সোমবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০০৯

একটি প্রেমের কাহিনী এবং একটি সতর্কীকরন-বার্তা

শিরোনাম দেখে যদি ভাবেন আমি কোন মিষ্টি প্রেমের আদ্যপন্ত বলতে যাচ্ছি তাহলে তাদের উদ্দেশ্যে আগাম জানিয়ে দিচ্ছি, প্রেমের শুরুতেই গল্পের মৃত্যু হবে। তবু স্বার্থপরের মত এমন নাম ব্যবহার করেছি শুধুই পাঠকদের আকৃষ্ট করে একটি আর্জি শোনানোর জন্য। এই অনভিপ্রেত অন্যায়ের জন্য প্রথমেই হাতজোড় করে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি ধৈর্যশীল ও ক্ষমাশীল পাঠকদের কাছে।

ঘটনাটি কলেজ জীবনের। যা বেশিরভাগ ছেলেপুলেদের ক্ষেত্রেই ঘটে। মেয়ের প্রকৃত নাম ও ঘটনার সময়কাল এখানে মূখ্য নয় বলে মেয়েটির ছদ্দনাম ব্যবহার করছি-ঝুমুর। যাক মুল ঘটনায় আসি।

ঝুমুরের বাড়ি আমাদের বাড়ির কয়েক বাড়ি পরেই। সাইকেলে করে প্রতিদিন কলেজ যেতাম। যাওয়ার সময় প্রায়ই মেয়েটিকে দেখতাম রিকশার জন্য অপেক্ষা করছে। “প্রায়ই দেখতাম”- বলছি কারন ওর বেরুবার সময় আমার মুখস্থ ছিল বলে আমিও ঘড়ি দেখে টায়টায় ওই সময়ই বের হতাম। প্রায়ই ওর পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় অন্যরকম এক ব্যখ্যাতীত শিহরন বয়ে যেত শরীর দিয়ে। অপলক তাকিয়ে থাকতাম তার দিকে। সেজন্য একবার অল্পের জন্য একটা বড় ট্রাক্টরের কাছে জীবন সমর্পন করতে বসেছিলাম প্রায়। মর মর করেও বেচেঁ গিয়েছি পরে।

মেয়েটির চোখে ছিল শিশুসুলভ সারল্য। তীব্র নজড়কাড়া চাহনি। সে আমার ব্যাপারটা আচঁ করতে পেরেছিল কিনা জানিনা, তবে আমি রাস্তা অতিক্রম করার সময় সে মিষ্টি করে এক চিলতে হাসত আর আড়চোখে কয়েকবার তাকিয়ে থাকত, আমার দিকে।

একদিন ওর সাথে দেখা না হলেই কিছুই ভাল লাগত না আমার। কলেজে গিয়েও ক্লাশে মনোযোগ বসাতে পারতাম না। বন্ধুব্ন্ধবরাও এ নিয়ে হাসাহাসি, ঠাট্টাতামাশা করত প্রায়ই।


দিনগুলি এভাবেই কাটতে লাগল। পরিচয়ের পালা কিভাবে শুরু করা যায় তাই নিয়ে ভাবতে লাগলাম রাত-দিন। একদিন বিকেলবেলা তাদের বাড়ির পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম। তখন দেখলাম মেয়েটি রিকশা থেকে নামছিল। নামার পর আমাকে দেখে সে কিছুক্ষন একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকার পর নিজেই হাত ইশারা করে ডাকল, আমাকে। তখন হালকা কথাবার্তা বলল সে আমার সাথে। এই ধরেন, “কোথায় থাকি?, এদিকে কোথায় যাই প্রতিদিন?” এইসব। এই পরিচয়ের শুরু।

ও ছিল খুব হাসিখুশি, খোলামনের একটি মেয়ে। তার স্বভাবসুলভ চঞ্চলতা আর কথা বলার ভঙ্গি আমাকে আরও আকৃষ্ট করল, তার প্রতি। আমি তখনই মনের সাথে বুঝাপরা করে সিদ্ধান্তে আসলাম ওকে ছাড়া আমি বাচঁব না।

পাড়া-প্রতিবেশীর মাধ্যমে খবর নিলাম এর বাবা থাকেন দেশের বাইরে, মা-ই ওর দেখাশোনার দায়িত্ত্ব নেন। তবে মা বেশ মেজাজ-গরম স্বভাবের, দজ্জাল টাইপ।

রাত দিন শুধুই ভাবতে লাগলাম কিভাবে ভালবাসার কথাটি ওর কাছে পাড়া যায়। পরে আর কোন উপায়ন্তর না দেখে সহজতর মাধ্যম হিসেবে চিঠি চালাচালির পরিকল্পনাটাই হাতে নিলাম। আমি তখন বিভিন্ন সাহিত্য পত্রিকায় লেখালেখি করতাম। অনেকের কাছ থেকেই বেশ প্রশংসাও আর সুনামও কুড়িয়েছি এইজন্য। আর সাত-পাচঁ না ভেবে আমার এই সকল সাহিত্যপ্রতিভাকে সম্বল করে প্রেমের চিঠিখানি লিখতে শুরু করে দিলাম। প্রায় দু’সপ্তাহ কলেজ না গিয়ে, নাওয়া-খাওয়া রীতিমত বন্ধ করে দিয়ে, কলেজ লাইব্রেরী থেকে নানান রকম কবিতা আর অমর প্রেমের কাহিনী সম্বলিত গাদা-গাদা বই বাসায় নিয়ে এসে আমার সকল আবেগ আর সাহিত্যমেধা উজাড় করে দিয়ে অনেক খেটেখুটে চৌদ্দ পাতার একটি অনন্য প্রেমের মহা-চিঠি দাড় করালাম। লিখার পর নিজেই কয়েকবার পড়ার পর আত্মগুণে নিজেই যারপরনাই মুগ্ধ হলাম। ভাবতে লাগলাম এ লিখা পড়ে তো মানুষ মারতে উদ্যত একজন কুখ্যাত খুনির মনও গলে যাওয়ার কথা। আর সে তো যুবতী মেয়ে।

যাই হোক, আমি আর কালক্ষেপন না করে চিঠিটি একদিন ওর বাড়ির গেইটে ঝুলানো মেইলবক্সে লুকিয়ে ফেলে দিয়ে আসলাম।

দিন যায়, আমার আবেগপ্রবন মন চিঠির অপেক্ষায় থাকে। গেইটে টুংটাং শব্দ হলেই দৌড়ে আসি, চিঠির খুজেঁ। প্রায় এক সপ্তাহ অপেক্ষার পর লাল খামের মোড়কে একটি চিঠি আসল। প্রচন্ড খুশিতে আরাধ্য চিঠিখানা নিয়ে নিজ ঘরের সিটকিনি আটকিয়ে পড়তে শুরু করলাম। চিঠিতে শুধু একটিই লাইন।-

“লিখ তো ভালই, কিন্তু এত ‘বানান’ ভুল কেন???”
--ইতি, ঝুমুরের “মা”।
--------------------------------------------------------------

সারার্থ: আমার প্রেমের গল্পের এখানেই পরিসমাপ্ত। প্রেমের শুরুতেই গল্পের শেষ। এবার আসি মুল কথায়। আমারব্লগসহ অনেক ব্লগই নিয়মিত পড়ে থাকি আমি। লেখালেখি নিয়মিত না করলেও পাঠক হিসেবে অনেকটাই নিয়মিত। সেই নিয়মিত পাঠকের অভিজ্ঞতার আলোকেই বলছি, প্রচুর পোষ্টের লেখা পড়ি যেকানে অসংখ্য বানান ভুল থাকে, যা সঙ্গত কারনেই খুব দৃষ্টিকটু লাগে। লেখকদের ভুল হতেই পারে, তাই আমি মনে করি সবার সেই ভুলগুলি ধরিয়ে দেয়া উচিত যাতে লেখকদের সাথে সাথে অন্যরাও ভুলগুলো থেকে শুধরিয়ে নিতে পারে নিজেদের। একজন অনভিজ্ঞ ব্লগার হিসেবে আমারও প্রচুর ভুল পাবেন, এতে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই। তাই আমিও সবসময় অপেক্ষায় থাকি কেউ আমার সেই ভুলগুলো ধরিয়ে দিবে, যেখানে আমি ভুল শুধরানোর সুযোগও পাব। এ পোষ্টেও তার অপেক্ষায় থাকলাম। আমাদের মাঝে এই সংস্কৃতিটি গড়ে উঠু - এটাই আমার এই গল্পের উদ্দেশ্য। নইলে পরে আবার হবু-শ্বাশুড়ির হাতে এরকম অপ্রত্যাশিত আরও চিঠি যে হজম করতে হবে না এরই বা গ্যারান্টি কি?

সতর্কীকরন বার্তা: ভুল বানান ধরিয়ে দিন এবং লেখককে শুধরানোরও সুযোগ করে দিন। এবং বানানেন ক্ষেত্রে সবাই যথাসম্ভব সতর্ক হোন।

বি: দ্র: এটা আমার আত্মজীবনীমূলক রচনা বলে পাঠকরা ভুল করবেন না। নিছক একটা গল্প।


অযুত শুভাশিষ (শুভাশিষ বানানটা ঠিক তো?)



রিপন
৮ নভেম্বর, ২০০৯
ওন্টারিও, কানাডা।

৪টি মন্তব্য:

  1. Ripon,
    Tumi ki bujhteo paro na ami tomakey koto gobhirbhabey bhalobashi? bujhbar kothao na.
    bangali nari--tar buk fatey to mukh fotey na...
    ei koshto niyei ki amakey bechey thaktey hobey?
    ha ishshor tumi ki nirdoy???

    উত্তরমুছুন
  2. Ripon My Love,
    You make my body sizzle with your juicy kisses,
    And yet there’s so much more that I want;
    My heart is kindled, too; It knows what bliss is,
    This closeness that I’ve never felt before.
    My body and my heart belong to you;
    I’m peaceful and complete.
    I see more adventures and orgasms coming for we two,
    We creatures of the tender fire, passion and heat.
    Yours,
    R

    উত্তরমুছুন
  3. Ripon,
    I love you. I desire you. How long will
    you make me wait? Nothing that you say can
    change my mind--except that I kill myself.
    My peace of mind is gone and the agony
    of sleepless nights is becoming unbearable--
    my body is breaking down with painful hunger
    and my windpipe is drying up with thirst.
    You can't understand my pain. But believe
    me--I cannot live without you my Love.

    উত্তরমুছুন
  4. এই মন্তব্যটি লেখক দ্বারা সরানো হয়েছে।

    উত্তরমুছুন