মঙ্গলবার, ২ ফেব্রুয়ারী, ২০১০

অতৃপ্ত প্রতিশোধ-১

অতৃপ্ত প্রতিশোধ-১
অতৃপ্ত প্রতিশোধ-২
অতৃপ্ত প্রতিশোধ-৩
অতৃপ্ত প্রতিশোধ-৪
অতৃপ্ত প্রতিশোধ-৫
১.
তাপস বাবু তার রুটিনমাফিক ঝামেলা থেকে আর পরিত্রান পাচ্ছেন না কোনভাবেই। ঘরে এখনও রান্না বসানো হয়নি। কারন কেয়ারটেকার এখনও এসে পৌছায়নি। গতকালও বাজারের একটি হোটেল থেকে খেয়ে আসতে হয়েছে। ডাল-মাংস ভুনা নামের গ্রামের যে ঐতিহ্যবাহী খাদ্যটি তিনি গতকাল গলাধ:করন করেছেন তা এখনও জানান দিচ্ছে। পেটে ক্ষীন ব্যথা নিয়ে টেবিলে বসে আছেন। ফুড-পয়জনিং লক্ষন মনে হচ্ছে। গতানুগতিকতার বাইরে শারীরিক যন্ত্রনা ভুলে থাকবার সবচেয়ে ভাল উপায় হচ্ছে মস্তিষ্ককে সার্বক্ষনিক ব্যস্ত রাখা। অথবা উত্তেজক কিছু উপভোগ করা। তাপস বাবু প্রথম টনিককেই বেছে নিলেন। নিউরনগুলোকে সজীব করার জন্য এখন একটি নতুন গল্প সাজিয়ে নেওয়া যায়। প্রথম আউটলাইনটা গড়তেই ভাবতে হয় গভীরভাবে। কোন নতুন গল্পের প্রাথমিক প্লাটফরমটা দাড়িয়ে গেলেই বাকিটুকু অবাধ স্রোতপ্রবাহের মত এমনিতেই অগ্রসর হতে থাকে।

প্রথমেই তাপস বাবুর পরিচয়টা দেওয়া যাক। তাপস বাবু প্রখ্যাত লেখক। বিশ্বব্যাপি পরিচিতি। দুইটা বই ইউনেস্কো পুরষ্কার পেয়েছে। “Paranormal Humanism” আর “Supernatural Belief”। তারপর থেকেই খ্যতি ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বব্যাপি। লেখালেখিতেই এখন পুর্ন সময় ব্যয় করা হয়। বাকিটুকু সময় ভ্রমন করেই কাটান। এতেই ভাল লাগে।


তাপস বাবু এই গ্রামে মাত্র কদিন হল বেড়াতে এসেছেন, অনেকটাই গোপনে। ঠিক বেড়ানোও না। উদ্দেশ্য নিয়ে আসলে এটাকে সবসময় বেড়ানো বলে চালিয়ে দেওয়া যায় না। নিরিবিলি পরিবেশে কয়েকটি গল্প লেখার উদ্দেশ্যই আসার মুল কারন। গ্রামের এক ইউনিয়ন চেয়ারম্যান নিজেই জনমানবশুন্য এই সুন্দর বাংলোতে থাকার সব বন্দোবস্ত করে দিয়েছেন। দেখাশোনার জন্য একজন কেয়ারটেকারকে দায়িত্ব দিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু লোকটি কাজে আসছে অনিয়মিতভাবে। কাল রাতেও আসেনি। আজ তো এখনও খবর নেই। আজ না আসলে ঐ হোটেলের ডাল-মাংস ভুনা আবার খেতে হবে কিনা কে জানে! আর তো তেমন ভাল কোন হোটেলও নেই এখানে।

একটি আধো-ভৌতিক গল্পের প্লাটফরম দাড়ঁ করাতে চেষ্টা করছেন তাপস বাবু। জঙ্গলামত এই পুরনো বাংলোয় নিরিবিলি পরিবেশটা মনে হয় এই জেনরির জন্যই উপযুক্ত। তাপস বাবু মুস্তষ্ককে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করছেন। গল্পের পরিমন্ডলটি সাজিয়ে নিচ্ছেন একটু একটু করে। এখনও পেটের ক্ষীন ব্যথাটিকে তাড়ানো যাচ্ছে না। বরং তীব্র আকার ধারন করছে ক্রমাগত। পেটে চেপে ধরে থাকলেন কিছুক্ষন। কিছুটা প্রশান্তি লাগছে এখন।

তাপস বাবু পাশের রুমের বুক শেলফের কাছে গেলেন। সবগুলো বইই পুরনো। প্যারা-নরমাল একটিভিটিজ নিয়ে একটি বই পাওয়া গেল - আর্নেস্ট হেমিঙওয়ের লিখা। “A Movable feast” আগেও একবার পড়েছিলেন বইটি। আবারও পড়তে ইচ্ছে করছে। আর্নেস্ট হেমিঙওয়ে তাপস বাবুর সবচেয়ে প্রিয় লেখক। লেখালেখির আদর্শ বলে মানেন। অনেক গল্প পরিকল্পনায় উনাক চিন্তাশক্তিকে অনুসরন করার চেষ্টা করেন। বইটি হাতে নিয়ে টেবিলে আসলেন। জানালা খোলা, হু হু করে বাতাস আসছে জানালা দিয়ে। একটু শীত শীতও করছে। তবু জানালা বন্ধ করতে ইচ্ছে করছে না। জানালা দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকলেন কিছুক্ষন। আকাশে মেঘ জমেছে, বৃষ্টি হবে হয়তো আজ। এক ফালি চাদঁ বাশ-ঝাঁড়ের ফাক দিয়ে দেখা যাচ্ছে। চাদেঁর ম্লান আলোয় চারপামটা কেমন রহস্যময় লাগছে। ঝড়ো রাত্রিতে চারদিকটা কেমন গা ছমছম নিরবতা। বাতাসে গাছের পাতাগুলো হুলি খেলায় মেতে উঠেছে। এখন পেটের ব্যথাটা একটু কমেছে মনে হয়। যাক, বাচাঁ গেল। বাতাসের বেগ আরও বাড়া শুরু করল। বৃষ্টিও পড়তে লাগল অল্প অল্প। ইলেকট্রিসিটি চলে গেল হঠাৎ করে। রাত প্রায় ১২ টায় লোড-শেডিং হবার কথা না। ঝড়ের পুর্বাবাস বলেই বোধ হয় ইলেকট্রিসিটি চলে গেছে।

তাপস বাবু বিরক্তি ভাব নিয়ে মোমবাতি খুজতে লাগলেন। প্রায় এক সপ্তাহ হল এই বাংলোতে এসেছেন, এখনও কোথায় কি আছে মনে রাখতে পারছেন না। কেয়ারটেকার পরিমলই খুজে-টুজে দেয় সবকিছু। আর আজ সে না আসাতেই বোধ হয় এত অনাকাংখিত ঝামেলা তৈরি হচ্ছে। চুলার নিচে হাতড়ে হাতড়ে অবশেষে একটি মোমবাতি আর দেয়াশলাই পাওয়া গেল। তাপস বাবু মোমবাতি জালিয়ে টেবিলে এসে বসলেন। বইটা খুলতে গিয়ে দেখলেন বই প্রায় ভিজে গিয়েছে। শুধু বই না, পুরো টেবিলটাই বৃষ্টির পানিতে ভেজা। বিরক্তিবোধ চরমে গিয়ে উঠল। কাল পরিমল আসলে আচ্ছামত শাসাতে হবে ব্যাটাকে। তাপস বাবু জানালার ডালাটি বন্ধ করার জন্য টেবিল থেকে উঠতে গিয়ে কিছুক্ষন স্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে রইলেন। জানালার দিকে তাকাতে গিয়ে ভয়ের শীতল স্রোত বয়ে গেল শীড়দাড়া দিয়ে। একজোড়া বড় বড় চোখ তার দিকে একদৃষ্টিতে অপলক তাকিয়ে আছে। কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকলে এই দুটি চোখ একজন মানুষকে পুড়িয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।


(চলবে)

২টি মন্তব্য: