খন্ডচিত্র-১: শান্ত সৌম্য চেহারা। দেখলেই অন্তরের অন্তরস্থল থেকে শ্রদ্ধাবোধ ঝরে পড়ে। শ্বেত শুভ্র দাড়ী। মনে হয় আকাশের এক চিলতে রুপালী চাদঁ যেন চোয়ালের নিচে এসে নিশ্চুপ শুয়ে আছে। চোখে বাদামী ফ্রেমের চশমা। দুধে-আলতায় গায়ের রং। ধবধবে সাদা দামী পাঞ্জাবী। মাথায় মখমলের পাগড়ী। দেখলেই মাথা নত হয়ে আসে। তিনি আমাদের মাননীয় প্রাক্তন মন্ত্রিমহোদয়, মতিউর রহমান নিজামী।

ছবি: প্রাক্তন মন্ত্রি মতিউর রহমান নিজামী
মানবসেবায় ব্রতী এই ব্যক্তির জনসেবাময় কাজের তালিকা বলে শেষ করা যাবেনা। মহান এই ব্যক্তি স্বাধীনতা দিবসে উনার মূল্যবান সময় ব্যয় করে পতাকাবাহী মার্সিডিজ গাড়ীতে করে জাতীয় স্মৃতিসৌধে গিয়ে ৭১ এর শহীদের আত্মাগুলোর শান্তির মাগফেরাত কামনা করেন। ধন্য শহীদসন্তানেরা, ধন্য আমাদের পতাকা। কিছু দিন আগে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত এবং উজ্জিবীত করার জন্য মহান মুক্তিযুদ্ধ পরিষদ গঠন করেছেন। এত মাত্রাতিরিক্ত কর্মব্যস্ততার মধ্যেও উনি উনার কর্মনিষ্ট, স্নেহময় হাত দিয়ে এই দেশকে, দেশের মাটিকে আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশের মানুষ গর্বিত।
ছবি: শিবিরের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বনার্ড্য মিছিল
আর এইসব সমাজসেবামূলক কাজ সুষ্ঠুভাবে চালিয়ে নেওয়ার জন্য সরকারী তহবিল খেকে প্রায়ই বনানীতে রাজউকের প্লট, বিলাসবহুল গাড়ী সহ অসংখ্য অর্থসাহায্য দেওয়া হয়। এখন উনি অঢেল সম্পত্তির মালিক। অর্থকষ্ট খাকলে তো জনহৈতিষীমূলক কাজকর্মগুলো সঠিকভাবে বুদ্ধিমত্তার সহিত চালানো যাবে না। এটা তো বুঝতে হবে আমাদেরকে। বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধকে নতুন মাত্রায় উজ্জিবীত করে রাখার জন্য মহান, সমাজসেবী এই শ্রদ্ধেয় মানুষটির নিকট বাংলাদেশ চিরকাল ঋণী হয়ে থাকবে।
খন্ডচিত্র-২: আরেকটি ঘটনা। এনার গায়ে নোংরা কাপড়, পায়ে ছেড়া স্যান্ডেল। কাচাঁ-পাকা কুৎসিত দাড়ি। হলুদ দাতঁ। হাড় জিড়জিড়ে শরীর। দেখলেই গা শিরশির করে, ঘেন্নায় বমি চলে আসে। ৭১ এর সংগ্রামের (?!?!) সময় মুক্তিযোদ্ধা আছিলেন। বিশ্রী চেহারার লোকটির দিকে নাম নুরুল ইসলাম। মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম কোথায় জানি পড়ে গিয়ে ওর কালো কদাকার হাটুটি ভেঙ্গে ফেলেছেন। রাজশাহী হাসপাতালে ভর্তি এখন। অস্ত্রোপাচারের পর প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। শরীরে প্রচুর রক্তক্ষরন হওয়ার জন্য প্রচুর রক্ত ঘাটতি দেখা দেয়। কত্যব্যরত ডাক্তাররা অতিসত্ত্বর রক্তের দরকার বলে জানিযেছেন। কিন্তু রক্ত কেনার টাকা নেই। গত বুধবার জমানো শেষ সম্বল সাড়ে তিন হাজার টাকাটাও চুরি গেছে হাসপাতালের বেড থেকে। হায়রে কপাল! চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার ইব্রাহিমপুর গ্রামের এই অসহায় মুক্তিযোদ্ধা হাসপাতালের মেঝেতে শুয়ে আকুল হয়ে কাদছিলেঁন। সামনে যাকেই পাচ্ছিলেন তার কাছেই মুক্তিযোদ্ধা সনদের বিনিময়ে এক ব্যাগ রক্ত চাইছিলেন আর হাউমাউ করে কাঁদছিলেন।

ছবি: মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম (এই ছবিটি আমি আমার আরেকটি ব্লগে দিয়েছি)
মুল খবরের লিংক
মন্তব্য: আমাদের শান্ত সৌম্য নিজামীরা আমাদের মানুষকে কন্ডোম (শিষ্টাচার: এই সুন্দর উপমাটি আমারব্লগের আরেকজন ব্লগারের দেওয়া) বানিয়ে দেশকে ৭১ এর মত প্রতিনিয়ত ধর্ষন করে যাচ্ছে, পরে সেই কন্ডোম ছুড়ে ফেলে দিচ্ছে ডাস্টবিনের গর্তে, তাতে আমাদের কি? এগুলি তো আমাদের মত তথাকথিত সুবুদ্ধির মানুষদের দেখার বিষয় নয়। আমরা এখন গরম কফির পেয়ালা হাতে নিয়ে আয়েশ করে চকচকে ল্যাপটপটা নিয়ে আমারব্লগে ঢুকে আমদের সব সাহিত্যপ্রতিভা উজাড় করে কার্টুনিস্ট “আরিফের” মত শত শত আরিফের উপর গুটিকয়েক রাজাকারদের অত্যাচারকে উপজীব্য করে একটা ঝাড়া আবেগপ্রবন ব্লগ লিখব। আর একটু পর পর এসে অনেকগুলো মন্তব্য পেয়ে অসাধারন এই ব্লগটি লিখার জন্য আত্মগরিমায় মুগ্ধ হব আর নিজেকে বাহবা দিতে থাকব। আহা, আহা, লেখাটা তো বেশ ভালো হয়েছে। অনেকগুলো সুন্দর সুন্দর মন্তব্য পড়েছে এবারের লেখাটায়।
বাহ্, বাহ্।
জয়তু বাংলাদেশ, জয়তু নিজামী।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন