আমি রাজনীতি সচেতন না। পারতে ওই বধুর পথ মাড়াই না। কিন্তু ইদানিং কালের কিছু নৃশংস ঘটনায় মনটা এতটাই অসহিষ্ঞ হয়ে উঠেছে যে আত্মবিবেকবোধ এই বিষয়টি নিয়ে কলম ধরতে বাধ্য করেছে।
মাত্র কদিন কদিন হল বঙ্গবন্ধুর ৩৪ বছরের লাশের ভারটি আমাদের প্রচলিত আইনের বেড়াজালের মাধ্যমেই কাধমুক্ত করা হয়েছে (যে বিষয়টি ২১ বছর ধরে একটি কালো অধ্যাদেশের মাধ্যমে কোমায় রাখা হয়েছিল)। এর জন্য আমরা প্রস্তুত ছিলাম। কিন্তু বিপরীত ধারার হায়েনাগুলোর সৃষ্ট প্রতিক্রিয়া গ্রহনে হয়তো আমরা প্রস্তুত ছিলাম না।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় অবৈধ ক্ষমতাদখলকারীরা ১৯৭৫-১৯৯০ সাল পর্যন্ত শাসন করে গেছে। এই সুদীর্ঘ দূর্বল নাজুক সময়টুকু সেনাশাসনের মধ্য দিয়ে গিয়েছিল এই শিশুবয়সী (নিউ-বর্ন) দেশটি। গনতন্ত্রের কোন উপস্থিতি তখন ছিল না। থাকার কোন কথাও নয়। কোন শিশুর শৈশব-আঘাত বড় ধরনের প্রভাব বিস্তার করে। জাতির এই দুবল মুহুর্তগুলোতে বঙ্গবন্ধুর “সাধারন ক্ষমায়” সাময়িক মুক্ত সুযোগসন্ধানী রাজাকার/আলবদরেরা ছলে-বলে কৌশলে সেনাবাহিনী, শাসনব্যবস্থার উচ্চতর পর্য়ায় থেকে শুরু করে তৃনমূল পর্যায়েও জায়গা করে নিতে থাকে ধীরে ধীরে। গোলাম আযমের পুত্রও ঐ সময়েই ব্রিগেডিযার পদবীতে ভূষিত হয়। এই ১৫ বছরে তিলে তিলে গড়া তাদের কাঠামোগত শক্ত অবস্থানই পরবর্তীকালে চারদলীয় জোটবদ্ধ হতে এবং হাই-কমান্ড সেকশানে পদার্পনে সহায়ক ভুমিকা পালন করেছে। পরবর্তী পাচঁ বছরে তারা বাংলাদেশের সিভিল সার্ভিস, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ, বিভিন্ন জনগুরুত্বপূর্ন পদবীতে তাদের অবস্থান/নেটওয়ার্ক বিস্তুত করার সুযোগ করে নেয়, যে কারনে আওয়ামিলীগের অন্দরমহলেও তাদের উপস্থিতি এখন ভালই টের পাওয়া যাচ্ছে। পিলখানা ঘটনায়ও সেনাবাহিনীতে তাদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।
শিবিরের আজকের এই অবস্থান তারা একদিনে নিয়ে আসে নি, তিলে তিলে নিয়ে এসেছে। তারা তাদের মিথ্যাচারিতা, সুযোগসন্ধানী সক্রিয়তা, ভয়াবহ নৃশংসতা, ধর্ম ব্যবসা, আর্থিক সচ্ছলত, পরিকল্পিত স্থানে বিনিয়োগ, প্রতিষ্টিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দিয়ে ধীরে ধীরে রাজনীতির অন্দরমহলে জায়গা করে নিয়েছে। বিবেচনায়-অনীহা সাধারন সরল ধর্মপরায়ন মানুষ তাদের অবৈধ প্রবেশ দ্বারকে আরও সুগম করে দিয়েছে। কদিন আগে আমার এক প্রিয়ভাজন আমাকে প্রশ্ন করেছিল: “দেশের বিশ্ববিদ্যালয় এর সকল ছাত্রই কম বেশী মেধাবী; কিন্তু তরাই যখন মুজিব-জিয়া-গোলাম দের জন্য জীবন বাজি রাখে তখন আমার মাথায় ঢোকে না এই ছেলেরা এত বোকা কেন! ছাত্ররা হল আমাদের মহামান্য নেতা দের সৈন্য বাহিনী। তারা এই বাহিনীকে নিজের স্বার্থে জিইয়ে রাখতে চায়। ছাত্রদের কাজ শিখা, কন্তু ভাল মন্দ শেখার অগেই তারা কেন রাজনীতির মাঠে নামবে?” প্রত্যুত্তরে বললাম: “সকলক্ষেত্রেই দেখা যায়, ক্ষমতা আর অর্থ অনেক কিছুই নিয়ন্ত্রন করার ক্ষমতা রাখে। এখানেও ব্যাপারটা তাই। তথাকথিত ট্যান্ডারবাজি, ক্ষমতা, নিশ্চিত চাকুরিপ্রাপ্তি, শাসনভার নিয়ন্ত্রন এইসবের জন্যই উঠতি ছাত্ররা আমাদের স্বাথাস্বেষী নেতাদের গিনিপেগ হতেও পরোয়া করে না।বস্তুত, সমাধানের পথটা আসা উচিত উপ-স্থর খেকে, নিম্ন-স্থর থেকে নয়।”
জীবিত বঙ্গবন্ধুর মত মৃত বঙ্গবন্ধুর প্রভাবও এতই প্রভাবশালী, গাঢ় এবং গভীর যে বঙ্গবন্ধুর সুষ্টু বিচার প্রক্রিয়া ও এর সফল কার্যকারীতা তাদেরকে চোরাবালিতে ডুবে যাওয়ার পূর্বমুহুর্তে তীর ধরে থাকার আপ্রান ব্যর্থ চেষ্টাকল্পে ভয়ার্তভাবে ছটপট করতেছে। বঙ্গবন্ধুর লাশের ভার তাদের কাছে এতই ওভারলোডেড যে যে তারা তাদের আসন্ন নিশ্চিত পরিণতি ঠেকাতে তাদের সাম্প্রতিক কর্মকান্ড কখনও কখনও তাদের স্বভাবসুলভ নৃশংসতাকেও ছাড়িয়ে যাচ্ছে। কোরবানীর কোন পশু আসন্ন মৃত্য উপলব্ধি করা মাত্রই তার সর্বশক্তি দিয়ে কাতড়াতে থাকে নিজেকে ছলেবলে যমমুক্ত করার চেষ্টায়। এই বিচারপ্রক্রিয়ার সফলতা যুদ্ধপরাধী/আলবদরদের আদতে-দূর্বল ভিতটি এতটাই নড়বড়ে করে দিল যে এখন কোরবানীর পশুর মত সর্বশক্তি প্রয়োগ করে কাতড়াঁতে থাকবে এটাই স্বাভাবিক। তাদের তাসের ঘরগুলো এতটাই কাপিয়ে দেওয়া হল যে, বাংলাদেশের প্রথম সারির ব্লগগুলোতেও মেধাবী পেইড ব্লগার লেলিয়ে দিয়ে উঠতি নতুন প্রজন্মের লব্ধ-ধারনাসমূহকে ভিন্নপথে প্রভাবিত করার জন্য উঠে পড়ে লাগল (আমি এই দৃশ্যত গুরুত্বহীন বিষয়টিকে যথেষ্ট গুরুত্বসহকারে নেওয়ার জন্য অন্যান্য রাজনৈতিক দলসমূহকে বিনীত অনুরোধ করব। কারন আমাদের মনে রাখতে হবে এইসব পেইড জামাতপন্থি ব্লগারদের টাগের্ট সেইসব উঠতি শিক্ষিত ব্যক্তিদের নিয়ন্ত্রনে নিয়ে আসা যারা নিজ মেধা/ক্ষমতাগুনে হাজারজন আমজনতাকে প্রভাবিত করার ক্ষমতা রাখে। যা তাদের অন্যান্য দীঘৃমেয়াদি পরিকল্পনাগুলোর একটি, সেটা কোন চিন্তাভাবনা না করেই বলে দেওয়া যায়।)। তারা তাদের নিজস্ব ধর্মরসে গড়া রাজনীতির আবরনে আশ্রয় নিয়ে নীতি ছাপিয়ে এখন শুধুই নৃশংসতার লীলাখেলায় মেতে উঠেছে।
সহজভাবেই বুঝা যায়, এটাই তাদের দুর্বল সময়। আর তাদের এই দুর্বল মুহুর্তই তাদেরকে কঠোরভাবে দমনের চূড়ান্ত সময়। দেশের বিপুল সংখ্যক সাধারন জনগোষ্টি এই বিচারের জন্য প্রতীক্ষার প্রহর গুনছে। চাতক পাখির মত চেয়ে বসে আছে জাতির পুর্ণ দায়মুক্তির আশায়। শুধু বর্তমান প্রধানমন্ত্রির প্রতি ন্যায্য অনুরোধ খাতবে এই করিডোরে-আগত সুযোগের সদ্ব্যবহার করুন যেরকম হায়েনাগুলো করে থাকে। কোন চিত্তাকর্ষক অজুহাত দেখিয়ে এই প্রয়োজনীয় এবং অবশ্যকর্তব্য নির্বাচনী ইস্তেহার এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবেন না। প্লিজজজজ। একটি বড় বিচারে আপাত সন্তুষ্ট সরল জাতিকে ভুলিয়ে ভালিয়ে দীর্ঘায়িত করার চেষ্টা করবেন না। পরবর্তী নিবাচর্নের আগ মুহুর্তে বিচার প্রক্রিয়া শুরু করে আবার জয়ী হলে বাকিটুকু সমাপ্ত করবার মুলা দেখিয়ে নতুন ইস্তেহার তৈরির চেষ্টা করবেন না। প্লিজজজজ। চার নেতা মামলার মত এই মামলাও উপেক্ষা করবেন না। যত দ্রুত সম্ভব এই “জাতিগত অপুষ্টি” টি দুর করুন। আওয়ামীলিগ আর বিএনপির স্ববাবগত কাবাডি খেলার ফাঁকে এই নরপশুগুলো যেন কোনভাবেই ফাকঁতালে গলে বেরিয়ে যায়।
আমার অগাধ বিশ্বাস আছে দেশের মানুষ বিচার নিজের হাতে তুলে নেওয়ার আগেই আপনিই করে দেখাবেন। বিচার হতেই হবে। তাদের সবোর্চ্চ শাস্তি প্রদানের খুব কাছাকাছি চলে এসেছি আমরা। দেরিতে হলেও প্রাথমিক বাধাটি (বঙ্গবন্ধুর বিচার) কেটে গেছে। এখন স্বাভাবিক এবং ক্রমাগতভাবে অন্যগুলোও কাটবে। নরপশুদের ছটপটানি, কাতড়ানি প্রকাশ করাতে গিয়ে যেন আর কোন নতুন আবু-বকর, ফারুকএবং মহিউদ্দিন দের পরিনতি বয়ে নিতে না হয়। এখনই সময় সুদে আসলে বুঝে নেওয়ার পালা। আর শুভ কাছে কখনই দেরি করতে নেই। আমার অগাধ বিশ্বাস আমরা সেটা করবও না। শুভষ্য শীঘ্রম।
আমি স্বপ্ন দেখি সেই বাংলাদেশের যে বাংলাদেশে একদিন রাজাকারদের বীর্যে গড়া কালসাপগুলোরও একদিন মতিভ্রম হবে। ওরা প্রকৃত রাজনীতিতে জড়িত হবে। রাজাকারমুক্ত দেশে দলাদলীহীন গনতন্ত্রের মাধ্যমে দেশকে সম্মানজনক অবস্থানে নিয়ে যাবে।
সোমবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১০
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন