শুক্রবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১০

ত্রৈ-ইন্দ্রিয়ের অকার্যকারীতা (প্রেক্ষাপট: খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে সংঘটিত ঘটনাপ্রবাহ)

দিনটা ভাল যায়নি। মেজাজটা বিগড়ে আছে বিভিন্ন কারনে। একটি সহজ এক্সপেরিমেন্ট অসংখ্যবার করা সত্ত্বেও প্রত্যাশিত আউটপুট পাচ্ছি না। আমি ছোটবেলা থেকেই মোটামোটি সকল কাজেই অকর্মার ঢেকি-টাইপ। “সহজ” কোন কাজ কখনই সহজে মেলাতে পারি না। অবধারিতভাবে জট পাকিয়ে ফেলি। যদিও বা কখনও কখনও সফলতার মুখবদনখান দেখি, খুজেঁ-খাজে দেখি ব্যাপারটা হয় কাকতালীয় অথবা সেখানে অন্যকারো স্বেচ্ছাসেবী হস্তক্ষেপ আছে। সেটাও মেজাজ খারাপের একমাত্র কারন নয়। প্রতিদিন গৃহপ্রবেশের সময় আমার মেইল বক্স চেক করতে হয়। আজও যথারীতি চেক করি। আমার নিজ দেশের লেটার বক্সগুলো চেক করলে লাভ লেটার, প্রেমপত্র, বিয়ের কার্ড, বিভিন্নরকম দাওয়াতপত্র, ভালবাসার রঙ্গিন খাম এইসব পাওয়া যেত। চেক করতেও ভাল লাগত। আর এখানে (কানাডা) মেইলবক্স খুললেই গ্যাস বিল, কারেন্ট বিল, মোবাইল বিল আর বিরক্তিকর ফ্লাইয়ার ছাড়া আর কিছুই পাই না। আজ আবার মরার উপর খাড়ার ঘাঁ হিসেবে উটকো একটা ক্রেডিট কার্ডের বিল এসে হাজির। বিরাট অংকের নেগেটিভ ব্যালেন্স সমেত চকচকে খাম। অনেক ঘাটাঘাটির পর কাস্টমার কেয়ারে ফোন দেওয়ার পর ওরা জানাল যে বিলটা ভুল করে আমার একাউন্টের নাম দিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ না হয় সহ্য করলাম। কিন্তু প্রতিদিন ক্লান্ত হয়ে যথন অনলাইনে “প্রথম আলোটা” দিনের শেষ বিকেলে পড়তে বসি তখন মেজাজটা আরও খতরনাক হয়া যায়। পাতায় পাতায় শুধু মন খারাপ করা খবর। হাজার হাজার খারাপ খবরের ভীরে তীর্থের কাকের মত ভাল কোন খবর হাতড়াঁতে থাকি একটু প্রশান্তির আশায়। বেশিরভাগ সময়ই ব্যর্থ হয়। তারই ধারাবাহিকতায় সাম্প্রতিক কালের কিছু ঘটনা মনকে আরও দ্রবীভুত করে তুলল। আর সেগুলো নিয়েই আজকের এই খেরোপত্র। লিখে যদি ওকটু হালকা হই।


অনেকক্ষন ধরেই একটি ছবির দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। ধ্বংসাবশেষের ছবি, চারিদিকে পোড়া ভিটেমাটির চালা, খড়-মাটি, শস্যপোড়া ছাইয়ের প্রলেপ, তছনছ করা আসবাব-পত্র, পোড়া স্যান্ডেল, জ্বলা গাছের বৃদ্ধ-গুঁড়ি, আরও অনেক টুকিটাকি। এর মধ্যে ঠাঁয় দাড়িয়ে আছে একটি সুন্দর বৌদ্ধমূতিঁ। ছবিটি পাহাড়িদের উপর হামলা সম্পর্কিত প্রায় সকল পত্রিকার ফিচার নিউজগুলোতে এসেছিল। এই সপ্রতিভ বৌদ্ধমূতিঁটি যেন আগ্রাসি বাঙ্গালীদের দিকে তাকিয়ে হাসছে অবজ্ঞাভরে। তার উজ্জ্বল চোখগুলো যেন লাগামহীন অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াঁনোর প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য পাহাড়ীদের দুর্নিবার আহবান জানাচ্ছে। মূর্তিগুলোর খোলা চোখ এই ধ্বংসাবশেষের মাঝেও তাদের প্রানবন্ত উপস্থিতিকে সাক্ষ্য দিচ্ছে প্রতিনিয়ত। এই নৃগৃহীত জনগোষ্টির পক্ষে তার সরব অবস্থান ঘোষনা করছে। তার অবিচল দাড়িয়ে থাকা যেন অবহেলিত এই আদীবাসীদের সুতীব্র অনুপ্রেরনা জাগাচ্ছে দুপ্ত বলয়ে জেগে উঠার, সপ্রতিভ প্রতিবাদ করার, সম্মিলিত প্রয়াসে। দেবালয়ের অক্ষত এই মূর্তিগুলো যেন অসহায়দের পক্ষে অসীম-শক্তির শক্ত অবস্থানকে আবারও স্মরন করিয়ে দিচ্ছে আমাদেরকে প্রতিটা মুহুর্তে।

কোনঠাসা এই পাহাড়ী আদীবাসীদের উপর এই রাষ্ট্রীয় আগ্রাসন নতুন কিছু নয়। এর আগেও বিভিন্ন সরকারের আমলে সুবিধাবঞ্চিত এই জাতি চরম অবমাননার শিকার হয়েছে। শরনার্থী হিসেবে ট্রিটেট অনেক পাহাড়ীরা প্রতিনিয়ত বলি হচ্ছে আগ্রাসী রাষ্ট্রজাতির স্বোচ্ছাকল্পে। দেশের মুলধারার সুবিধাগুলো গ্রহন করা থেকে তাদেরকে অপয়া করে রাখা হয়েছে প্রথম থেকেই। দিঘীনালার বাঘাইছড়িতে ১৯৮৮ সালের আগস্ট মাস থেকেই তাদের উপর নির্যাতন শুরু যা এখন পর্যন্ত পূর্ন শক্তিতে বহাল রাখা হয়েছে। এর বদৌলতে কয়েকশত উপজাতি প্রান হারিয়েছে, প্রচুর আদি তীর্থস্থান, অনেক পুরাকীর্তির বৌদ্ধ মন্দির পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে কালের অতলে। সাম্প্রতিক কালের বাঘাইছড়ি, রাঙামাটির ঘটনাপ্রবাহ তারই ধারাবাহিক ক্রম। ক্রমান্বয়ে তাদের নিজ ভাষা, ধর্ম, সংস্কৃতি ধীরে ধীরে নিশ্চিহ্ন করা হচ্ছে কতিপয় দখলদারদের যোগসাজশে যা কতটা অমানবিক তা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখানোর প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। খাগড়াছড়ি শহরে ১৪৪ ধারা জারি, সেনাবাহিনী মোতায়েন, জরিপের জের ধরে দখলদারীদের সাথে একাত্মতা এই নিরিবিলি জীবনে অভ্যস্থ কোনঠাসা আদীবাসীদের উপর ভারসাম্যহীন লড়াই রীতিমত তীব্র ঘৃনার উদ্রেক করায় আমাদের স্বজাতির উপর। বর্তমান বাঙ্গালীজাতির একজন অংশীদার হয়ে হিংস্রতার রূপ দেখে রক্ত ঘৃনায় গরম হয়ে উঠে ক্ষনে ক্ষনে।

অক্ষমতার লাগামহীন ঘোড়া আমাদের বাঙ্গালীদের টুটি চেপে ধরে নিয়ন্ত্রন করে ইচ্ছেমত। আমরা অক্ষম, আমরা সীমাবদ্ধতার অজুহাত দেখাই, বেশিরভাগ সময় আমরা স্বেচ্ছায় প্রতিবাদ করি না। আমরা কথা বলতে পারিনা, কারন আমরা কথা বলতে চাই না। আমরা নিরিবিলি, নিভের্জালভাবে জীবন অতিবাহিত করতে চাই। রাষ্ট্রযন্ত্রের সুবিধাবাদী দখলদাররা নির্বিচারে এই অসহায় মানুষগুলোর উপর আক্রমন চালাচ্ছে, আমরা কথা বলছি না। তাদের ভাষা-ধর্ম-সংস্কৃতি ধীরে ধীরে নিশ্চিন্হ করা হচ্ছে, আমরা কথা বলি না। দেশের মুল ধারার সংস্কৃতি এই স্বকীয়, স্বতন্ত্র বৈশিষ্টমন্ডলিত কলা-সংস্কৃতিকে প্রতিনিয়ত ধর্ষন করে যাচ্ছে, আমরা কথা বলি না। দেশের সুবিধাবাদী গুটিকয়েক মানুষেরা প্রতিনিয়ত এইসব আদিবাসীদের অস্তিত্বকে বলাৎকার করে যাচ্ছে, আমরা কথা বলি না। দেশের তথাকথিত সুশীলরাও তাদের কলম দিয়ে পাহাড়ীদের মিথ্যা দোষ ধরায় ব্যস্ত, আমরা তাতেও কথা বলি না। ছোট ছোট নিষ্পাপ পাহাড়ী বাচ্চারা আমাদের দিকে তীব্র ঘৃনাভরে তাকিয়ে আছে। আমরা কথা বলি না। চার জাতীয় নেতা হত্যার বিচার আইন করে বন্ধ করে দেওয়া হয়, আমরা কথা বলি না। বঙ্গবন্ধুর ৩৪ বছরের লাশের ভারটি একটি কালো অধ্যাদেশের মাধ্যমে কোমায় রাখা হয়, আমরা কথা বলি না।

আমরা কানেও শুনি না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রির আপনি ডান কানে কি এখনও কম শুনেন? আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রি খুনের ঘটনাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে চালিয়ে দেন, আপনি তা শুনেন না। রাজাকারেরা দেশে কোন রাজাকার নেই বলে সর্বত্র বুক চিতিয়ে বলে বেড়ায়, আপনি শোনেন না। কদিন পর পর ঢাকার অসহায় বস্তিবাসীদের ঘরদোর পুড়িয়ে দেওয়া হয়, আপনি তাদের আর্তচিৎকার শোনেন না। সমানে দেশের মেধাবী তরুনদের সুপরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়, আপনি তাদের আর্তনাদ শোনেন না। সেখানে দুরের পাহাড়গুলো ডিঙ্গিয়ে আদিবাসী পাহাড়ীদের হাহাকার আপনার কানে আসবে না এ আর আশ্চর্য কি!

আমরা যে শুধু কথা বলি না তা না, আমরা চোখেও দেখি না। রাষ্ট্রবিরোধী অপশক্তিগুলো আমাদের চোখের সামনে দিয়ে তাদের অপকর্মগুলো করে যাচ্ছে, আমারা দেখি না। নাইকো, অক্সিডেন্টাল নামের বাঘা বাঘা কোম্পানিগুলো দেশের বিপুল অর্থের অপচয় করে আমাদের বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে চলে গেল, আমরা দেখি না। গুটিকয়েক লোক একে অপরের সাথে দলাদলি, রেশারেশিতে সংসদের প্রচুর অর্থের অপচয় করে যাচ্ছে, আমরা দেখি না। স্বাধীনতাবিরোধীরা এখন বিশেষ জাতীয় দিনগুলোতে মুক্তিযোদ্ধাদের পদকবিতরন অনুষ্ঠান করে যাচ্ছে। পাহাড়ি জনগোষ্টীর ধীরে ধীরে কোনঠাসা করে ফেলা হচ্ছে, আমরা তা দেখেও দেখি না।

সম্প্রতি বাঘাইছড়ির ঘটনায় দুজন পাহাড়ির লাশ উদ্ধার হয়েছে, পাঁচ থেকে আটজন মারা গেছে বলে বলা হচ্ছে। খাগড়াছড়িতে আরও একজন বাঙালির মৃত্যুর খবর এসেছে। আগুনে কেবল শত শত পাহাড়ির বাড়িঘরই ছাই হয়ে যায়নি, পার্বত্য চুক্তির মাধ্যমে শান্তির যে জলপাই চারাটি লাগানো হয়েছিল, আঁচ লেগেছে তারও গায়ে। তাই চরম উদ্বেগ কেবল পাহাড়ি-বাঙালির জান-মাল নিয়েই নয়, পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থায়ীভাবে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রশ্নটিও এখন প্রশ্নের সম্মুখীন। এ দেশের শেকড়ের সঙ্গে আদিবাসীদের সম্পর্ক। রাষ্ট্রযন্ত্রের ভেতর সরকারবিরোধী যে অংশ রয়েছে, তাদের অপচেষ্টা ও ষড়যন্ত্রের ফলে এ ধরনের সংঘর্ষ বেধেছে বলে ধারনা করা হচ্ছে। এই সরকারবিরোধী দলটি এভাবে লায় পেয়ে পেয়ে পুরো দেশকেই একসময় অন্ধকারের অতল গহবরে নিয়ে যাবে, যখন আমাদের কিছুই করার থাকবে না।

এইসব সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো মোকাবিলায় আমাদেরকে সরব ভুমিকা পালন করতে হবে। অসহায়দের পাশে দাঁড়াতে হবে। আড়গোড় ভেঙ্গে সবাইকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে সুবিবেচক ভুমিকা পালন করতে হবে। নইলে আমাদের বাঙালী ইতিহাসে এই লজ্জাজনক অপকর্মের দায় আমাদেরই ঘাড়ে বয়ে নিতে হবে। এ দায় থেকে মুক্তির কোন উপায় নেই।


আরেকটু পড়ি, কি বলেন.......

সোমবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১০

শুভস্য শীঘ্রম

আমি রাজনীতি সচেতন না। পারতে ওই বধুর পথ মাড়াই না। কিন্তু ইদানিং কালের কিছু নৃশংস ঘটনায় মনটা এতটাই অসহিষ্ঞ হয়ে উঠেছে যে আত্মবিবেকবোধ এই বিষয়টি নিয়ে কলম ধরতে বাধ্য করেছে।

মাত্র কদিন কদিন হল বঙ্গবন্ধুর ৩৪ বছরের লাশের ভারটি আমাদের প্রচলিত আইনের বেড়াজালের মাধ্যমেই কাধমুক্ত করা হয়েছে (যে বিষয়টি ২১ বছর ধরে একটি কালো অধ্যাদেশের মাধ্যমে কোমায় রাখা হয়েছিল)। এর জন্য আমরা প্রস্তুত ছিলাম। কিন্তু বিপরীত ধারার হায়েনাগুলোর সৃষ্ট প্রতিক্রিয়া গ্রহনে হয়তো আমরা প্রস্তুত ছিলাম না।

বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় অবৈধ ক্ষমতাদখলকারীরা ১৯৭৫-১৯৯০ সাল পর্যন্ত শাসন করে গেছে। এই সুদীর্ঘ দূর্বল নাজুক সময়টুকু সেনাশাসনের মধ্য দিয়ে গিয়েছিল এই শিশুবয়সী (নিউ-বর্ন) দেশটি। গনতন্ত্রের কোন উপস্থিতি তখন ছিল না। থাকার কোন কথাও নয়। কোন শিশুর শৈশব-আঘাত বড় ধরনের প্রভাব বিস্তার করে। জাতির এই দুবল মুহুর্তগুলোতে বঙ্গবন্ধুর “সাধারন ক্ষমায়” সাময়িক মুক্ত সুযোগসন্ধানী রাজাকার/আলবদরেরা ছলে-বলে কৌশলে সেনাবাহিনী, শাসনব্যবস্থার উচ্চতর পর্য়ায় থেকে শুরু করে তৃনমূল পর্যায়েও জায়গা করে নিতে থাকে ধীরে ধীরে। গোলাম আযমের পুত্রও ঐ সময়েই ব্রিগেডিযার পদবীতে ভূষিত হয়। এই ১৫ বছরে তিলে তিলে গড়া তাদের কাঠামোগত শক্ত অবস্থানই পরবর্তীকালে চারদলীয় জোটবদ্ধ হতে এবং হাই-কমান্ড সেকশানে পদার্পনে সহায়ক ভুমিকা পালন করেছে। পরবর্তী পাচঁ বছরে তারা বাংলাদেশের সিভিল সার্ভিস, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ, বিভিন্ন জনগুরুত্বপূর্ন পদবীতে তাদের অবস্থান/নেটওয়ার্ক বিস্তুত করার সুযোগ করে নেয়, যে কারনে আওয়ামিলীগের অন্দরমহলেও তাদের উপস্থিতি এখন ভালই টের পাওয়া যাচ্ছে। পিলখানা ঘটনায়ও সেনাবাহিনীতে তাদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।


শিবিরের আজকের এই অবস্থান তারা একদিনে নিয়ে আসে নি, তিলে তিলে নিয়ে এসেছে। তারা তাদের মিথ্যাচারিতা, সুযোগসন্ধানী সক্রিয়তা, ভয়াবহ নৃশংসতা, ধর্ম ব্যবসা, আর্থিক সচ্ছলত, পরিকল্পিত স্থানে বিনিয়োগ, প্রতিষ্টিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দিয়ে ধীরে ধীরে রাজনীতির অন্দরমহলে জায়গা করে নিয়েছে। বিবেচনায়-অনীহা সাধারন সরল ধর্মপরায়ন মানুষ তাদের অবৈধ প্রবেশ দ্বারকে আরও সুগম করে দিয়েছে। কদিন আগে আমার এক প্রিয়ভাজন আমাকে প্রশ্ন করেছিল: “দেশের বিশ্ববিদ্যালয় এর সকল ছাত্রই কম বেশী মেধাবী; কিন্তু তরাই যখন মুজিব-জিয়া-গোলাম দের জন্য জীবন বাজি রাখে তখন আমার মাথায় ঢোকে না এই ছেলেরা এত বোকা কেন! ছাত্ররা হল আমাদের মহামান্য নেতা দের সৈন্য বাহিনী। তারা এই বাহিনীকে নিজের স্বার্থে জিইয়ে রাখতে চায়। ছাত্রদের কাজ শিখা, কন্তু ভাল মন্দ শেখার অগেই তারা কেন রাজনীতির মাঠে নামবে?” প্রত্যুত্তরে বললাম: “সকলক্ষেত্রেই দেখা যায়, ক্ষমতা আর অর্থ অনেক কিছুই নিয়ন্ত্রন করার ক্ষমতা রাখে। এখানেও ব্যাপারটা তাই। তথাকথিত ট্যান্ডারবাজি, ক্ষমতা, নিশ্চিত চাকুরিপ্রাপ্তি, শাসনভার নিয়ন্ত্রন এইসবের জন্যই উঠতি ছাত্ররা আমাদের স্বাথাস্বেষী নেতাদের গিনিপেগ হতেও পরোয়া করে না।বস্তুত, সমাধানের পথটা আসা উচিত উপ-স্থর খেকে, নিম্ন-স্থর থেকে নয়।”

জীবিত বঙ্গবন্ধুর মত মৃত বঙ্গবন্ধুর প্রভাবও এতই প্রভাবশালী, গাঢ় এবং গভীর যে বঙ্গবন্ধুর সুষ্টু বিচার প্রক্রিয়া ও এর সফল কার্যকারীতা তাদেরকে চোরাবালিতে ডুবে যাওয়ার পূর্বমুহুর্তে তীর ধরে থাকার আপ্রান ব্যর্থ চেষ্টাকল্পে ভয়ার্তভাবে ছটপট করতেছে। বঙ্গবন্ধুর লাশের ভার তাদের কাছে এতই ওভারলোডেড যে যে তারা তাদের আসন্ন নিশ্চিত পরিণতি ঠেকাতে তাদের সাম্প্রতিক কর্মকান্ড কখনও কখনও তাদের স্বভাবসুলভ নৃশংসতাকেও ছাড়িয়ে যাচ্ছে। কোরবানীর কোন পশু আসন্ন মৃত্য উপলব্ধি করা মাত্রই তার সর্বশক্তি দিয়ে কাতড়াতে থাকে নিজেকে ছলেবলে যমমুক্ত করার চেষ্টায়। এই বিচারপ্রক্রিয়ার সফলতা যুদ্ধপরাধী/আলবদরদের আদতে-দূর্বল ভিতটি এতটাই নড়বড়ে করে দিল যে এখন কোরবানীর পশুর মত সর্বশক্তি প্রয়োগ করে কাতড়াঁতে থাকবে এটাই স্বাভাবিক। তাদের তাসের ঘরগুলো এতটাই কাপিয়ে দেওয়া হল যে, বাংলাদেশের প্রথম সারির ব্লগগুলোতেও মেধাবী পেইড ব্লগার লেলিয়ে দিয়ে উঠতি নতুন প্রজন্মের লব্ধ-ধারনাসমূহকে ভিন্নপথে প্রভাবিত করার জন্য উঠে পড়ে লাগল (আমি এই দৃশ্যত গুরুত্বহীন বিষয়টিকে যথেষ্ট গুরুত্বসহকারে নেওয়ার জন্য অন্যান্য রাজনৈতিক দলসমূহকে বিনীত অনুরোধ করব। কারন আমাদের মনে রাখতে হবে এইসব পেইড জামাতপন্থি ব্লগারদের টাগের্ট সেইসব উঠতি শিক্ষিত ব্যক্তিদের নিয়ন্ত্রনে নিয়ে আসা যারা নিজ মেধা/ক্ষমতাগুনে হাজারজন আমজনতাকে প্রভাবিত করার ক্ষমতা রাখে। যা তাদের অন্যান্য দীঘৃমেয়াদি পরিকল্পনাগুলোর একটি, সেটা কোন চিন্তাভাবনা না করেই বলে দেওয়া যায়।)। তারা তাদের নিজস্ব ধর্মরসে গড়া রাজনীতির আবরনে আশ্রয় নিয়ে নীতি ছাপিয়ে এখন শুধুই নৃশংসতার লীলাখেলায় মেতে উঠেছে।

সহজভাবেই বুঝা যায়, এটাই তাদের দুর্বল সময়। আর তাদের এই দুর্বল মুহুর্তই তাদেরকে কঠোরভাবে দমনের চূড়ান্ত সময়। দেশের বিপুল সংখ্যক সাধারন জনগোষ্টি এই বিচারের জন্য প্রতীক্ষার প্রহর গুনছে। চাতক পাখির মত চেয়ে বসে আছে জাতির পুর্ণ দায়মুক্তির আশায়। শুধু বর্তমান প্রধানমন্ত্রির প্রতি ন্যায্য অনুরোধ খাতবে এই করিডোরে-আগত সুযোগের সদ্ব্যবহার করুন যেরকম হায়েনাগুলো করে থাকে। কোন চিত্তাকর্ষক অজুহাত দেখিয়ে এই প্রয়োজনীয় এবং অবশ্যকর্তব্য নির্বাচনী ইস্তেহার এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবেন না। প্লিজজজজ। একটি বড় বিচারে আপাত সন্তুষ্ট সরল জাতিকে ভুলিয়ে ভালিয়ে দীর্ঘায়িত করার চেষ্টা করবেন না। পরবর্তী নিবাচর্নের আগ মুহুর্তে বিচার প্রক্রিয়া শুরু করে আবার জয়ী হলে বাকিটুকু সমাপ্ত করবার মুলা দেখিয়ে নতুন ইস্তেহার তৈরির চেষ্টা করবেন না। প্লিজজজজ। চার নেতা মামলার মত এই মামলাও উপেক্ষা করবেন না। যত দ্রুত সম্ভব এই “জাতিগত অপুষ্টি” টি দুর করুন। আওয়ামীলিগ আর বিএনপির স্ববাবগত কাবাডি খেলার ফাঁকে এই নরপশুগুলো যেন কোনভাবেই ফাকঁতালে গলে বেরিয়ে যায়।

আমার অগাধ বিশ্বাস আছে দেশের মানুষ বিচার নিজের হাতে তুলে নেওয়ার আগেই আপনিই করে দেখাবেন। বিচার হতেই হবে। তাদের সবোর্চ্চ শাস্তি প্রদানের খুব কাছাকাছি চলে এসেছি আমরা। দেরিতে হলেও প্রাথমিক বাধাটি (বঙ্গবন্ধুর বিচার) কেটে গেছে। এখন স্বাভাবিক এবং ক্রমাগতভাবে অন্যগুলোও কাটবে। নরপশুদের ছটপটানি, কাতড়ানি প্রকাশ করাতে গিয়ে যেন আর কোন নতুন আবু-বকর, ফারুকএবং মহিউদ্দিন দের পরিনতি বয়ে নিতে না হয়। এখনই সময় সুদে আসলে বুঝে নেওয়ার পালা। আর শুভ কাছে কখনই দেরি করতে নেই। আমার অগাধ বিশ্বাস আমরা সেটা করবও না। শুভষ্য শীঘ্রম।

আমি স্বপ্ন দেখি সেই বাংলাদেশের যে বাংলাদেশে একদিন রাজাকারদের বীর্যে গড়া কালসাপগুলোরও একদিন মতিভ্রম হবে। ওরা প্রকৃত রাজনীতিতে জড়িত হবে। রাজাকারমুক্ত দেশে দলাদলীহীন গনতন্ত্রের মাধ্যমে দেশকে সম্মানজনক অবস্থানে নিয়ে যাবে।
আরেকটু পড়ি, কি বলেন.......

মঙ্গলবার, ২ ফেব্রুয়ারী, ২০১০

অতৃপ্ত প্রতিশোধ-১

অতৃপ্ত প্রতিশোধ-১
অতৃপ্ত প্রতিশোধ-২
অতৃপ্ত প্রতিশোধ-৩
অতৃপ্ত প্রতিশোধ-৪
অতৃপ্ত প্রতিশোধ-৫
১.
তাপস বাবু তার রুটিনমাফিক ঝামেলা থেকে আর পরিত্রান পাচ্ছেন না কোনভাবেই। ঘরে এখনও রান্না বসানো হয়নি। কারন কেয়ারটেকার এখনও এসে পৌছায়নি। গতকালও বাজারের একটি হোটেল থেকে খেয়ে আসতে হয়েছে। ডাল-মাংস ভুনা নামের গ্রামের যে ঐতিহ্যবাহী খাদ্যটি তিনি গতকাল গলাধ:করন করেছেন তা এখনও জানান দিচ্ছে। পেটে ক্ষীন ব্যথা নিয়ে টেবিলে বসে আছেন। ফুড-পয়জনিং লক্ষন মনে হচ্ছে। গতানুগতিকতার বাইরে শারীরিক যন্ত্রনা ভুলে থাকবার সবচেয়ে ভাল উপায় হচ্ছে মস্তিষ্ককে সার্বক্ষনিক ব্যস্ত রাখা। অথবা উত্তেজক কিছু উপভোগ করা। তাপস বাবু প্রথম টনিককেই বেছে নিলেন। নিউরনগুলোকে সজীব করার জন্য এখন একটি নতুন গল্প সাজিয়ে নেওয়া যায়। প্রথম আউটলাইনটা গড়তেই ভাবতে হয় গভীরভাবে। কোন নতুন গল্পের প্রাথমিক প্লাটফরমটা দাড়িয়ে গেলেই বাকিটুকু অবাধ স্রোতপ্রবাহের মত এমনিতেই অগ্রসর হতে থাকে।

প্রথমেই তাপস বাবুর পরিচয়টা দেওয়া যাক। তাপস বাবু প্রখ্যাত লেখক। বিশ্বব্যাপি পরিচিতি। দুইটা বই ইউনেস্কো পুরষ্কার পেয়েছে। “Paranormal Humanism” আর “Supernatural Belief”। তারপর থেকেই খ্যতি ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বব্যাপি। লেখালেখিতেই এখন পুর্ন সময় ব্যয় করা হয়। বাকিটুকু সময় ভ্রমন করেই কাটান। এতেই ভাল লাগে।


তাপস বাবু এই গ্রামে মাত্র কদিন হল বেড়াতে এসেছেন, অনেকটাই গোপনে। ঠিক বেড়ানোও না। উদ্দেশ্য নিয়ে আসলে এটাকে সবসময় বেড়ানো বলে চালিয়ে দেওয়া যায় না। নিরিবিলি পরিবেশে কয়েকটি গল্প লেখার উদ্দেশ্যই আসার মুল কারন। গ্রামের এক ইউনিয়ন চেয়ারম্যান নিজেই জনমানবশুন্য এই সুন্দর বাংলোতে থাকার সব বন্দোবস্ত করে দিয়েছেন। দেখাশোনার জন্য একজন কেয়ারটেকারকে দায়িত্ব দিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু লোকটি কাজে আসছে অনিয়মিতভাবে। কাল রাতেও আসেনি। আজ তো এখনও খবর নেই। আজ না আসলে ঐ হোটেলের ডাল-মাংস ভুনা আবার খেতে হবে কিনা কে জানে! আর তো তেমন ভাল কোন হোটেলও নেই এখানে।

একটি আধো-ভৌতিক গল্পের প্লাটফরম দাড়ঁ করাতে চেষ্টা করছেন তাপস বাবু। জঙ্গলামত এই পুরনো বাংলোয় নিরিবিলি পরিবেশটা মনে হয় এই জেনরির জন্যই উপযুক্ত। তাপস বাবু মুস্তষ্ককে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করছেন। গল্পের পরিমন্ডলটি সাজিয়ে নিচ্ছেন একটু একটু করে। এখনও পেটের ক্ষীন ব্যথাটিকে তাড়ানো যাচ্ছে না। বরং তীব্র আকার ধারন করছে ক্রমাগত। পেটে চেপে ধরে থাকলেন কিছুক্ষন। কিছুটা প্রশান্তি লাগছে এখন।

তাপস বাবু পাশের রুমের বুক শেলফের কাছে গেলেন। সবগুলো বইই পুরনো। প্যারা-নরমাল একটিভিটিজ নিয়ে একটি বই পাওয়া গেল - আর্নেস্ট হেমিঙওয়ের লিখা। “A Movable feast” আগেও একবার পড়েছিলেন বইটি। আবারও পড়তে ইচ্ছে করছে। আর্নেস্ট হেমিঙওয়ে তাপস বাবুর সবচেয়ে প্রিয় লেখক। লেখালেখির আদর্শ বলে মানেন। অনেক গল্প পরিকল্পনায় উনাক চিন্তাশক্তিকে অনুসরন করার চেষ্টা করেন। বইটি হাতে নিয়ে টেবিলে আসলেন। জানালা খোলা, হু হু করে বাতাস আসছে জানালা দিয়ে। একটু শীত শীতও করছে। তবু জানালা বন্ধ করতে ইচ্ছে করছে না। জানালা দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকলেন কিছুক্ষন। আকাশে মেঘ জমেছে, বৃষ্টি হবে হয়তো আজ। এক ফালি চাদঁ বাশ-ঝাঁড়ের ফাক দিয়ে দেখা যাচ্ছে। চাদেঁর ম্লান আলোয় চারপামটা কেমন রহস্যময় লাগছে। ঝড়ো রাত্রিতে চারদিকটা কেমন গা ছমছম নিরবতা। বাতাসে গাছের পাতাগুলো হুলি খেলায় মেতে উঠেছে। এখন পেটের ব্যথাটা একটু কমেছে মনে হয়। যাক, বাচাঁ গেল। বাতাসের বেগ আরও বাড়া শুরু করল। বৃষ্টিও পড়তে লাগল অল্প অল্প। ইলেকট্রিসিটি চলে গেল হঠাৎ করে। রাত প্রায় ১২ টায় লোড-শেডিং হবার কথা না। ঝড়ের পুর্বাবাস বলেই বোধ হয় ইলেকট্রিসিটি চলে গেছে।

তাপস বাবু বিরক্তি ভাব নিয়ে মোমবাতি খুজতে লাগলেন। প্রায় এক সপ্তাহ হল এই বাংলোতে এসেছেন, এখনও কোথায় কি আছে মনে রাখতে পারছেন না। কেয়ারটেকার পরিমলই খুজে-টুজে দেয় সবকিছু। আর আজ সে না আসাতেই বোধ হয় এত অনাকাংখিত ঝামেলা তৈরি হচ্ছে। চুলার নিচে হাতড়ে হাতড়ে অবশেষে একটি মোমবাতি আর দেয়াশলাই পাওয়া গেল। তাপস বাবু মোমবাতি জালিয়ে টেবিলে এসে বসলেন। বইটা খুলতে গিয়ে দেখলেন বই প্রায় ভিজে গিয়েছে। শুধু বই না, পুরো টেবিলটাই বৃষ্টির পানিতে ভেজা। বিরক্তিবোধ চরমে গিয়ে উঠল। কাল পরিমল আসলে আচ্ছামত শাসাতে হবে ব্যাটাকে। তাপস বাবু জানালার ডালাটি বন্ধ করার জন্য টেবিল থেকে উঠতে গিয়ে কিছুক্ষন স্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে রইলেন। জানালার দিকে তাকাতে গিয়ে ভয়ের শীতল স্রোত বয়ে গেল শীড়দাড়া দিয়ে। একজোড়া বড় বড় চোখ তার দিকে একদৃষ্টিতে অপলক তাকিয়ে আছে। কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকলে এই দুটি চোখ একজন মানুষকে পুড়িয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।


(চলবে)
আরেকটু পড়ি, কি বলেন.......