছিলাম নাকি রে?”
এইরকমই আমাদের রোমান্টিক বয়, ভালবাসায় অন্ধবিশ্বাসী-সঞ্জয় বিশ্বাস। স্বপ্নীল এই পৃথিবীটা যার কাছে সবসময়ই-স্বপ্নময়, রঙ্গিন আর ক্লাস ফাকিঁ দিয়ে ক্যাম্পাসে ঘোরাঘুরির।

কেউ যদি রক্তচোষা (Vampire)-এর স্বশরীরী সাক্ষাত অবয়ব স্বচক্ষে অবলোকন করতে আগ্রহী হোন, তবে কালক্ষেপন না করে শাবি ছাত্রী হল ৪১৪ নং রুমে একবার উকিঁ মারুন। তবে সাবধান, নানা তালবাহানায় একবার সে আপনার Blood Group কুক্ষিগত করতে পারলে শিঘ্রী আপনার দেহ হতে Blood ঘাটতি টের পেয়ে “শালা” মশক নিধনে সিটি কর্পোরেশন কেন কামানের ব্যবস্হা করতে পারল না ভেবে, অধীনস্ত মেয়রের চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার করতে করতে বেরুবেন, এটা বেশ বলা যায়। বর্তমান মহাবিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং-এর পরে সে-ই পদার্থবিজ্ঞান সবচেয়ে ভাল বুঝে বলে আমাদের ধারনা-অন্তত Lab-Viva তে মানবসেবায় ব্রতী প্রতাপশালী মহীয়সী এই লেডি ক্যাডারের Facial Geography দেখলে আমাদের তা উপলব্ধি হয়।

আমাদের ক্লাসের সবচেয়ে চৌকষ ছাত্রী, নাহিন-ভাল রেজাল্ট করা যার কাছে কোন ব্যাপারই না। Derivation of Heisenberg principle in Mathematical Form, Theoretical Expression of Gravitational deflection -সে বুড়ো আঙ্গুলে তুড়ি মেরে বলে দিতে পারে। Demerit যার একটাই, কোন এক রহস্যজনক কারনে, প্রাণহীন ষ্টিলের স্কেলের প্রতি তার যারপরনাই বস্তুবাদীয় অপার্থিব অমর প্রেম সুপরিলক্ষনীয়।

বহূল আলোচিত বাংলাভাই স্বশরীরে আমাদের ক্যাম্পাসে সদর্পে বিচরন করছে-এই তথ্য ফাঁস করে যে কোন সময় প্রাইজমানি যোগাড় করতে পারা আমাদের কাছে কোন সমস্যাই ছিল না। আমি বেশ অনুমান করতে পারি, ইন্টারপোলও যদি এই গ্যাংলিডার পদার্থভাই (অবিকল বাংলাভাইয়ের রেপ্লিকা) এর দর্শন পেত এবং পরক্ষনেই যদি খোদ্ বাংলাভাই আত্মসমর্পন করত, তখন ইন্টারপোল কর্মকর্তারা চিনতে না পেরে Original ভাইকে উদ্ভট “পাগল” বলে আখ্যায়িত করতে কোন দ্বিধাবোধ করত না।

লোকমুখে শোনা যায়, আমাদের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তারা নাকি “Drop”-এর মমার্থ এবং এর পক্ষে একাডেমিক ফাইল-পত্বর তৈরী করার প্রাতিষ্ঠানিক নিয়মাবলী শিখেছিল আমাদের ড্রপিষ্ট গোপালদার সন্নিকটে এসে। সূর্যোদয় দর্শন গোপালদার কাছে অদৃশ্য। আমাদের জানামতে, ক্যাম্পাসে ড্রপ সংখ্যার হিসেবে সে অস্পৃশ্য রেকর্ডধারী। কিন্তু আমরা অবাক বিস্ময়ে বিস্মিত, তার আমাদের সাথেই ভর্তি, আর আমাদের সাথেই বর্হিগমন। কত রহস্য যে লুকিয়ে ধরনীময়। এ রহস্য উন্মোচণে খোদ্ ইউজিসি হাত না লাগালে কোন সুরাহা হবে বলে মনে হয না। উল্লেখ্য, প্রথমদিকে সবখানে যার ছিল সরব উপস্হিতি, কোন এক রহস্যজনক কারনে শেষদিকে তার অতি-নীরব ভুমিকা চোখে পরার মত। নারী (দুর্বোধ্য) কর্তৃক কোন ছ্যা…….না তো………..

Equilibrium Theory-এর সফল প্রয়োগ প্রতিপাদন করার জন্যই বোধ করি সৃষ্টিকর্তা আমাদের ক্লাসে তালিকাভুক্তি করিয়েছিলেন একজন Opposite Charged এডভান্স কোর্স Taker-কে। তবে কোন Cultural Activity? তাকে ছাড়া? কাভি নেহি!

ভাল-মন্দ কিছু বললেই যে কিনা Scientific Calculator নিয়ে হিসাব করতে বসে যায়, আমার পেছনে ওর কত টাকা ক্ষয় হওয়ার সম্ভাবনা,-India Tour-এর চরম মিতব্যয়ী ট্রেজারার, Highly Qualified Personality-ফারুক হোসেন, ভারত ভ্রমনে সারাক্ষন Calculator-এ হিসাবনিকাশের বহর আর আয়োজন দেখে মনে হয়েছিল, আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত সম্পূরক বাজেটে ছলেবলে রাজস্ব আয় বাড়ানোর গুরুদায়িত্ব বুঝি তার উপর ন্যাস্ত।

ভবিষ্যতে রাজনীতির শৈবালময় পিচ্ছিল পথে যে স্লিপ না খেয়ে দৃপ্ত বলিষ্টতায় নির্বিকার দৌড়ে পাড় হয়ে যাবে রাজনীতির জটিল অমসৃন পথ-সে আমাদের Physics Society-এর অতি গুরুত্বপূর্ণ Representative নবীন মুস্তাফিজ। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির মাহাত্ম্য যার কাছে Cultural Society তে ব্যস্ত থাকা, পরে সময় থাকলে হয়তো পড়াশোনা করা।

প্রিয় মুনতাসির, Lab Class-এ যার মাথা নুয়ে একাগ্রচিত্তে Experiment-এর উপর ঝুকে অগাধ জ্ঞানগর্ভ গতিময় (Dynamic) চিন্তার অচিন্তময়তা দেখলে খোদ্ Einstein-ও প্রবল হিংসাবোধে মাথার চুল ছিড়বে, এটা বললে বোধ হয় খুব একটা অত্যুক্তি হবে না।

ললনা সর্ম্পকিত সর্বপ্রকার খোজখবরের Reliable “নিউজ কল সেন্টার” আমাদের Favorite অণুদা। ক্লাসে ছেলেদের সংখ্যার তুলনায় মেয়েদের সংখ্যার লজ্জাকর ভারমাম্যতা (Imbalance) নিয়ে তার চুলচেরা আফসোস এবং ফার্স্টইয়ারে নতুন কোন কোন মেয়ে এসেছে-এই রকম বিষয়ক থিসিস্-এ রিসার্চ পেপার সাবমিটের জন্য ডাটা কালেকশনে যারপরনাই ব্যস্ততা তার সবসময়।

“হে প্রেম, তুমি কেন এমন
নিষ্টুর, বিধ্বংসী, বিস্বাদময়,
ঠিক যেন, তিক্ত স্বাদের করলাভাজা।“
-এ রকম পংক্তি যার সাথে পুরোপুরি মানিয়ে যায়, সে আমাদের Prince. একরোখা কোন শিক্ষকের সর্বশেষ নির্ধারিত কোন পরীক্ষার তারিখ অনির্ধারিত করা বা পরিবর্তন করা তার কাছে নিতান্তই মামুলি ব্যাপার।

“রাসেল ক্রো”- পুরো সেন্সর বোর্ড Unit-এর দ্বারা কয়েক প্রস্ত Filter ব্যবহার করিয়েও যার মুখবদন থেকে অমৃতবাণী নি:সরন বন্ধ করা চ্যালেঞ্জের একটা ব্যাপার হবে।

অন্যদের আতেঁল ভাবতে ভাবতে নিজেই কখন আতঁলামির Extreme পর্যায়ে আতেলসম্রাটে কনভার্ট হওয়া আমাদের একজন বড় ভাইয়ের (নকল-শৈল্পিকতায় যে কিনা যারপরনাই সিদ্ধহস্ত)-এক হাতে যদি ফেরেশ্তা “প্রশ্নসহ পরীক্ষার খাতা” ধরিয়ে বলেন, “অন্য হাতে কি চাও?”--তিনি নিশ্চিতভাবেই ডেমকেয়ার ভঙ্গিতে বলে উঠবেন, “আর কি! ফটোকপি কম্পোজ”।

বাদল কুমার দাশ-আপনি ক্লাসে তাহাঁর পার্শ্বে আসন গ্রহণ করিয়াছেন, আর সুখে-শান্তিতে সময় অতিবাহিত করিতেছেন-একথাটি বলিলে আজকাল কাকপক্ষিও বিশ্বাস করিবে না।

ব্ল্যাক-ডায়মন্ড, প্রিয়ভাষিনী প্রিয় মাসুদ রানা, সাধারন জ্ঞানে যে কিনা অসাধারণ প্রতিভাধর। “স্বাধীনতার ঘোষক কে?”-এই জাতীয় জটিল প্রশ্নের উত্তর তার ঠোটস্ত। সে এতই ধীরে-সুস্তে, থেমে থেমে সুন্দর করে তার উৎকার্ষিক, চিন্তাশীল ও বয়নিষ্ট কথামৃত বয়ান করে যে, মোটামুটি দ্রুতগামী ঠেলাগাড়ী দিয়ে এশিয়ান হাইওয়ে হয়ে ইন্দোনেশিয়া থেকে ঘুরে এসেও তার কথামালার অবশিষ্টাংশ ধরে ফেলা যাবে নি:সন্দেহে। তবে, হ্যাঁ, মুনতাসির ও তার কথার বেগের Vector Summation করলে “Conservation of কথাবার্তা-র velocity” 100% fulfill করবে।

রাগ ৮৯%, গোস্বা ৯%, ক্রোধ ২%-এই তিনের সমস্বত্ব সমন্বয়ে ১০০% সমৃদ্ধ-আমাদের দিব্যদ্যোতি সরকার ধ্রুব। যার হাটার Velocity আলোর গতির প্রায় কাছাকাছি। We know, At v->c, m->0, তার ক্ষেত্রেও সেটা প্রযোজ্য। ওর দাতঁভাঙ্গা নাম ইংরেজিতে অনুবাদ করতে শিক্ষকরা শুধু বেরুনোর দরজা খোজেন। পোস্ট পি.এইচ.ডি. রিপোর্ট সাবমিট করাও বোধ হয় এর থেকে সহজ মনে হয় শিক্ষকদের কাছে। সর্বক্ষন মুচকি হাসির দ্বিতীয় মোনালিসা সৃষ্টির চেষ্টায় অট্টহাসিতে আত্মনিমগ্ন - আলী নেওয়াজ। “হারুন”, কোন আড্ডাতে তার অনুপস্থিতি-তরকারীতে লবণের অভাবের মতই ঠেকে, আমাদের কাছে। মুন্সি, যে কিনা শেয়ার ব্যবসার লাভ-লোকসানের ব্যাপার-স্যাপার অন্য কারো সাথে শেয়ার করে না। জগৎ-সংসার-বৌ বিষয়ক জটিল চিন্তায় নিমগ্ন থাকা-আমাদের হামিদ। অপ্রচলিত ধারার সঙ্গিত-সাধক, আমার রোলমেট, সুরেলা - নাসির। অমায়িক রবিন। প্রানখোলা-ইফতেখার (যার হ্রদয় ভাল ডিটারজেন্ট পাউডার মিশ্রিত ডিস্টিল ওয়াটার দিয়ে ধোঁয়া বলে মনে হয় আমার কাছে), তবে, কোন এক অমীমাংসিত কারনে, অস্বাভাবিকতার চরম পর্যায়ে তার স্বভাবগত স্বাভাবিক উক্তি, “আমি পাগল, আমি পাগল, আমি পা…….”। বেনসনের কবলে আত্মসমর্পিত আজম। আকর্নবিস্তৃত, ভুবনভুলানো বিগলিত হাসির Smile provider বিমল। ক্যাম্পাসের ভ্রাম্যমান ডেইলি নিউজপেপার “দৈনিক মুস্তফা কামাল”, জনসংযোগে যার সফলতা ঈর্ষনীয়, পদার্থবিজ্ঞানের এমন কোন বই-টই বের হয়নি যা ওর টেবিলভান্ডারে নেই, মনোযোগী ছাত্র, যদিও কোন এক অজ্ঞাত কারনে, একাডেমিক মার্কশিটে এর সুস্পস্ট প্রতিফলন খুব একটা স্পষ্ট নয়। অবশ্য এ ব্যাপারে তার কোন মাথাব্যথাও নেই। পরিচ্ছন্ন, ঝকঝকে হ্রদয়ধারী এমদাদ, যার তুলনা সে নিজেই। লেদারীয় অপুদা, কাপড় বিষফে সম্যক জ্ঞানধারী, বিশেষ করে লেদার বিষয়ক ব্যাপার-স্যাপারে। তার ভাষায়, “আপ লেদার বিষয় মে জানতাহে, তো মেরা সাথ্ বাত্ করতাহে”।

“ও, গোহাটি, এত আমার কাছে পুরনো শহর” অথবা, “মধ্যাকর্ষনজনিত কারনেই আগুন সবসময় নিচদিকে যায়”--এই রকম কালজয়ী বানীদ্বয় নি:সৃতকারী-পদার্থবিদ সোহাগ। Always Homesick প্রিয় টুটুল। মাঝে মাঝে নিজ নাম ভুলে যাওয়া, এরকম ঐশ্বরিক গুনাবলী সম্পন্ন-আমাদের রফিক ভাই। ধোঁয়া তুলসীপাতা-রাহাত। ভাজাঁ মাছটি পর্যন্ত উল্টে খেতে না জানা, এমনই অথর্ব, “শুকনো গোবরের গোডাউন”-এই আমি। ----এরকমই বিচিত্র চরিত্রের Peculiar ঘটনার সমাবেশে বিচিত্রময় সমারোহে সমৃদ্ধ আমাদের এই অপাদার্থময় পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ।

কথাগুলি, নিতান্তই নিছক ছেলেমানুষির পর্যায়ে পড়ে। আমাদের ভালবাসার বাধঁন এত দূবল, এতই ঠুনকো নয় যে, এসব নিছক ছেলেমানুষিতে বন্ধুত্বের এক চিলতে পরিমাণ ঘাটতি হবে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শেষপ্রান্তে আমরা। স্বপ্নময় এই প্রশিক্ষক ক্যাম্পাস থেকে আমরা শিখে নিয়েছি- কিভাবে স্বপ্ন দেখতে হয়, সমাজের অজস্র জঞ্জালের মাঝখান থেকে কিভাবে নিজের জন্য একটুখানি আশ্রয় করে নিতে হয়, কিভাবে লেজুরবৃত্তিক ছাত্ররাজনীতির বেড়াজালের মধ্যে থেকেও নিজেকে গড়ার শিক্ষা চালিয়ে নিতে হয়, নিজেকে কিভাবে বিশুদ্ধ রাখতে হয়-যতটুকু পারা যায়। আমরা স্বপ্ন দেখেছিলাম, স্বপ্ন দেখব, স্বপ্রনোদনায়, শুচিতা আর শুভ্রতায়। কারন আমরা জানি, “স্বপ্নের রং নীল”। ক্যাম্পাসের আনন্দঘন অনাবিল মধুর দিনগুলি সত্যিই ভুলার নয়। একতা, বাধঁ-ভাঙ্গা উচ্ছলতা ও গভীর সম্প্রীতির এ এক অনিন্দ্যসুন্দর সন্ধিক্ষণ। কিন্তু কোন এক নগ্ন বাস্তব কারনে আমাদের কয়েকজন আশাহত সহপাঠিদের উদ্দেশ্যে একটু প্রেরণা দেওয়া প্রয়োজন।

সাজানো জীবনের কংক্রিট-ভাঙ্গা এলোমেলো উচ্ছ্বাস, সময়ের অপ্রতিরোধ্য চলমান গতিময়তা আরও একবার প্রমান করে দিবে, কোন প্রাচীরই ইতিহাসের স্বপ্নভঙ্গের মত শেষঅব্ধি চিরস্হায়ী নয়। সব দেয়ালেরই কোথাও না কোথাও একটা ছিদ্র থাকে। বাধ-না-মানা মানুষ সেই ছিদ্রপথে চোখ রাখে, সেই ছিদ্র একসময় ক্রমশ বড় হয়, তারপর সেটি আর ছিদ্র থাকে না, তোরণ হয়ে আহবান করে দু’পাশের মানুষকে, বেদী হয়ে পড়ে থাকে আলিঙ্গনাবদ্ধ মানুষের পায়ের নিচে।

--আমরা যেন সেরকমই বাধ-না-মানা স্বচ্ছ মানুষে পরিণত হই, অন্ধকারের বিপথে হই আলোর পঙ্গপাল, নিয়োজিত হই দীপ্ত শপথ রক্ষায়, এই প্রত্যাশায় অসমাপ্ত পরিসমাপ্তি টানছি এখানেই।

ভাল থাকুন, সবাই।


রিপন,
শাবিপ্রবি, সিলেট, বাংলাদেশ।
আরেকটু পড়ি, কি বলেন.......

বঙ্গবন্ধুর খুনি ডালিমের কানাডা আগমন

কানাডাতে থাকার সুবাদে কানাডার প্রাত্যাহিক খবরাদি খোদ্ কানাডার গনমাধ্যমগুলো থেকে নেয়ার সুযোগ পাচ্ছি। সেই সূত্র ধরেই খবরটি জানাচ্ছি।

বঙ্গবন্ধুর খুনি লে. কর্নেল (অব.) শরীফুল হক ডালিম দু’সপ্তাহ কানাডায় অবস্থান করেছেন। আর বহন করছেন অন্য একটি দেশের পাসপোর্ট । এই পাসপোর্টের কারণেই ডালিম ঘুরে বেড়াচ্ছেন নানা দেশ। একাধিক নির্ভরযোগ্য সুত্রে এই তথ্য পাওয়া গেছে।

গত ২ নভেম্বর কানাডার রাজধানী অটোয়াতে এসেছিলেন ডালিম। অটোয়ার ৩৩ নিকোলাস স্ট্রিটের নভোটেল হোটেলের ৩৩৪ নম্বর রুমে ছিলেন একটানা ৮ দিন। সেখানে বসেই একজন বাঙালি ইমিগ্রেশন কনসালটেন্টের সাথে দু’দফা বৈঠক করেন। ধারণা করা হচ্ছে, ইমিগ্রেশন বিষয়ক আলোচনা হয় তাদের মধ্যে। হোটেল রুমে বসেই প্রচুর ফোন কল করেছেন ডালিম, যার বেশিরভাগই পাকিস্তান, হংকং এবং লিবিয়ায়।এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাইলে নভোটেল হোটেলের রুম ডিভিসন ম্যানেজার এলেক্স গ্রিকোরেস্কু বলেন, কাস্টমারের কোনো তথ্য আমরা থার্ড পার্টির কাছে সরবরাহ করতে পারিনা। তাই বিস্তারিত কিছু জানাতে পারছি না। সূত্র মতে, ১৩ নভেম্বর সকাল ১০টায় নভোটেল থেকে চেক আউট হন ডালিম। একইদিন রাতে আসেন টরন্টো । সেই রাতে মার্খামের এক আত্নীয়ের বাসায় রাত কাটান । পরের দিন ১৪ নভেম্বর রাত ১২ টা ১০ মিনিটে ক্যাথে প্যাসিফিক এয়ারলাইন্সের সিএএক্স-২৭ নম্বর ফ্লাইটে হংকং এর উদ্দেশ্যে টরন্টো ত্যাগ করেন। বর্তমানে ডালিমের অবস্থান নিয়ে দু’ধরনের তথ্য পাওয়া গেছে। একটি সূত্র বলেছে, ডালিম এখন হংকং অবস্থান করছেন। আরেকটি সূত্র জানিয়েছে, পাকিস্তানে অবস্থানের কথা। আরো জানা গেছে, সে এখন বৃটিশ পাসপোর্ট বহন করছেন। এ কারণেই যে কোনও সময় যে কোনও দেশ ভ্রমণ করতে পারছেন। তবে ডালিমের একজন ঘনিষ্ঠভাজন এই তথ্যটি সঠিক নয় বলে জানান।




১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর জেলহত্যার পর ৪ নভেম্বর ডালিমসহ বঙ্গবন্ধুর খুনিদের একটি বিশেষ বিমানে রেঙ্গুন হয়ে ব্যাংকক পাঠানো হয়। সেখান থেকে পাকিস্তান সরকারের দেয়া একটি বিমানে তাদের লিবিয়া নিয়ে যাওয়া হয়। ১৯৭৬ সালের ৮ জুন এই ১২ জনকে বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়। হত্যাকাণ্ডে নেতৃত্বদানকারী লে. কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান ও লে. কর্নেল খন্দকার আব্দুর রশীদ চাকরিতে যোগ দিতে রাজি হননি। তারা সেখানে ব্যবসা-বাণিজ্য শুরু করেন। এদের মধ্যে লে. কর্নেল শরিফুল হক ডালিমকে চীন দূতাবাসে প্রথম সচিব, লে. কর্নেল আজিজ পাশাকে আর্জেন্টিনায় প্রথম সচিব, মেজর একেএম মহিউদ্দিন আহমেদকে আলজেরিয়ায় প্রথম সচিব, মেজর বজলুল হুদাকে পাকিস্তানে দ্বিতীয় সচিব, লে. কর্নেল শাহরিয়ার রশিদকে ইন্দোনেশিয়ায় দ্বিতীয় সচিব, মেজর রাশেদ চৌধুরীকে সৌদি আরবে দ্বিতীয় সচিব, মেজর নূর চৌধুরীকে ইরানে দ্বিতীয় সচিব, মেজর শরিফুল হোসেনকে কুয়েতে দ্বিতীয় সচিব, কর্নেল কিসমত হাশেমকে আবুধাবিতে তৃতীয় সচিব, লে. খায়রুজ্জামানকে মিসরে তৃতীয় সচিব, লে. নাজমুল হোসেনকে কানাডায় তৃতীয় সচিব ও ক্যাপ্টেন আবদুল মাজেদকে সেনেগালে তৃতীয় সচিব হিসাবে নিয়োগ দেয়া হয়।

পরে একেএম মহিউদ্দিন আহমেদকে লিবিয়ায় বদলি করা হয় সচিব পদে এবং লে. কর্নেল শাহরিয়ার রশিদকে আলজেরিয়ার দ্বিতীয় সচিব পদে নিয়োগ দেয়া হয়। মেজর রাশেদ চৌধুরীকে আবার পরে চীন দূতাবাসে স্থায়ী পদে যুক্ত করা হয়। কর্নেল কিসমত হাশেমকে পরে আবার দেশে ফিরিয়ে আনা হয়।

পরবর্তীতে এরশাদ সরকার ডালিমকে বেইজিংয়ে নিয়োগ দিতে গিয়ে না পেরে পরে হংকংয়ে ভারপ্রাপ্ত মিশন প্রধান হিসাবে নিয়োগ দেন। পোল্যান্ডে ডালিমকে একই পদে নিয়োগ দিলেও সেদেশের সরকার তাকে গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানায়। এরপর লন্ডনে এরশাদ ও ডালিমের মধ্যে এক বৈঠকের ভিত্তিতে তাকে কেনিয়াতে হাইকমিশনার নিয়োগ দেয়া হয়। ডালিম নানা জায়গায় অনেক অঘটনের জন্ম দেন। তাকে পোল্যান্ড সরকার গ্রহণ না করায় সে নিয়োগের আদেশ না থাকা সত্ত্বেও লন্ডন চলে আসে। এরশাদ লন্ডন সফরের সময় হিথ্রো বিমান বন্দরের এলকক এন্ড ব্রাউন স্যুটে এবং পরবর্তীতে হোটেলে তার সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করেন। অথচ সে সময় তার কোন নিয়োগপত্র ছিল না। কেনিয়া সরকার ডালিমের অকূটনীতিসুলভ আচরণে অসন্তুষ্ট হয়ে তার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকবার বাংলাদেশ সরকারের কাছে অভিযোগ করে। ডালিম চীনে কর্মরত অবস্থায় সেখানকার রাষ্ট্রদূত আব্দুল মমিনকেও নানাভাবে হেনস্তা করেন। কেনিয়া এবং লিবিয়াতে ডালিমের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলাও রয়েছে।
বঙ্গবন্ধুর খুনি ডালিমের কানাডা সফরের খবরে প্রবাসী বাংলাদেশীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ বিরাজ করছে।

শান্তিপ্রিয় কানাডা কী খুনীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল? এই প্রশ্ন এখন অনেকের মনে। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারি লে. কর্নেল (অব.) শরীফুল হক ডালিম ও লে. কর্নেল (অব.) এসএইচ এমবি নূর চৌধুরী এখন কানাডায় অবস্থান করছেন। এমন খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে কয়েক সপ্তাহ আগে। ঢাকার কয়েকটি পত্রিকায় এই নিয়ে সংবাদও প্রকাশিত হয়েছে। বাংলাদেশের আইনমন্ত্রীও এসেছিলেন কানাডায়। কানাডা সরকারের বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার সাথেও বৈঠক করেছেন। কথা বলেছেন কানাডিয়ান আইনজীবিদের সাথে।এ্যাটর্নি জেনারেলের সাথে বৈঠকের খবরও জেনেছি আমরা। ফলাফল কী হবে সেটা আমরা জানিনা। তবে একজন বাংলাদেশি কানাডিয়ান হিসাবে বলতে দ্বিধা নেই, কানাডা খুনীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হতে পারে না। খুনীদের দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যাবার ব্যাপারে বেশ কিছু আইনগত জটিলতা আছে। কিন্তু এই জটিলতা কাটিয়ে ওঠা অসাধ্য কিছু নয়। কানাডা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ অবশ্য বলেছেন, তারা এই বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরু করেছেন। কিন্তু খুনীদের বহিস্কারের দাবিতো সবার দাবি হওয়া উচিত। আপনি কেনো নিরব? আওয়াজ তুলুন এখনই। কলংকমোচনের এই যাত্রায় আপনিও শরিক হোন।

তথ্যসূত্র: টরোন্ট কেন্দ্রিক বাংলা সাপ্তাহিক "বেঙ্গলি টাইমস", বিডি কানাডা ডেইলি এবং অন্যান্য।
আরেকটু পড়ি, কি বলেন.......

২০১২ মিথ

যারা নিয়মিত ছবি দেখেন তারা নিশ্চয়ই জানবেন যে পৃথিবীতে এখন রোনাল্ড এমরিচ পরিচালিত “২০১২-উই ওয়ার ওয়ার্নড” ছবিটি নিয়ে রীতিমত তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে। ইতিমধ্যে ব্যাপক ব্যবসাসফল হয়েছে ছবিটি। যে ছবিটির কাহিনী নিয়ে খোদ নাসাও নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছে প্রতিদিন। নাসাবিজ্ঞানীদের কাছে প্রতিদিন শত শত মানুষ জানতে চাচ্ছে ২০১২ সাল আসলেই পৃথিবীর শেষ পরিণতির বছর কিনা?


ছবি: ছবির অফিসিয়াল ব্যানার

ছবিটির কাহিনী নিয়ে কথা বলার আগে চলুন এর ব্যাকগ্রাউন্ড-টি সম্বন্ধে ঘাটাঘাটি করা যাক। প্রাচীন মায়ানিস্টরা তাদের নিউমারালজি ব্যবহার করে প্রায়ই ভবিষ্যৎবানী করত এবং সেগুলি একটি ক্যালেন্ডারে তাদের অদ্ভদ ভাষায় লিপিবদ্ধ করে রাখত। প্রাচীন এই মায়ান ক্যালেন্ডারের তথ্য আধুনিক ভাষাবিজ্ঞানীরা পাঠোদ্ধার করার পর দেখা যায় সেখানে স্পস্টভাবে উল্লেখ করা আছে যে, ২০১২ সালের ২১শে ডিসেম্বর হবে পৃথিবীর ৫১২৫ বছরের ইতিহাসে শেষ দিন। এই ভবিষ্যৎবানী করতে মিথলজিস্টরা কোন সংখ্যাতত্ত্ব ব্যবহার করেছিল সেটা এখনও জানা যায়নি। তবে মায়ানিস্টরা এর কারন হিসেবে সৌর ঝড়, পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্রের বিপর্যয়, ভূমিকম্প, অগ্নুৎপাত সহ ইত্যাদি প্রাকৃতিক বিপর্যয়কে বেছে নিয়েছিল। নস্ট্রাডুমাসও এই ভবিষ্যৎবানীর ব্যাপারে খানিকটা ইংগিত দিয়ে গিয়েছিলেন।


ছবি: মায়ান লং ক্যালেন্ডার

মেইনস্ট্রিম মায়ানিস্টরা আরও দেখেছিল যে ২০১২ সালের পর শুধু পৃথিবীই নয়, সৌরজগতের আরও কিছু গ্রহ বড় ধরনের পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাবে। মায়ান ক্যালেন্ডারের এই ভবিষ্যৎবাণীকে উপজিব্য করেই রোনাল্ড এমেরিচের “২০১২” ছবিটি বানানো। তাহলে চলুন ছবিটির কাহিনীবিন্যাসে একটু নজর দেওয়া যাক।

২০০৯ সাল। আমেরিকান এক ভুবিজ্ঞানী এড্রিয়েন হেল্মাসলী তার ইন্ডিয়ান বন্ধু সাত্নামের সাথে দেখা করতে যায়। বিজ্ঞানী সাত্নাম তখন তার গবেষনায় দেখেছিল যে একটি বিশাল সৌরবিস্ফোরনের কারনে উৎগত নিউট্রিনোগুলো মাইক্রোওয়েভের মাধ্যমে পৃথিবীর অন্তস্থরের তাপমাত্রা অবিশ্বাস্যভাবে বাড়িয়ে দিচ্ছে।


ছবি: বিশাল সৌরবিস্ফোরনের কারনে উৎগত নিউট্রিনো

এড্রিয়েন তখন এর পরিণতিটি অনুধাবন করার পর বিষয়টি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট থমাস উইলসান এবং ওয়াইট হাউসের চীফ ইন স্টাফ-কে অবহিত করেন। পরে প্রেসিডেন্ট জি-৮ সম্মেলনে সব সদস্য রাষ্ট্রকে দুযোর্গটি সম্পর্কে সচেতন করে দেন। জি-৮ সংঘের সব সদস্য রাষ্ট্র তখন সিদ্ধান্ত নিল যে, একটি গোপন প্রজেক্টের মাধ্যেমে তিনটি বিশাল জাহাজ বানানো হবে যেগুলো কমপক্ষে ৪ লাখ মানুষ বহন করতে পারে। এমনকি বাজেট উত্তোলনের জন্য বিত্তশালীদেরও এক বিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে টিকেট বিক্রির সুযোগ দেয় তারা।


ছবিসূত্র: ইন্টারনেট

২০১২ সাল। জ্যাকসন নামে লসএন্জেলেসের একজন লেখক রাশিয়ান বিলিয়নার ইউরির ড্রাইভার হিসেবে পার্টটাইম কাজ করত। তথন জ্যাকসনের সাবেক স্ত্রী কেট এবং তাদের দু’সন্তান নোয়া ও লিলি তার নতুন বয়ফ্রেন্ড, সৌখিন পাইলট, গর্ডনের সাথে থাকত। জ্যাকসন একবার নোয়া এবং লিলিকে ইয়েলোস্টোন ন্যাশনাল পার্কে বেড়াতে নিয়ে গিয়েছিল। সেখানে তাদের সাথে পরিচয় হয় এক সন্ন্যাসী তথ্যবিদের(চার্লি)। চার্লি সেই পার্ক থেকে একটি রেডিও শো নিয়মিত প্রচার করত। সে ২০১২ সালে পৃথিবী ধ্বংসের ব্যাপারটা জানত এবং মনে প্রানে বিশ্বাস করত। সে জাহাজ নির্মানের গোপন প্রজেক্টের ব্যাপারে খোঁজ নিত। এমনকি জাহাজের অবস্থান চিহিত ম্যাপটাও তার কাছে ছিল। ক্যালিফোর্নিয়াতে যখন মাটিতে ফাটল দেখা দিতে শুরু করল, তখন তারা বাড়ি ফিরে গেল এবং পরে জ্যাকসন একটি প্রাইভেট প্লেন ভাড়া করল তার পরিবারকে বাচাঁনোর জন্য।


ছবিসূত্র: ইন্টারনেট

পরে যখন পুরো শহরটি প্রশান্ত মহাসাগরে তলিয়ে যেতে শুরু করল তখন জ্যাকসন তার পুরো পরিবার এবং গর্ডনকে নিয়ে শহর ছেড়ে আসতে লাগল। পৃথিবীজুড়ে যখন প্রবল ভুমিকম্প হতে শুরু করল তখন তারা ইয়েলোস্টোনে চলে গেল চার্লির ম্যাপটা উদ্ধার করার জন্য। কিন্তু ইয়েলোস্টোনে তখন ভয়ংকর অগ্নোৎপাত শুরু হয়ে যাওয়ায় তারা কোনভাবে প্রান নিয়ে পালিয়ে আসল। চার্লি, যে কিনা সবসময় পর্দার আড়ালে থেকে বিপযর্য়ের খবর রেডিও শোর মাধ্যমে সবাইকে জানাত, সেও ঐ অগ্নোৎপাতে প্রাণ হারাল।


ছবিসূত্র: ইন্টারনেট

জাহাজটি চীনে আছে জানতে পেরে জ্যাকসনরা প্রথমে লাসভেগাসে গিয়ে ইউরির সাথে দেখা করল। পরে ইউরি ও তার দু’ছেলে, গার্লফ্রেন্ড তামারা এবং পাইলট সাসা-ও তাদের সাথে যোগ দিল। তারপর তারা সবাই চীনের পথে রওয়ানা দিল। সেখানে পৌছার পর তাদের হাতে টিকেট না থাকায় তারা কোনভাবেই ভিতরে প্রবেশ করতে পারল না। জ্যাকসন লক্ষ্য করল অনেক পশুকে কয়েকটি হেলিকপ্টার করে জাহাজের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। পরে এক বৌদ্ধ সন্ন্যাসীর প্রচেষ্টায় তারা একটি পশুবহনকারী হেলিকপ্টারের হাইড্রোলিক চেম্বারে করে গোপনে জাহাজের ভেতরে ঢুকে গেল।

একদিন সান্তাম বন্ধু এড্রিয়েনকে ফোন করে জানাল যে, একটি ভয়াবহ সুনামী পুরো ইন্ডিয়াকে প্রাস করে নিচ্ছে এবং সেই সুনামীটি ক্রমান্বয়ে জাহাজের অবস্থানের দিকে ধেয়ে আসছে। কথাটি শুনামাত্রই এনুজার (জাহাজটির কমান্ডার ইন চীফ) জাহাজের মুল ফটকটি বন্ধ করতে নির্দেশ দিল। তখন বাইরে লাখ লাখ মানুষ অপেক্ষা করছিল জাহাজটির ভিতরে প্রবেশ করার আশায়। এড্রিয়েন তখন জাহাজের ভিতরে সবাইকে বুঝাতে সমর্থ হল যে তার ইন্ডিয়ান বন্ধুর গবেষনালব্ধ ফলাফল আজ না জানা থাকলে তাদেরকেও করুন মৃত্যুবরন করতে হত। পরে ক্যাপ্টেন মানবিক দিকটি বিবেচনা করে জাহাজের মুল ফটকটি খুলে দিতে কর্মচারীদের আদেশ দিল। তখন ধস্তাধস্বির সময় গর্ডন নিহত হল এবং তার দেহের কারনে একটি গেট বন্ধ না হওয়াতে জাহাজের ইন্জিন চালু হচ্ছিল না। তখন সুনামীটি তীব্রবেগে জাহাজের দিকে ধেয়ে আসছিল। পরে জ্যাকসন এবং নোয়া একত্রে অনেকক্ষন কাজ করে গেটটা বন্ধ করতে সমর্থ হল। জাহাজটিও তখন চলতে শুরু করল। পরে জাহাজটি অল্পের জন্য মাউন্ট এভারেস্টের সাথে সংঘর্ষ হাত থেকে রক্ষা পায়।


ছবিসূত্র: ইন্টারনেট

যখন সুনামীর তান্ডবলীলা কমে আসতে শুরু করল তখন স্যাটেলাইটের ছবিতে দেখা গেল যে, আফ্রিকা মহাদেশ আবার নতুন করে গজে উঠতে শুরু করেছে এবং তখন আফ্রিকার ড্রাকেন্সবার্গ পর্বতটি পৃথিবীর উচ্চতম স্থান হিসেবে দেখা গেল। পরে জাহাজ তিনটি “গুড হউপ”বন্দরে গিয়ে ভীড়ল। পরে জ্যাকসন, তার পরিবারের সাথে আবার বনিবনা করে ফেলল। আর এড্রিয়েন “লায়য়া” নামের একটি মেয়ের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলল।

শেষে পরিবর্তিত আফ্রিকা এবং এশিয়ার মানচিত্র সম্বলিত পৃথিবীর ছবি দেথিয়ে ছবিটির সমাপ্তি দেখানো হয়।


ছবিসূত্র: ইন্টারনেট

ছবিটির স্পেশাল এফেক্ট ছিল অত্যন্ত আকষর্নীয়। বিশেষ করে শহর ধ্বংসের যে ফুটেজগুলো তৈরি করা হয়েছে এককথায় সেগুলি ছিল চোখধাঁধানো। সাউন্ড এডিটিংয়েও ছবিটির উৎকর্ষতা গতানুগতিক ছবিগুলো থেকে আলাদা। কাহিনীবিন্যাসে গতিময়তাএ সবাইকে শেষ পর্যন্ত ধরে রাখবে নিসন্দেহে। প্রায় তিন ঘন্টার এই শ্বাসরুদ্ধকর ছবিটি দেখতে কেউই একঘেয়ে অনুভব করবেন বলে মনে হয়না।

ছবিটির লিংক

ছবিটির কাহিনীতে বা মায়ানিস্টের ক্যালেন্ডারে যাই লিখা থাকুক না কেন আধুনিক মহাকাশবিজ্ঞানীরা কিন্তু এই ভবিষ্যৎবানী ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিচ্ছেন। নাসার বিজ্ঞানীরাও পৃথিবী ধ্বংসের আশু কোন সম্ভাবনাই নাই বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে। তারপরও সন্দেহবাতিক মানুষদের সন্দেহ তাতে কোনভাবেই দুর হচ্ছে না। অনেকে এখন থেকেই দিনগুনা শুরু করে দিয়েছেন। দেখাই যাক তাহলে ২০১২ সালের ২১শে ডিসেম্বর আসলেই পৃথিবীর শেষ পরিণতির দিন কিনা?


তথ্যসূত্র:
১) মায়ানিক তথ্যপুঞ্জি
২) ২০১২ ফিনমিনা
৩) মায়ার লং ক্যালেন্ডার
আরেকটু পড়ি, কি বলেন.......

বাবা

[বাবাকে নিয়ে আবেগী কবিতা। কবিতা বললে ভুল হবে। কবিতার ধার দিয়ে যায় নি। কিছু ছড়ানো-ছিটানো এলোমেলো শব্দগুলোকে একটি প্লাটফরমে নিয়ে আসার ক্ষীন চেষ্টা। আমার বাবা এখন আমার থেকে হাজার মাইল দুরে। এটা লিখার সময় বাবাকে খুব অনুভব করেছি, মনে হয়েছিল বাবা আমার সামনে বসা। অনেকদিন পর বাবার সাথে সামনাসামনি কথা বললাম। সেই ভাল লাগার অনুভুতি থেকেই লিখলাম]

বাবা,
সেই প্রথম তুমি যেদিন,
শিশির জমা ঘাসের মধ্য দিয়ে
হাত ধরে নিয়ে গিয়েছিলে আমায়
আমার প্রথম স্কুলে,
শিমুলচাপা বাগানের ধার দিয়ে।
আর আমি, স্কুলের ব্যাগ কাধেঁ নিয়ে
মৃদু পায়ে চলেছিলাম তোমার পিছু পিছু,
নিরিবিলি শান্ত ছেলের মত।


পথে আমি বায়না ধরেছিলাম,
হাওয়াই মিঠাই খাব বলে,
তুমি মিতালীপাড়ার নুড়িকাকুর দোকান থেকে
কিনে দিয়েছিলে, পরম আদরে।
মনে পড়ে বাবা?

বাবা,
অঝোড় ধারায় বৃষ্টি হচ্ছিল সেদিন,
স্কুলে আটকা পড়ে আছি, অনেকক্ষন।
তুমি সেদিন আমার ছোট্ট সবুজ ছাতা নিয়ে
মেঠো পথের কাদাঁ ডিঙ্গিয়ে
আমাকে নিয়ে যেতে এসেছিলে,
অনেক দুর থেকে, খালি পায়ে।
কপালে বিন্দু বিন্দু, ক্লান্ত তুমি,
তবু আগলে ধরলে আমায়।

মাথা সামান্য ভিজে গিয়েছিলে বলে
তুমি সেদিন তোমার শার্টের কোনা দিয়ে,
মুছে দিয়েছিলে আমার ভেজা চুল।
আর তোমার মায়ামাখানো চোখ রাঙ্গিয়ে
শাসন করেছিলে,
“আর কক্ষনও ভিজবি না বৃষ্টিতে, বুঝলি?”
মনে পড়ে বাবা?

বাবা,
গ্রীষ্মের আমকাঠাঁলের ছুটির সময়,
উত্তরপাড়ার ছেলেদের সাথে
কাবাডি খেলে ঘরে ফিরে আসার সময়
বেয়াড়া গাছের কাটার উপর পড়ে গিয়ে
পা খানিকটা কেটে গিয়েছিল,
তুমি অস্থির হয়ে
সাদা কাপড়ের পট্টি বেধেঁ দিয়েছিলে
পায়ের জখমের উপর, সযতনে।

ঐদিন রাত্রিতে ঘামজ্বরে
গা পুড়ে যাচ্ছিল বলে,
তোমার তীব্র আকুলতা
সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছিল সেদিন।
তোমার চোখের কোনে
টলমল করছিল স্নেহঝড়ানো উদ্বিগ্নতার জল।
সারা রাত জেগে আমার পাশে নির্ঘুম তুমি,
আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়েছিলে,
পরম মমতায়।
মনে পড়ে বাবা?

বাবা,
সেদিন প্রথম বৃত্তি পরীক্ষার দিন,
ঘর থেকে বের হওয়ার আগে,
আমার প্রবেশপত্র আর কলম
হাতে ধরে দিয়ে বলেছিলে,
“ভাল করে পড়ে উত্তর করিস, বাবা”
তোমার চোখে ছিল তখন,
আমার জন্য আকাশছোয়াঁ স্বপ্ন,

পরীক্ষা শেষে তুমি আমায় নিয়ে গিয়েছিলে,
রথযাত্রার মেলায়, পড়ন্ত গোধুঁলিবেলায়।
প্রথম নাগোরদোলা চড়িয়েছিলে সেদিন তুমি আমায়।
তুমি তোমার কষ্টার্জিত টাকা দিয়ে
কিনে দিয়েছিলে একটা সাদা কবুতর, মেলা থেকে।
সেই কবুতর হাতছাড়া করতাম না আমি কখনও,
জড়িঁয়ে রাখতাম সবসময়, তোমার উপহার বলে।
মনে পড়ে বাবা?

বাবা,
আমার টিউশনির টাকা
একটু একটু করে জমিয়ে,
আমি তোমাকে দিয়ে বলেছিলাম একদিন,
“বাবা, একটা নীল ডোরাকাটা শার্ট,
আর একটা ফিতাওয়ালা কালো জুতা কিনে আনবে তোমার জন্য।”
তুমি দুটি শার্ট কিনে এনেছিলে সেদিন,
অসীমবাবুর দোকান থেকে, কিন্তু একইরকম।
একটা আমায় দিয়ে বলেছিলে,
“নে, এটা তোর জন্য, জুতো তো আমার আছে,
কি হবে শুধু শুধু কিনে”
তোমার সেই নীল শার্ট এখনও আলমারিতে যত্নে রাখা,
ব্যবহার করনা তুমি, নষ্ট হয়ে যাবে বলে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ প্রান্তে আমি,
স্কলারশীপ নিয়ে দেশের বাইরে আসার সময়,
আবেগি তুমি, কান্না থামিয়ে রাখতে পারছিলে না।
ভোঁ ভোঁ করে কেদেঁ উঠেছিলে সবার সামনে।
আমার কপালে চুমু খেয়ে বলেছিলে,
“ভাল থাকিস, বাবা”

সেই তুমি আজ বার্ধক্যের ভারে জর্জরিত।
ডায়াবেটিস, রক্তচাপ,
কোমড়ের ব্যথা, কি নেই তোমার?
প্রতিদিন সন্ধ্যায় আমার একটি ফোনের জন্য
অপেক্ষা করে বসে থাকো জীর্ন তুমি,
চাতকপাকির মত।
একদিন কথা না বললে
অস্থির হয়ে আমার সাথে রাগ করে বসে থাকো,
অবোধ শিশুদের মত।
মনে পড়ে বাবা?

বাবা,
আচ্ছা আমি কি পারব, তোমার মত হতে?
ভয় হয়,
আমার।
একটু মাথায় তোমার আশীষের হাতটি বুলিয়ে দিবে, বাবা, ঠিক আগের মত।


ছবিসূত্র: ইন্টারনেট


রিপন
৬ নভেম্বর, ২০০৯
ওন্টারিও, কানাডা।
আরেকটু পড়ি, কি বলেন.......

জয়তু বাংলাদেশ, জয়তু নিজামী

মেজাজটা খারাপ যাচ্ছে। ঘরে পানি নেই। বাসায় পানির লাইনে কাজ চলছে। সেটাও মূখ্য নয়। ইদানিংকালের বেশ কয়েকটা পোস্টের লিখার মাজেজা মেজাজ খারাপের অন্যতম কারন। এই মেজাজ গরম নিয়েই আরও দুটি খন্ডচিত্র আর একটি মন্তব্য উদ্গরন করলাম এই পোস্টে। যদি রাগের কিছুটা উপশম হয়, এই উদ্দ্যেশ্যে। কিন্তু হিতে বিপরীত হয়েছে। এই পোস্টটা লিখে সাবমিট বাটনে ক্লিক করার সময় আমার হাত রাগে আরও থরথর করে কেপেঁ উঠেছিল।

খন্ডচিত্র-১: শান্ত সৌম্য চেহারা। দেখলেই অন্তরের অন্তরস্থল থেকে শ্রদ্ধাবোধ ঝরে পড়ে। শ্বেত শুভ্র দাড়ী। মনে হয় আকাশের এক চিলতে রুপালী চাদঁ যেন চোয়ালের নিচে এসে নিশ্চুপ শুয়ে আছে। চোখে বাদামী ফ্রেমের চশমা। দুধে-আলতায় গায়ের রং। ধবধবে সাদা দামী পাঞ্জাবী। মাথায় মখমলের পাগড়ী। দেখলেই মাথা নত হয়ে আসে। তিনি আমাদের মাননীয় প্রাক্তন মন্ত্রিমহোদয়, মতিউর রহমান নিজামী।



ছবি: প্রাক্তন মন্ত্রি মতিউর রহমান নিজামী

মানবসেবায় ব্রতী এই ব্যক্তির জনসেবাময় কাজের তালিকা বলে শেষ করা যাবেনা। মহান এই ব্যক্তি স্বাধীনতা দিবসে উনার মূল্যবান সময় ব্যয় করে পতাকাবাহী মার্সিডিজ গাড়ীতে করে জাতীয় স্মৃতিসৌধে গিয়ে ৭১ এর শহীদের আত্মাগুলোর শান্তির মাগফেরাত কামনা করেন। ধন্য শহীদসন্তানেরা, ধন্য আমাদের পতাকা। কিছু দিন আগে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত এবং উজ্জিবীত করার জন্য মহান মুক্তিযুদ্ধ পরিষদ গঠন করেছেন। এত মাত্রাতিরিক্ত কর্মব্যস্ততার মধ্যেও উনি উনার কর্মনিষ্ট, স্নেহময় হাত দিয়ে এই দেশকে, দেশের মাটিকে আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশের মানুষ গর্বিত।


ছবি: শিবিরের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বনার্ড্য মিছিল

আর এইসব সমাজসেবামূলক কাজ সুষ্ঠুভাবে চালিয়ে নেওয়ার জন্য সরকারী তহবিল খেকে প্রায়ই বনানীতে রাজউকের প্লট, বিলাসবহুল গাড়ী সহ অসংখ্য অর্থসাহায্য দেওয়া হয়। এখন উনি অঢেল সম্পত্তির মালিক। অর্থকষ্ট খাকলে তো জনহৈতিষীমূলক কাজকর্মগুলো সঠিকভাবে বুদ্ধিমত্তার সহিত চালানো যাবে না। এটা তো বুঝতে হবে আমাদেরকে। বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধকে নতুন মাত্রায় উজ্জিবীত করে রাখার জন্য মহান, সমাজসেবী এই শ্রদ্ধেয় মানুষটির নিকট বাংলাদেশ চিরকাল ঋণী হয়ে থাকবে।


খন্ডচিত্র-২: আরেকটি ঘটনা। এনার গায়ে নোংরা কাপড়, পায়ে ছেড়া স্যান্ডেল। কাচাঁ-পাকা কুৎসিত দাড়ি। হলুদ দাতঁ। হাড় জিড়জিড়ে শরীর। দেখলেই গা শিরশির করে, ঘেন্নায় বমি চলে আসে। ৭১ এর সংগ্রামের (?!?!) সময় মুক্তিযোদ্ধা আছিলেন। বিশ্রী চেহারার লোকটির দিকে নাম নুরুল ইসলাম। মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম কোথায় জানি পড়ে গিয়ে ওর কালো কদাকার হাটুটি ভেঙ্গে ফেলেছেন। রাজশাহী হাসপাতালে ভর্তি এখন। অস্ত্রোপাচারের পর প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। শরীরে প্রচুর রক্তক্ষরন হওয়ার জন্য প্রচুর রক্ত ঘাটতি দেখা দেয়। কত্যব্যরত ডাক্তাররা অতিসত্ত্বর রক্তের দরকার বলে জানিযেছেন। কিন্তু রক্ত কেনার টাকা নেই। গত বুধবার জমানো শেষ সম্বল সাড়ে তিন হাজার টাকাটাও চুরি গেছে হাসপাতালের বেড থেকে। হায়রে কপাল! চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার ইব্রাহিমপুর গ্রামের এই অসহায় মুক্তিযোদ্ধা হাসপাতালের মেঝেতে শুয়ে আকুল হয়ে কাদছিলেঁন। সামনে যাকেই পাচ্ছিলেন তার কাছেই মুক্তিযোদ্ধা সনদের বিনিময়ে এক ব্যাগ রক্ত চাইছিলেন আর হাউমাউ করে কাঁদছিলেন।


ছবি: মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম (এই ছবিটি আমি আমার আরেকটি ব্লগে দিয়েছি)

মুল খবরের লিংক

মন্তব্য: আমাদের শান্ত সৌম্য নিজামীরা আমাদের মানুষকে কন্ডোম (শিষ্টাচার: এই সুন্দর উপমাটি আমারব্লগের আরেকজন ব্লগারের দেওয়া) বানিয়ে দেশকে ৭১ এর মত প্রতিনিয়ত ধর্ষন করে যাচ্ছে, পরে সেই কন্ডোম ছুড়ে ফেলে দিচ্ছে ডাস্টবিনের গর্তে, তাতে আমাদের কি? এগুলি তো আমাদের মত তথাকথিত সুবুদ্ধির মানুষদের দেখার বিষয় নয়। আমরা এখন গরম কফির পেয়ালা হাতে নিয়ে আয়েশ করে চকচকে ল্যাপটপটা নিয়ে আমারব্লগে ঢুকে আমদের সব সাহিত্যপ্রতিভা উজাড় করে কার্টুনিস্ট “আরিফের” মত শত শত আরিফের উপর গুটিকয়েক রাজাকারদের অত্যাচারকে উপজীব্য করে একটা ঝাড়া আবেগপ্রবন ব্লগ লিখব। আর একটু পর পর এসে অনেকগুলো মন্তব্য পেয়ে অসাধারন এই ব্লগটি লিখার জন্য আত্মগরিমায় মুগ্ধ হব আর নিজেকে বাহবা দিতে থাকব। ‌আহা, আহা, লেখাটা তো বেশ ভালো হয়েছে। অনেকগুলো সুন্দর সুন্দর মন্তব্য পড়েছে এবারের লেখাটায়।
বাহ্, বাহ্।

জয়তু বাংলাদেশ, জয়তু নিজামী।
আরেকটু পড়ি, কি বলেন.......

কবিতা

নিরিবিলি অশীলতার ব্যস্ততার ফাকেঁ,
কান্না হয়ে গেল পর।
আবছা মেঘবালিকার চুল
নিশিদিন শব্দাবলীর সুনিপুন মেলে
আবেগির আবেগীয় জলসায় পরে থাকে,
তৃপ্ত করা হয় সবার,
ধরনীর বিশালতার
কাব্যময় কবিতায়।

মধ্য রজনীতে ঢলে পড়া
কবিতার জোৎস্নায় স্নান।
আলো ঝলমল।
চাদেঁর আড়ষ্টতায় ঠোট-জোড় ভেজাই আমি,
চুমুতে অশনিপর।
নির্দ্ধিধায়।


নিপুন বাঁধাইয়ের স্বপ্ন কাব্য তোমায়
পরে থাকে জীবন্ত
বুক-শেলফের উপর
সজীব প্রাণ তুমি
কথা বল প্রাণ সভায়।
আমার আমিত্ত্বে স্বতন্ত্র কিছু
শব্দ নিয়ে কাড়াকাড়ির
লোভনীয় উচ্চারন।

যুদ্ধের উত্তুঙ্গ ধ্বংযজ্ঞেও তুমি
যেই সেই,
সৈনিক মন উজ্জীবতায়।
মৃত্যুর আঙ্গিনায় তুষারশুভ্র স্তব্ধ,
তারপরও তুমি
কবিতা,
আমার ভালবাসার প্রেরনা।
নিটোল দেহের মত
তুমি,
প্রতিরোধের তীব্রতার উচ্চারন।
আরেকটু পড়ি, কি বলেন.......

একটি প্রেমের কাহিনী এবং একটি সতর্কীকরন-বার্তা

শিরোনাম দেখে যদি ভাবেন আমি কোন মিষ্টি প্রেমের আদ্যপন্ত বলতে যাচ্ছি তাহলে তাদের উদ্দেশ্যে আগাম জানিয়ে দিচ্ছি, প্রেমের শুরুতেই গল্পের মৃত্যু হবে। তবু স্বার্থপরের মত এমন নাম ব্যবহার করেছি শুধুই পাঠকদের আকৃষ্ট করে একটি আর্জি শোনানোর জন্য। এই অনভিপ্রেত অন্যায়ের জন্য প্রথমেই হাতজোড় করে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি ধৈর্যশীল ও ক্ষমাশীল পাঠকদের কাছে।

ঘটনাটি কলেজ জীবনের। যা বেশিরভাগ ছেলেপুলেদের ক্ষেত্রেই ঘটে। মেয়ের প্রকৃত নাম ও ঘটনার সময়কাল এখানে মূখ্য নয় বলে মেয়েটির ছদ্দনাম ব্যবহার করছি-ঝুমুর। যাক মুল ঘটনায় আসি।

ঝুমুরের বাড়ি আমাদের বাড়ির কয়েক বাড়ি পরেই। সাইকেলে করে প্রতিদিন কলেজ যেতাম। যাওয়ার সময় প্রায়ই মেয়েটিকে দেখতাম রিকশার জন্য অপেক্ষা করছে। “প্রায়ই দেখতাম”- বলছি কারন ওর বেরুবার সময় আমার মুখস্থ ছিল বলে আমিও ঘড়ি দেখে টায়টায় ওই সময়ই বের হতাম। প্রায়ই ওর পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় অন্যরকম এক ব্যখ্যাতীত শিহরন বয়ে যেত শরীর দিয়ে। অপলক তাকিয়ে থাকতাম তার দিকে। সেজন্য একবার অল্পের জন্য একটা বড় ট্রাক্টরের কাছে জীবন সমর্পন করতে বসেছিলাম প্রায়। মর মর করেও বেচেঁ গিয়েছি পরে।

মেয়েটির চোখে ছিল শিশুসুলভ সারল্য। তীব্র নজড়কাড়া চাহনি। সে আমার ব্যাপারটা আচঁ করতে পেরেছিল কিনা জানিনা, তবে আমি রাস্তা অতিক্রম করার সময় সে মিষ্টি করে এক চিলতে হাসত আর আড়চোখে কয়েকবার তাকিয়ে থাকত, আমার দিকে।

একদিন ওর সাথে দেখা না হলেই কিছুই ভাল লাগত না আমার। কলেজে গিয়েও ক্লাশে মনোযোগ বসাতে পারতাম না। বন্ধুব্ন্ধবরাও এ নিয়ে হাসাহাসি, ঠাট্টাতামাশা করত প্রায়ই।


দিনগুলি এভাবেই কাটতে লাগল। পরিচয়ের পালা কিভাবে শুরু করা যায় তাই নিয়ে ভাবতে লাগলাম রাত-দিন। একদিন বিকেলবেলা তাদের বাড়ির পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম। তখন দেখলাম মেয়েটি রিকশা থেকে নামছিল। নামার পর আমাকে দেখে সে কিছুক্ষন একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকার পর নিজেই হাত ইশারা করে ডাকল, আমাকে। তখন হালকা কথাবার্তা বলল সে আমার সাথে। এই ধরেন, “কোথায় থাকি?, এদিকে কোথায় যাই প্রতিদিন?” এইসব। এই পরিচয়ের শুরু।

ও ছিল খুব হাসিখুশি, খোলামনের একটি মেয়ে। তার স্বভাবসুলভ চঞ্চলতা আর কথা বলার ভঙ্গি আমাকে আরও আকৃষ্ট করল, তার প্রতি। আমি তখনই মনের সাথে বুঝাপরা করে সিদ্ধান্তে আসলাম ওকে ছাড়া আমি বাচঁব না।

পাড়া-প্রতিবেশীর মাধ্যমে খবর নিলাম এর বাবা থাকেন দেশের বাইরে, মা-ই ওর দেখাশোনার দায়িত্ত্ব নেন। তবে মা বেশ মেজাজ-গরম স্বভাবের, দজ্জাল টাইপ।

রাত দিন শুধুই ভাবতে লাগলাম কিভাবে ভালবাসার কথাটি ওর কাছে পাড়া যায়। পরে আর কোন উপায়ন্তর না দেখে সহজতর মাধ্যম হিসেবে চিঠি চালাচালির পরিকল্পনাটাই হাতে নিলাম। আমি তখন বিভিন্ন সাহিত্য পত্রিকায় লেখালেখি করতাম। অনেকের কাছ থেকেই বেশ প্রশংসাও আর সুনামও কুড়িয়েছি এইজন্য। আর সাত-পাচঁ না ভেবে আমার এই সকল সাহিত্যপ্রতিভাকে সম্বল করে প্রেমের চিঠিখানি লিখতে শুরু করে দিলাম। প্রায় দু’সপ্তাহ কলেজ না গিয়ে, নাওয়া-খাওয়া রীতিমত বন্ধ করে দিয়ে, কলেজ লাইব্রেরী থেকে নানান রকম কবিতা আর অমর প্রেমের কাহিনী সম্বলিত গাদা-গাদা বই বাসায় নিয়ে এসে আমার সকল আবেগ আর সাহিত্যমেধা উজাড় করে দিয়ে অনেক খেটেখুটে চৌদ্দ পাতার একটি অনন্য প্রেমের মহা-চিঠি দাড় করালাম। লিখার পর নিজেই কয়েকবার পড়ার পর আত্মগুণে নিজেই যারপরনাই মুগ্ধ হলাম। ভাবতে লাগলাম এ লিখা পড়ে তো মানুষ মারতে উদ্যত একজন কুখ্যাত খুনির মনও গলে যাওয়ার কথা। আর সে তো যুবতী মেয়ে।

যাই হোক, আমি আর কালক্ষেপন না করে চিঠিটি একদিন ওর বাড়ির গেইটে ঝুলানো মেইলবক্সে লুকিয়ে ফেলে দিয়ে আসলাম।

দিন যায়, আমার আবেগপ্রবন মন চিঠির অপেক্ষায় থাকে। গেইটে টুংটাং শব্দ হলেই দৌড়ে আসি, চিঠির খুজেঁ। প্রায় এক সপ্তাহ অপেক্ষার পর লাল খামের মোড়কে একটি চিঠি আসল। প্রচন্ড খুশিতে আরাধ্য চিঠিখানা নিয়ে নিজ ঘরের সিটকিনি আটকিয়ে পড়তে শুরু করলাম। চিঠিতে শুধু একটিই লাইন।-

“লিখ তো ভালই, কিন্তু এত ‘বানান’ ভুল কেন???”
--ইতি, ঝুমুরের “মা”।
--------------------------------------------------------------

সারার্থ: আমার প্রেমের গল্পের এখানেই পরিসমাপ্ত। প্রেমের শুরুতেই গল্পের শেষ। এবার আসি মুল কথায়। আমারব্লগসহ অনেক ব্লগই নিয়মিত পড়ে থাকি আমি। লেখালেখি নিয়মিত না করলেও পাঠক হিসেবে অনেকটাই নিয়মিত। সেই নিয়মিত পাঠকের অভিজ্ঞতার আলোকেই বলছি, প্রচুর পোষ্টের লেখা পড়ি যেকানে অসংখ্য বানান ভুল থাকে, যা সঙ্গত কারনেই খুব দৃষ্টিকটু লাগে। লেখকদের ভুল হতেই পারে, তাই আমি মনে করি সবার সেই ভুলগুলি ধরিয়ে দেয়া উচিত যাতে লেখকদের সাথে সাথে অন্যরাও ভুলগুলো থেকে শুধরিয়ে নিতে পারে নিজেদের। একজন অনভিজ্ঞ ব্লগার হিসেবে আমারও প্রচুর ভুল পাবেন, এতে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই। তাই আমিও সবসময় অপেক্ষায় থাকি কেউ আমার সেই ভুলগুলো ধরিয়ে দিবে, যেখানে আমি ভুল শুধরানোর সুযোগও পাব। এ পোষ্টেও তার অপেক্ষায় থাকলাম। আমাদের মাঝে এই সংস্কৃতিটি গড়ে উঠু - এটাই আমার এই গল্পের উদ্দেশ্য। নইলে পরে আবার হবু-শ্বাশুড়ির হাতে এরকম অপ্রত্যাশিত আরও চিঠি যে হজম করতে হবে না এরই বা গ্যারান্টি কি?

সতর্কীকরন বার্তা: ভুল বানান ধরিয়ে দিন এবং লেখককে শুধরানোরও সুযোগ করে দিন। এবং বানানেন ক্ষেত্রে সবাই যথাসম্ভব সতর্ক হোন।

বি: দ্র: এটা আমার আত্মজীবনীমূলক রচনা বলে পাঠকরা ভুল করবেন না। নিছক একটা গল্প।


অযুত শুভাশিষ (শুভাশিষ বানানটা ঠিক তো?)



রিপন
৮ নভেম্বর, ২০০৯
ওন্টারিও, কানাডা।
আরেকটু পড়ি, কি বলেন.......

বিজ্ঞানের অন্যতম বড় প্রজেক্ট

১.
সকাল থেকেই অঝোরধারায় বৃষ্টি ঝরছে। কানাডাতে শীতকালেই বৃষ্টি হয় বেশী। আমাদের দেশের অনেকটাই বিপরীত। ইউনিভাসির্টি যাব, কিন্তু প্রকৃতির রুদ্রমূর্তি দেখে সিদ্ধান্ত বাদ দিলাম। থাক আজ না গেলে এমন কোন ক্ষতি হবে না। ফ্রেশ হয়ে চায়ের পেয়ালা হাতে নিয়ে জানালার সামনে বসে বৃষ্টি দেখতে দেখতে ভাবলাম আজ একটু বিজ্ঞানের বিষয় নিয়ে নাড়াচাড়া করলে কি হয়। তাছাড়া পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে বিজ্ঞানবিষয়ক একটা কিছু তো লিখাই যায়। তাহলে চলুন আর কথা না বাড়িয়ে বিজ্ঞানের অন্যতম বড় প্রজেক্ট এলএইচসি হয়ে ঘুরে আসি।

বিজ্ঞান, বিশেষ করে পদার্থ ও জ্যোতির্বিদ্যা এমন এক জায়গায় এসে থমকে দাঁড়িয়েছে, যেখানে নতুন জ্ঞান আহরণ, নতুন কণা আবিষ্ককার বা মহাশুন্যের সুদুরতম প্রান্তের গ্যালাক্সি দেখার জন্য বিশেষ যন্ত্রের দরকার, আর যা তৈরি করতে অনেক দেশের শত শত বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বহুদিনের শ্রম প্রয়োজন। বলা বাহুল্য, এ ধরনের কাজে শুধু যোগ্য ব্যক্তিদের মেধা ও দক্ষতাই যথেষ্ট নয়, এর জন্য দরকার প্রচুর অর্থেরও। সেই অর্থ নিশ্চিত করতে বিজ্ঞানীদের সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে বিস্তারিত প্রস্তাব দিতে হয়, কোনো নির্দিষ্ট অর্থ-পরিমাণের জন্য অন্য বিজ্ঞানীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে হয়। পরিকল্পনা, অর্থ সংগ্রহ ও নির্মাণের সময় যোগ করলে এ ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য প্রায় দুই দশক পর্যন্ত লেগে যেতে পারে।

বড় বিজ্ঞানের সবচেয়ে বড় উদাহরণ হচ্ছে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় নির্মিত লার্জ হ্যাড্রন কলাইডার (এলএইচসি)। বলা হয়ে থাকে, এলএইচসি মানুষের তৈরি সবচেয়ে জটিল যন্ত্র। কাজেই এটা বড় প্রযুক্তির অন্যতম উদাহরণ। মাটির ৫০ থেকে ১৭৫ মিটার নিচে ২৭ কিলোমিটার পরিধির এই চক্রাকার যন্ত্রটি প্রোটন কণাকে আলোর গতির খুব কাছাকাছি নিয়ে যায় এবং এরপর সেই উচ্চ গতিশীল কণাগুলোকে একে অন্যের সঙ্গে সংঘর্ষ ঘটায়। সেই সংঘর্ষে অজানা সব নতুন কণার জন্ন নেওয়ার কথা, যার মধ্যে বিজ্ঞানীরা খুঁজছেন হিগস নামের একটি কণা। হিগস কণা বা হিগস বোসন বস্তুর কেন ভর (বা ওজন) আছে, তার উত্তর দেবে।


ছবি
লার্জ হ্যাড্রন কলাইডার (এলএইচসি) এর এরিয়া

ষাটের দশকে বেশ কয়েকজন বিজ্ঞানী (পিটার হিগস তাঁদের অন্যতম) এমন একটি ক্ষেত্রের কথা ভাবেন, যা বিভিন্ন কণার সঙ্গে প্রতিক্রিয়া করে সেই কণাগুলোর ভর দেয়, অর্থাৎ পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ ক্ষেত্রে তাদের ওজন থাকবে। ইলেকট্রন যদি দ্রুত ভ্রমণ করতে চায়, তাহলে হিগস ক্ষেত্র তাকে শ্লথ করে দেবে, কিন্তু আমাদের মনে হবে ইলেকট্রনের ভর (বা ওজন) আছে বলে সে দ্রুত যেতে পারছে না। আসলে সেই ভরটা আসছে হিগস ক্ষেত্রের সঙ্গে ইলেকট্রনের বিক্রিয়ার ফলে। হিগস ক্ষেত্র না থাকলে কোনো কণা তথা বস্তুরই ভর (বা ওজন) থাকত না।

ছবি
লার্জ হ্যাড্রন কলাইডার (এলএইচসি) এর ভেতর

হিগস ক্ষেত্র যে আছে, সেটা কী করে প্রমাণ করা সম্ভব? একটি গতিশীল ইলেকট্রন কণার সঙ্গে যেমন একটি তড়িৎ-চৌম্বকীয় ক্ষেত্র থাকবে, তেমনি এটা অনুমান করা যায় যে হিগস ক্ষেত্রের সঙ্গে থাকতে হবে একটি হিগস কণা (বা হিগস বোসন)। সেই হিগস কণা আবিষ্ককারের জন্য এলএইচসির সৃষ্টি, যদিও এলএইচসির অন্যান্য উদ্দেশ্যের মধ্যে আছে সুপার-সিমেট্রিক কণাসমূহ বলে একদল ভাবীকথিত কণার সন্ধান এবং আমাদের পরিচিত তিনটি স্থান-মাত্রার বাইরে অন্য কোনো মাত্রা আছে কি না, তার অনুসন্ধান। নিঃসন্দেহে এসব গবেষণা আমাদের এই মহাবিশ্বের অন্তর্নিহিত গঠন চিহ্নিত করতে সাহায্য করবে।

ছবি
লার্জ হ্যাড্রন কলাইডার (এলএইচসি) এর ভেতর

এলএইচসি যন্ত্রের মূলে আছে প্রায় এক হাজার ৬০০টি উচ্চ ক্ষমতাশালী তড়িৎ-চুম্বক, যা প্রোটনসহ বিভিন্ন আধানযুক্ত কণাগুলোকে একটি চক্রাকার পথের সুড়ঙ্গে পরিচালিত করে। ২৭ টন ওজনের একেকটি চুম্বককে সব সময় পরম শুন্য তাপমাত্রার (মাইনাস ২৭৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস) কাছাকাছি রাখতে হয়। এই হিমায়নপ্রক্রিয়ার জন্য প্রায় ১০ হাজার টন তরল নাইট্রোজেন ও ১২০ টন তরল হিলিয়ামের প্রয়োজন হয়েছে। বলা হয়ে থাকে, পৃথিবীতে উৎপাদিত সমগ্র হিলিয়ামের একটি বিশাল অংশ এলএইচসির কাজে ব্যবহূত হয়েছে। এলএইচসির সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত আছেন ১০০টি দেশের প্রায় ১০ হাজার বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলী। এতে আপাতত খরচ হয়েছে প্রায় পাঁচ শ কোটি ডলার। ৩৩টি দেশের ১৫২টি কম্পিউটার কেন্দ্রের সমন্বয়ে প্রায় এক লাখ ৪০ হাজার একক প্রসেসর দিয়ে গড়ে উঠেছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কম্পিউটার, যা এলএইচসির উপাত্ত বিশ্লেষণ করবে।

ছবি
লার্জ হ্যাড্রন কলাইডার (এলএইচসি) এর ভেতর

বড় বিজ্ঞান এবং এর সঙ্গে যুক্ত জটিল যন্ত্রের সঙ্গে আসে বিপজ্জনক সমস্যা। স্বাভাবিকভাবেই এলএইচসির মতো বিশাল যন্ত্রের প্রতিটি খুঁটিনাটি সব সময় নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব নয়।


২.
পর্ব-১

এলএইচসি চালু হওয়ার মাত্র নয় দিনের মাথায় একটি বৈদ্যুতিক বিভ্রাটের ফলে প্রায় ছয় টন হিলিয়াম তার আবেষ্টনের বাইরে বেরিয়ে যায়। এতে হঠাৎ করে তাপমাত্রা বেড়ে যায় এবং চৌম্বক ক্ষেত্রের দ্রুত পতনের ফলে এক বিশাল পরিমাণ শক্তি বিমুক্ত হয়। সেই বিস্কোরণ বেশ কয়েকটি ভারী চুম্বককে মেঝে থেকে উপড়ে ফেলে। মাটিতে পড়া হিলিয়াম এলএইচসির টানেলকে এত শীতল করে দেয় যে কর্মীরা প্রায় কয়েক সপ্তাহ সেখানে ঢুকতে পারেননি। টানেলের ক্ষতিগ্রস্ত অংশ ঠিক করতে এবং ভবিষ্যতে যাতে এমন ঘটনা না ঘটে, তা নিশ্চিত করতে অনেক সময় লাগবে। অর্থাৎ ২০১০ সালের আগে এলএইচসি চালু করা যাবে না।

ছবি
লার্জ হ্যাড্রন কলাইডার (এলএইচসি) এর ভেতর

বহু বছর আগে বৈজ্ঞানিক গবেষণা বলতে আমাদের কাছে যে চিত্রটি ফুটে উঠত, তা হলো আইস্টাইন একা তাঁর ডেস্কে দাঁড়িয়ে কাজ করছেন বা সত্যেন বসু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর অফিসে বসে নিভৃতে আইনস্টাইনকে তাঁর কাজ সম্পর্কে চিঠি লিখছেন। তাত্ত্বিক বিজ্ঞান এখনো কিছুটা এভাবে কাজ করলেও সারা বিশ্বের যোগাযোগব্যবস্থা (বিশেষত ইন্টারনেট) উন্নত হওয়ার ফলে কাগজ-কলম নিয়ে যাঁরা কাজ করেন, তাঁরা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সতীর্থদের সঙ্গে খুব সহজেই যোগাযোগ করতে পারেন।

ছবি
লার্জ হ্যাড্রন কলাইডার (এলএইচসি) এর ভেতর

অন্যদিকে রসায়ন ও জীববিজ্ঞান অতি দ্রুত আন্তবিষয়ক হয়ে উঠছে; যার মানে, তাঁদের গবেষণার বিষয় ও পদ্ধতি বিভিন্ন বিষয়ের সমন্বয়ে গড়ে উঠছে। উদাহরণস্বরূপ পদার্থবিদ, রসায়নবিদ, জীববিদ ও কম্পিউটার-প্রকৌশলীরা একসঙ্গে গবেষণা করছেন মস্তিষ্কেকর নিউরন কোষের ওপর। তাঁরা বুঝতে চাইছেন, কেমন করে নিউরনরা একে অন্যের সঙ্গে নিউরোট্রান্সমিটার নামক রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে যোগাযোগ করে স্নৃতি ও স্বজ্ঞার সৃষ্টি করে। অথবা উপরিউক্ত সবাই এবং ভুবিদ ও পরিবেশ-প্রকৌশলীরা কাজ করছেন কেমন করে বায়ুমন্ডলে কার্বনের পরিমাণ কমানো যায় বা কেমন করে সুর্য, বায়ু বা জোয়ার-ভাটা থেকে নবায়নযোগ্য শক্তি উৎপাদন করা যায়, তা নিয়ে। পাশ্চাত্যের কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় আন্তবিষয়ক বিষয়ে পিএইচডি দিচ্ছে, যেমন−যুক্তভাবে জীব-রসায়ন ও পদার্থবিদ্যায় বা কম্পিউটার ও জীববিদ্যায়। স্মাতক পর্যায়ে অনেক অভিসন্দর্ভর বিষয়ই এখন আন্তবিষয়ক।

ছবি
স্টিফেন হকিং লার্জ হ্যাড্রন কলাইডার (এলএইচসি) ঘুরে গেছিলেন

তার মানে এই নয় যে পদার্থবিদ্যা বা রসায়নের মূল সব বিষয়ের সমাধান হয়ে গেছে। এর মানে হচ্ছে, আমরা আবার বিজ্ঞানের একটি সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়েছি। মূল তাত্ত্বিক বিজ্ঞানের পরের পদক্ষেপটি নেওয়ার জন্য পর্যবেক্ষণ লাগবে। কারণ, পর্যবেক্ষণ ছাড়া বিজ্ঞানীরা মহাবিশ্ব সম্পর্কে যে মডেল প্রণয়ন করছেন, তার সত্যতা যাচাই করা যাবে না। আর পর্যবেক্ষণের জন্য লাগবে বড় বিজ্ঞান ও বড় ধরনের প্রযুক্তি−হাবল টেলিস্কোপ বা এলএইচসি-জাতীয় যন্ত্র, যে দুটি প্রকল্পের প্রতিটির জন্যই পাঁচ শ কোটি ডলারের বেশি খরচ হয়েছে।

অনেকে প্রশ্ন তুলতে পারেন, আপাত দৃষ্টিতে প্রায়োগিক মূল্যহীন বিজ্ঞানের পেছনে এত সম্পদ বিনিয়োগের অর্থ কি? প্রশ্নটি অপ্রাসঙ্গিক নয়, তবে কোন বিজ্ঞান প্রয়োজনীয়, কোন বিজ্ঞান অপ্রয়োজনীয় এবং সামগ্রিকভাবে সভ্যতার বিকাশে জ্ঞানের গঠনের স্বরূপ কী হওয়া উচিত, এ ধরনের বিতর্কে না গিয়ে আমি অন্য কিছু প্রকল্পের পেছনে কত খরচ হয়েছে, তার একটি তালিকা দেব। মানবজাতির অন্যতম সফল প্রকল্প অ্যাপোলো কর্মসুচি চাঁদের বুকে ১২ জন মানুষকে হাঁটাতে সক্ষম হয়েছে। ১৯৬২ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত বিস্তৃত এ কর্মসুচির জন্য খরচ হয়েছে ২০০৫ সালের ডলার হিসাবে প্রায় ১৩ হাজার পাঁচ শ কোটি। সবচেয়ে ব্যস্ত বছরে প্রায় চার লাখ লোক বিভিন্নভাবে এ কর্মসুচির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ১৯৬৬ সালে নাসার বাজেট ছিল যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় বাজেটের ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। ২০০৯ সালে এটা এসে দাঁড়িয়েছে শুন্য দশমিক ৫২ শতাংশ, যদিও আসল ডলার হিসাবে এটা কমেছে মাত্র অর্ধেক। অন্যদিকে প্রায় একই সময়ে ভিয়েতনাম যুদ্ধের জন্য খরচ হয়েছে ৬৮৬ বিলিয়ন ডলার (২০০৮ সালের ডলার হিসাবে), সর্বোচ্চ খরচের বছরে এই যুদ্ধ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় উৎপাদনের ২ দশমিক ৩ শতাংশ দাবি করেছে (জীবনের ক্ষয়ক্ষতি নাহয় বাদই দিলাম)। অন্যদিকে ৯/১১-এর পর গত বছর পর্যন্ত ইরাক ও আফগানিস্তান যুদ্ধসহ যুক্তরাষ্ট্রের ৮৫ হাজার নয় শ কোটি ডলার খরচ হয়েছে, যা সর্বোচ্চ খরচের বছরে জাতীয় উৎপাদনের ১ দশমিক ২ শতাংশ। নিঃসন্দেহে এসব সংখ্যার পাশে এলএইচসির পাঁচ শ কোটি ডলার খুবই নগণ্য। তদুপরি বড় বিজ্ঞান থেকে আমরা যে জ্ঞান আহরণ করব, তা সমগ্র মানবজাতির জন্য একটি স্থায়ী সম্পদ বলে বিবেচিত হবে।

ছবি
লার্জ হ্যাড্রন কলাইডার (এলএইচসি) এর ভেতর

এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির পেছনে কোন দেশ কতখানি বাজেট বরাদ্দ করবে, সেটা সেই দেশের সংগতির ওপর নির্ভর করবে। তবে যেকোনো দেশের বাজেটে শিক্ষা ও বিজ্ঞানের পেছনে কতখানি বরাদ্দ আছে, তা দিয়ে সেই দেশের ভবিষ্যৎমুখিতা নির্ণয় করা যায়। ২০০৫ সালের তথ্য অনুযায়ী, শিক্ষা খাতে বাংলাদেশ তার জাতীয় উৎপাদনের ২ দশমিক ৪ শতাংশ বরাদ্দ করেছিল (স্থান ১১৯), যেখানে ভারতের শিক্ষা বরাদ্দ ছিল ৪ দশমিক ১ শতাংশ (স্থান ৮১), মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৫ দশমিক ৭ শতাংশ (স্থান ৩৭), নরওয়ের ৭ দশমিক ৬ শতাংশ (স্থান ১৪) ও কিউবার ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ (স্থান ১)। শিক্ষাক্ষেত্র কোনো সময়ই বাংলাদেশের বাজেটে অগ্রাধিকার পায়নি। বাজেট প্রকাশের পর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বরাদ্দ নিয়ে সংবাদমাধ্যমেও তেমন আলোচনা হয়নি।

Courtesy: ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার রিভারসাইড ক্যাম্পাসে জ্যোতির্বিদ্যার গবেষক দীপেন ভট্টাচার্য।
আরেকটু পড়ি, কি বলেন.......

বাংলাদেশের জন্মদিবস: ১৬ই ডিসেম্বর নাকি ২৬শে মার্চ?

এই আপাত-সাদামাটা প্রশ্নটা একবার ফেসবুকে তুলে ধরার পর আমার কয়েকজন ছোটভাইয়েরা এতে গা-ঝেড়ে অংশগ্রহন করে। তাদের যুক্তিবহুল কথোপকথনের মধ্য দিয়ে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ও বের হয়ে আসে। পরস্পর কথোপকথনগুলো সবার সাথে শেয়ার করলাম। ভয়ংকর সব যুক্তি নিয়ে যারা অংশগ্রহন করল: Harun Muhammed, Zunedul Alam, Azizul Hoque, Rausan Atik Jewel, John Aurther.

প্রশ্ন: "বাংলাদেশের জন্মদিন: ১৬ই ডিসেম্বর নাকি ২৬শে মার্চ?"

Harun: Seems forgot which for weeping and which for smilling! Depends how u define? but one cant have two birthday? Is it possible? its better being happy and celebrate on birthday instead of weeping.

Ripon: Harun.....kotha ghuria mariya to makhon banai feltecho.......yes, it must have one birthday......but, whats your answer....multiple choice e tui ta option ache. tumar selection kunta.....no more question....i need your answer. Alright, i got it....ur answer is 16 Dec....

Ripon: একটা স্বাধীন দেশের দাবী নিয়েই যুদ্ধটা হয়েছে, যে কারনে আমরা এটাকে স্বাধীনতার যুদ্ধ বলি। ২৬ মার্চ জন্ম হয়ে না থাকলে ওটাকে বলা হতো গৃহযুদ্ধ

Harun: Ok, your question is kind of complicated though seems simple. I was thinking about possible answers, cant have more option to debate as sensitive issue.
But now we have two days as birthday as of your definition, but we celebrate on last day of fight as independent day.

Ripon: ওয়েল....ধর একটা সন্তান জন্ম নিল, তার পিতা তার স্বীকৃতি দিতে চাইল না। বাবা নয় মাস ধরে চেষ্টা করল সন্তানকে মেরে ফেলতে। কিন্তু সন্তানএ কম যায় না। সে তার সহযোগীদের নিয়ে নয় মাস বাবার সাথে লড়াই করে একটা সময় (১৬ ডিসে) তার পরিচয় আদায় করল। তাতে কি তার জন্মবার পরিবর্তন হয়ে গেল???


Harun: other sense, u could say egg was fartilized on that day/March 26, but full physical life came out of egg after 9 months

Zuned: যে দিন স্বাধীনতা ঘোষনা হল সে দিন থেকেই তো বাংলাদেশ স্বাধীন ॥ তাই আমার উত্তর ২৬ মার্চ

Harun: Well its critical issue, cant argue this way. there r exceptions everywhere. if u say March 26 is birthday, it must not a day of joy, but a dark day. Can a birthday be dark? i would say no.

Ripon: @Harun.....ভ্রুনটা Egg এর ভিতর ছিল ১৭৫৭-১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ পর্যন্ত। পরে ভ্রুনটি খোলস ভেঙ্গে বেরিয়ে আসল ২৬শে মার্চ যখন দেশে স্বাধীনতা ঘোষিত হয় এবং খুব সুন্দর একটা পতাকাও তৈরি হয়। অত:পর খোলসটি সচল হয়ে ভ্রুনটিকে হত্যা করতে চেয়েছিল যা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয় ১৬ই ডিসেম্বর।@Zuned.....আমিও তোমার সাথে একমত পোষন করি।

Harun: Then its exceptional birthday! not regular one.

Ripon: @Harun....শিশুটির বার্থডে ডার্ক হবে কেন? সেটাই তো সবার প্রত্যাশিত ছিল। অন্ধকার তো ছিল স্বীকৃতি দিতে অনিচ্ছুক পিতার উপর্যপুরি আক্রমন।

Harun: but reality was father attacked and tried to kill-still dark, and it was very much expected attack. I cant be idealistic.

Ripon: @harun.....যাকে সুরক্ষিত রাখার জন্য অগনিত মানুষ হেসেখেলে প্রান দিয়ে দিতে পারে তার জন্মদিনটি ব্যতিক্রমই হোক আর স্বাভাবিকই হোক....আমরা শুধু এটুকুই বলব....আমরা তাকে ভালবাসি...ভালবাসি।। হারুন....তোমার সাথে কথা বলে বেশ মজা পেলাম। বিজয়ের শুভেচ্ছা নিও।

Harun: Since it was exceptional day where somebody attack to a newborn , I would agree what most people agree with. but alone will follow realistic view. Idealistic view are as coplicated as human psychology- there is no limit or bounday in idealistic view. pleasure talking with you too.

Aziz: as far as constitution is concern,Tajuddin er potaka uttolon-osthai sarker gothon er din i bangladesh jonmo.

Atik: December 16, 1971 in think. March was the month of conceive.

Harun: Atlast i got someone to support me, wow, now i can argue with u Ripon bai

John: vai jonmo jodi 16th dec hoe tahole India kivabe agei Bangladesh ke sikriti dey....!

Harun: In theory or practical , a country does not bear in a single day (its so giant, single day is impossible), in that sense,we both are wrong. We need to pick an event from in between 1947 to 1971. there have been many events, All are Significant, but were not the final destination/event.
only possible Final significant events are either 16Dec or 26... See More March. But after 26 March, we were still fighting and were not exactly independent,(our ugly father pakistan was still considering us as one part) but we were at the edge of final event. therefore i will like 16 Dec as complete birth; final event. Before that, everything had own significance, but had some limitations either from outside world or inside country.

many politicians in BD does not recognize 1947 division(if i am wrong, then ignore this comment, sorry), if they are true, that means BD was (in theory) part of India,(though practically not). its call political game, to Jony, Do u think Gaza and West bank will become two different country? i think yes, and Israel will be the first country to recognize Gaza. its just simple game.

Atik: 26th march a very complicated day to mention though we celebrate our independence day on this day. some says the independence was declare on 7th march. the government was established on 17th April, the operation search light was activated on 25th march if people say that because pakistan attacked on that day so bangladesh born on 26th march then i'... See Morell say bangladesh was born a long before 26th march. if u want to distinguish the day then the day was 16th of December the victory day. because no country recognize bangladesh, even india before it was 16th of december. for ur information i can send u a link

http://en.wikipedia.org/wiki/Bangladesh_Liberation_War#Declaration_of_independence

here u'll find the information on "Declaration of independence" section the last line.
@ John: jonmer ageo sikriti lage mama. tomar eita valo koira bujha ucit. naile khobor ase.

John: ha ha ha...
jonmer ageto nam thake na....!!!!

Atik: but nam ki dite hobe shei process suru hoe. r eikhane nam na sikritir prosno. r nam jonmer age dile ki kono somossa ase?

Harun: nope John, everything exist before birth. Name, size, color, future, physic, and biology everything, but may not be complete though.

John: vai.... ekta desh jonmer age kivabe name, map, flag thake???

Atik: @ Jhon: those were the target. if the result went other way then could u tell them urs. u can't demand those target urs berofe u accomplish them.

Harun: actually we should not have been in any discussion about our history after 39 years. its one of the few weaknesses our politicians have done (they were great , but shown weakness in not clearing few things). could have been better if they could finish some official job done about war criminals, defining dates, and may be some other jobs, I was not ... See Moreborn at that time, so cant argue based on just reading knowledge. I believe reality must have been very different than what many of us just simply think.

Atik: @ Harun vai: i agree. i think even those who fight for us can't define it well.

Harun: john, the ans to ur question is that " a giant cant bear in a single day" or you could say, "giant take toooo long time to be born". dont take personally, but i personally dont like current BD politicians who does not think about future, if u come to outside BD, you will see how government think about future 50 years ahead, our current BD leaders ... See Moreare lacking that quality). Our leaders at that time was in plan, they were thinking about future--an independent country even before it was officially born.

well done John, Raushan vai, ripon vai, Z.Alam vai, It was nice having a discussion with you all. it was very much informative. hopefully will keep doing that for some other topics in future where we can debate even strongly.

John: Tnx to all.

Ripon: যদি ২৬ মার্চ রাত থেকে এ আমার দেশ না হয় তাহলে পাকিস্তানী সেনাদের হানাদার বলবো কোন যুক্তিতে?
২৬ মার্চের তিন সপ্তাহের মধ্যেই তো আমাদের নিজেদের সরকার, নিজেদের বাহিনী ঘোষিত হয়েছে।

২৫ মার্চ রাতেই আমাদের স্বাধীনতার ঘোষনা অর্থ্যাৎ ঐ সময় থেকেই স্বাধীন বাংলাদেশ-এই বাংলাদেশের প্রতি সিংহভাগ মানুষ আনুগত্য প্রকাশ করেছে, এর সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য প্রান দিয়েছে, শুধু দালালরা এই রাষ্ট্রের বিরোধীতা করেছে। আমরা যদি কেউ ১৬ ডিসেম্বরকে বাংলাদেশের জন্মদিন বলি-অজান্তে হান্নান শাহ'র মতো জামাতী মকারদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছি।

বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে ২৬ মার্চ। সরকার গঠন স্বাধীন দেশের জন্য যে অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক স্বীকৃতি দরকার হয়, তাও ১৬ ডিসেম্বরের আগেই ছিল।

একটা দেশের স্বাধীনতা টিকিয়ে রাখার দাবী নিয়েই যুদ্ধটা হয়েছে, যে কারনে আমরা এটাকে স্বাধীনতার যুদ্ধ বলি।

১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের জন্ম হলে তার আগের নয়মাস এটা পাকিস্তানের অংশ ছিলো। সে ক্ষেত্রে জামাতীদের গৃহযুদ্ধ তত্ব প্রমানিত হয় যা আদৌ সত্য নয়।

জন্মের সময় জটিলতা হতেই পারে। যেখানে মিনিটে সাতটি শিশু জন্মনেবার সময়ই মারা যায়, সেখানে জন্ম যতই জটিল হবে, বেচে থাকা শিশুটির জন্মোৎসব পরবর্তীতে ততই আনন্দের হবে! আর হয়েছেও তাই।

২৬শে মার্চই বাংলাদেশের জন্মদিন, এ বিষয়ে কোন ভ্রান্তি বা ধোঁয়াশার অবকাশ রাখা উচিত হবেনা।
১৬ই ডিসেম্বরকে জন্মদিন না মানার সবচেয়ে বড় কারন হল:::::::::::

যদি তাই হয় তাহলে আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা ছিল রাজাকার আর রাজাকারেরা ছিল পাকিস্থানের মুক্তিযোদ্ধা। তাই নয় কি????????

Ripon: বাংলাদেশের সংবিধানের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছেঃ

উদ্ধৃতি

১[ বিসমিল্লাহির-রহমানির রহিম

(দয়াময়, পরম দয়ালু, আল্লাহের নামে)]

প্রস্তাবনা

আমরা, বাংলাদেশের জনগণ, ১৯৭১ খ্রীষ্টাব্দের মার্চ মাসের ২৬ তারিখে স্বাধীনতা ঘোষণা করিয়া ২[ জাতীয় স্বাধীনতার জন্য ঐতিহাসিক যুদ্ধের] মাধ্যমে স্বাধীন ও সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত করিয়াছি; [শিষ্টাচার: নুরুজ্জামান মানিক]

------বিধায় , ২৬ মার্চই বাংলাদেশের জন্মদিন । ১৬ই ডিসে. তো শত্রুমুক্ত দিবস। তাছাড়া ১৬ই ডিসে কে জন্মদিবস বললে ৯ মাসের স্বাধীনতা সংগ্রামকে জামাতী পরিভাষায় "গৃহযুদ্ধ" বলে পরিচিত করার প্রথম ধাপ এটি।

Ripon: @Aziz.....তাজউদ্দিনের পতাকা উত্তোলন আর সরকার গঠনের সাথে দেশের জন্মদিনের সম্পর্ক থাকবে কেন? একটি শিশুর জন্মের পর (স্বাধীনতা ঘোষনা) তার বাবা-মা তো এমনিতেই তার ভরন-পোষন আর কাপড়ের ব্যবস্থা করবে। তাই নয় কি?

@Aitk...৭ই মার্চ তো স্বাধীনতা ঘোষনা হইনি। কেন তা জন্মদিন হবে? আর সরকার গঠন তো একটি দেশের জন্মের পরেই হয়টা স্বাভাবিক। তৎক্ষনাত তো হয়না।

@Harun....সাপোর্টার পেলে যে মানুষ অর্জিত সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে ফেলে তা জানতাম না!! হা হা।..

@John....তুমি তো আমার সাথেই আছ...আর কি বলব?

--------- একটি গুরুত্বপুর্ন ব্যাপার মীমাংসায় অংশগ্রহন করার জন্য সবাইকে একরাশ "শুকরিয়া"।


আরেকটু পড়ি, কি বলেন.......

বিধি কইয়া যা?

প্রেমের আতর চন্দন লোভা,
শুঁয়া চোখে এঁকে,
প্রানের পাখি উড়াল দে রে,
দেহ খাঁচা থেকে।

এত কষ্ট কেন এই জীবনে, বিধি কইয়া যা?

মাটিরে তুই শাত- ক রেখা,
আমার মাটির দেহ,
বুঝব পেলাম মরার আগে,
কারও আদর স্নেহ,


এত কষ্ট কেন এই জীবনে, বিধি কইয়া যা?

বইয়া যারে চোখের পানি, চোখে বইয়া যা,
বইতে বইতে চক্ষু আমার নদি হইয়া যা,
আর সেই নদিরও জলে আমার জীবন লইয়া যা।
আরেকটু পড়ি, কি বলেন.......

ইউটিউব টু এমপিথ্রি

ইউটিউব ওপেন করেননি এমন কোন তরুন আজকাল খুঁজে পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ। আর যারা দেশের বাইরে থাকেন তাদের জন্য weekend -এ সময় কাটানোর একটা অন্যতম মাধ্যম হয়ে দাড়িয়েছে ইউটিউব। “Broadcast Yourself” স্লোগান নিয়ে মাঠে নামা এই সাইটটিতে সবাই যে যার মত নিজেকে উপস্থাপন করার সুযোগ পেয়ে থাকে, ভিডিও আপলোডের মাধ্যমে।

ভয় নেই এই পোস্টটিতে আমি ইউটিউব নিয়ে তথ্যমূলক জ্ঞানগর্ভ বক্তৃতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি না। অনেকেরই কাজে লাগতে পারে এমন একটি বিষয় নিয়ে আজ Tutorial Class এর মাষ্টারমশাই হতে চাই। অনেকেরই হয়তো বিষয়টি জানা তারপরও বিষয়টি পোস্ট করলাম। তাছাড়া এমন হালকা একটা বিষয় নিয়ে পোস্ট লিখা যায় কিনা, এই নিয়ে খুবই দ্বিধায় ছিলাম। তা সত্ত্বেও সাত-পাঁচ না বেবে পোস্ট করে ফেললাম--যা থাকে কপালে।


অনেকেরই হয়তো ইউটিউবের ভিডিওগুলো ডাউনলোড করার ইচ্ছে থাকে অথবা অফলাইনে দেখা বা শোনার ইচ্ছে থাকে। কিন্তু ইউটিউব যেকোন কারনেই হোক না কেন সে সুযোগ থেকে বঞ্চিত করে রাখে সবাইকে। কিন্তু নিচের পদ্ধতিগুলোর মাধ্যমে আপনি ইউটিউবের যে কোন ভিডিও আপনার হার্ডড্রাইভে ডাউনলোড এবং Mp3 ফরমেটে Convert করতে পারবেন এবং পরে চাইলে আপনার যেকোন Pocket Device এ Transfer ও করে নিতে পারেন।

পদ্ধতিসমূহ:

ধাপ-১: প্রথমে ইউটিউব থেকে আপনার পছন্দের ভিডিও এর লিংকটি কপি করে নিন এড্রেস্ বার থেকে।

ধাপ-২: পরে সেউভভিড্ (http://www.savevid.com/) সাইটে গিয়ে লিংকটি URL বক্সে পেস্ট করে Download এ ক্লিক করুন। কিছক্ষন পর MP4 বাটন আসলে সেখানে ক্লিক করে আপনার হার্ডড্রাইভে ডাউনলোড করে নিন ভিডিও ফাইলটি।

ধাপ-৩: তারপর, মেনিয়াকটুল সাইট (http://www.maniactools.com/soft/m4a-to-mp3-converter/?version=6.0) থেকে Mp4-to-mp3-converter সফটওয়্যারটা ফ্রি ডাউনলোড করে নিন।

পরে এ প্রোগামে গিয়ে "Add Files..." এর মাধ্যমে Mp4 ফাইলটি Open করে Mp3-তে Convert করে নিন।


ছবি: Mp4-to-mp3-converter সফটওয়্যার

ব্যস্ হয়ে গেলো। এবার চাইলে আপনার ট্রান্সফ্যারেবল্ মোবাইলেও transfer করে নেতে পারেন ফাইলটি।



রিপন
৩ নভেম্বর, ২০০৯।
আরেকটু পড়ি, কি বলেন.......

কানাডায় শরৎ ও কিছু ছবি

শীত শীত করছে। জানালা দিয়ে হু হু করে প্রবল বাতাস আসছে। রাতে কখন যে জানালা খুলেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম মনে করতে পারছি না। বৃষ্টির পানিতে বিছানা ভেজা। বিছানা থেকে উঠে জানালাটা বন্ধ করলাম। আজ বেশ বেলা করেই ঘুম থেকে উঠলাম। উইকএন্ডে-এ করার কিছু থাকে না বলেই একটু আয়েস করে উঠা। ফ্রেস হয়ে মেইল চেক করার উদ্দেশ্যে ল্যাপটপ নিয়ে বসলাম। সাফায়েতের মেইল।

সে লিখল-
“আজ শনিবার, ছবি তুলার দিন, চলেন বিকেলে বেড়িয়ে পড়ি।”

তখন মনে পড়ল, তাকে একবার বলেছিলাম একটা পার্কে যাব কানাডার শরৎ উদযাপন করতে।

রিপ্লাই দিলাম, “হ্যাঁ, যাওয়া যায়, তবে আকাশের অবস্থা তো ভাল না। ওয়েদার ফোরকাস্টে-এ দেখলাম, আজ প্রচন্ড ওয়াইনডি, তাছাড়া বৃষ্টিও হতে পারে। তবে, তা সত্ত্বেও আমরা যাব, একটা শর্তে, বৃষ্টি আসলে আমরা বৃষ্টিতে ভীজব।”

এ শর্ত নিয়েই আমরা বেরিয়ে পড়লাম স্প্রিংব্যাংক পার্কে এর উদ্দেশ্যে। বৃষ্টি না হলেও, তীব্র বাতাস ছিল সেখানে, সেই সাথে হাড়কাপাঁনো ঠান্ডাও। সেখানে কিছু ছবি তুলেছিলাম, যেগুলি আপনাদের সাথে শেয়ার করতে খুব ইচ্ছে করছে। জানি আমার ছবি তোলা ভাল হয়নি। কিন্তু প্রকৃতির ক্ষমতা এতই প্রবল যে, নিজেকে মেলে ধরার ক্ষেত্রে দক্ষ/অদক্ষ ফটোগ্রাফারের অপূর্ণতায় তার কিছু যায় আসে না, যায় আসবেও না। প্রকৃতি ঠিকই তার প্রাচুর্য প্রকাশ করে নেবে, তার স্বকীয় নিজস্বতায়।

ছবিগুলো ভাল লাগলে জানাবেন। আর খারাপ লাগলে অধমকে ঝাড়া গালি দিতেও ভুলিয়েন না।


ছড়ানো ম্যাপল পাতা
ছড়ানো ম্যাপল পাতা

ম্যাপল গাছ
বর্ণিল ম্যাপল গাছ

একধরনের তেতো ফল, তবে নাম জানি না
একধরনের তেতো ফল, তবে নাম জানি না

Lovely dog
Lovely dog

কানাডার বনার্ড্য শরৎ-১
কানাডার বনার্ড্য শরৎ-১

কানাডার বনার্ড্য শরৎ-২
কানাডার বনার্ড্য শরৎ-২

টেমস লেক, স্প্রিংব্যাংক পার্ক, অন্টারিও, কানাডা
টেমস লেক, স্প্রিংব্যাংক পার্ক, অন্টারিও, কানাডা

ম্যাপল গাছের গুঁড়ি
ম্যাপল গাছের গুঁড়ি

কানাডার বনার্ড্য শরৎ-৩
কানাডার বনার্ড্য শরৎ-৩

ছড়ানো বর্ণিল ম্যাপল পাতা
ছড়ানো বর্ণিল ম্যাপল পাতা

কানাডার বনার্ড্য শরৎ-৪
কানাডার বনার্ড্য শরৎ-৪


রিপন
১ নভেম্বর, ২০০৯
আরেকটু পড়ি, কি বলেন.......

বিধাতার বিচার (পর্ব-১)

অয়নের প্রচন্ড মাথা ঝিমঝিম করছে। চোখ খুলে তাকাতে পারছে না। গলার হাড়ের নিচে অসহ্য ব্যথা। পানির পিপাসা পেয়েছে খুব। অল্প অল্প করে চোখ খুলে তাকাল অয়ন। চোখের ঝাপসা ভাবটা আস্তে আস্তে সরে এসেছে। সে এখন স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে, সে একটা নীল চেয়ারে হেলান দিয়ে বসা। সে এখানে কিভাবে এল, কিছুই মনে করতে পারছে না। তার চারপাশটা একটু ভালভাবে দেখার চেষ্টা করল। পরিবেশটা তার কাছে অনেকটা অপার্থিব লাগল।

অনেকগুলো মানুষ একটা লম্বা কিঁউয়ে দাড়িয়ে। সবারই অঙ্গে কোন না কোন অদ্ভুত ক্ষতের চিহ্ন। কারো হাত ভাঙ্গা, কারো বুকের পাজরেঁর কাছে দগদগে রক্তাক্ত ছিদ্র। চারপাশের এই অস্বাভাবিকতায় অয়নের ধাতস্ত হতে বেশ খানিকটা সময় লাগল। লাইনের মাথায় একটি পরীর মত অপরূপ সুন্দরী মেয়ে সবাইকে কি যেন জিজ্ঞেস করছে এবং একটি বিশেষ ঘরের ভেতর যাবার জন্য নির্দেশ করছে। অয়ন সচেষ্টভাবে এই অদ্ভুত পরিবেশে খাপ খাইয়ে নেয়ার চেষ্টা করল।

এই ঘরের কোন আসবাবপত্রই জাগতিক মনে হচ্ছে না অয়নের কাছে। রুমটিতে কোন জানালা বা বাতি নেই। তা সত্ত্বেও ঘরে ভরা জোৎস্নার মত মায়াবী আলোর আভা ছড়িয়ে আছে।


গলার ব্যথাটা এখনও খুব পীড়া দিচ্ছে। পানির পিপাসা এখন আরো বেড়েছে। বলার মত কাউকে দেখছেও না যাকে পানির কথা বলা যায়। হঠাৎ একজন বিকৃত লোককে ঘরে ঢুকতে দেখে অয়ন রীতিমত আর্তনাদ করে উঠল। ম্লান আলোতেও স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে লোকটির পেট ও পিঠ থেতলানো। দেখে মনে হচ্ছে, একটা বড় ট্রাক পেটের উপর দিয়ে চলে গিয়েছে। এমন মূমুর্ষূ অবস্হায় এরকমভাবে চলার কথা না লোকটার। লোকটি বেশ স্বাভাবিক ভঙ্গিতে লাইনের শেষে গিয়ে দাঁড়িয়ে চারদিকটা ফ্যাল ফ্যাল করে দেখতে লাগল।

-“আপনি অয়ন কুমার?”
অয়ন দেখল অস্বাভাবিক চেহারার একটি লোক তার পেছনে দাঁড়িয়ে।
-“হ্যাঁ, আমিই অয়ন কুমার।“

অয়ন কথা বলে বুঝতে পারল তার কথা বলতে খুব কষ্ট হচ্ছে। অয়ন রোবটের মত বলে উঠল, “একটু পানি দেওয়া যাবে আমাকে।”

-“আপনি পাশের ঘরটিতে গিয়ে বসুন, কিছুক্ষের মধ্যেই পানির পিপাসা কমে যাবে।“

অয়নের এর পেছনে কোন সায়েন্টিফিক ব্যাখ্যা নিয়ে ঘাটাঘাটি করতে ইচ্ছা করল না। সে খুব দ্রুত পাশের খালি ঘরটিতে গেয়ে বসল। আর সত্যিই পানির পিপাসাটা এখন নেই। কিছুক্ষন আগে অয়ন এই অস্বাভাবিক পরিবেশের পেছনে কিছু যুতসই যুক্তি খুজেঁ নিয়ে নিজেকে সহজ করবার চেষ্টা করছিল। কিন্তু এখন আর সেগুলি কোন কাজেই দিচ্ছে না।

-“আপনার পানির পিপাসা মিটেছে?”
-“হ্যাঁ, ধন্যবাদ। আচ্ছা বলা যাবে আমি এখন কোথায়? কিভাবে এলাম এখানে?”
-“হ্যাঁ, বলা যাবে। আপনি এখন পৃথিবীতে নেই, আপনি এখন স্বর্গ ও নরকের প্লাটফরমের “Selection Board” এর সামনে ওয়েটিং রুমে বসে আছেন।”

অয়ন ফ্যাঁল ফ্যাঁল করে তাকিয়ে থাকল অনেকক্ষন লোকটির দিকে। বুঝে উঠতে পারছে না কিছুই। গলা শুকিয়ে আসছে। তীব্র পানির পিপাসা আবারও পেয়ে বসেছে, অয়নের।

(চলবে)
আরেকটু পড়ি, কি বলেন.......

জীবনানন্দ দাশ-এর তিনটি ভালো লাগা কবিতা

ছোটবেলা থেকেই জীবনানন্দ দাশ-এর কবিতার রীতিমত অন্ধ ভক্ত ছিলাম। "হাজার বছর ধরে আমি পথ........" -এর হাত ধরেই এই ভাল লাগার শুরু। কবিতাটি কার না ভালো লাগে! এরকম অমর কবিতার আবেদন তো কখনও ফুরাবার নয়। সেই সূত্র ধরেই আমার প্রিয় জীবনানন্দ দাশ-এর তিনটি কবিতা আপনাদের সাথে উপভোগ করতে চাচ্ছি। ভালো লাগলে জানাবেন।

তার আগে চলুন জীবনানন্দ দাশ সম্পর্কে কিছু জেনে নিই। মৃত্যুর পর থেকে শুরু করে বিংশ শতাব্দীর শেষ পাদে জীবনানন্দ দাশ (বরিশাল, অক্টোবর ২২, ১৯৫৪) জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করেন এবং ১৯৯৯ খৃস্টাব্দে যখন তার জন্মশতবার্ষিকী পালিত হচ্ছিল ততদিনে তিনি বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয়তম কবিতে পরিণত হয়েছেন। কারন জীবদ্দশায় অসাধারণ কবি হিসেবে পরিচিতি থাকলেও তিনি খ্যাতি অর্জন করে উঠতে পারেন নি।



জীবনানন্দ দাশ

জীবনানন্দ দাশের বাবার নাম সত্যানন্দ দাশ এবং মায়ের নাম কুসুমকুমারী দাশ। সত্যানন্দ দাশ (১৮৬৩-১৯৪২) ছিলেন স্কুল শিক্ষক, পত্রিকা সম্পাদক এবং প্রবন্ধকার। একান্নবর্তী পরিবারের ব্যস্ত গৃহিনী কুসুমকুমারী দাশ (১৮৮২-১৯৪৮) কবিতা লিখতেন। জীবনানন্দ ছিলেন পরিবারের বড় ছেলে, তাঁর ছোট ভাই অশোকানন্দ এবং বোন সুচরিতা। বাড়ীতে মা-বাবার কাছে তার শিক্ষার হাতে-খড়ি। বরিশাল ব্রজমোহন স্কুলে পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তি হলে তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা জীবনের সূত্রপাত হয়। এ স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাসের পর তিনি ব্রজমোহন কলেজে থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। পরে কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজের পড়াশুনা করেন এবং বি,এ, পাস করেন। । ১৯২১ খৃস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজী সাহিত্যে এম. এ. ডিগ্রী অর্জন করেন। ১৯৩০ সালে শ্রীমতী লাবণ্য গুহকে বিবাহ করেন। তাঁদের দুটি সন্তান। ১৯৩১ সালে কন্যা শ্রীমতী মঞ্জুশ্রী এবং ১৯৩৮ সালে পুত্র শ্রী সমরানন্দের জন্ম হয়।

১৪ই অক্টোবর, ১৯৫৪ তারিখে কলকাতার বালিগঞ্জে এক ট্রাম দুর্ঘটনায় তিনি আহত হন। ট্রামের ক্যাচারে আটকে তার শরীর দলিত হয়ে গিয়েছিল। ভেঙ্গে গিয়েছিল কণ্ঠা, ঊরু এবং পাঁজরের হাড়। চিৎকার শুনে ছুটে এসে নিকটস্থ চায়ের দোকানের মালিক চূণীলাল এবং অন্যান্যরা তাকে উদ্ধার করে। তাকে ভর্তি করা হয় শম্ভূনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে। এ সময় ডাঃ ভূমেন্দ্র গুহ সহ অনেক তরুণ কবি জীবনানন্দের সুচিকিৎসার জন প্রাণপণ চেষ্টা করেছিলেন। কবি-সাহিত্যিক সজনীকান্ত দাশ এ ব্যাপারে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তাঁর অনুরোধেই পশ্চিম বঙ্গ-এর মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ বিধানচন্দ্র রায় কবিকে দেখতে এসেছিলেন এবং আহত কবির সুচিকিৎসার নির্দেশ দিয়েছিলেন যদিও এতে চিকিৎসার তেমন উন্নতি কিছু হয় নি। জীবনানন্দের অবস্থা ক্রমশঃ জটিল হতে থাকে। শেষ পর্যন্ত নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে পড়েন কবি। চিকিৎসক ও সেবিকাদের সকল প্রচেষ্টা বিফলে দিয়ে ২২শে অক্টোবর, ১৯৫৪ তারিখে রাত্রি ১১ টা ৩৫ মিনিটে কলকাতার শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। ধারণা করা হয় আত্মহত্যাস্পৃহা ছিল দুর্ঘটনার মূল কারণ। ত চলুন কবিতাগুলি আর একবার চেখে দেখা যাক।

১. অদ্ভুত আঁধার এক-জীবনানন্দ দাশ

অদ্ভুত আঁধার এক এসেছে এ পৃথিবীতে আজ,
যারা অন্ধ সবচেয়ে বেশি আজ চোখে দেখে তারা;
যাদের হৃদয়ে কোনো প্রেম নেই-প্রীতি নেই-করুনার আলোড়ন নেই
পৃথিবী অচল আজ তাদের সুপরামর্শ ছাড়া।
যাদের গভীর আস্থা আছে আজো মানুষের প্রতি,
এখনো যাদের কাছে স্বাভাবিক বলে মনে হয়
মহৎ সত্য বা রীতি, কিংবা শিল্প অথবা সাধনা
শকুন ও শেয়ালের খাদ্য আজ তাদের হৃদয়।


২. তোমায় আমি-জীবনানন্দ দাশ

তোমায় আমি দেখেছিলাম ব’লে
তুমি আমার পদ্মপাতা হলে;
শিশির কণার মতন শূন্যে ঘুরে
শুনেছিলাম পদ্মপত্র আছে অনেক দূরে
খুঁজে খুঁজে পেলাম তাকে শেষে।
নদী সাগর কোথায় চলে ব’য়ে
পদ্মপাতায় জলের বিন্দু হ’য়ে
জানি না কিছু-দেখি না কিছু আর
এতদিনে মিল হয়েছে তোমার আমার
পদ্মপাতার বুকের ভিতর এসে।
তোমায় ভালোবেসেছি আমি, তাই
শিশির হয়ে থাকতে যে ভয় পাই,
তোমার কোলে জলের বিন্দু পেতে
চাই যে তোমার মধ্যে মিশে যেতে
শরীর যেমন মনের সঙ্গে মেশে।
জানি আমি তুমি রবে-আমার হবে ক্ষয়
পদ্মপাতা একটি শুধু জলের বিন্দু নয়।
এই আছে, নেই-এই আছে নেই-জীবন চঞ্চল;
তা তাকাতেই ফুরিয়ে যায় রে পদ্মপাতার জল
বুঝেছি আমি তোমায় ভালোবেসে।



৩. বনলতা সেন-জীবনানন্দ দাশ

হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে,
সিংহল সমুদ্র থেকে নিশীথের অন্ধকারে মালয় সাগরে
অনেক ঘুরেছি আমি; বিম্বিসার অশোকের ধুসর জগতে
সেখানে ছিলাম আমি; আরো দূর অন্ধকারে বিদর্ভ নগরে;
আমি ক্লান্ত প্রাণ এক, চারিদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন,
আমারে দুদণ্ড শান্তি দিয়েছিল নাটোরের বনলতা সেন।
চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা,
মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য; অতিদূর সমুদ্রের’পর
হাল ভেঙে যে নাবিক হারায়েছে দিশা
সবুজ ঘাসের দেশ যখন সে চোখে দেখে দারুচিনি-দ্বীপের ভিতর,
তেমনি দেখেছি তারে অন্ধকারে; বলেছে সে, ‌‌‘এতদিন কোথায় ছিলেন?’
পাখির নীড়ের মতো চোখ তুলে নাটোরের বনলতা সেন।
সমস্ত দিনের শেষে শিশিরের শব্দের মতন
সন্ধা আসে; ডানার রৌদ্রের গন্ধ মুছে ফেলে চিল;
পৃথিবীর সব রঙ নিভে গেলে পাণ্ডুলিপি করে আয়োজন
তখন গল্পের তরে জোনাকির রঙে ঝিলমিল;
সব পাখি ঘরে আসে-সব নদী-ফুরায় এ জীবনের সব লেনদেন;
থাকে শুধু অন্ধকার, মুখোমুখি বসিবার বনলতা সেন।


তথ্যসূত্র:
১. ক্লিনটন বি সিলি লিখিত আ পোয়েট আপার্ট।
২. উইকিপিডিয়া।
৩. হুমায়ুন আজাদ সম্পাদিত আধুনিক বাঙলা কবিতা
৪. জীবনানন্দের মৃত্যু - ফয়জুল লতিফ চৌধুরী
৫. কবিতার বই।
আরেকটু পড়ি, কি বলেন.......

দেবতার গ্রাস - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

মাঝে মাঝে পড়া কিছু বার বার পড়তে ভাল লাগে। আর যদি সেটা রবীঠাকুরের কিছু হয় তাহলে তো কথাই নেই। যারা রবীন্দ্র কাব্য ভালবাসেন তাদের জন্য আমি এখানে আমার খুব প্রিয় কবিতা "দেবতার গ্রাস" তুলে ধরলাম আবার। ভাল লাগলে জানাবেন।

দেবতার গ্রাস
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

(কথা ও কাহিনী কাব্যগ্রন্থ।
১৩ কার্তিক ১৩০৪)

গ্রামে গ্রামে সেই বার্তা রটি গেল ক্রমে
মৈত্রমহাশয় যাবেন সাগরসঙ্গমে
তীর্থস্নান লাগি। সঙ্গীদল গেল জুটি
কত বালবৃদ্ধ নরনারী; নৌকা দুটি
প্রস্তুত হইল ঘাটে।

পুণ্য লোভাতুর
মোক্ষদা কহিল আসি, ``হে দাদাঠাকুর,
আমি তব হব সাথি। বিধবা যুবতী---
দুখানি করুণ আঁখি মানে না যুকতি,
কেবল মিনতি করে--- অনুরোধ তার
এড়ানো কঠিন বড়ো। ``স্থান কোথা আর
মৈত্র কহিলেন তারে। ``পায়ে ধরি তব
বিধবা কহিল কাঁদি, ``স্থান করি লব
কোনোমতে এক ধারে। ভিজে গেল মন,
তবু দ্বিধাভরে তারে শুধালো ব্রাহ্মণ,
``নাবালক ছেলেটির কী করিবে তবে?
উত্তর করিল নারী, ``রাখাল? সে রবে
আপন মাসির কাছে। তার জন্মপরে
বহুদিন ভুগেছিনু সূতিকার জ্বরে,
বাঁচিব ছিল না আশা; অন্নদা তখন
আপন শিশুর সাথে দিয়ে তারে স্তন
মানুষ করেছে যত্নে--- সেই হতে ছেলে
মাসির আদরে আছে মার কোল ফেলে।
দুরন্ত মানে না কারে, করিলে শাসন
মাসি আসি অশ্রুজলে ভরিয়া নয়ন
কোলে তারে টেনে লয়। সে থাকিবে সুখে
মার চেয়ে আপনার মাসিমার বুকে।


সম্মত হইল বিপ্র। মোক্ষদা সত্বর
প্রস্তুত হইল বাঁধি জিনিস-পত্তর,
প্রণমিয়া গুরুজনে, সখীদলবলে
ভাসাইয়া বিদায়ের শোক-অশ্রুজলে।
ঘাটে আসি দেখে--- সেথা আগে-ভাগে ছুটি
রাখাল বসিয়া আছে তরী-'পরে উঠি
নিশ্চিন্ত নীরবে। ``তুই হেথা কেন ওরে
মা শুধালো; সে কহিল, ``যাইব সাগরে।
``যাইবি সাগরে! আরে, ওরে দস্যু ছেলে,
নেমে আয়। পুনরায় দৃঢ় চক্ষু মেলে
সে কহিল দুটি কথা, ``যাইব সাগরে।
যত তার বাহু ধরি টানাটানি করে
রহিল সে তরণী আঁকড়ি। অবশেষে
ব্রাহ্মণ করুণ স্নেহে কহিলেন হেসে,
``থাক্ থাক্, সঙ্গে যাক। মা রাগিয়া বলে,
``চল্, তোরে দিয়ে আসি সাগরের জলে।
যেমনি সে কথা গেল আপনার কানে
অমনি মায়ের বক্ষ অনুতাপবাণে
বিঁধিয়া কাঁদিয়া উঠে। মুদিয়া নয়ন
``নারায়ণ নারায়ণ করিল স্মরণ---
পুত্রে নিল কোলে তুলি, তার সর্বদেহে
করুণ কল্যাণহস্ত বুলাইল স্নেহে।
মৈত্র তারে ডাকি ধীরে চুপি চুপি কয়,
``ছি ছি ছি, এমন কথা বলিবার নয়।

রাখাল যাইবে সাথে স্থির হল কথা---
অন্নদা লোকের মুখে শুনি সে বারতা
ছুটে আসি বলে, ``বাছা, কোথা যাবি ওরে!
রাখাল কহিল হাসি, ``চলিনু সাগরে,
আবার ফিরিব মাসি! পাগলের প্রায়
অন্নদা কহিল ডাকি, ``ঠাকুরমশায়,
বড়ো যে দুরন্ত ছেলে রাখাল আমার,
কে তাহারে সামালিবে! জন্ম হতে তার
মাসি ছেড়ে বেশিক্ষণ থাকে নি কোথাও;
কোথা এরে নিয়ে যাবে, ফিরে দিয়ে যাও।
রাখাল কহিল, ``মাসি, যাইব সাগরে,
আবার ফিরিব আমি। বিপ্র স্নেহভরে
কহিলেন, ``যতক্ষণ আমি আছি ভাই,
তোমার রাখাল লাগি কোনো ভয় নাই।
এখন শীতের দিন শান্ত নদীনদ,
অনেক যাত্রীর মেলা, পথের বিপদ
কিছু নাই; যাতায়াত মাস-দুই কাল,
তোমারে ফিরায়ে দিব তোমার রাখাল।

শুভক্ষণে দুর্গা স্মরি নৌকা দিল ছাড়ি,
দাঁড়ায়ে রহিল ঘাটে যত কুলনারী
অশ্রুচোখে। হেমন্তের প্রভাতশিশিরে
ছলছল করে গ্রাম চূর্ণীনদীতীরে।

যাত্রীদল ফিরে আসে, সাঙ্গ হল মেলা।
তরণী তীরেতে বাঁধা অপরাহ্ণবেলা
জোয়ারের আশে। কৌতূহল-অবসান,
কাঁদিতেছে রাখালের গৃহগত প্রাণ
মাসির কোলের লাগি। জল শুধু জল,
দেখে দেখে চিত্ত তার হয়েছে বিকল।
মসৃণ চিক্কণ কৃষ্ণ কুটিল নিষ্ঠুর,
লোলুপ লেলিহজিহ্ব সর্পসম ক্রূর
খল জল ছল-ভরা, তুলি লক্ষ ফণা
ফুঁসিছে গর্জিছে নিত্য করিছে কামনা
মৃত্তিকার শিশুদের, লালায়িত মুখ।
হে মাটি, হে স্নেহময়ী, অয়ি মৌনমূক,
অয়ি স্থির, অয়ি ধ্রুব, অয়ি পুরাতন,
সর্ব-উপদ্রবসহা আনন্দভবন
শ্যামলকোমলা, যেথা যে-কেহই থাকে
অদৃশ্য দু বাহু মেলি টানিছ তাহাকে
অহরহ, অয়ি মুগ্ধে, কী বিপুল টানে
দিগন্তবিস্তৃত তব শান্ত বক্ষ-পানে!

চঞ্চল বালক আসি প্রতি ক্ষণে ক্ষণে
অধীর উত্‍‌সুক কণ্ঠে শুধায় ব্রাহ্মণে,
``ঠাকুর, কখন আজি আসিবে জোয়ার?

সহসা স্তিমিত জলে আবেগসঞ্চার
দুই কূল চেতাইল আশার সংবাদে।
ফিরিল তরীর মুখ, মৃদু আর্তনাদে
কাছিতে পড়িল টান, কলশব্দগীতে
সিন্ধুর বিজয়রথ পশিল নদীতে---
আসিল জোয়ার। মাঝি দেবতারে স্মরি
ত্বরিত উত্তর-মুখে খুলে দিল তরী।
রাখাল শুধায় আসি ব্রাহ্মণের কাছে,
``দেশে পঁহুছিতে আর কত দিন আছে?

সূর্য অস্ত না যাইতে, ক্রোশ দুই ছেড়ে
উত্তর-বায়ুর বেগ ক্রমে ওঠে বেড়ে!
রূপনারানের মুখে পড়ি বালুচর
সংকীর্ণ নদীর পথে বাধিল সমর
জোয়ারের স্রোতে আর উত্তরসমীরে
উত্তাল উদ্দাম। ``তরণী ভিড়াও তীরে
উচ্চকণ্ঠে বারম্বার কহে যাত্রীদল।
কোথা তীর! চারি দিকে ক্ষিপ্তোন্মত্ত জল
আপনার রুদ্র নৃত্যে দেয় করতালি
লক্ষ লক্ষ হাতে, আকাশেরে দেয় গালি
ফেনিল আক্রোশে। এক দিকে যায় দেখা
অতিদূর তীরপ্রান্তে নীল বনরেখা,
অন্য দিকে লুব্ধ ক্ষুব্ধ হিংস্র বারিরাশি
প্রশান্ত সূর্যাস্ত-পানে উঠিছে উচ্ছ্বাসি
উদ্ধতবিদ্রোহভরে। নাহি মানে হাল,
ঘুরে টলমল তরী অশান্ত মাতাল
মূঢ়সম। তীব্রশীতপবনের সনে
মিশিয়া ত্রাসের হিম নরনারীগণে
কাঁপাইছে থরহরি। কেহ হতবাক্‌,
কেহ বা ক্রন্দন করে ছাড়ে ঊর্ধ্বডাক
ডাকি আত্মজনে। মৈত্র শুষ্ক পাংশুমুখে
চক্ষু মুদি করে জপ। জননীর বুকে
রাখাল লুকায়ে মুখ কাঁপিছে নীরবে।
তখন বিপন্ন মাঝি ডাকি কহে সবে,
``বাবারে দিয়েছে ফাঁকি তোমাদের কেউ,
যা মেনেছে দেয় নাই, তাই এত ঢেউ---
অসময়ে এ তুফান। শুন এই বেলা---
করহ মানত রক্ষা, করিয়ো না খেলা
ক্রুদ্ধ দেবতার সনে। যার যত ছিল
অর্থ বস্ত্র যাহা-কিছু জলে ফেলি দিল
না করি বিচার। তবু, তখনি পলকে
তরীতে উঠিল জল দারুণ ঝলকে।
মাঝি কহে পুনর্বার, ``দেবতার ধন
কে যায় ফিরায়ে লয়ে এই বেলা শোন্‌।
ব্রাহ্মণ সহসা উঠি কহিলা তখনি
মোক্ষদারে লক্ষ্য করি, ``এই সে রমণী
দেবতারে সঁপি দিয়া আপনার ছেলে
চুরি করে নিয়ে যায়। ``দাও তারে ফেলে
এক বাক্যে গর্জি উঠে তরাসে নিষ্ঠুর
যাত্রী সবে। কহে নারী, ``হে দাদাঠাকুর,
রক্ষা করো, রক্ষা করো! দুই দৃঢ় করে
রাখালেরে প্রাণপণে বক্ষে চাপি ধরে।
ভর্ত্‍‌‌সিয়া গর্জিয়া উঠি কহিলা ব্রাহ্মণ,
``আমি তোর রক্ষাকর্তা! রোষে নিশ্চেতন
মা হয়ে আপন পুত্র দিলি দেবতারে---
শেষকালে আমি রক্ষা করিব তাহারে!
শোধ্ দেবতার ঋণ; সত্য ভঙ্গ ক'রে
এতগুলি প্রাণী তুই ডুবাবি সাগরে!
মোক্ষদা কহিল, ``অতি মূর্খ নারী আমি,
কী বলেছি রোষবশে--- ওগো অন্তর্যামী,
সেই সত্য হল! সে যে মিথ্যা কত দূর
তখনি শুনে কি তুমি বোঝ নি ঠাকুর?
শুধু কি মুখের বাক্য শুনেছ দেবতা,
শোন নি কি জননীর অন্তরের কথা?

বলিতে বলিতে যত মিলি মাঝি-দাঁড়ি
বল করি রাখালেরে নিল ছিঁড়ি কাড়ি
মার বক্ষ হতে। মৈত্র মুদি দুই আঁখি
ফিরায়ে রহিল মুখ কানে হাত ঢাকি
দন্তে দন্তে চাপি বলে। কে তাঁরে সহসা
মর্মে মর্মে আঘাতিল বিদ্যুতের কশা---
দংশিল বৃশ্চিকদংশ। ``মাসি! মাসি! মাসি!
বিন্ধিল বহ্নির শলা রুদ্ধ কর্ণে আসি
নিরুপায় অনাথের অন্তিমের ডাক।
চীত্‍‌কারি উঠিল বিপ্র, ``রাখ্ রাখ্ রাখ্‌।
চকিতে হেরিল চাহি মূর্ছি আছে পড়ে
মোক্ষদা চরণে তাঁর, মুহূর্তের তরে
ফুটন্ত তরঙ্গ-মাঝে মেলি আর্ত চোখ
``মাসি বলি ফুকারিয়া মিলালো বালক
অনন্ততিমিরতলে; শুধু ক্ষীণ মুঠি
বারেক ব্যাকুল বলে ঊর্ধ্ব-পানে উঠি
আকাশে আশ্রয় খুঁজি ডুবিল হতাশে।
``ফিরায়ে আনিব তোরে কহি ঊর্ধ্বশ্বাসে
ব্রাহ্মণ মুহূর্তমাঝে ঝাঁপ দিল জলে---
আর উঠিল না। সূর্য গেল অস্তাচলে।
আরেকটু পড়ি, কি বলেন.......

ক্ষনিকের বন্ধু

সামাজিক সোশ্যাল সাইটগুলোর পরিব্যাপ্তি আজকাল অনেকদূর এগিয়ে গেছে। ভার্চুয়াল অর্ন্তজালে এসব সাইটের মাধ্যমে বন্ধুত্বের পরিধি অনেক বাড়িয়ে নিচ্ছে সবাই। সেদিন সচলায়তনে লেখা পোস্ট করার সময় একটা মন্তব্য ভাল লাগল বলে পোস্টকারীর আরও কয়েকটি লেখা পরলাম, ভালই লাগল। উনার প্রোফাইলে ফেসসবুকের লিংক দিয়ে রেখেছেন বলে আমি উনার ফেসবুক একাউন্টে রিকুয়েস্ট পাঠাই। পরে উনি রিপ্লাই দিলেন অনেকটা এইরকম।

“আমি কি আপনাকে চিনি? প্লিজ জানান। চিনলে অবশ্যই আপনাকে অ্যাড করবো। ভালো থাকবেন।“

আমি প্রত্তুতরে লিখলাম:

“সব দেয়ালেরই কোথাও না কোথাও একটা ছিদ্র থাকে। বাধ-না-মানা মানুষ সেই ছিদ্রপথে চোখ রাখে, সেই ছিদ্র একসময় ক্রমশ বড় হয়, তারপর সেটি আর ছিদ্র থাকে না, তোরণ হয়ে আহবান করে দু’পাশের মানুষকে, আর এভাবেই একজন মানুষের পরিচিতজনদের সংখ্যা বাড়ে, বাড়ে বন্ধুত্বের পরিধি। আর এরই সূত্র ধরে আমি শুধু চেনাদের গন্ডি পেরিয়ে অচেনাদেরও বন্ধুত্বের আবহে বেড়িয়ে নিতে চাই বলেই আপনাকে রিকুয়েস্ট পাঠানো।

“কিন্তু যারা শুধু চেনাদেরই চিনতে চান, তাদের সাথে আমি সম্পর্ক গড়তে চাচ্ছি না। প্লিজ রিকুয়েস্ট রিজেক্ট করেন। আমি দু:খিত ওটা পাঠানোর জন্য।“


উনি আবার রিপ্লাই দিলেন:
“আপনার কথাগুলো ভালো লাগলো। কিন্তু জানেন তো, এভাবে বন্ধুত্বের পরিধি যতো বাড়ে, তার চেয়ে বেশি বাড়ে ফালতু লোকের পরিধি। যে কারণে সম্প্রতি আমি ফ্রেন্ড লিস্ট থেকে অনেককে বাদ দিয়েছি। যা হোক, আপনার কথাগুলো ভালো লাগলো। অ্যাড করলাম। ভালো থাকবেন। ধন্যবাদ।“

উনার এই উদ্বিগ্নতাকে কোনভাবেই অস্বীকার করা যায় না। ভাল লোকের ফাঁকে ফাঁকে অনেক মন্দ লোকের উপস্হিতি অনেক সময়ই টের পাওয়া যায়। কিন্তু তাদেরকে প্রাথমিকভাবে অবজার্ভ করা অনেকের কাছেই অসম্ভব হয়ে পড়ে। তবে পরবতীক্রমে তাদের একটিভিটিজ, ইন্টারেস্ট, প্রোফাইল ডিটেল, নিয়মিত কমেন্ট ইত্যাদি দেখে তাদের মানসিক রূপ বুঝতে খুব একটা সমস্যা হয় না। আর তাদের আসল রূপ বুঝামাত্রই তাদেরকে ছুড়ে ফেরার অধিকার এবং ক্ষমতা সবারই আছে। সেই গুটিকয়েক লোকের জন্য বেশি সংখ্যক ভালো মানুষের উপর থেকে বিশ্বাস হারিয়ে ফেলে অনেকেই। আর মানুষদের উপর এই বিশ্বাস হারিয়ে ফেলার ব্যাপারটাকে আমার খুব খারাপ লাগল বলেই আমি উনাকে রিজেক্ট করলাম, পরক্ষনেই।

আমি আবার লিখলাম:
“ভালো লাগার জন্য ধন্যবাদ। আর আপনাকে রিজেক্ট করার জন্য দু:খিত। ভালো থাকবেন সবসময়, ক্ষনিকের বন্ধু।“

আচ্ছা, এমন একটা পৃথিবী কি গড়া যাবে না, যেখানে থাকবে না কোন কপটতা, মানসিক নির্যাতন, অবিশ্বাস। সেখানে শুধু থাকবে একে অপরের প্রতি ভালোবাসা, ভালোলাগা। সেই ভালোবাসার পৃথিবীতে থাকবে মানুষের প্রতি মানুষের সম্প্রীতি আর অগাধ বিশ্বাস। সেই ভালোলাগায় আমরা ছুঁয়ে যাব আমাদের স্বপ্নলক্ষ্যে, দিগন্ত সীমানায়।

ভালো থাকুন সবাই।
আরেকটু পড়ি, কি বলেন.......

শনিবার, ১০ অক্টোবর, ২০০৯

পোট্রেট মডেল

১.
ছোটবেলা থেকেই আকাঁআকির প্রতি ছিল অবাধ্য্ দূর্বলতা। যদিও শিল্পকর্ম বলতে যা বুঝায় তার ধারকাছ দিয়েও ওগুলো যেত না। “কি সব ছাই-পাশ….”, “অনর্থক টাকা নষ্ট”…, এধরনের অনেক শাণিত প্রশংসা শুনলেও আকাঁআকির প্রতি তীব্র অনুরাগের অতটুকু পরিবর্তন হয়নি আমার কখনও।

আমি তখন শিল্পকলা একাডেমির চারুকলা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। আমার আর্ট গুরু অরবিন্দু দাশগুপ্ত এক সন্ধ্যায় ফোন করে বললেন আগামী পরশু একটা Group Exhibition আছে, তুমি একটা পোর্ট্রেট একেঁ কাল বিকেলের মধ্যে যেকোন ভাবেই হোক জমা দাও। অবজ্ঞা কর না। গুরু আদেশ শিরোধার্য। পোট্রেট আকঁব, কিন্তু মডেল তো লাগবে! আশেপাশে তো দেখতে পাচ্ছি না। ঐদিন রাতে নিকট প্রতিবেশী দীপা আন্টি বেড়াতে আসলেন উনার দু-জমজ বাচ্চা নিয়ে আমাদের বাসায়। সুমিত আর অমিত। বয়স ৮। তাদেরকে দেখামাত্রই পরিকল্পনা করতে দেরি করলাম না। ছবির নামও ঠিক করে নিলাম। “Dream”. আন্টিকে বলা মাত্রই অত্যু উৎসাহে সায় দিলেন। আমি তাদেরকে আমার রুমে নিয়ে আসলাম।


সুমিত ভায়া, তুমি টেবিলে মাথাটা টেবিলে হেলান দিয়ে বস, আর অমিত ভায়া, তুমি বড়দার কাধেঁ হাত দিয়ে আমার দিকে একটু তাকিয়ে থেকো, কেমন!

"দাদাভাইয়া, হেলান কি?" - অমিতের কৌতুহলী প্রশ্ন। যন্ত্রনার শুরুই যে তখন, আগে বুঝতে পারিনি।

২.
আঁকাআঁকির ক্ষেত্রে স্কেচ মাধ্যম ব্যবহার করার সুবিধা হল ওয়াটার কালার আর ওয়েল পেইন্টিংয়ের মত এখানে অসংখ্য সরঞ্জমাদি (ড্রয়িং ম্যাটারিয়াল) নিয়ে ঘাটাঘাটি করতে হয় না। শুধুমাত্র একটা মোটামুটি মানের ভাল পেন্সিল এবং একটা স্কেচশীট হলেই যথেষ্ট। তাছাড়া কোথাও অপ্রত্যাশিত কোন পোচ্ পরে গেলে, সেটা আবার ইরেজার দিয়ে তৎক্ষনাৎ মুছেও ফেলা যায়। যা হোক একটা গ্রুপ এক্সিবিশানের জন্য পোট্রেট আঁকার কাজ হাতে নিয়েছিলাম আমার আর্ট গুরু অরবিন্দু দাশগুপ্ত আর্জিক্রমে। কালই জমা দিতে হবে। ভাগ্যক্রমে মডেলও জোগাড় হয়ে গেছে। এখন শুধু আঁকার পালা।

আমার মডেল সুমিত আর অমিতের চোখেমুখে প্রবল কৌতুহলের ছাপ। ড্রয়িং ম্যাটারিয়ালের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করছে আমি কি করতে যাচ্ছি তাদের নিয়ে।

“নাড়াচাড়া করে না ভাইয়া - তাহলে তোমাদের ছবি ভালো হবে না যে, পঁচা হয়ে যাবে খুব।” - আমি নরম সুরে বললাম।

আউটলাইনটা শেষ করার পর চোখের টোনটাও অনেকটা এগিয়ে নিয়ে এসেছি। তখন থেকেই তাদের মধ্যে টুকটাক খুনসুটি শুরু হয়ে গিয়েছিল।

“দাদাভাইয়া, দেখেন দেখেন অমিত আমার পিঠে চিমটি কাটছে”-বলেই বিচারের অপেক্ষা না করে সে অমিতের গালে কষে একটা চড় বসিয়ে দিল। আচমকা অপ্রত্যাশিত চড় খেয়ে আগুনঝরা দৃষ্টিতে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে সুমিতও তার দুহাতের নখ ব্যবহার করে সর্বশক্তি দিয়ে অমিতকে খামছে দিল। কিছুক্ষন পর অনবরত কিল ঘুষি চলতে লাগল। একজন আরেকজনকে সজোরে খামচাতে লাগল। প্রায় রক্তারক্তি অবস্থা। পরিস্তিতি বেগতিক দেখে আমি তাড়াতাড়ি হাতের স্কেচশীটটা ডেস্কে রেখে তাদের দ্বন্দযুদ্ধ রুখতে উঠে গেলাম। আমি দুজনকেই হালকা ধমক দিয়ে আবার আগের ভঙ্গিতে বসানোর চেষ্টা করলাম। কিন্তু আমার কাছ থেকে উপযুক্ত বিচার না পেয়েই বোধহয় অমিত ঝড়ের বেগে ঘর থেকে বের হয়ে তার মায়ের কাছে গিয়ে তীব্র গলায় বিচারের দাবী করল। কিছুক্ষন পরে দীপা আন্টি অমিতকে বুঝিয়ে শুনিয়ে আবার ডেস্কে নিয়ে আসলেন এবং বসিয়ে দিয়ে গেলেন। মায়ের শাসানিতে কিছুটা শান্ত হয়ে সুমিত-অমিত আবার আগের মত পোজ্ দিয়ে বসল ডেস্কের উপর।

রাত আটটা বাজে, কাল সকালে ৯টার মধ্যেই পোর্ট্রেটটা জমা করতে হবে-এই টেনশন মাথায় নিয়ে আবার নব উদ্যমে স্কেচটা করা শুরু করতে লাগলাম।

পেন্সিল আবার শুধু হাতে ধরতেই সুমিত কাচুমুচু ভঙ্গিতে বলে উঠল, “দাদাভাইয়া, বাথরুম পেয়েছে”। আমার চেহারা দেখেই মনে হয় সে আর উত্তরের অপেক্ষা না করে বাথরুমের দিকে ছুটে গেল। সুযোগ পেয়ে অমিতও একটা অজুহাত দেখিয়ে টিভি দেখতে চলে গেল। পরে আন্টিকে ব্যবহার করে তাদেরকে আবার ডেস্কে নিয়ে এসে বসালাম।

কিছুক্ষন পরে ওরা আরও কয়েক’দফা মারামারি-কাটাকাটি করল। সময়ের কথা বিবেচনা করে আমি আর তাদের উপর পূর্ণ ভরসায় না থেকে কিছুটা কল্পনা, কিছুটা বাস্তবের মিশেলে তাদের পোর্ট্রেটটা মোটামুটি শেষ করে নিয়ে আসতে থাকলাম।

তখনি স্কেচবুক থেকে চোখ তুলে তাকিয়ে দেখি অমিত আর তার জায়গায় নেই। হঠাৎ টের পেলাম সে পেছন থেকে আমার রং মেশানো জগভর্তি পানি আমার গায়ের উপর ঢেলে দিল। সেই রং মেশানো পানিতে আমার পুরো স্কেচশীটটাও নষ্ট হয়ে গেল। পরে ছোট ভাইয়ের কান্ডকারখানা অনুসরন করে সুমিতও নির্বিকার ভঙ্গিতে গ্লাসভর্তি পানি আমার মাথার উপর ঢেলে দিয়ে দাতঁ কেলিয়ে হাসতে লাগল দুজনেই। আমার ভ্রম্মতালু তখন চরমে। আমি আর কালক্ষেপন না করে, ডান বাম না ভেবে, দাতঁ কড়মড় করে দুইটাকে শার্টের কলার ধরে আন্টির কাছে নিয়ে আসলাম। আর বললাম-“আন্টি আরেকটু কাজ বাকি আছে, ওটুকু আমি তাদের ছাড়াই করে ফেলতে পারব।”

পরে ওরা চলে যাওয়ার পর রাত জেগে ভেজা স্কেচশীটটা দেখে দেখে হুবুহু আরেকটা কপি আকঁলাম। লোডশেডিং আর মশার কামড় তখন আমাকে সাবক্ষনিক সঙ্গ দিয়ে চলেছিল।

শেষ রাতের দিকে অরবিন্দু স্যারের ফোন। “কি তোমার পোর্ট্রেটের কাজ হয়ে গেছে তো? মডেল কে ছিল?”

“হ্যাঁ, প্রায় হয়ে এসেছে, মডেল ছিল দুটি শিশু, সুমিত ও অমিত।”

“খুব ভাল সাবজেক্ট নিয়েছো, কাজটা নিশ্চয়ই ভাল হবে। শোন, নিষ্পাপ শিশুরা হচ্ছে স্বর্গ থেকে আসা সাক্ষাত্ দেবদূত। তাদের সাথে কাজ করতেও আনন্দ। শিশুদের সাবজেক্ট করে আকাঁ ছবিতে তাদের নিষ্পাপ ভাবটা যথাযথভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারাটাই সবচেয়ে চ্যালেঞ্জের কাজ।”

তখন মনে মনে বললাম,
“তাদের ভয়াবহ নির্মমতায় আমার স্কেচে তাদের নিষ্পাপ ভাবটা ফুটে আসছে কিনা জানি না - তবে এত বেশি নিষ্পাপদের (?!?!) নিয়ে যে আমি আর কোন কাজ করব না - তখনই ঠিক করে নিলাম।”

[বি.দ্র.:
১. অমিত আর সুমিত দীপা আন্টির সাথে সেই Exhibition দেখতে এসেছিল। সুমিত-অমিত আমার ছবিটি দেখে বলেছিল, “দাদাভাইয়া আবার কবে আকঁবে আমাদের?”
২. পরে পোর্ট্রেট ক্যাটাগরিতে ২য় পুরস্কার প্রাপ্ত এ ছবিটির পুরস্কারের টাকার একটা অংশ দিয়ে জলরং ম্যাটারিয়াল কিনে দিয়েছিলাম তাদের দুজনকেই।]


"Dream"- (সুমিত-অমিত), মাধ্যম: পেন্সিল স্কেচ।

=======================

[সাথে আরও কিছু “ছাই-পাশ” এর প্রমাণকপি না দেওয়ার লোভ সামলাতে পারলাম না। ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন, এই আশা রাখি।]

----------------------
[এই সূত্র ধরে আমার কিছু তথাকথিত “ছাই-পাশ” এর প্রমাণকপি না দেওয়ার লোভ সামলাতে পারলাম না। ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন, এই আশা রাখি।]
বাউল ও তার প্রেক্ষাপট
বাউল ও তার প্রেক্ষাপট

এইজ ডিফরেন্স
এইজ ডিফরেন্স

পতাকা এবং তার প্রতিচ্ছবি
পতাকা এবং তার প্রতিচ্ছবি

বর্ষা
বর্ষা

স্টিললাইফ
স্টিললাইফ

রুরাল লাইফ
রুরাল লাইফ


দেবী


রিপন
৩ অক্টোবর, ২০০৯
ওন্টারিও, কানাডা।
আরেকটু পড়ি, কি বলেন.......

Trespass

Open up the walls of my cottage
Let me freedom with the joy.
Open up the darkness of deep jungle,
Let me explore with the wild.
Open up the horizon's chest of ocean,
Let me enjoy with the mystery.
Open up the cave of enormous mountains,
Let me sleep with calm.


Open up the bond of my relations,
Let me be alone with myself.
Open up the complexity of livings,
Let me test the mundane with independence.
Open up the tomb of maternity,
Let me play with my birth,
Open up the seven sky of yours,
Let me trespass into the heaven of mine!
আরেকটু পড়ি, কি বলেন.......

আমার প্রথম তান্দুরী রন্ধন

রান্না ব্যাপারটাকে আমি শিল্পের পর্যায়ে না নিয়ে যেতে পারলেও, সেই রান্না আমি মোটামোটি স্বাভাবিক জীবনধারনের উপযোগি করে তুলে ফেলতে পারি। এ দেশে (কানাডা) রন্ধনকর্ম-টা নারী-পুরুষের সীমারেখায় আটকানো নয়। এখানে বিশাল বাজারের অসংখ্য টকিটাকি, হাবিজাবি জিনিস জোড়াতালি দিয়ে লাগিয়ে খাওয়ার উপোযুগি কিছু একটা নিমিষেই তৈরি করে ফেলা যায়। যার জন্য রসনাবিলাসে কালক্ষেপন করার মতন নিম্নবিলাসি মানসিকতা এদেশের স্হূলকায়দেরও নেই।

আমি মোটামোটি সকল কাজে “অকর্মার ঢেঁকি” বিশেষনে বিশেষায়িত হলেও, আমার রন্ধনশৈলীতে এই উপাধি কেউ দিয়ে বসলে, আমার ভ্রম্মতালুর রক্তচলাচলে প্রবল প্রাণসঞ্চার হয়। এইত সেদিন, আমার তৈরি করা টমেটোর চাটনি চেটে পুটে খেয়ে বলে কিনা -“পুঁড়া পুঁড়া লাগছে”(আমি নাকি কর্মে থাকলে অন্ন্যমনস্ক হয়ে যাই বলে প্রায়ই খাবার পুড়িঁয়া ফেলি)…………………আরে বেটা, তুই…………(সেন্সরড!)…………………ভা
গ্যিস, অল্পের জন্য খুনোখুনি হয়ে যায় নি।

রান্না-বান্নায় ভাল করার একটা অনাবশক শর্ত মনে হয় “লেগে থাকা” জাতীয় কিছু। এক্ষেত্রে আমি জন্মগতভাবে ধৈযহীন হওয়ার কারনেই বোধহয় অতি আগুনে ঝটপট রান্না করার শটর্কাট পধতি তৈরি করার অভিপ্রায়ে অসংখ্যবার শারীরিক সার্জারীর মধ্য দিয়ে গিয়েছি। যার কিছু স্হায়ী স্মৃতিচিহ্ণ এখনও বয়ে বেড়াছি, আষ্টেপৃষ্টে।


বস্তুত, আইটেমে ভেরিয়েশান আনার ব্যাপারে কিছুটা কনজারভেটিভ হলেও, এক্সপেরিমেন্টাল রান্না-বান্নার ব্যাপারে আমার আগ্রহের কোনো কমতি নেই। পৃথিবীর অনেকেই জানে না, এরকম অনেক গুরুত্বপুণ ইনফরমেশন বিশ্ব রন্ধনীয় জ্ঞানকোষে সফল সংযোজন করতে পেরে আমি প্রায়শই একধরনের আত্ববিগলন অনুভব করি, যদিও নিকটমহলের সুচ-ফুটানো টিটকারীর জন্য সেই আত্ববিগলন কখনই পুর্নতা লাভ করেনি।

বৈদেশীও উপকরনে দেশিও রেসিপি বানানোর বেশ কয়েকটি প্রকল্প হাতে নিলেও কয়েকটিতে যে যারপরনাই প্রশংসিত(??) হয়েছি, তার কয়েকটি না বললেই নয়। এই ধরেন, আমার প্রথম তান্ধুরী রান্নার গল্পটা। গল্পের শুরুটা এরকম………………এ রে, উঠতে হবে……………চুলা থেকে কেমন জানি পুঁড়া পুঁড়া গন্ধ আসছে।

রিপন,
ওন্টারিও, কানাডা।
২৯ আগস্ট, ২০০৯

আরেকটু পড়ি, কি বলেন.......